আলোর প্রতিফলন | নিয়মিত ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের পার্থক্য

1
3171

আলোর প্রতিফলন (reflection of light) কাকে বলে ও কত প্রকার

সূচীপত্র দেখতে ক্লিক করুন show

আমরা যদি একটি আয়নাকে সূর্যের দিকে কাত করে ধরি তাহলে দেখা যায়, সূর্যের রশ্মি আয়নার চকচকে তলে পড়ে আবার আয়নার দল থেকে বেরিয়ে ভিন্ন দিকে চলে যায়। পূর্ণিমা রাতে পুকুরের কালো জলে চাঁদের আলো পড়ে, তারপর সেই আলো জলতল থেকে বেরিয়ে আমাদের চোখে পড়ে, তাই আমরা ঐ কালো জলের মধ্যে চাঁদকে দেখতে পাই। সমসত্ত্ব মাধ্যমে আলো সরল রেখায় চলে। কিন্তু আলো যখন এক সমসত্ব মাধ্যম থেকে অন্য এক সমসত্ত মাধ্যমে আপতিত হয় তখন নিম্নলিখিত তিনটি ঘটনা ঘটে।
১. আপতিত আলোর কিছু অংশ দ্বিতীয় মাধ্যম তল থেকে দিক পরিবর্তন করে পুনরায় প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে, এই ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে।
২. আপতিত রশ্মির কিছু অংশ দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে অন্য পথে চলে যায়। একে আলোর প্রতিসরণ বলে।
৩. আপতিত রশ্মির অবশিষ্ট অংশ দ্বিতীয় মাধ্যমে স্তরে শোষিত হয়।

আলোর প্রতিফলন কাকে বলে (এর সংজ্ঞা)

আলোক রশ্মি কোন সমসত্ব স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে অন্য কোন মাধ্যমে আপতিত হলে, ওই আলোকরশ্মির কিছু অংশ দ্বিতীয় মাধ্যমের তল থেকে অভিমুখ পরিবর্তন করে আবার প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। এই ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে।

দুই মাধ্যমের মধ্যে যে বিভেদ তল থেকে আলোর প্রতিফলন ঘটে সেই তলকে প্রতিফলক বলে। সমতল দর্পণ এবং বিভিন্ন মসৃণ ও চকচকে ধাতব পদার্থ প্রতিফলকের কাজ করে।

প্রতিফলিত আলোকের পরিমাণ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে

প্রতিফলিত আলোকের পরিমাণ যে যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে তা হল
১. প্রতিফলক তলে কত কোণে আলোক রশ্মি আপতিত হয় তার উপর নির্ভর করে। আলোকরশ্মি প্রতিফলন তলের সঙ্গে যত কম কোণ উৎপন্ন করে পড়বে অর্থাৎ আপতন কোণটি যত বড় হবে, প্রতিফলিত রশ্মির পরিমাণ তত বেশি হবে।
২. প্রতিফলকের প্রকৃতি এবং মাধ্যমের উপর নির্ভর করে।
বায়ু থেকে কাচের উপর লম্বভাবে আলোক রস্মি পড়লে ওর সামান্য অংশও প্রতিফলিত হয় কিন্তু বায়ু থেকে দর্পণে আলোকরশ্মি পড়লে ও’র বেশিরভাগই প্রতিফলিত হয়।

প্রতিফলন সম্পর্কিত কয়েকটি সংজ্ঞা

ধরি একটি রশ্মি AO, M1M2 দর্পণের O বিন্দুতে আপতিত হয়ে OB পথে প্রতিফলিত হয়েছে।

আপতিত রশ্মি

আলোক রশ্মি যে পথে এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমের বিভেদ তলে আপতিত হয়, আলোকরশ্মির সেই পথকে আপতিত রশ্মি বলে। চিত্রে AO রশ্মি হল আপতিত রশ্মি।

আপাতন বিন্দু

কোন আলোক রশ্মি দুই মাধ্যমে বিভিন্ন যে বিন্দুতে আপতিত হয় সেই বিন্দুকে আপতন বিন্দু বলে। ছবিতে O বিন্দুটি হলো আপন বিন্দু।

