অন্যান্য সব তরঙ্গের মতো শব্দ তরঙ্গেরও নির্দিষ্ট গতিবেগ আছে। দূরে যখন কয়লার ট্রেন চালু করে তখন তার ধোঁয়া আমরা দেখতে পাই কিন্তু শব্দ বেশ কিছুক্ষণ পরে শুনতে পাই। আবার আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে আগে আমরা আলো দেখি তার বেশ কিছুক্ষণ পর আমরা মেঘ গর্জনের আওয়াজ শুনতে পাই। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ধোঁয়া বা বিদ্যুতের আলো এবং ওইখানে সৃষ্টি শব্দ একইসঙ্গে উৎপন্ন হয়।
দৃষ্টান্ত থেকে আমরা বলতে পারি যে, দূরত্ব অতিক্রম করতে শব্দ কিছুটা সময় নেয়। অর্থাৎ, শব্দের একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ আছে।
কোন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে শব্দ যে দূরত্ব অতিক্রম, তাকে ওই মাধ্যমে শব্দের বেগ বা গতিবেগ বলে।
বায়ু মাধ্যমে শব্দের বেগ নির্ণয়: এরাগোর (অ্যারোগো Arago) পরীক্ষা ও ত্রুটি
1887 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী অ্যারাগো একটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে শব্দের বেগ নির্ণয় করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে 18 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুটি পাহাড়ের শেষে দুজন পর্যবেক্ষককে দাঁড় করানো হলো। একজন পর্যবেক্ষক শূন্যে বন্দুকের গুলি ছুড়লেন; অন্য জন পর্যবেক্ষক বন্দুকের আলোর ঝলকানি দেখে সঙ্গে সঙ্গে স্টপ ওয়াচ চালু করলেন এবং যখন বন্দুকের শব্দ কর্ণগোচর হলো তখন স্টপ ওয়াচটি বন্ধ করলেন। এখানে মোট দূরত্ব যদি d হয় এবং মোট সময়ের ব্যবধান যদি t হয়; তবে d দূরত্ব t সময়ে অতিক্রম করে। অতএব, শব্দের বেগ V = d/t হবে।
এরাগোর (অ্যারাগো Arago) পরীক্ষার ত্রুটি
এরাগোর (অ্যারাগো Arago) পরীক্ষার প্রধানত দুটি ত্রুটি আছে।
১. বায়ু প্রবাহ জনিত ত্রুটি ও
২. পর্যবেক্ষকের ব্যক্তিগত ত্রুটি।
১. এরাগোর (অ্যারাগো Arago) পরীক্ষার বায়ু প্রবাহ জনিত ত্রুটি
এই প্রক্রিয়ায় শব্দের বেগ নির্ণয় কিছুটা ত্রুটি থেকে যায়। কারণ বায়ু যে দিকে প্রবাহিত হচ্ছে শব্দ সেইদিকে সঞ্চালিত হলে শব্দের বেগ প্রকৃত বেগের চেয়ে বেশি হবে।
অপরপক্ষে যেদিকে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে তার বিপরীত দিকে শব্দ সঞ্চালিত হলে শব্দের বেগ শব্দের প্রকৃত বেগের থেকে কম হবে।
নিচের প্রক্রিয়ায় এই ত্রুটি সংশোধন করা যায়
এই ত্রুটি দূর করতে হলে পাহাড় দুটির উপরে থাকা উভয় পর্যবেক্ষকের কাছে বন্দুক এবং স্টপ ওয়াচ রাখতে হবে। পর্যায়ক্রমে উভয়েই বন্দুকের শব্দ করবেন এবং শব্দ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানোর সময় লিপিবদ্ধ করবেন।
ধরি শব্দের প্রকৃত বেগ V মিটার/ সেকেন্ড । প্রথম পর্যবেক্ষকের দিক থেকে দ্বিতীয় পর্যবেক্ষকের দিকে v মিটার/সেকেন্ড বেগে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের দূরত্ব d ধরি।
প্রথম পর্যবেক্ষক বন্দূক ছুড়ল এবং দ্বিতীয় পর্যবেক্ষক দেখল যে বন্দুকের আলোর ঝলক এবং শব্দ এসে পৌঁছানোর সময়ের ব্যবধান হল t1 সেকেন্ড। এক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের দিকে শব্দ যাচ্ছে, তাই শব্দের গতিবেগ =(V+v) মিটার/সেকেন্ড হবে।
অতএব, d = (V+v)t1
বা, d/t1 =V+v ….i
