প্রথম অধ্যায়ে আমরা স্থিতি ও গতি এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে সরণ, দ্রুতি ও বেগ সম্বন্ধে জেনেছি। এই অধ্যায়ে ত্বরণ ও মন্দন এবং ত্বরণ ও মন্দনের পার্থক্য ও একক সম্বন্ধে জানবো।
ত্বরণ
ত্বরণের সংজ্ঞা
কোন বস্তুর বেগ যদি ক্রমশ বাড়তে থাকে তা হলে বস্তুটির বেগের পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে। অর্থাৎ একক সময়ে বেগের যে বৃদ্ধি হয় তাকেই ত্বরণ বলে।
অর্থাৎ ত্বরণ = বেগের বৃদ্ধি/অতিক্রান্ত সময়
নির্দিষ্ট ত্বরণে গতিশীল কোন বস্তুর প্রারম্ভিক বেগ u এবং t সময় পরে চূড়ান্ত বেগ v হলে ঐ বস্তুর ত্বরণ f = বস্তুর বেগ বৃদ্ধি/অতিক্রান্ত সময়।
অর্থাৎ বস্তুর ত্বরণ=(বস্তুর চূড়ান্ত বেগ-বস্তুর প্রারম্ভিক বেগ)/অতিক্রান্ত সময়
বা, f=(v-u)/t
কোন বস্তুর প্রারম্ভিক বেগ 15 সেন্টিমিটার/সেকেন্ড এবং বস্তুটি সমত্বরনে চলছে। যদি 4 সেকেন্ড পরে বস্তুটির বেগ 23 সেন্টিমিটার/সেকেন্ড হয়,
তবে 4 সেকেন্ডে বস্তুটির বেগ বৃদ্ধি = (23-15) সেমি/সেকেন্ড
বা, 8 সেমি/সেকেন্ড
অতএব বস্তুটির ত্বরণ = (8 সেমি/সেকেন্ড)/(4 সেকেন্ড)
বা, 2 সেমি/সেকেন্ড2।
বেগের মান এবং দিক আছে সেজন্য ত্বরণের মান এবং দিক আছে। ত্বরণ একটি ভেক্টর রাশি।
ত্বরণের একক
ত্বরণের একক = (বেগের একক/সময়ের একক)
এখন, বেগের একক = (সরণের একক/সময়ের একক)
অতএব, ত্বরণের একক= (সরণের একক/ সময়ের একক)×1/সময়ের একক
সুতরাং, সিজিএস পদ্ধতিতে ত্বরণের একক = (সেন্টিমিটার/সেকেন্ড)×(1/সেকেন্ড)
= সেন্টিমিটার /সেকেন্ড²
সিজিএস পদ্ধতিতে ত্বরণের একক সেন্টিমিটার/সেকেন্ড²
এফপিএস পদ্ধতিতে ত্বরণের একক ফুট/ সেকেন্ড²
এস আই এবং এম কে এস পদ্ধতিতে ত্বরণের একক মিটার/সেকেন্ড²
ত্বরণকে f অক্ষর দ্বারা সূচিত করা হয়। একটি ট্রেন যখন স্টেশন ছাড়ে তখন ওর বেগ একটা নির্দিষ্ট হারে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ট্রেনের মধ্যে একটা ত্বরণ সৃষ্টি হয়।
সমত্বরণ ও অসম ত্বরণ
সমত্বরণ
যদি কোন বস্তু ক্রমবর্ধমান বেগ নিয়ে চলে এবং বস্তুর বেগের পরিবর্তন যদি সমান সময়ের ব্যবধানে সর্বদা সমান হয় তবে ঐ বস্তুর ত্বরণকে সমত্বরণ বলে।
যেমন উঁচু কোনো স্থান থেকে অবাধে ভূপৃষ্ঠে পতনশীল কোনো বস্তুর উপর অভিকর্ষজ ত্বরণ ক্রিয়া করে। কোন নির্দিষ্ট স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান অপরিবর্তিত থাকায় বস্তুটি সমত্বরণে নিচে নামতে থাকে।
অসমত্বরণ
যদি বস্তুর বেগের পরিবর্তন সমান সময়ের ব্যবধানে সর্বদা সমান না হয়, তবে বস্তুটির ত্বরণকে অসমত্বরণ বলে।
যেমন দোলক ঘড়ির দোলন পিণ্ডটি অসমত্বরণযুক্ত হয়ে দুলতে থাকে। পিন্ডটির গতিপথের প্রান্তিক অবস্থানে পিন্ডটির ত্বরণ সর্বাধিক হয় যদিও ওই অবস্থানে পিন্ডটির বেগ শূন্য থাকে।
মন্দন
মন্দন কাকে বলে সংজ্ঞা
যদি কোন বস্তু ক্রমহ্রাসমান বেগ নিয়ে চলে তবে বস্তুটির বেগ হ্রাসের হারকে মন্দন বলে।
মন্দনকে ঋণাত্মক ত্বরণ বলে। কারণ ত্বরণ ক্রমবর্ধমান বেগকে নির্দেশ করে এবং মন্দন ঠিক তার বিপরীত তাই মন্দনকে ঋণাত্মক ত্বরণ বলা হয়।
ত্বরণ ও মন্দনের একক পরস্পর এক। মন্দন একটি ভেক্টর রাশি।