প্রতিফলিত রশ্মি

আলোক রশ্মি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে বিভেদ তলে আপতিত হয়ে ওই তল থেকে প্রতিফলিত হয়ে যে পথে প্রথম মাধ্যমে ফিরে যায়, তাকে প্রতিফলিত রশ্মি বলে। ছবিতে OB রশ্মিটি হল প্রতিফলিত রশ্মি।

অভিলম্ব

কোন আলোক রশ্মী প্রতিফলকের উপর আপতিত হলে আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত লম্বকে অভিলম্ব বলে
ছবিতে M1M2 এর ওপর O বিন্দুতে ON লম্ব টানা হলো। ONকে আপন বিন্দুতে প্রতিফলক M1M2 এর উপর অঙ্কিত অভিলম্ব বলে।

আপাতন কোন

আপতিত আলোকরশ্মি অভিলম্বের সঙ্গে যে কোন উৎপন্ন করে, তাকে আপতন কোণ বলা হয়। উপরের ছবিতে আপতিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে অংকিত লম্ব ∠AON কোণ উৎপন্ন করে একে আপতন কোণ বলে। আপতন কোণকে i দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিফলন কোণ

প্রতিফলিত আলোকরশ্মি অভিলম্বের সঙ্গে যে কোন উৎপন্ন করে তাকে প্রতিফলন কোণ বলে। চিত্রে প্রতিফলিত রশ্মি অভিলম্বের সঙ্গে ∠BON কোন উৎপন্ন করে। একে প্রতিফলন কোণ বলে। প্রতিফলন কোণকে ইংরেজি r অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিফলনের প্রকার

আলোকরশ্মির প্রতিফলন দুই রকমের হয়। যথা
১. নিয়মিত প্রতিফলন এবং
২. বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন।

১. নিয়মিত প্রতিফলন কাকে বলে

সমান্তরাল রশ্মি গুচ্ছ যখন কোন মসৃণ সমতলে আপতিত হয়, তখন প্রতিফলিত আলোকরশ্মি গুলো পরস্পর সমান্তরাল রশ্মি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট দিকে চলে যায়। এইরকম প্রতিফলনকে নিয়মিত প্রতিফলন বলে। নিয়মিত প্রতিফলনের প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়। আয়নায় সূর্যের রশ্মি পড়ে যে প্রতিফলন হয় সেই প্রতিফলন হলো নিয়মিত প্রতিফলন।
নিয়মিত প্রতিফলনে প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছ আপতিত রশ্মিগুচ্ছের মত হয়। আয়না, স্থির জলের উপরিতল, মসৃণ ধাতবতল প্রভৃতি থেকে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। নিয়মিত প্রতিফলনের অধিকাংশ আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে বলে প্রতিফলন চকচকে দেখায়।

নিয়মিত প্রতিফলনের সূত্র

আলোর নিয়মিত প্রতিফলন দুটি সূত্র মেনে চলে। এদের প্রতিফলনের সূত্র বলে। সূত্র দুটি নিচে আলোচনা করা হলো।
১. আপতিত রশ্মি প্রতিফলিত রশ্মি আপাতন বিন্দু প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।
২. আপাতন কোন সর্বদা প্রতিফলন কোণের সমান হয়।

উদাহরণ

AO রশ্মি M1M2 দর্পণের O বিন্দুতে আপতিত হয়ে O বিন্দু থেকে OB রশ্মিরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। M1M2 দর্পণের O বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব ON হলে, আপাতন কোন = ∠AON = i এবং প্রতিফলন কোণ = ∠BON = r। এখন প্রতিফলনের সূত্র অনুসারে, আপাতন কোন = প্রতিফলন কোণ। অর্থাৎ, ∠AON = ∠BON; এছাড়া AO, BO ও ON একই সমতলে থাকবে।

