প্রতিধ্বনি কি বা কাকে বলে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে একটু প্র্যাক্টিক্যালভাবে ভাবতে হবে। নির্জন রাতের অন্ধকারে কখনো ফাঁকা মাঠের মধ্যে গিয়ে গ্রামের দিকে মুখ করে জোরে শব্দ করলে বা কারো নাম ধরে ডাকলে কিছুক্ষণ পর থেকে নিজের গলার আওয়াজ নকল করে মনে হয় কোন বন্ধু বা কেউ অনুকরন করছে। শব্দের প্রতিফলনের ফলে ঘটে। প্রতিফলনের ফলে উৎপন্ন শব্দের পুনরাবৃত্তিকেই শব্দের প্রতিধ্বনি বলে।
প্রতিধ্বনি কাকে বলে বা কি (সংজ্ঞা)
শব্দ কোন প্রতিফলকের প্রতিফলিত হয় মূল শব্দ থেকে পৃথক ভাবে শ্রোতার কানে এসে পৌঁছালো প্রতিফলিত শব্দটিকে মূল শব্দের প্রতিধ্বনি বলে।
শব্দের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বড় হয়। শব্দের প্রতিফলনের জন্য প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হয়। তাই শব্দের প্রতিধ্বনি উৎপন্ন হওয়ার জন্য বড় কোন প্রতিফলক যেমন পাহাড় উঁচু নদীর পাড় ইত্যাদি দরকার হয়।
শব্দের প্রতিধ্বনি কিভাবে সৃষ্টি হয় বা শব্দের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হওয়ার কারণ
শব্দের প্রতিধ্বনি কিভাবে সৃষ্টি হয় বা শব্দের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি তা জানার আগে আমাদেরকে শব্দের প্রতিফলন সম্পর্কে জানতে হবে। শব্দের প্রতিফলন পূর্ববর্তী অধ্যায় আলোচনা করা হয়েছে। শব্দ অন্যান্য তরঙ্গের মতো যখন তার গতিপথে বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন ওই মাধ্যম থেকে পুনরায় প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে; এবং শ্রোতার কানে এসে পৌঁছায়। শ্রোতা একই শব্দ পুনরায় শুনতে পায়। এভাবেই প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হয়।
প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব
প্রতিধ্বনি যেকোনো দূরত্ব থেকে শোনা যায় না। শব্দের প্রতিধ্বনি নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলে। প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব বজায় থাকলে তবেই তা শ্রুতিগোচর হয়।
ক্ষণস্থায়ী শব্দের ক্ষেত্রে প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব:
কোন ক্ষণস্থায়ী শব্দ কানে এসে পৌঁছালে, ওই শব্দটি থেমে যাওয়ার পরও মস্তিষ্কের মধ্যে ওই শব্দের রেশ বা অনুভূতি আরও 1/10 সেকেন্ড পর্যন্ত থেকে যায়। ওই সময় কালকে শব্দ নির্বন্ধ বলে। বায়ুতে শব্দের গতিবেগ সেকেন্ডে 1120 ফুট বা 332 মিটার হলে 1/10 সেকেন্ডে শব্দ 112 ফুট বা 33.2 মিটার পথ অতিক্রম করে।
উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দটি প্রতিফলিত হয়ে উৎসের কাছে ফিরে আসে, সুতরাং কোন শব্দের প্রতিধ্বনি স্পষ্ট করে শুনতে হলে প্রতিফলক এবং উৎসের দূরত্ব কমপক্ষে 112/2 = 56 ফুট বা 33.2/2 = 16.6 মিটার হওয়া দরকার।
শব্দের উৎস এবং প্রতিফলকের দূরত্ব 56 ফুট বা 16.6 মিটারের কম হলে শব্দের রেশ মস্তিষ্কে মিলিয়ে যেতে না যেতেই প্রতিধ্বনি ফিরে এসে মূল শব্দের সঙ্গে মিশে যায়, ফলে প্রতিধ্বনিকে পৃথকভাবে শোনা যায় না। সেই জন্য সাধারণ মাপের ঘরের মধ্যে কথা বললে প্রতিধ্বনি শোনা যায় না।