কোন এক মুহূর্তের বেগ হলো 30 ফুট/সেকেন্ড। দু সেকেন্ড পর 26 ফুট/সেকেন্ড। আরওঃ দু সেকেন্ড পর ঐ বস্তুর বেগ কমে হলো 22 ফুট/সেকেন্ড। বস্তুর বেগ এইভাবে কমতে থাকলে বলা হয় বস্তুটির মন্দন হচ্ছে।
নির্দিষ্ট মন্দনে গতিশীল কোন বস্তুর প্রারম্ভিক বেগ u এবং t সময় পরে বেকমে বস্তুটির চূড়ান্ত বেগ v হলে,
বস্তুটির মন্দন f = ( বস্তুর প্রারম্ভিক বেগ-বস্তুর চূড়ান্ত বেগ)/অতিক্রান্ত সময়
f= (u-v)/t
ধরি 20 মিটার/সেকেন্ড বেগে যাত্রা শুরু করার 2 সেকেন্ড পরে কোন বস্তুর বেগ 14 মিটার/সেকেন্ড হলো। যদি বস্তুটি ক্রমহ্রাসমান বেগে চলে, তবে দু সেকেন্ডে বস্তুর বেগের হ্রাস=(প্রারম্ভিক বেগ-চূড়ান্ত বেগ)=6 মিটার /সেকেন্ড
অতএব, বস্তুর মন্দন=(6 মিটার/সেকেন্ড)/2 সেকেন্ড
=3 মিটার/সেকেন্ড²
ত্বরণ ও মন্দনের মধ্যে পার্থক্য
ত্বরণ ও মন্দনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ
ত্বরণ | মন্দন |
১. কোন বস্তু কণার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বেগের পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে। কোন গতিশীল বস্তু কণার গতিতে ত্বরণ থাকলে ওর বেগ ক্রমশ বাড়তে থাকে। | ১. সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোন বস্তু কণার ক্রমহ্রাসমান বেগের পরিবর্তনের হারকে মন্দন বলে। কোন গতিশীল বস্তু কণার গতিতে মন্দন হলে ওর গতিবেগ ক্রমশ কমে যায়। |
২. কোন গতিশীল বস্তুর ত্বরণ সৃষ্টি হলে ওর বেগ একটি নির্দিষ্ট হারে বাড়তে থাকে। | ২. মন্দন সৃষ্টি হলে ওর বেগ নির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে। |
৩. ত্বরণকে ধনাত্মক রাশি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। | ৩. মন্দনকে ঋণাত্মক রাশি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। |
প্রশ্নোত্তর
ত্বরণ বা মন্দনের একক প্রতি সেকেন্ড কথাটি দুবার ব্যবহার করা হয় কেন
ত্বরণ বা মন্দনে বেগের একক প্রকাশ করতে সময় একককে একবার ব্যবহার করা হয় এবং বেগের পরিবর্তনের হার বোঝাতে সময়ের একককে পুনরায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার ফলে ত্বরণের একক প্রকাশ করতে প্রতি সেকেন্ড কথাটি দুবার ব্যবহার করতে হয়।
যেমন আমরা জানি ত্বরণ = বেগের পরিবর্তন/ সময়
সুতরাং ত্বরণের একক =বেগের একক/ সময়ের একক
এখন বেগের একক= সরণের একক/সময়ের একক
অতএব ত্বরণের একক=( সরণের একক/ সময়ের একক)×1/সময়ের একক
অতএব এস আই পদ্ধতিতে ত্বরণের একক=(মিটার/সেকেন্ড)×1/সেকেন্ড
=মিটার/সেকেন্ড ²
অতএব দেখা যাচ্ছে ত্বরণ ও মন্দনের এককে প্রতি সেকেন্ড কথাটি দুবার ব্যবহার করা হয়। কারন ১) একবার বেগ বোঝানোর জন্য এবং ২) আরেকবার বেগের পরিবর্তনের হার বোঝানোর জন্য
কোন বস্তুর গতিবেগ আছে কিন্তু ত্বরণ নেই এটা কি সম্ভব?
হ্যাঁ সম্ভব। যদি কোন বস্তু একই বেগে (সমবেগে) চলতে থাকে তবে বস্তুর গতিবেগ থাকবে। কিন্তু কোন ত্বরণ থাকবে না।
কোন বস্তুর ত্বরণ থাকা কি সম্ভব যখন বস্তুর গতিবেগ শূন্য
হ্যাঁ সম্ভব। কোন বস্তুর গতি বেগ শূন্য হলেও তার ত্বরণ থাকা সম্ভব।কারণ কোন বস্তুকে নির্দিষ্ট বেগে উপরের দিকে ছুড়ে দিলে বস্তুর গতিবেগ ক্রমশ কমতে কমতে একসময় শূন্য হয়। কিন্তু ঐ অবস্থায় বস্তুটির উপর অভিকর্ষজ ত্বরণ ক্রিয়াশীল থাকে। হলে বস্তুটির নিচের দিকে নামতে শুরু করে।
Nice
Thank you