তড়িৎ পরিবাহী ও অপরিবাহী । তড়িৎ বিশ্লেষ্য ও অবিশ্লেষ্য পদার্থ

0
741

তড়িৎ বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ের মধ্যে আমরা পড়বো তড়িৎ পরিবাহী, তড়িৎ অপরিবাহী, তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ, তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ আয়ন, ক্যাথোড, অ্যানোড ইত্যাদি সম্বন্ধে

তড়িৎ পরিবাহী

যেসব পদার্থের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হয়, তাদের তড়িৎ পরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন সোনা, রূপা, তামা, গ্রাফাইট ইত্যাদি। তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থ গুলিকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। অর্থাৎ পরিবাহীর দুই রকম
১. ধাতব পরিবাহী এবং
২. তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ।

১. ধাতব পরিবাহী

কতকগুলি পদার্থ তড়িৎ পরিবহন করে কিন্তু তড়িৎ পরিবহনের ফলে পদার্থগুলির কোন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না। বিভিন্ন ধাতু হলো এই জাতীয় পরিবাহী। তাই এদেরকে ধাতব পরিবাহী বলে।
গ্রাফাইট অধাতু হলেও তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম।
এই জাতীয় পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের সময় ইলেকট্রন কণা তড়িৎ পরিবহন করে।

২. তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ

কতকগুলি পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে। এবং তড়িৎ পরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে পদার্থ গুলির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। অ্যাসিড, ক্ষার, লবণ জাতীয় পদার্থ গুলি হল এই শ্রেণীর পরিবাহী। H2OSO4, HCl, NaOH, KOH, NaCl, প্রভৃতি এই জাতীয় পদার্থ।

তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যে যৌগ গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না, তাকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। চিনির দ্রবণ, গ্লিসারিন, বেঞ্জিন, অ্যালকোহল তড়িৎ পরিবহণ করে না। এরা সব তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ।

তড়িৎ অপরিবাহী

যেসব পদার্থের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হয় না সেগুলিকে তড়িৎ পরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন কাঠ, রবার এবোনাইট কাচ ইত্যাদি।

হাইড্রোজেন সালফাইড | H2S এর ব্যবহার ও ধর্ম

তড়িৎ বিশ্লেষণ

গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের ফলে পদার্থটির রাসায়নিক বিভাজন ঘটে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে।
জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের অনুগুলির বেশ কিছু সংখ্যক বিয়োজিত হয়ে পজিটিভ এবং নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত কণায় পরিণত হয়। এই তড়িৎগ্রস্ত কনাগুলিকে আয়ন বলে।

আয়ন

পরমাণু বা মূলক ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জন করে তড়িৎ গ্রস্ত কণায় পরিণত হয়। এইরকম তড়িৎ যুক্ত পরমাণু বা মূলককে আয়ন বলে। পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত কনা গুলিকে ক্যাটায়ন এবং নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত কণাগুলোকে অ্যানায়ন বলে। এখন এই অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য মধ্যে দুটি তড়িৎদ্বার (প্লাটিনাম) আংশিক ডুবিয়ে তড়িৎদ্বারের একটির সঙ্গে ব্যাটারীর পজেটিভ মেরু এবং অপরটির সঙ্গে নেগেটিভ মেরু যোগ করা হলে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ হবে।

দ্রাব্যতা ও দ্রাব্যতার উপর উষ্ণতার প্রভাব

তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডের দিকে আকৃষ্ট হয়। ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডের সংস্পর্শে এসে প্রয়োজনমতো ইলেকট্রন গ্রহণ করে তড়িৎ নিরপেক্ষ পরমাণুতে পরিণত হয়। কখনো কখনো এইভাবে উৎপন্ন পরমাণু দ্রবণের জল বা অ্যানোড থেকে উৎপন্ন কোন পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে।

