সলিনয়েড | তড়িৎ চুম্বক : ব্যবহার ও মেরু নির্ণয় | চুম্বকের পার্থক্য

0
875

সলিনয়েড

তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে তড়িৎ চুম্বক প্রস্তুতি

একটি পরিবাহিতারকে পরপর কতকগুলি বৃত্তাকার পাকে জড়িয়ে চোঙের আকার দিলে ওই তারের কুণ্ডলীকে সলিনয়েড বলে। সলিনয়েড এর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হলে, ওর প্রত্যেক পাকে এক একটি বৃত্তাকার তড়িৎবাহী পরিবাহী বলে ধরা যায়। তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া প্রভাবে বৃত্তাকার পরিবাহীর এক পাশের তলে প্রবাহ অনুযায়ী দক্ষিণ মেরু ও অন্যপাশের তলে উত্তর মেরুর সৃষ্টি হয়। যে কোন দিক থেকে সলিনয়েডের অক্ষ বরাবর তাকালে যদি সলিনয়েডের ওই পাশে তড়িৎ প্রবাহ দক্ষিণাবর্তী হয়, তবে ওই পাশে দক্ষিণ মেরুর সৃষ্টি হয়। আর যদি তড়িৎপ্রবাহ বামাবর্তী হয়, তবে ওই পাশে উত্তর মেরুর সৃষ্টি হয়। কাছাকাছি দুটি বৃত্তাকার পরিবাহীর দুই পাশে উৎপন্ন মেরুগুলি বিপরীত মেরু বলে পরস্পরের ক্রিয়ায় নষ্ট হয়, কিন্তু সলিনয়েডের দুই প্রান্তের এক প্রান্তে দক্ষিণ মেরু এবং অপর প্রান্তে উত্তর মেরু থেকে যায়, ফলে সলিনয়েড দন্ড চুম্বকের মতো ব্যবহার করে। তড়িৎবাহী সলিনয়েডের মধ্যে একটি কাঁচা লোহার দন্ড রাখলে দণ্ডটি তড়িৎ চুম্বকে পরিণত হয়।

তড়িৎ চুম্বক

অন্তরিত তার দিয়ে একটি কাঁচা লোহার দন্ডের গায়ে বেশ কয়েক পাক জড়িয়ে, ওই তারে সমপ্রবাহী তড়িৎ চালনা করলে লোহার দন্ডটি চুম্বকত্ব পায় এবং এর দুই প্রান্তে দুই মেরুর সৃষ্টি হয়। তড়িৎ প্রবাহ যতক্ষণ চলে চুম্বকত্ব ততক্ষণে স্থায়ী হয়- তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে লোহার দন্ডটি চুম্বকত্ব হারিয়ে ফেলে।
তড়িৎ প্রবাহের সাহায্যে কোন চৌম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করা হলে সেই চুম্বককে তড়িৎ চুম্বক বলে।

খুব জোরালো তড়িৎ চুম্বক তৈরি করতে হলে কাঁচা লোহার দন্ডটিকে U আকারের করা হয়। কাঁচা লোহার দন্ডটিকে সলিনয়েডের মজ্জা বলে। এর দুই বাহুর উপর অন্তরিত তার জড়িয়ে একটি সলিনয়েড গঠন করা হয়। এক বাহুর উপর তার জরানো শেষ হলে ওই তারের প্রান্তটিকে বাহুটির উপরের পৃষ্ঠ থেকে বের করে অন্য বাহুটির তলা দিয়ে তারটিকে নিয়ে ওই বাহুটিকে জড়ানো হয়।এই বাহুটিতে তার জড়ানো শেষ হলে তারের শেষপ্রান্তটি অপরটির শেষ প্রান্ত থেকে বের হয়। এইভাবে দুই বাহুতে পরস্পরের বিপরীত দিকে তার জড়ানো হয়। যেমন উপরের ছবিতে S বাহুতে তার জড়িয়ে তারের প্রান্তটিকে বাহুটির উপর থেকে বের করে N বাহুটির তলা দিয়ে বের করে N বাহুটিকে জড়ানো হয়েছে।

অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ কি? পার্থক্য ও সম্পর্ক সহজ ভাবে বুঝি

তড়িৎ চুম্বকের মেরু নির্ণয়

তড়িৎ চুম্বকের মধ্য দিয়ে সমপ্রবাহি তড়িৎ – প্রবাহ হলে, লোহার দন্ডের যে প্রান্তের দিকে লম্বভাবে তাকালে কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে ঘড়ির কাটার দিকে তড়িৎ প্রবাহ হয়, সেই প্রান্তে দক্ষিণ মেরু এবং যে প্রান্তে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে তড়িৎ প্রবাহ হয়, সেই প্রান্তে উত্তর মেরুর সৃষ্টি হয়।