যেমন ধরি, বন্দুকের শব্দ বা হাত তালির শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে প্রতিফলকটিকে এমন দূরত্ব রাখতে হবে যেন উৎপন্ন শব্দ প্রতিফলক পর্যন্ত গিয়ে প্রতিফলিত হয়ে আবার শ্রোতার কাছে পৌছানোর সময় পর্যন্ত 1/10 সেকেন্ড পার হয়ে যায়। প্রতিফলকটিকে 16.6 মিটার অর্থাৎ 56 ফুটের বেশি দূরে রাখলে ওই শব্দগুলির প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাবো।
2) বোধগম্য শব্দের ক্ষেত্রে প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব:
আমরা এক সেকেন্ডে পাঁচটির বেশি পদ (syllable) উচ্চারণ করতে পারিনা। সুতরাং একমাত্রিক শব্দ যেমন a উচ্চারণ করতে আমাদের 1/5 সেকেন্ড সময় লাগে। ফলে একমাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে প্রতিফলিত শব্দকে 1/5 সেকেন্ড পরে শ্রোতার কানে পৌঁছতে হবে। এখন শব্দ 1/5 সেকেন্ডে (332×1/5) মিটার বা 66.4 মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। অতএব, একমাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি স্পষ্ট ভাবে শুনতে হলে শ্রোতা থেকে প্রতিফলকের দূরত্ব কমপক্ষে 66.4/2 মিটার বা 33.2 মিটার হতে হবে।
এইভাবে দ্বিমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক এবং xমাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা থেকে প্রতিফলকের নূন্যতম দূরত্ব যথাক্রমে 33.2×2=66.4 মিটার, 33.2×3=99.6 মিটার, 33.2×x মিটার হতে হবে।
প্রতিধ্বনি শোনার শর্ত
আগেই বলা হয়েছে প্রতিধ্বনি কিছু শর্ত মেনে চলে। নিচে প্রতিধ্বনি শোনার শর্তগুলি আলোচনা করা হলো।
১. শব্দের প্রতিধ্বনি শ্রোতার কানে মূল শব্দের মতই কিন্তু আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি করে।
২. ক্ষণস্থায়ী শব্দ শোনার ক্ষেত্রে শ্রোতা এবং প্রতিফলকের দূরত্ব 16.6 মিটার হতে হবে।
৩. প্রতিধ্বনি শোনার জন্য মূল শব্দ এবং প্রতিফলিত শব্দ আলাদা আলাদাভাবে শ্রোতার কানে পৌঁছতে হবে।
৪. শব্দের প্রতিধ্বনি ঘটার জন্য প্রতিফলকের আকার বড় হতে হবে।
৫. প্রতিধ্বনি শোনার জন্য প্রতিফলক মসৃণ বা অমসৃণ হলেও চলে।
৬. মূল শব্দ থেকে প্রতিফলিত শব্দ কমপক্ষে 1/10 সেকেন্ড পরে পৌঁছাতে হবে।
৭. একমাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রে প্রতিধ্বনি এবং মূল শব্দ শোনার সময়ের ব্যবধান কমপক্ষে 1/5 সেকেন্ড হতে হবে।
৮. প্রতিফলকটি যথেষ্ট উঁচু এবং বিস্তৃত হতে হবে।
৯. একমাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রে প্রতিফলকের দূরত্ব 33.2 মিটার, দ্বিমাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রে প্রতিফলকের দূরত্ব 33.2×2=66.4 মিটার, X মাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রে 33.2×X মিটার হতে হবে।
এইগুলি মূলত শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার শর্ত হিসেবে গণ্য হয়।
প্রতিধ্বনির সূত্র
