সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ও অতিপৃক্ত দ্রবণ | সম্পর্ক ও সনাক্তকরণ

1
2250

গাঢ়ত্ব অনুযায়ী দ্রবণ এর শ্রেণীবিভাগ

গাঢ়ত্ব অনুযায়ী দ্রবণকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
১. অসম্পৃক্ত দ্রবণ
২. সম্পৃক্ত দ্রবণ
৩. অতিপৃক্ত দ্রবণ

অসম্পৃক্ত দ্রবণ কাকে বলে

এক কাপ জলে এক চামচ চিনি যোগ করে নাড়ালে ওই চিনি জলে দ্রবীভূত হয়ে সমসত্ব দ্রবণ উৎপন্ন করে। এই দ্রবণ ঘরের উষ্ণতায় অসম্পৃক্ত। কারণ ওর মধ্যে আরও চিনি যোগ করলে ওই কাপের জলে দ্রবীভূত হয়ে যাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ওর ঘনত্ব বাড়বে। কারণ দ্রাবকের ( জল ) আরও চিনি গ্রহণ করার ক্ষমতা থেকে যায়।

অসম্পৃক্ত দ্রবণের সংজ্ঞা:

কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন দ্রবণ যদি আরও বেশি দ্রাবক দ্রবীভূত করতে সক্ষম হয়, তাহলে ওই নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঐ দ্রবণকে অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলে।
কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় যে দ্রবণ আরও দ্রাব গ্রহণ করতে পারে তাকে ঐ উষ্ণতায় ঐ দ্রাবকের অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলে। অসম্পৃক্ত দ্রবণ এ আরও দ্রাব যোগ করলে দ্রবণের ঘনত্ব বেড়ে যায়। অসম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রাবের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকলে সেই দ্রবণকে লঘু দ্রবণ বলে। দ্রবণে দ্রাবের পরিমাণ বেশি থাকলে সেই দ্রবণকে গাঢ় দ্রবন বলে।

২. সম্পৃক্ত দ্রবণ কাকে বলে

ঘরের উষ্ণতায় 1 কাপ জলের মধ্যে অল্প অল্প করে চিনি যোগ করা হলো। এবং একটি কাচ দন্ডের সাহায্যে উৎপন্ন দ্রবণটি কেনারা হলো।এই ভাবে চিনি যোগ করতে করতে এমন এক সময় আসবে যখন দেখা যাবে দ্রবণটিকে নাড়া সত্ত্বেও শেষবারে যে চিনি জলে যোগ করা হলো তা আর দ্রবীভূত হচ্ছে না। কিছু চিনি অদ্রাব্য অবস্থায় কাপের তলদেশে পড়ে আছে। অর্থাৎ ওই অতিরিক্ত চিনিকে জল আর গ্রহণ করতে পারছে না।এই অবস্থায় কাপের তলদেশে সঞ্চিত অদ্রবীভূত চিনির উপরে যে স্বচ্ছ সমসত্ত দ্রবন তৈরি হলো, তাকে ওই উষ্ণতায় চিনির সম্পৃক্ত দ্রবণ বলে।

সম্পৃক্ত দ্রবণ এর সংজ্ঞা

কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায়, কোন দ্রাবকের মধ্যে কোন দ্রাব সর্বোচ্চ যে পরিমাণে দ্রবীভূত হতে পারে, তা সম্পন্ন হলে যে দ্রবণ উৎপন্ন হয়, তাকে ওই উষ্ণতায় ঐ দ্রাবের সম্পৃক্ত দ্রবণ বলে।

সম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রাবকের দ্রাব গ্রহণের ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যায়, তাই দ্রাবক আর অতিরিক্ত দ্রাব গ্রহণ করতে পারে না। সম্পৃক্ত দ্রবণ এ আর ও দ্রাব যোগ করলেও দ্রবণের ঘনত্বের কোন পরিবর্তন হয় না।