নিয়মিত প্রতিফলন

সমতল দর্পণে আলোকরশ্মি লম্বভাবে আপতিত হলে প্রতিফলন কোণ কত হবে

প্রতিফলনের সূত্র অনুসারে আপতন কোণ সর্বদা প্রতিফলন কোণের সমান হয়। কোন রশ্মি লম্বভাবে আপতিত হলে আবতন কোণ = 0 হবে। ফলে প্রতিফলনের নিয়ম অনুসারে প্রতিফলন কোণ = 0 হবে।
অর্থাৎ সমতল দর্পণে লম্বভাবে আপতিত আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হওয়ার পর ওই লম্বরেখা বরাবর আগের মাধ্যমে ফিরে যাবে।

প্রতিফলনের সূত্রের পরীক্ষামূলক প্রমাণ — সমতল দর্পণ ও পিনের সাহায্যে পরীক্ষা

সমতল দর্পণ ও পিনের সাহায্যে প্রতিফলনের সূত্র দুটির সত্যতা প্রমাণ করা যায়।
সরঞ্জাম
এই পরীক্ষায় একটি কাঠের ড্রয়িং বোর্ড, বড় মাপের সাদা কাগজ, একটি সমতল দর্পন, বোর্ড পিন, লম্বা পিন, চাঁদা ও একটি স্কেলের প্রয়োজন হয়।
পরীক্ষা
১. ড্রয়িং বোর্ড থেকে টেবিলের উপর সমান্তরালভাবে রেখে ওই বোর্ডের উপর বড় মাপের একটি সাদা কাগজকে কয়েকটি বোর্ড পিনের সাহায্যে আটকানো হল।
২. এবার কাগজটির উপর AB রেখা টেনে MM1 দর্পণটিকে AB বরাবর খাড়াভাবে বসানো হলো। দর্পণের সামনে P ও Q পিন দুটিকে লম্বভাবে এমন করে বসানো হল যাতে PQ রেখা AB রেখার সঙ্গে তীর্যকভাবে থাকে।

৩. এই অবস্থায় কাগজের তল বরাবর একটি চোখ রেখে P ও Q পিনের প্রতিবিম্ব বরাবর অপর দুটি পিন S ও R কে কাগজের উপর এমন ভাবে বসানো হলো যাতে P ও Q পিনের প্রতিবিম্বের নিম্নাংশ এবং S ও R স্পিনের নিম্নাংশ একই সরলরেখায় থাকে।

পর্যবেক্ষণ

কাগজের উপর থেকে দর্পণ ও পিনগুলোকে সরিয়ে নিয়ে PQ এবং RS রেখা অঙ্কন করা হলো। ওই রেখা দুটি MM1 দর্পণকে O বিন্দুতে ছেদ করলো। এখন AB এর O বিন্দুতে ON লম্ব অংকন করা হলো। তাহলে, PQ আপতিত রশ্মি, RS প্রতিফলিত রশ্মি এবং ON আপতন বিন্দুতে দর্পণের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব হবে।

সিদ্ধান্ত

P,Q,O,R,S এবং N বিন্দুগুলি কাগজের তলের উপর থাকায় বলা যায় যে, আপাতিত রশ্মি PQ, প্রতিফলিত রশ্মি RS এবং আপাতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব ON একই সমতলে আছে। অতএব, প্রথম সূত্রের সত্যতা প্রমাণিত হলো।

আবার চাঁদার সাহায্যে মেপে দেখা গেল —
∠PON = ∠SON; অর্থাৎ আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ দুটি পরস্পর সমান। এখানে দ্বিতীয় সূত্রটির সত্যতা প্রমাণিত হলো।

বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন

আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন কাকে বলে

সমান্তরাল আলোকরশ্মি গুচ্ছ কোন অমসৃণ তলে আপতিত হলে, ওই রশ্মিগুচ্ছের প্রতিটি রশ্মি প্রতিফলনের নিয়ম মেনে চললেও, অমসৃণ কাল থেকে প্রতিফলিত রশ্মিগুলি সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছরূপে একটি নির্দিষ্ট দিকে না গিয়ে চারিদিকে বিক্ষিপ্ত হয়। এইরকম প্রতিফলনকে বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন বলে।
আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনে প্রতিফলককে দেখা যায় কিন্তু কোন প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় না।
যেহেতু প্রতিফলক অমসৃণ তাই অমসৃণ তলের বিভিন্ন বিন্দুতে অভিলম্বগুলি বিভিন্ন দিকে হয়। তাই প্রতিফলিত রশ্মিগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জন্য বস্তুটিকে যে কোন দিক থেকে দেখলে বস্তুটি সমান উজ্জ্বল দেখায়। সাদা কাগজ, কাঠ, দেওয়াল, সিনেমার পর্দা, বইয়ের পাতা প্রভৃতি বস্তু থেকে আলোর প্রতিফলন ঘটে।

বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের জন্য আমরা বস্তুকে দেখতে পাই

আমাদের চারপাশে আমরা যেসব বস্তু দেখতে পাই সেগুলি প্রকৃতপক্ষে অমসৃণ তলযুক্ত বস্তু। এদের উপর আলোক রশ্মি আপতিত হলে রশ্মিগুলির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে এবং এই বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের ফলে আমরা প্রতিফলক তল বা বস্তুটিকে দেখতে পাই। যেমন
১. একটি অন্ধকার ঘরের এক কোণে একটি আলোক উৎস রাখলে উৎস থেকে নির্গত আলোকরশ্মি ঘরের চারিদিকে ছড়িয়ে যায় এবং ঘরের প্রতিটি বস্তুর উপর পড়ে। এই আলোকরশ্মি প্রত্যেক বস্তুর উপর পড়ে বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। ফলে প্রতিফলিত রশ্মিগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ঘরের যেকোনো জায়গায় দাঁড়ালেও বস্তু থেকে নির্গত বিক্ষিপ্ত রশ্মিগুলি যখন আমাদের চোখে পড়ে তখন আমরা ঘরের প্রতিটি বস্তুকে দেখতে পাই।
২. বই এর পাতার উপর আপতিত আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের জন্য আমরা বই পড়তে পারি।
৩. নিয়মিত প্রতিফলনে, বস্তু থেকে নির্গত রশ্মি সব সময় একটি নির্দিষ্ট দিকে যায়। তাই প্রতিফলিত রশ্মির গতিপথে দাঁড়ালেই উৎসের প্রতিবিম্ব আমরা দেখতে পাব। অতএব বোঝা যাচ্ছে যে, এই জগতে বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন না হলে আমরা কোন বস্তু দেখতে পেতাম না।

নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের মধ্যে পার্থক্য

কোন বস্তুকে দেখতে হলে তার পৃষ্ঠতল থেকে প্রতিফলন হওয়া আবশ্যিক। প্রতিফলন দুই রকমের নিয়মিত প্রতিফলন এবং অনিয়মিত প্রতিফলন। দুটি প্রতিফলনের মাধ্যমে আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখে এসে পড়ে। কিন্তু নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের মধ্যে পার্থক্য বর্তমান। নিচে নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো।