এবার দ্বিতীয় পর্যবেক্ষক বন্দূক ছুড়ল। আলোর ঝলক দেখে প্রথম পর্যবেক্ষক ঘড়ি চালিয়ে দেখল শব্দ এসে পৌঁছানোর সময় হল t2 সেকেন্ড। এক্ষেত্রে বায়ুর বিপরীত দিকে শব্দ যাচ্ছে বলে শব্দের বেগ হবে (V-v) মিটার/ সেকেন্ড।
অতএব, d = (V-v)t2
বা, d/t2 =( V-v )…..ii
i এবং ii নম্বর সমীকরণ যোগ করে, d/t1 + d/t2 = V+v+V-v
বা, d(1/t1 + 1/t2)= 2V
বা, V = d/2(1/t1 + 1/t2
এখানে, d ,t1 এবং t2 জানা আছে, কাজেই বায়ুপ্রবাহ থাকা সত্বেও বায়ুর মধ্যে শব্দের প্রকৃত বেগ V নির্ণয় করা যায় ।
এরাগোর পরীক্ষায় পর্যবেক্ষকের ব্যক্তিগত ত্রুটি
বন্দুকের ঝালক দেখার সঙ্গে সঙ্গে বা শব্দ কানে এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে কেউ পারেনা। কমবেশি কিছু ত্রুটি থেকেই যায়। তাছাড়া কোন কিছু আমাদের ইন্দ্র অস্পর্শী হওয়ার পরে মস্তিষ্কে অনুভূতি জায়গাতে কিছুটা সময় নেয়। কিন্তু এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য আমরা স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করতে পারি।
শব্দের বেগ নির্ণয়ের সূত্র
শব্দের বেগ নির্ণয়ের সূত্র গুলি নিচে দেওয়া হল —
শব্দের বেগ সম্পর্কিত নিউটনের সূত্র
বিজ্ঞানী নিউটন গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের গতিবেগ সম্পর্কে তত্ত্বমূলক আলোচনা থেকে একটি সূত্র প্রতিষ্ঠা করেন, এই সূত্রটি গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের গতিবেগ সম্পর্কে নিউটনের সূত্র নামে পরিচিত।
নিউটনের শব্দের বেগ নির্ণয়ের সূত্রটি হল
শব্দের বেগ = V, গ্যাসের চাপ= P এবং মাধ্যমের ঘনত্ব = d হলে,
V=√P/d হবে।
বাস্তব পরীক্ষায় দেখা যায়, নির্ণীত শব্দের বেগের সঙ্গে নিউটনের সূত্র থেকে নির্ণীত শব্দের বেগ এক হয় না। বরং এই সূত্র থেকে পাওয়া শব্দের বেগ প্রকৃত শব্দের বেগের থেকে কম হয়।
বিজ্ঞানী ল্যাপলাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শব্দের বেগ নির্ণয়ের সূত্র
বিজ্ঞানী ল্যাপলাস নিউটনের সূত্রটি সংশোধন করেন। বিজ্ঞানী ল্যাপলাসের মতে গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের সঞ্চালিত হলে গ্যাসের চাপের দ্রুত পরিবর্তন ঘটে তার ফলে গ্যাসীয় মাধ্যমে উষ্ণতা পরিবর্তিত হয়। ল্যাপলাস নিউটনের সূত্র সংশোধন করে দেখান যে, গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ V=√KP/d , এখানে K একটি ধ্রুবক। দ্বি পারমাণবিক গ্যাস যেমন অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, বায়ু প্রভৃতি ক্ষেত্রে K= 1.41। ল্যাপলাসের সূত্র থেকে বায়ুতে শব্দের যে গতিবেগ পাওয়া যায় তা পরীক্ষা লব্ধ শব্দের গতিবেগের প্রায় সমান।
বায়ুতে শব্দের বেগ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে
বায়ুতে শব্দের বেগ যেতে বিষয়ের উপরে নির্ভর করে এবং তাদের প্রভাব কতটা তা নিচে আলোচনা করা হলো—-
১. বায়ুতে শব্দের বেগের উপর ঘনত্বের প্রভাব: শব্দের বেগ ও ঘনত্বের সম্পর্ক
নিউটনের সূত্র থেকে বলা যায়, গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ ওই গ্যাসের ঘনত্বের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ হালকা গ্যাসের শব্দের বেগ বেশি এবং ভারী গ্যাসের শব্দের বেগ কম হবে। যেমন, হাইড্রোজেন গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা তাই হাইড্রোজেন গ্যাসের শব্দের বেগ বায়ুর তুলনায় বেশি হবে। আবার একই চাপ উষ্ণতায় অক্সিজেন গ্যাসের ঘনত্ব হাইড্রোজেন গ্যাসের ঘনত্ব 16 গুণ। এখন অন্যান্য বিষয়ে অপরিবর্তিত থাকলে অক্সিজেন গ্যাসের মধ্যে শব্দের বেগ হাইড্রোজেন গ্যাসের মধ্যে শব্দের গতিবেগ এর 1/4 হবে।