তড়িৎ চুম্বকের মেরু শক্তি কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে

  • তড়িৎ প্রবাহের ফলে কাঁচা লোহার দন্ডটি যে চুম্বকত্ব পায়, সেই তড়িৎ চুম্বকের শক্তি নিচের বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে
  • ক) মজ্জাটির পদার্থগত গুণের উপর।
  • খ) প্রবাহের তীব্রতার উপর
  • প্রবাহ বাড়ালে চুম্বকের শক্তি বাড়ে। আবার প্রবাহের অভিমুখ পরিবর্তন করলে তড়িৎ চুম্বকের মেরু বদলে যায়। প্রবাহ বন্ধ করলে চুম্বকত্ব লোপ পায়।
  • গ) মদ যায় তারের পাক সংখ্যা বাড়লেও চুম্বক শক্তি বাড়ে। পাক সংখ্যা এবং তড়িৎ প্রবাহের মাত্রা ( অ্যাম্পিয়ার এককে) এই দুইয়ের গুণফলকে এম্পিয়ার পাক বলে।
  • ঘ) মজ্জার চৌম্বক প্রবণতা যত বেশি হয়, তড়িৎ চুম্বকের শক্তি তত বেশি হয়। আবার চুম্বক ধারণক্ষমতা শুন্য মানের হওয়া চাই।
  • ঙ) U আকৃতির তড়িৎ চুম্বকের দুই মেরু সঙ্গে বিশেষ আকৃতির মেরু মুখ যোগ করে খুব কম জায়গায় শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি করা যায়।

কৃত্রিম চুম্বক ও তড়িৎ চুম্বকের মধ্যে পার্থক্য

ক) তড়িৎ চুম্বক ব্যবহারের সুবিধা
খুব শক্তিশালী কৃত্রিম চুম্বক তৈরি করা ব্যয়সাপেক্ষ। তাছাড়া এই রকম চুম্বকের আকার বিরাট হবে যা রক্ষা করা সহজ নয়। কিন্তু খুব শক্তিশালী তড়িৎ চুম্বক তৈরি করা এবং রক্ষা করা সহজ। এর আকারও খুব বড় হয় না।
খ) প্রবাহের তীব্রতা এবং এম্পিয়ার পাক সংখ্যার পরিবর্তন করে তড়িৎ চুম্বকের চৌম্বক শক্তি ইচ্ছামত বাড়ানো যায় বা লোপ করা যায়। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম চুম্বকের শক্তি ইচ্ছামত বাড়ানো বা কমানো যায় না।
গ) তড়িৎ চুম্বক প্রবাহের অভিমুখ পরিবর্তন করে চৌম্বক ক্ষেত্রের অভিমুখ ইচ্ছামত বদলানো যায়। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম চুম্বকের মেরুর অভিমুখ পরিবর্তন করা যায় না।

শক্তির রূপান্তর| শক্তির প্রকারভেদ| শক্তির নিত্যতা সূত্র| শক্তির উৎস

চুম্বকের ব্যবহার

ক) কারখানায় তড়িৎ চুম্বকের সাহায্যে খুব ভারী লোহার বস্তুকে এক জায়গা থেকে তুলে অন্য জায়গায় সরানো হয়।
খ) অচৌম্বক পদার্থের মিশ্রণ থেকে লোহাকে বা চৌম্বক পদার্থকে পৃথক করার কাজে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
গ) চোখে লোহার টুকরো পড়লে ওই লোহার টুকরো বের করতে ডাক্তারেরা তড়িৎ চুম্বকের সাহায্য নেন।
ঘ) ক্ষণস্থায়ী চুম্বকের প্রয়োজন হয়, এইরকম কাজে এর বহুল ব্যবহার আছে।লাউডস্পিকার, বৈদ্যুতিক ঘন্টা, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন প্রভৃতি যন্ত্রে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
ঙ) বৈদ্যুতিক পাখা, ট্রাম, ইলেকট্রিক ট্রেন, বৈদ্যুতিক মোটর, ডায়নামো প্রভৃতি যন্ত্রে সীমিত স্থানে তীব্র চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হয়।
চ) স্থায়ী চুম্বক তৈরির কাজে শক্তিশালী তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
ছ) আবেশ কুণ্ডলী প্রস্তুতিতে এর ব্যবহার আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here