সম্পৃক্ত দ্রবণ প্রস্তুতি

একটি বিকারে কিছু পরিমান জল নিয়ে জলের মধ্যে এক চামচ তুঁতে মিশিয়ে নাড়া হলো, দেখা গেল, কঠিন তুঁতে অদৃশ্য হয়ে জলের রং নীল হয়ে গেল। আরো এক চামচ টু তে যোগ করেন নেড়ে দেওয়া হল, দেখা গেল ওই গুলিও জলে দ্রবীভূত হয়ে গেল।এইভাবে ওই জলের মধ্যে আরো তুঁতে যোগ করে কাচদণ্ড দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নাড়া সত্বেও শেষবার যে তুঁতে যোগ করা হয়েছিল তা আর দ্রবীভূত হচ্ছে না। তলায় অদ্রাব্য অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। উপরের পরিষ্কার দ্রবণটিকে অন্য একটি পাত্রে ঢেলে রাখা হলো। এই দ্রবণটি হল ঘরের উষ্ণতায় তুতের সম্পৃক্ত দ্রবণ।

কোন দ্রবণের সর্বাধিক দ্রাব গ্রহণ ক্ষমতা তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
১. দ্রাব এবং দ্রাবকের প্রকৃতি
২. উষ্ণতা এবং
৩. দ্রাবকের পরিমান

দ্রবণ | দ্রবণের বৈশিষ্ট্য ও প্রকার | দ্রাব ও দ্রাবক

সম্পৃক্ত দ্রবণের উপর উষ্ণতার প্রভাব

দ্রবণের সম্পৃক্ততা উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল। দ্রবণের উষ্ণতা বাড়লে সম্পৃক্ত দ্রবণ অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে অর্থাৎ দ্রাবকের আরও দ্রাব গ্রহণ করার ক্ষমতা জন্মে। কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় এবং চাপে সম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রাবের পরিমান নির্দিষ্ট থাকে। উষ্ণতা বাড়লে দ্রাবকের দ্রাব গ্রহণ ক্ষমতা বাড়ে, তাই আরও দ্রাব যোগ করলে দ্রাবকের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে যায়।

সম্পৃক্ত দ্রবণ এর উষ্ণতা কমালে দ্রাবকের দ্রাব গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায়। যেমন ঘরের উষ্ণতায় লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণের উষ্ণতা কমালে দ্রবন থেকে কিছু লবণ কেলাসিত হয়ে দ্রবন থেকে বেরিয়ে নিচে থিতিয়ে পড়ে। এই অবস্থাতেও কিন্তু উপরের স্বচ্ছ দ্রবণটি সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকবে।

দ্রাব্যতা ও দ্রাব্যতার উপর উষ্ণতার প্রভাব

অসম্পৃক্ত দ্রবণকে সম্পৃক্ত করার পদ্ধতি

একটি অসম্পৃক্ত দ্রবণকে (তরলে কঠিনের দ্রবণ) তিনটি উপায়ে সম্পৃক্ত দ্রবণে পরিণত করা যায়।

  • দ্রবণে আরও দ্রাব যোগ করলে অসম্পৃক্ত দ্রবণটি একসময় সম্পৃক্ত দ্রবণ এর পরিণত হয়।
  • দ্রবণটিকে উত্তপ্ত করলে, দ্রাবক বাষ্পীভূত হয়ে চলে যায়। ফলে দ্রবণে দ্রাবকের পরিমাণ কমে যায়। অথচ দ্রাবের পরিমান একই থাকে। ফলে পূর্বের উষ্ণতায় আনলে দ্রবণটি সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
  • দ্রবণটিকে ঠান্ডা করে দ্রবণের উষ্ণতা কমালেও দ্রবণটি এক বিশেষ উষ্ণতায় সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

সম্পৃক্ত দ্রবনকে অসম্পৃক্ত দ্রবণ এ পরিণত করার উপায়

সম্পৃক্ত দ্রবনকে দুটি উপায়ে অসম্পৃক্ত দ্রবণে পরিণত করা যায়।

  • সম্পৃক্ত দ্রবণকে উত্তপ্ত করে উষ্ণতা বাড়লে উচ্চতর উষ্ণতায় ঐ দ্রবণ অসম্পৃক্ত হয়ে যায়।
  • দ্রবণটিতে অতিরিক্ত দ্রাবক যেমন জল যোগ করলেও ওই উষ্ণতা দেই সম্পৃক্ত দ্রবণ অসম্পৃক্ত হয়ে যায়।