নিয়মিত প্রতিফলনবিক্ষিপ্ত প্রতিফলন
চকচকে এবং মসৃণ তলে নিয়মিত প্রতিফলন হয়।প্রতিফলক তল অমসৃণ হলে ওই তল থেকে আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে।
নিয়মিত প্রতিফলনের ক্ষেত্রে প্রতিফলককে ঘুরিয়ে প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছকে ইচ্ছামতো যেকোনো স্থানে ফেলা যায়।বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের ক্ষেত্রে প্রতিফলককে ঘুরিয়ে প্রতিফলিত রশ্মিগুলিকে ইচ্ছামতো যেকোনো জায়গায় ফেলা যায় না।
নিয়মিত প্রতিফলনে প্রতিফলক প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। বস্তু থেকে প্রতিফলকের দূরত্ব = প্রতিফলক থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্ব হয়। যেমন আয়নায় আমরা বস্তুর প্রতিবিম্ব দেখতে পাই।বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের প্রতিফলক প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করেনা, প্রতিলকটিকে দেখতে পাওয়া যায়।
নিয়মিত প্রতিফলনে প্রতিফলিত আলো একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে বেশি পরিমাণে আমাদের চোখে এসে পড়ে। ফলে কেবলমাত্র সেই দিক থেকে তাকালেই প্রতিফলক তলটি চকচকে দেখায়। অর্থাৎ নিয়মিত প্রতিফলন প্রতিফলিত রশ্মি একটি নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে।বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনে প্রতিফলিত রশ্মিগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় অল্প অথচ সমপরিমাণ আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছায়। এই কারণে যে কোন দিক থেকে দেখলে প্রতিফলক তলটিকে সমান উজ্জ্বল দেখায়। অর্থাৎ বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনে প্রতিফলিত রশ্মি একটি নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ না থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বেশিরভাগ প্রতিফলিত রশ্মি নির্দিষ্ট অভিমুখে এসে আমাদের চোখে পড়ে, তাই প্রতিফলককে চকচকে দেখায়।প্রতিফলিত রশ্মি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, সামান্য অংশ এসে চোখে পড়ে, সেই জন্য প্রতিফলক চকচক করে না।
নিয়মিত প্রতিফলনে প্রতিফলিত রশ্মি আপতিত রশ্মি গুচ্ছের মত হয়। যেমন সমান্তরাল রশ্মি গুলি নিয়মিত প্রতিফলনের পর সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলিত হয়।বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনে আপতিত এবং প্রতিফলিত রশ্মিগুলির মধ্যে কোন সাদৃশ্য থাকে না। যেমন সমানতরাল রশ্মিগুলি অমসৃণ তল থেকে প্রতিফলিত হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের মধ্যে পার্থক্য

প্রতিফলন সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

সিনেমার পর্দা সাদা এবং অমসৃণ হয় কেন?

সিনেমার পর্দা সাদা এবং অমসৃণ প্রকৃতির করা হয় কারণ, পর্দা অমসৃণ হলে ওর উপর আপতিত আলোকরশ্মি বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। পর্দা থেকে বিক্ষিপ্ত আলোকরশ্মি গুলো হলের চারিদিকে ছড়িয়ে যায় এবং প্রতিটি দর্শকের চোখে পড়ে। ফলে হলের মধ্যে যেকোন স্থান থেকেই পর্দায় উৎপন্ন ছবি দর্শকের চোখে পড়ে।
সিনেমার পর্দা সাদা রংয়ের হয় কারণ সাদা বস্তু কোন আলোক রশ্মি শোষণ করে, প্রতিফলিত করে দেয়। তাই সিনেমার পর্দায় ছবির ঔজ্জ্বল্য কমেনা।
কালো রঙের হলে ওর উপর আলোকরশ্মি পড়ে প্রতিফলিত না হয়ে শোষিত হয়ে যেত। কারণ কালো রং আলোক রশ্মি শোষণ করে নেয়। তাই পর্দা থেকে কোন রশ্মি প্রতিফলিত হতো না। ফলে ছবি দেখা যেত না।
সিনেমার পর্দা চকচকে এবং মসৃণ হলে ওর থেকে নিয়মিত প্রতিফলন হত। ফলে পর্দায় আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে নির্দিষ্ট দিকে চলে যেত। ওই রশ্মি গুলি যাদের চোখে পড়তো শুধুমাত্র তারা পর্দাকে চোখে দেখত আর অন্যান্য দর্শক পর্দায় কোন ছবি দেখতে পেত না।

সিনেমার পর্দা রং কালো করা হয় না কেন

সিনেমার পর্দার রং কালো হলে আলো শোষণ করবে। তাই কালো রংয়ের পর্দার উপর আপতিত আলোকরশ্মি প্রতিফলিত না হয়ে শোষিত হবে। এর ফলে কালো পর্দার উপর ছবি দেখা যাবে না। এইজন্য সিনেমার পর্দার রং কালো করা হয় না।

আয়নায় আলো পড়লে আয়না চকচক করে, কিন্তু ঘরের দেয়ালে আলো পড়লে দেয়াল চকচক করে না কেন।