২. শব্দের বেগ ও তাপমাত্রার সম্পর্ক: বায়ুতে শব্দের বেগের উপর তাপমাত্রা (উষ্ণতা)র প্রভাব
যদিও নিউটনের সূত্রের সরাসরি উষ্ণতার উল্লেখ নেই তবুও উষ্ণতার পরিবর্তনে গ্যাসের ঘনত্ব পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে শব্দের বেগের উপর তাপমাত্রা (উষ্ণতা) র প্রভাব আছে। এখন আমরা শব্দের বেগ ও তাপমাত্রার সম্পর্ক নির্ণয় করব।
মাধ্যমের ঘনত্বের উপর শব্দের বেগ নির্ভর করে। উষ্ণতা বাড়লে গ্যাসের ঘনত্ব কমে, ফলে শব্দের বেগ বাড়ে; আবার উষ্ণতা কমলে ঘনত্ব বাড়ে, হরে শব্দের বেগ কমে। গ্রীষ্মকালে বাতাসের উষ্ণতা বাড়ে, তাই শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে বাতাসে শব্দের বেগ বেশি। একই কারণে দিনের বেলায় শব্দের বেগ রাতের বেলায় শব্দের বেগের চেয়ে বেশি হয়।
৩. শব্দের বেগের উপর চাপের প্রভাব: শব্দের বেগ ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক
উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকলে গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ ওই মাধ্যমের চাপের উপর নির্ভর করে না। কারণ বয়েলের সূত্র অনুসারে উষ্ণতা স্থির থাকলে নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ এবং ঘনত্ব পরস্পরের সমানুপাতিক হয়। অর্থাৎ, কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ P এবং ঘনত্ব d হলে, বয়েলের সূত্র অনুসারে P/d =ধ্রুবক। অতএব, 0°C উষ্ণতায় 76 সেন্টিমিটার পারদ স্তম্ভের চাপে কোন গ্যাসের শব্দের বেগ 332 মিটার/সেকেন্ড হলে অপরিবর্তিত উষ্ণতায় যে কোনো চাপে ওই গ্যাসের শব্দের গতিবেগ 332 মিটার/সেকেন্ড হবে।
৪. শব্দের বেগ ও আর্দ্রতার সম্পর্ক: বায়ুতে শব্দের বেগের উপর আর্দ্রতার প্রভাব
বায়ুতে শব্দের বেগ বায়ুর আদ্রতা উপর নির্ভর করে। বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি হলে ওর ঘনত্ব কমে, ফলে শব্দের বেগ বাড়ে; পক্ষান্তরে, আর্দ্রতা কম থাকলে বায়ুর ঘনত্ব বাড়ে,ফলে শব্দের বেগ কমে। বর্ষাকালে বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ে, শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে তাই শীতকালের চেয়ে বর্ষাকালে বাতাসে শব্দের বেগ বেশি হয়।
কঠিন ও তরলের পদার্থের মধ্যে শব্দের বেগ
যে কোন মাধ্যম বেশি স্থিতিস্থাপক হলে সেই মাধ্যমে শব্দের গতিবেগ বেশি হয়। এই কারণে কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের বেগের থেকে বেশি। বিজ্ঞানী বায়ট কতগুলো লোহার পাইপ যুক্ত করে 1000 মিটার দীর্ঘ একটি লোহার পাইপ তৈরি করেন। এই পাইপের এক মুখে শব্দ করে অপর প্রান্তে তিনি পরপর দুটি শব্দ শুনতে পেলেন। এই দুটি শব্দের ভেতর সময়ের ব্যবধান নির্ণয় করে তিনি সিদ্ধান্ত করেন যে, লোহার মধ্যে শব্দের বেগ বায়ুতে শব্দের বেগ এর প্রায় 15 গুণ বেশি।
0° সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় বায়ুতে শব্দের বেগ সেকেন্ডে 332 মিটার, কিন্তু ইস্পাতের মধ্যে শব্দের বেগ সেকেন্ডে 4700 থেকে 5200 মিটার
