সরস্বতী রাজমনি ( সরস্বতী রাজামনি ) র জীবনী ও রচনা

0
45

বাবা-মা মেয়ের নাম রেখেছিলেন রাজামনি। কিন্তু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস তাকে সরস্বতী বলে ডাকতেন সরস্বতী রাজমনি ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব জেদি ছিলেন। একবার যেটা করবেন বলে ঠিক করেন, সেটা করেই ছাড়েন। 16 বছরের সরস্বতী রাজমনির জেদের কাছে হার স্বীকার করেছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজে শামিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন। যে বয়সে মেয়েদের স্বামী-সংসারের স্বপ্ন দেখার কথা সেই বয়সে তিনি তাঁর স্বপ্নের নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে গড়া আজাদ হিন্দ ফৌজের গুপ্তচর হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন।
সরস্বতী রাজমনির জন্ম বার্মামুলুকে ১৯২৮ সালে। বাবা ছিলেন ত্রিচির ধনী খনি ব্যবসায়ী। কিন্তু সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্ধ সমর্থক হওয়ায় ব্রিটিশ সরকারের দমন-পীড়ন এড়াতে তিনি সপরিবারে বার্মায় থাকতেন।

সরস্বতী রাজামনি ও সুভাস চন্দ্র বসু

সরস্বতী রাজা মনি বড় হয়ে ছিলেন খুবই উদার’ পরিবেশে। বড় হওয়ার পর তিনি নেতাজী এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের কথা জানতে পারেন। যেহেতু তিনি ছোটবেলা থেকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন, তাই নেতাজির তেজোদ্দীপ্ত নেতৃত্ব এবং আগুন ঝরানো কথাবার্তা তাকে দেশের মুক্তির জন্য লড়াই করতে সহজেই উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিল। রাজামনি যখনই নেতাজির স্মৃতি রোমান্থন করেন তার চোখ আনন্দে উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করে। অনর্গল বলে চলেন নেতাজির কথা।

জেদি সরস্বতী রাজমনি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে নেতাজি বার্মায় গিয়েছিলেন। গান্ধীজী বা অন্যান্য কংগ্রেস নেতার মত অহিংসার কথা না বলে স্বাধীনতার জন্য প্রতিটি দেশবাসীকে অস্ত্র তুলে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সরস্বতী রাজামনি। এক মুহূর্ত দেরি না করে তার যাবতীয় অলংকার দান করেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের তহবিলে। এত বড় একটি ঘটনা নেতাজীর নজর এড়ায়নি। খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে পেরেছিলেন রাজামনি বার্মায় বসবাসকারী এক ধনী ভারতীয় পরিবারের সন্তান। পরের দিনই তিনি রাজামনির বাবার সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন “ছেলেমানুষি করে ওসব গয়না দিয়ে দিয়েছে। তাই আমি এগুলো ফেরত দিতে এলাম।”রাজামনির বাবা ও আজাধীন ফৌজের তহবিলে নিয়মিত দান করতেন। নেতাজির কথায় তিনি শুধু হেসেছিলেন মাত্র। রাজামনি বলেছিলেন “ওগুলো বাবার কিনে দেওয়া নয়, আমার কেনা। আমার গহনা আমি দিয়েছি। কিছুতেই ফেরত নেব না।” কিশোরী সরস্বতী রাজামনির এই দৃঢ়তায় নেতাজি মুগ্ধ হন। ওইদিনই সরস্বতী রাজামনি ফৌজে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। নেতাজি আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু এবারও জয়ী হয় রাজামনির দৃঢ়তা। পরেরদিন রাজামনি এবং তার চার বন্ধুকে আজাদ হিন্দ ফৌজের গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

সরস্বতী রাজামনি আজাদ হিন্দ ফৌজের গুপ্তচর

ছেলে সেজে রাজা মনি ও তার বন্ধুরা ব্রিটিশ সৈন্য শিবির এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বাসস্থানে ঘুরে বেড়াতেন। সংগ্রহ করতে নানা গোপন খবর। দু’বছর ধরে চলেছিল এই প্রক্রিয়া। নেতাজির নির্দেশ ছিল যথেষ্ট সাবধানতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে। কেউ যেন ধরা না পড়ে। কিন্তু তা সত্বেও একজন ধরা পড়ে গেল। সরস্বতী রাজমনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বন্ধুকে ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্ত করে আনবেন। নর্তকী সেজে তিনি ব্রিটিশ গুহায় ঢুকেছিলেন। ছাড়িয়ে এনেছিলেন তার বন্ধুকে। পালাবার সময় এক ব্রিটিশ সৈন্যের ছোড়া গুলি তার পায়ে এসে লাগে। হাঁটতে অত্যন্ত অসুবিধা হচ্ছিল। পিছনে ব্রিটিশ সৈন্যরা ধাওয়া করেছিল। এরকম সময় তিনি একটি গাছে উঠে গুলিবিদ্ধ পাসহ তিন দিন ধরে ওই গাছে অবস্থান করেন। নিচে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী তাকে হর্নে কুকুরের মত খুঁজে বেড়াচ্ছিল। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হওয়ার কারণে তার পা খোড়া হয়ে গেছিল। সারা জীবন তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটেন এবং তা নিয়ে তিনি গর্ববোধ করতেন কারণ তিনি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এই অবস্থার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু কেউ সহানুভূতি দেখালে তিনি রেগে যেতেন। মেরুদন্ড সোজা রেখে গুলির চিহ্ন দেখিয়ে বলেন “এই চিহ্ন আমার লড়াইয়ের স্মৃতি, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার।

সরস্বতী রাজামনির জীবনাবসান

সরস্বতী রাজমণি জন্মগ্রহণ করেছিলেন 1928 সালে। নেতাজির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পর তিনি গোয়েন্দা হিসেবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেন এবং স্বাধীনতোত্তর সময়ে ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী আই এন এ সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। এখানেও তিনি সামরিক গোয়েন্দা শাখায় কাজ নিয়েছিলেন এবং অত্যন্ত সুপরিচিতর সাথে নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেছিলেন। অবশেষে 13 ই জানুয়ারি 2018 সালে 90 বছর বয়সে সরস্বতী রাজামনি দেহত্যাগ করেন।

image source TheBetterIndia & Wikipedia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here