মৌলের চিহ্ন বা প্রতীক ও সংকেত

অতিপৃক্ত দ্রবণ

অনেক সময় দেখা যায় উচ্চতর উষ্ণতায় অতিরিক্ত দ্রাব দ্রবীভূত হয়ে যে দ্রবণ সৃষ্টি করে,সেই দ্রবণ কেননানের এ ধীরে ধীরে ঠান্ডা করলেও অতিরিক্ত দ্রাব যা উচ্চতর উষ্ণতায় দ্রবীভূত হয়েছিল, দ্রবন থেকে পৃথক হয়ে পাত্রের তলায় জমা হয় না।

অতিপৃক্ত দ্রবণের সংজ্ঞা:

কোন দ্রবণের সম্পৃক্ত অবস্থায় ওর মধ্যে যে পরিমাণ দ্রাব থাকা উচিত তার চেয়ে বেশি পরিমাণ দ্রাব দ্রবীভূত থাকলে সেই দ্রবণকে অতিপৃক্ত দ্রবণ বলে। এই দ্রবণে স্থায়ী নয়।
একটি টেস্ট টিউবে কয়েকটি সোডিয়াম থায়োসালফেট কেলাস রেখে গরম করলে দেখা যাবে কেলাস গুলি গলে তরল হয়ে গেল। কেলাসের মধ্যে যে কেলাস জল আছে তাতেই দ্রবীভূত হয়ে ওই দ্রবণ সৃষ্টি হয়। এবার টেস্টটিউবের মুখ তুলো দিয়ে বন্ধ করে এক জায়গায় রেখে দেওয়া হল। দ্রবণটি ঘরের উষ্ণতায় এলেও দেখা যাবে তরলই আছে।এই দ্রবণটি হলো সোডিয়াম থায়োসালফেটের অতিপৃক্ত দ্রবণ। এই অবস্থায় টেস্ট টিউবের মধ্যে সোডিয়াম থায়োসালফেটের ছোট দানা ফেলে দিলে দেখা যাবে সমস্ত দ্রবণটি সঙ্গে সঙ্গে কঠিন হয়ে গেল।

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ সনাক্ত করার উপায়

  • কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় একটি দ্রবণ অসম্পৃক্ত কি অসম্পৃক্ত বুঝতে হলে দ্রবণটি কে আরো কিছুটা দ্রাব যোগ করে ভাল করে নাড়তে হয়। দ্রাবটি যদি আংশিক বা সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হয়ে দ্রবণটি ঘনত্ব বাড়ায় তাহলে বুঝতে হবে যে উষ্ণতায় দ্রবণ অসম্পৃক্ত।
  • অপরপক্ষে যে দ্রাব যোগ করে নাড়া হল, সেই দ্রাব যদি দ্রবীভূত না হয়ে পাত্রের তলায় অদ্রাব্য অবস্থায় থিতিয়ে পড়ে এবং দ্রবণের ঘনত্ব যদি একই থাকে তাহলে বুঝতে হবে দ্রবণটি উষ্ণতায় সম্পৃক্ত অবস্থায় আছে।

যোজ্যতা বা যোজনী

অসম্পৃক্ত দ্রবণ অসম্পৃক্ত দ্রবণ এবং অতিপৃক্ত দ্রবণের পরস্পরের সম্পর্ক

অসম্পৃক্ত, সম্পৃক্ত এবং অতিপৃক্ত দ্রবণ সম্বন্ধে বলা যায় যে কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায়—

  • যে দ্রবণে অতিরিক্ত দ্রাব দ্রবীভূত হতে পারে তা অসম্পৃক্ত দ্রবণ।
    যে দ্রবণে অতিরিক্ত দ্রাব দ্রবীভূত করা যায় না তা সম্পৃক্ত দ্রবণ।
  • যে সম্পৃক্ত দ্রবণে বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দ্রাব দ্রবীভূত করা হয় তা হলো অতিপৃক্ত দ্রবণ।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here