তরলের মধ্যে শব্দের বেগ বায়ুতে শব্দের বেগের চেয়ে বেশি, কিন্তু কঠিনের মধ্যে শব্দের বেগের চেয়ে কম। বিজ্ঞানী কোলাডন এবং স্ট্রাম সর্বপ্রথম জলে শব্দের বেগ নির্ণয় করেন। জলের শব্দের বেগ বায়ুতে শব্দের বেগ এর প্রায় চারগুণ বেশি।
4° সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় জলের শব্দের বেগ সেকেন্ডে 1436 মিটার
আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর কিছুক্ষণ পরে আমরা মেঘের গর্জন শুনতে পায় কেন
মেঘে বিদ্যুতের ঝলক এবং গর্জনের শব্দ একইসঙ্গে উৎপন্ন হয়। আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর কিছুক্ষণ পর আমরা মেঘের গর্জন শুনতে পাই, এর কারণ হলো-
আলোর গতিবেগ সেকেন্ডে এক লক্ষ 86000 মাইল থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে প্রায় কোন সময় লাগে না বলে ধরা হয়, তবে শব্দের বেগ অনেক কম, বায়ুতে শব্দের বেগ প্রতি সেকেন্ডে 1120 ফুট বা 332 মিটার বলে মেঘ থেকে পৃথিবীতে শব্দ আসছে কিছু সময় লাগে। সেই জন্য বিদ্যুতের ঝলক দেখার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ শোনা যায় না।
বজ্রগর্ভ মেঘের দূরত্ব কিভাবে নির্ণয় করা যায়
বজ্রগর্ভ মেঘের দূরত্ব নির্ণয় করার জন্য একটি স্টপ ওয়াচের দরকার। যে মুহুর্তে বিদ্যুৎ ঝলক দেখা যায় সেই মুহূর্তে স্টপ ওয়াচ চালু করা হয় এবং বাজ পড়ার শব্দ শুনে অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ থেকে বিদ্যুত চমক এবং বাজ পড়ার শব্দ শোনার মধ্যে কত সময় অতিবাহিত হয়েছে তা মাপা যায়। যদি ওই সময়ের অবকাশ t সেকেন্ড হয় এবং বায়ুতে শব্দের গতিবেগ V মিটার/ সেকেন্ড হয় তবে, পৃথিবী থেকে মেঘের দূরত্ব = বায়ুতে শব্দের বেগ × সময় = V×t মিটার
এখানে t এর মান এবং বায়ুতে শব্দের বেগের মান জানা থাকায় পরীক্ষাটির সাহায্যে সহজেই মেঘের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়।
শীতকালের তুলনায় গরমকালে বায়ুতে শব্দের বেগ বেশি হয় কেন
গরমকালের বায়ুর তাপমাত্রা শীতকালের তাপমাত্রা তুলনায় বেশি থাকে। আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বায়ুতে শব্দের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং তাপমাত্রা কমে গেলে বায়ুতে শব্দের বেগ কমে যায়। সেই জন্য শীতকালের তুলনায় গরমকালে বায়ুতে শব্দের বেগ বেশি হয়।
দূরে কামানের শব্দ শুনে ঘড়ি মেলালে ঘড়িতে সঠিক সময় দেয়না কেন
দূরের কোনো কামানের বা শব্দের সঙ্গে ঘড়ি মেলালে ঘড়ি সঠিক সময় দেয়না; কারণ, কামানের ধ্বনি স্থান থেকে শব্দ ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতে কিছুটা সময় নেয়। ফলে ওই ব্যক্তি যখন কামানের শব্দ শুনবে, আসলে তার বেশ কিছু আগে এই শব্দ উৎপন্ন করা হয়েছিল। সেই জন্য দূরে শব্দ শুনে ঘড়ি মেলালে ঘড়িটি স্লো দেখাবে।
একটি লম্বা লোহার পাইপের একমুখে শব্দ করলে অপর প্রান্তে দুবার শব্দ শোনা যায় কেন
লম্বা লোহার পাইপের একমুখে শব্দ করলে শব্দ লোহার মধ্যে দিয়ে এবং পাইপের ভিতরে থাকা বাতাসের মধ্য দিয়ে অপর প্রান্তে পৌঁছায়। যেহেতু লোহার মধ্যে শব্দের গতিবেগ বায়ুর মধ্যে শব্দের গতিবেগ এর প্রায় 15 গুণ বেশি, তাই লোহার মধ্যে দিয়ে আসা শব্দটি বায়ুর মধ্যে দিয়ে আসার শব্দের অনেক আগে পাইপের অপরপ্রান্তে পৌঁছায়। এই কারণে লম্বা পাইপের একমুখে শব্দ করলে অপর প্রান্তে দুবার শব্দ শোনা যায়।
বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ কত
নিজের টেবিলে বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ কত হয় তা দেখানো হলো
মাধ্যম | শব্দের বেগ |
বাতাস | 332 মিটার/ সেকেন্ড |
অক্সিজেন | 317 মিটার/ সেকেন্ড |
কারণ ডাই-অক্সাইড | 257 মিটার/ সেকেন্ড |
হাইড্রোজেন | 1285 মিটার/ সেকেন্ড |
জল | 1436 মিটার/ সেকেন্ড |
কপার | 3970 মিটার/ সেকেন্ড |
স্টিল | 4700-5200 মিটার/ সেকেন্ড |
কাঁচ | 4000-5000 মিটার/ সেকেন্ড |
শব্দের বেগ সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
বর্ষাকালে শব্দ জোরে শোনা যায় কেন
বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকার ফলে বায়ুর ঘনত্ব কোন বায়ুর ঘনত্ব থেকে কম হয়। আমরা জানি বায়ুর ঘনত্ব কমে গেলে বায়ুতে শব্দের বেগ বাড়ে। এই কারণে বর্ষাকালে শব্দ জোরে শোনা যায়।
বাতাসে শব্দের বেগ কত
বাতাসে শব্দের বেগ-
নানা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে স্থির এবং শুষ্ক বাতাসের 0° সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় শব্দের বেগ 332 মিটার/সেকেন্ড বা 1120 ফুট/সেকেন্ড।
উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে শব্দের বেগের সম্পর্ক কি
উষ্ণতা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে শব্দের বেগের সম্পর্ক-
বায়ু বা গ্যাসের উষ্ণতা প্রতি 1° সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধির জন্য শব্দের বেগ প্রায় 61 সেন্টিমিটার করে বেড়ে যায়।
পানিতে বা জলে শব্দের বেগ কত
পানিতে বা জলে শব্দের বেগ-
4 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় জলের শব্দের বেগ সেকেন্ডে 1436 মিটার
বায়ুতে শব্দের বেগ নির্ভর করে কিসের উপর
বায়ুতে শব্দের বেগ নির্ভর করে-
১. বায়ুর ঘনত্ব,
২. বায়ুর উষ্ণতা এবং
৩. বায়ুর আদ্রতা
এক্ষেত্রে একটি কথা বলা যায় যে উষ্ণতা স্থির থাকলে বায়ুতে শব্দের বেগ চাপের উপর নির্ভর করে না।
কোন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি তা নির্ণয় করা গেছে
দেখা গেছে কঠিন মাধ্যমে তরল মাধ্যম ও বায়বীয় মাধ্যমের চেয়ে শব্দের বেগ অনেক বেশি হয়।
লোহাতে শব্দের বেগ কত
লোহাতে শব্দের বেগ-
লোহাতে শব্দের বেগ বায়ু মাধ্যমের থেকে প্রায় 15 গুণ বেশি হয়। অর্থাৎ লোহাতে শব্দের বেগ প্রতি সেকেন্ডে 4700-5200 মিটার হয়।
কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি কেন
আমরা জানি ঘনত্ব বাড়ার সাথে সাথে শব্দের বেগ কমে যায়। তাহলে প্রশ্ন আসে কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি হয় কেন। এর কারন হল আমরা জানি, যে মাধ্যম বেশি স্থিতিস্থাপক সেই মাধ্যমে শব্দের বেগ সবসময় বেশি হয়। কঠিন মাধ্যমে স্থিতিস্থাপকতা বেশি হওয়ায় অন্য মাধ্যমে তুলনায় কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি হয়।
শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ কত
আমরা জানি শব্দতরঙ্গ কোন মাধ্যম ছাড়া বিস্তার লাভ করতে পারে না। তাই শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ শূন্য হবে।
বাতাসে শব্দের বেগ কি দ্বারা প্রভাবিত হয় না
বাতাসে শব্দের বেগ চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
পানি ও বরফের মধ্যে কোন মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি?