কোন বস্তু থেকে আলোকরশ্মি যখন সরাসরি আমাদের চোখে আসে তখন আমরা বস্তুটিকে যথাস্থানে দেখতে পাই। কিন্তু বস্তু থেকে আলোকরশ্মি যদি সরাসরি না এসে প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে আমাদের চোখে আসে তখন আমরা বস্তুটির মতো একটি বস্তুকে অন্যস্থানে দেখি; একে প্রথম বস্তুটির প্রতিবিম্ব বলে।
প্রতিবিম্ব কাকে বলে
কোন বিন্দু উৎস থেকে আগত অপসারী আলোর রশ্মিগুলি প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে যখন অন্য কোন বিন্দুতে মিলিত হয় কিংবা কোন বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়, তখন ওই দ্বিতীয় বিন্দুকে প্রথম বিন্দুর প্রতিবিম্ব বলে।
প্রতিবিম্বের প্রকার
প্রতিবিম্ব কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা
১. সদবিম্ব real image ও
২. অসদবিম্ব virtual image
১. সদবিম্ব real image কাকে বলে
কোন বিন্দু উৎস থেকে আগত আলোর রশ্মি প্রতিফলিত প্রতিসৃত হওয়ার পর সত্যি সত্যি কোন বিন্দুতে মিলিত হয়ে যে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে, তাকে প্রথম বিন্দুর সদবিম্ব বলে।
উত্তল লেন্স দ্বারা সদবিম্ব গঠন
LL’ একটি উত্তল লেন্স। এর সামনে PQ একটি বস্তু। এখন, P বিন্দু থেকে আগত PR রশ্মি প্রতিসরণের পর RF পথে যায়। P বিন্দু থেকে অন্য এক রশ্মি PO পথে যায়। RF এবং PO পরস্পর P1 বিন্দুতে মিলিত হয়। এখানে P বিন্দুর সদবিম্ব হলো P1 । আলোক রশ্মি সত্যি সত্যি মিলিত হয়ে সদবিম্ব গঠন করে বলে এই প্রতিবিম্ব পর্দায় ফেলা যায়।
সিনেমার পর্দায় যে প্রতিবিম্ব গঠিত হয় তা সদবিম্ব । সিনেমার পর্দার ছবি, ক্যামেরার ছবি প্রভৃতি সদবিম্বের উদাহরণ।
২. অসদ বিম্ব কাকে বলে
কোন বিন্দু থেকে আগত আলোর রশ্মিগুলি প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হওয়ার পর পরস্পর মিলিত না হয়ে যদি অন্য কোন বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়, তবে ওই দ্বিতীয় বিন্দুকে প্রথম বিন্দুর অসদবিম্ব বলে। অসদবিম্বকে চোখে দেখা যায় কিন্তু পর্দায় ফেলা যায় না।
সমতল আয়না দ্বারা অসদবিম্ব গঠন
ধরা যাক, MM1 আয়নার সামনে একটি মোমবাতি আছে। মোমবাতির যে কোন বিন্দু P থেকে আগত আলোকরশ্মি PO আয়নার O বিন্দু থেকে OQ রশ্মিরূপে প্রতিফলিত হচ্ছে। আবার আরেকটি রশ্মি PO1 আয়নার O1 বিন্দু থেকে O1Q1 রশ্মি রূপে প্রতিফলিত হচ্ছে। এখন, OQ এবং O1Q1 রশ্মি দুটিকে তাদের অভিমুখ এর বিপরীত দিকে বাড়িয়ে দিলে রশ্মি দুটি P1 বিন্দুতে মিলিত হয়ে ওই বিন্দুতে P বিন্দুর অসদবিম্ব গঠন করবে।
আয়নার মধ্যে থেকে দেখলে মনে হবে যে,
১. প্রতিফলিত রশ্মি গুলো P1 বিন্দু থেকে আসছে। সুতরাং, P1 বিন্দু P বিন্দুর অসদবিম্ব ।
২. এই প্রতিবিম্বকে পর্দায় ফেলা যায় না।
৩. P বিন্দু থেকে আয়নার উপর লম্বরেখা অংকন করলে P1 প্রতিবিম্বটি ওই রেখার উপর থাকবে।
৪. সমতল আয়না থেকে P এবং P1 দূরত্ব পরস্পর সমান হবে। অর্থাৎ সমতল আয়না থেকে আলোর উৎস এবং তার অসদবিম্বের দূরত্ব সমান হবে।
উদাহরণ
১. আয়নায় সৃষ্টি হওয়া প্রতিবিম্ব।
২. পূর্ণিমা রাতে দিঘির স্থির জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব।
৩. পুকুরের জলে গাছের প্রতিবিম্ব
৪. মরুভূমির মরীচিকা প্রভৃতি হলো অসদবিম্বের উদাহরণ।
এখানে মনে রাখতে হবে যে, একমাত্র নিয়মিত প্রতিফলন দ্বারাই প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের প্রতিফলক দৃশ্যমান হয় মাত্র কিন্তু কোন প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না।
সমতল দর্পন দ্বারা সদবিম্বের সৃষ্টি
কোন উৎস থেকে আগত অভিসারী আলোকরশ্মিগুলিকে একটি সমতল দর্পণ M এর উপর আপতিত করলে, রশ্মিগুলি দর্পণে প্রতিফলিত হয়। প্রতিফলিত রশ্মিগুলি P বিন্দুতে সত্যসত্যই মিলিত হয়ে সদ প্রতিবিম্ব গঠন করে।