সঠিকভাবে প্রতিধ্বনি তৈরি করতে হলে প্রতিধ্বনির সূত্র মেনে চলতে হয়।
মনে করি, পর্যবেক্ষক থেকে x দূরত্ব একটি প্রতিফলক আছে। এখন প্রতিধ্বনি শুনতে হলে পর্যবেক্ষক এবং প্রতিফলকের মধ্যে নূন্যতম দূরত্ব থাকা প্রয়োজন। xএর মান তার চেয়ে বেশি হতে হবে।
এখন পর্যবেক্ষক কোন উপায়ে শব্দ সৃষ্টি করল এবং সঙ্গে স্টপওয়াচ ব্যবহার করে ওই শব্দ ও তার প্রতিধ্বনীর মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান জেনে নিল।
যদি ওই সময়ের ব্যবধান t এবং বায়ুতে শব্দের বেগ V হয় তবে, বা, অতিক্রান্ত দূরত্ব = বায়ুতে শব্দের বেগ × সময় বা, x=Vt
এখন, প্রতিধ্বনির সৃষ্টি করতে শব্দ দ্বারা অতিক্রান্ত দূরত্ব = বায়ুতে শব্দের বেগ × সময়
2x=Vt
এটাই হলো প্রতিধ্বনির সূত্র।
প্রতিধ্বনির ব্যবহার
দূরত্ব মাপার ক্ষেত্রে প্রতিধ্বনির ব্যবহার করা হয়। নিচে কয়েকটি প্রতিধ্বনির ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
১. শব্দের প্রতিধ্বনির সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়।
২. উড়োজাহাজের উচ্চতা নির্ণয় করতে শব্দের প্রতিধ্বনির ব্যবহার করা হয়।
৩. বায়ুতে শব্দের বেগ নির্ণয়ে প্রতিধ্বনির ব্যবহার আছে।
১. সমুদ্রের গভীরতা মাপতে প্রতিধ্বনির ব্যবহার
শব্দের প্রতিধ্বনিকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা হয়। সমুদ্রের উপর বিস্ফোরণ তারা শব্দ সৃষ্টি করা হয়। ওই উৎপন্ন শব্দ সমুদ্রের তলদেশে প্রতিফলিত হয় আবার উপরে ফিরে আসে। হাইড্রোফোন নামে এক রকমের যন্ত্রের সাহায্যে মূল শব্দ এবং প্রতিধ্বনির মধ্যে সময়ের ব্যবধান নিখুঁতভাবে পাওয়া যায়।
ধরি, উৎপন্ন শব্দ এবং প্রতিধ্বনির মধ্যে সময়ের ব্যবধান t সেকেন্ড, সমুদ্র জলের শব্দের বেগ যদি V হয় তবে, t সেকেন্ড সময় শব্দ যায় Vt দূরত্ব। শব্দ সমুদ্রের তলায় গিয়ে ফিরে আসে, তাই Vt দূরত্ব হলো সমুদ্রের গভীরতার দ্বিগুণ। অতএব, সমুদ্রের গভীরতা = Vt/2
২. উড়জাহাজের উচ্চতা নির্ণয় প্রতিধ্বনির ব্যবহার
ধরি একটি উড়োজাহাজ ভূমির সমান্তরাল
AB রেখা বরাবর 192.5 মিটার/সেকেন্ড বেগে চলে। A বিন্দুতে এসে বিমান থেকে শব্দ করা হলো। উৎপন্ন শব্দের মাটিতে D বিন্দুতে প্রতিফলিত হয়ে প্রতিধ্বনী উৎপন্ন করে। বিমানটি যখন B বিন্দুতে পৌঁছায় তখন ওই প্রতিধ্বনি শুনতে পায়। উৎপন্ন শব্দ AD পথে মাটিতে আপতিত হয় এবং BD পথে প্রতিফলিত হয়। উৎপন্ন শব্দ 2 সেকেন্ড পর বিমানটি যখন B বিন্দুতে আসে তখন প্রতিধ্বনি শোনা যায়। ধরে শব্দের গতিবেগ ওই অবস্থায় 336.5 মিটার/সেকেন্ড। CD = বিমানের উচ্চতা = h।
এখন বিমানকে 2 সেকেন্ডে AB দূরত্ব অতিক্রম করে
অতএব, AB = 192.5×2=385 মিটার
সুতরাং, AC = 385/2=192.5 মিটার
যেহেতু, AC=BC
আবার AD + BD দূরত্ব শব্দ যায় 2 সেকেন্ডে
অতএব, AD + BD = 336.5×2
সুতরাং,AD = 336.5 মিটার
যেহেতুAD = BD
এখন ADC সমকোণী ত্রিভুজ CD²=AD²-AC²
বা, h²=(336.5)²-(192.5)²
বা, h²=(365.5+192.5)(365.5192.5)
বা, h²=529×144=76176
বা, h=276 মিটার
৩. শব্দের বেগ নির্ণয়ে প্রতিধ্বনির ব্যবহার
ধরি, কোন পর্যবেক্ষক থেকে s মিটার দূরে একটি উঁচু দেওয়াল আছে। তিনি একটি পিস্তল থেকে গুলি করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি স্টপ ওয়াচ চালিয়ে দিলেন। পিস্তলের শব্দ দেওয়ালের প্রতিফলিত হয়ে প্রতিধ্বনিরূপে তার কানে এসে পৌঁছালো সঙ্গে সঙ্গে তিনি সব পথ বন্ধ করে দিলেন। ধরি পিস্তল ছোড়া এবং প্রতিধ্বনি শোনার সময়ের ব্যবধান = t সেকেন্ড। তাহলে শব্দের বেগ = 2s/t
ঘরের মধ্যে কথা বললে প্রতিধ্বনি শোনা যায় না কেন
সাধারণভাবে ঘরের মধ্যে কথা বলে আমরা প্রতিধ্বনি শুনতে পাইনা। কারণ সাধারণ মাপের ঘরের দুটি দেওয়ালের মধ্যবর্তী দূরত্ব 33.2 মিটার অপেক্ষা কম থাকে। এখন একমাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শব্দের প্রতিফলককে উৎস থেকে কমপক্ষে 33.2 মিটার দূরে থাকতে হবে। এই জন্য সাধারণ মাপের ঘরের মধ্যে কথা বললে আমরা ওর শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাইনা।
মেঘ গর্জনের পর একটানা গুরুগুরু শব্দ হয় কেন
মেঘ গর্জনের পর অনেক সময় ধরে একটানা গুরুগুরু শব্দ শোনা যায়। এর কারণ হলো, মেঘ গর্জনের মূল শব্দ বিভিন্ন স্তরের মেঘ থেকে প্রতিফলিত হয়ে বহু প্রতিধ্বনির সৃষ্টি করে। এই প্রতিধ্বনির সামষ্টিকেই গুরুগুরু ধ্বনি হিসেবে শোনা যায়। অর্থাৎ মেঘের গুরুগুরু শব্দ প্রকৃতপক্ষে মেঘ গর্জনের মূল শব্দের বহু প্রতিধ্বনির সমষ্টি মাত্র।
অনুরণন কি
বড় হল ঘরে জোরে শব্দ করলে গমগম আওয়াজ শোনা যায়। কারণ হল ঘরের বিভিন্ন দেওয়ালে ওই শব্দ বারবার প্রতিফলিত হয়ে গমগম শব্দের সৃষ্টি করে এবং মূল শব্দ থেমে যাওয়ার পরও কিছুক্ষণ ধরে ওই শব্দ শোনা যায়। একে শব্দের অনুরণন বলে। ঘরের মধ্যে আসবাবপত্র থাকলে ওই সব বস্তু দ্বারা শব্দ শক্তি শোষিত হয়। ফলে শব্দের অনুরণন কম হয়। আধুনিক সিনেমাহলে শব্দের অনুরণন বন্ধ করার জন্য সিনেমা হলের দেওয়াল এবং ছাদ শব্দশোষক নরম প্যাড দিয়ে ঢাকা হয়।। এছাড়া জানালা দরজার পর্দা ও মেঝেতে কার্পেট মোরা থাকে যা শব্দ শোষকহিসেবে কাজ করে।
শব্দের প্রতিধ্বনির সাহায্যে কূপের গভীরতা নির্ণয়ের সূত্র
আমরা জানি শব্দের প্রতিধ্বনির সূত্র হল (বেগ× সময়)2
এখানে কূপের গভীরতা মাপার জন্য প্রথমে কুপের উপর থেকে শব্দ করা হলো এবং ওই শব্দ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবর্তী সময়কে স্টপ ওয়াচ দিয়ে মাপা হল।
ধরে t টি সময়ে শব্দটি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসলো এবং শব্দের বেগ V
তাহলে কূপের গভীরতা হবে Vt/2
যেহেতু শব্দ কূপের গভীরতাকে দুবার অতিক্রম করে।
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, প্রতিধ্বনি হওয়ার নূন্যতম সময় 16.6 মিটার তাই কুপের গভীরতা এর কম হলে সে ক্ষেত্রে এই সূত্র দিয়ে কূপের গভীরতা মাপা যাবে না।
সকল শব্দের প্রতিধ্বনি শোনা যায় না কেন
আমাদের চারপাশে যেসব শব্দ সৃষ্টি হয় তার মধ্যে সকল শব্দের প্রতিধ্বনি শোনা যায় না। কারণ