আয়না মসৃণ বলে আয়নায় আপতিত আলোকরশ্মির নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে এবং উৎস থেকে আসা বেশিরভাগ আলোকরশ্মি আয়না থেকে প্রতিফলিত হয়ে নির্দিষ্ট পথে আমাদের চোখে এসে পড়ে। ফলে আয়নায় যে অংশ থেকে প্রতিফলন ঘটে সেই অংশকে আমরা চকচকে দেখি।
কিন্তু ঘরের দেওয়ালের তল অমসৃণ হওয়ার ফলে দেওয়ালে আপতিত আলোর রশ্মিগুলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। এই বিক্ষিপ্ত রশ্মিগুলোর কিছু অংশ আমাদের চোখে আপতিত হয়। হলে আমরা দেয়ালটিকে দেখতে পাই। এছাড়া বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের ফলে প্রতিফলিত রশ্মি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় যে কোন দিক থেকে দেখলে দেওয়ালটিকে সমান উজ্জ্বল দেখায়।

জলে ভেজা ঘষা কাঁচ স্বচ্ছ চকচকে দেখায় কেন

ঘষা কাচ অমসৃণ হয়। এজন্য ঘষা কাঁচের উপর আপতিত আলোকরশ্মিগুলির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। তাই ঘষা কাঁচ অস্বচ্ছ দেখায়।
কিন্তু ঘষা কাঁচকে জলে ভাসালে ওর উপর স্বচ্ছ জলের একটি পাতলা আস্তরণ পড়ে। ফলে ঘষা কাঁচের অমসৃণ তলটি কিছুটা মসৃণ হয়।
এই অবস্থায় ঘষা কাঁচটির উপর আলো আপতিত হলে আলোর কিছু অংশ ওই মসৃণ তল থেকে প্রতিফলিত হয়। এবং কিছু অংশ কাঁচের মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে ভেজানো কাঁচটি স্বচ্ছ এবং চকচকে দেখায়।

সূর্যোদয়ের কিছু আগে এবং সূর্যাস্তের কিছুর পরেও আমরা সূর্যালোক দেখতে পাই কেন

সূর্যোদয়ের কিছু আগে এবং সূর্যাস্তের কিছু পরে সূর্য দিগন্ত রেখার নিচে থাকে। ফলে সূর্যের আলোর সরাসরি আমাদের চোখে আসতে পারে না। এই সময়ে যেসব রশ্মি উপরের আকাশের ধূলিকণা ও জলকণার উপর আপতিত হয়, সেইসব রশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। তখন ওই প্রতিফলিত রশ্মির কিছু অংশ আমাদের চোখে এসে পৌঁছায়।
এজন্য সূর্যোদয়ের কিছু আগে এবং সূর্যাস্তের কিছুর পরেও আমরা পৃথিবীকে আলোকিত দেখি। সূর্যোদয়ের পূর্বে এই আলোকিত অবস্থাকে ঊষা এবং সূর্যাস্তের পরে অনুরূপ আলোকিত অবস্থাকে গোধূলি বলে। ওই সময়ে আকাশে ভাসমান ধূলিকণা ও জলকণার দ্বারা কিছু আলোক রশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটে বলে আকাশ লাল হয়ে ওঠে।

গোধূলি কেন হয়

সূর্যাস্তের পরও ভূপৃষ্ঠ কিছুক্ষণ অল্প আলোকিত থাকে, একে গোধূলি বলে। বাতাসের মধ্যে অসংখ্য ধূলিকণা ভাসমান অবস্থায় থাকে। সূর্যাস্তের পর সূর্যের রশ্মি আর আমাদের কাছে পৌঁছতে পারেনা। কিন্তু ধূলিকণা গুলি উপরে থাকায় ওদের উপর পড়ে সূর্য রশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। সেই বিক্ষিপ্ত রশ্মি গুলি চারিদিকে ছড়িয়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। তাই সূর্যাস্তের পর ধূলিকণা থেকে বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনে ভূপৃষ্ঠে অল্প আলো পায়, ফলে গোধূলির সৃষ্টি হয়

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here