অ্যানায়নগুলি অ্যানোডের দিকে সহজেই আকৃষ্ট হয়এবং এসিডের সংস্পর্শে এসে বাড়তি ইলেকট্রন বর্জন করে তড়িৎ নিরপেক্ষ পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয়। এইভাবে তড়িৎ বিশ্লেষণ দ্বারা উৎপন্ন পদার্থ গুলি কেবল তড়িৎদ্বারে উৎপন্ন হয়।
যেমন গলিত সোডিয়াম ক্লোরাইডের মধ্যে প্লাটিনাম তড়িৎদ্বারে সাহায্যে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করলে ক্যাথোড Na+ আয়নগুলি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Na তে পরিণত হয় এবং Cl আয়ন গুলি অ্যানোডে ওর বাড়তি ইলেকট্রন বর্জন করে Cl2 তে পরিণত হয়। NaCl(গলিত) ⇋ Na+ + Cl

জারণ, বিজারণ – জারক ও বিজারক পদার্থ


কোন মৌল বা মূলকের যোজ্যতা যত, ওই মৌল বা মূলক এর একক তড়িৎ বর্তমান থাকে। যেমন
একযোজী মৌল বা মূলকের আয়নে এক একক তড়িৎ বর্তমান থাকে। যেমন Na+, K+, Cl

দ্বিযোজী মৌল বা মূলকের আয়নে 2 একক তড়িৎ বর্তমান থাকে। যেমন S=, Ca++, Cu++, SO4=

ত্রিযোজী মৌল বা মূলকের আয়নে 3 একক তড়িৎ বর্তমান থাকে। যেমন Al+++, (PO4)3-, Fe+++
তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের আয়ন রূপে এইভাবে বিয়োজন এর পদ্ধতিকে আয়নীয় বিয়োজন বলে।

ধাতব লবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে ধাতব আয়ন অর্থাৎ ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোড এবং অধাতব অর্থাৎ অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে মুক্ত হয়। তাই ধাতু গুলিকে তড়িৎ ধনাত্মক এবং অধাতু গুলোকে তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল বলে। যেমন Na+, K+, Ca++ প্রভৃতি ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে মুক্ত হয়। Na, K, Ca প্রভৃতি ধাতু গুলি তড়িৎ ধনাত্মক মৌল।
S=, Cl, Brপ্রভৃতি অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে মুক্ত হয়। তাই সালফার ক্লোরিন ব্রোমিন প্রভৃতি অধাতু গুলি তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল। জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে হাইড্রোজেন অধাতু হলেও হাইড্রোজেন প্লাস আয়ন ক্যাথোডে মুক্ত হয়, তাই হাইড্রোজেন তড়িৎ ধনাত্মক মৌল।

দ্রবণ | দ্রবণের বৈশিষ্ট্য ও প্রকার | দ্রাব ও দ্রাবক

ভোল্টা মিটার কি

কোন তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ করতে হলে পদার্থটিকে জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় একটি পাত্রের মধ্যে নেওয়া হয়। এই পাত্রটিকে ভোল্টা মিটার বলে।

তড়িৎদ্বার কি

ভোল্টমিটারের রাখা গলিত বা জলে দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্যের দ্রবণের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতু পাত ( প্লাটিনাম, কপার ইত্যাদি ) আংশিক ডুবিয়ে রাখা হয়। এই পাত দুটিকে তড়িৎদ্বার বলে।

অ্যানোড

যে তড়িৎদ্বার এর সঙ্গে ব্যাটারীর পজেটিভ মেরু যুক্ত থাকে সেই তড়িৎদ্বারটিকে অ্যানোড বলে। তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় অ্যানোডে অ্যানায়ন গুলি এসে তাদের ইলেকট্রন বর্জন করে।

ক্যাথোড

যে তড়িৎদ্বারের সঙ্গে ব্যাটারীর নেগেটিভ মেরুকে যোগ করা হয়, তাকে ক্যাথোড বলে। তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় ক্যাটায়ন গুলি ক্যাথোডে এসে ইলেকট্রন গ্রহণ করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here