১. আমাদের কানে শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল 1/10 সেকেন্ড হয়। এই সময়কালের আগে কোন শব্দ আমাদের কানে এসে পৌঁছালে আমরা তার প্রতিধ্বনি শুনতে পাইনা।
২. প্রতিধ্বনি ঘটার জন্য শ্রোতা ও প্রতিফলকের দূরত্ব কমপক্ষে 16.6 মিটার হওয়া প্রয়োজন। দূরত্ব যদি 16.6 মিটারের কম হয় সেক্ষেত্রে আমরা প্রতিধ্বনি শুনতে পাইনা।
৩. একমাত্রিক শব্দ শোনার জন্য 33.2 মিটার, দ্বিমাত্রিক শব্দ শোনার জন্য 66.4 মিটার এবং X মাত্রিক শব্দ শোনার জন্য 33.2×X দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
সকল শব্দের প্রতিধ্বনি শোনা যায় না কেন; আশা করি, এই আলোচনা থেকে তা পরিষ্কার হয়েছে।
প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব কত
ক্ষীণ শব্দের ক্ষেত্রে প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব হলো 16.6 মিটার।
বোধগম্য শব্দের ক্ষেত্রে প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব কত তা নিচের চার্টে দেওয়া হল।
শব্দের প্রকৃতি | নূন্যতম দূরত্ব |
একমাত্রিক শব্দ (যেমন a) | 33.2 মিটার |
দ্বিমাত্রিক শব্দ | 33.2×2 = 66.4 মিটার |
ত্রিমাত্রিক শব্দ | 33.2×3 = 99.6 মিটার |
X মাত্রিক শব্দ | 33.2×X = 33.2X মিটার |
প্রতিধ্বনি সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
প্রতিধ্বনি শোনার ন্যূনতম সময় কত
প্রতিধ্বনি শোনার ন্যূনতম সময় হল 1/10 সেকেন্ড।
শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল কত
শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল 1/10 সেকেন্ড। শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল অতিক্রান্ত হলে কোন শব্দ প্রতিধ্বনী হিসেবে আমরা অনুভব করতে পারি।
প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব প্রয়োজন কেন
প্রতিফলিত শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব প্রয়োজন আছে, কারণ কোন ক্ষণস্থায়ী শব্দের অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কে কমপক্ষে 1/10 সেকেন্ড পর্যন্ত থাকে। এই সময়ের ব্যবধান কে শ্রুতি নির্বন্ধ বলে। তাই প্রতিফলিত শব্দমূল শব্দের থেকে কমপক্ষে 1/10 সেকেন্ড পরে শ্রোতার কানে না পৌঁছালে শ্রোতা ঐ শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাবেনা।
বায়ুতে শব্দের বেগ 332 মিটার হলে,
1/10 সেকেন্ডে শব্দ 33.2 মিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে।
এখন শব্দের উৎস থেকে প্রতিফলকের দূরত্ব 16.6 মিটার হলে, শব্দ উৎস থেকে প্রতিফলকে ধাক্কা খেয়ে 33.2 মিটার দূরত্ব 1/10 সেকেন্ডের সম্পন্ন করে। এই কারণে প্রতিধ্বনি শোনার নূন্যতম দূরত্ব প্রয়োজন হয়।
দুটি পাহাড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে শব্দ করলে একাধিক শব্দ শোনা যায় কেন
দুটি পাহাড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে একবার শব্দ করলে ওই শব্দ পাহাড় দুটি থেকে বারবার প্রতিফলিত হয়ে পরপর অনেকগুলি প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে। ফলে মুল শব্দের একাধিক প্রতিধ্বনি শোনা যায়