খুব ছোট ছিদ্র যুক্ত একটি কালো কাগজ দিয়ে এই দর্পণ থেকে সম্পূর্ণ ঢেকে, একটি মোমবাতির শিখা থেকে নির্গত আলোকরশ্মিকে ওর উপর ফেললে প্রতিফলনের ফলে দেওয়ালে শিখার সদ এবং উল্টানো প্রতিবিম্ব পাওয়া যাবে।
সদবিম্ব ও অসদবিম্বের মধ্যে পার্থক্য
সদবিম্ব ও এবং অসদবিম্ব শব্দ দুটির মধ্যে লুকিয়ে আছে এদের পার্থক্য। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সদবিম্ব এবং অসদবিম্বের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে সদবিম্ব ও অসদবিম্বের পার্থক্য আলোচনা করা হলো।
সদবিম্ব | অসদবিম্ব |
কোন বিন্দু থেকে আগত আলোর রশ্মিগুলো প্রতিফলন বা প্রতিসরণের পর সত্যিই যদি কোন বিন্দুতে পরস্পর মিলিত হয়, তবে সেই বিন্দুতে সদবিম্ব গঠিত হয়। | কোন বিন্দু থেকে আগত আলোর রশ্মিগুলো প্রতিফলন বা প্রতিসরণের পর সত্যি মিলিত না হয়ে অন্য কোন বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হলে, সেই বিন্দুতে অসদবিম্ব গঠিত হয়। |
সদবিম্ব ওকে চোখে দেখা যায় এবং সদ বিম্ব ও যেখানে গঠিত হয় সেখানে একটি পর্দা ধরলে পর্দার উপর সদবিম্ব ধরা যায়। | অসদবিম্ব চোখে দেখা যায় কিন্তু অসদবিম্বকে পর্দায় ধরা যায় না বা ফেলা যায় না। |
একটি লেন্স বা দর্পণ দ্বারা উৎপন্ন সদবিম্ব বস্তুর সাপেক্ষে উল্টানো হয়। | একটি লেন্স বা দর্পণ দ্বারা উৎপন্ন অসদবিম্ব বস্তুর সাপেক্ষে সোজা হয়। কিন্তু এর পার্শ্বীয় পরিবর্তন দেখা যায়। |
সমতল দর্পণে প্রতিবিম্ব গঠন
সমতল দর্পণে বিন্দু উৎসের বা ছোট বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন
MM দর্পণের সামনে P একটি বস্তু বিন্দু। P থেকে নির্গত PQ রশ্মি দর্পণের Q বিন্দুতে লম্বভাবে আপতিত হয়ে QP পথে প্রতিফলিত হয়েছে। আরেকটি রশ্মি PO, দর্পণের O বিন্দুতে আপতিত হয়ে OR পথে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রতিফলিত রশ্মি দুটিকে পেছনদিকে বাড়ালে P1 বিন্দুতে মিলিত হয়। সুতরাং, P1 বিন্দু হল P এর অসদ প্রতিবিম্ব।
সমতল দর্পণে বস্তু-দূরত্ব এবং প্রতিবিম্ব-দূরত্ব সমান হয় প্রমাণ কর
MM এর উপর O বিন্দুতে ON লম্ব টানা হলো। এখন, PP1 এবং ON, MM এর উপর লম্বভাবে পরস্পর সমান্তরাল। সুতরাং, PON=OPQ (একান্তর কোণ) এবং RON = OP1Q (অনুরূপ কোণ), কিন্তু প্রতিফলনের নিয়ম অনুসারে আপতন কোণ PON = প্রতিফলন কোণ RON;
অতএব, OPQ = OP1Q।
এখন, OPQ এবং OP1Q ত্রিভুজ দুটির মধ্যে, OPQ = OP1Q(প্রমাণিত);
PQO = P1QO কারণ প্রত্যেকে সমকোণ এবং QO সাধারণ বাহু। অতএব ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম। সুতরাং,PQ = P1Q
দর্পণ থেকে বস্তুর দূরত্ব = PQ এবং দর্পণ থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্ব = P1Q
অতএব দর্পণ থেকে বস্তুর দূরত্ব=দর্পণ থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্ব।
সমতল দর্পণে বিস্তৃত উৎস বা বড় বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন
ধরা যাক, MM1 সমতল দর্পণের সামনে AB একটি বিস্তৃত বস্তু। AB বস্তুটির A বিন্দু থেকে MM1 দর্পণে আপতিত রশ্মি তিনটি AP, AQ, AR এবং ওই রশ্মিগুলো দর্পণ থেকে যথাক্রমে PC, QD এবং RA রশ্মিরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। ওই রশি তিনটিকে অভিমুখের বিপরীত দিকে বাড়ালে রশ্মিতিনটি পরস্পরকে A1 বিন্দুতে ছেদ করে। তাহলে, A1 বিন্দুতে A বিন্দুর অসদ প্রতিবিম্ব গঠিত হবে।
আবার B বিন্দু থেকে অপর তিনটি রশ্মির প্রতিফলনের ফলে দর্পণের পিছনে B1 বিন্দুতে B বিন্দুর অসদ প্রতিবিম্ব গঠিত হবে। এইভাবে A ও B বিন্দুর মধ্যবর্তী বিন্দু সমূহের প্রতিবিম্ব A1 ও B1 বিন্দুর মধ্যস্থানে গঠিত হবে। ফলে দর্পণে AB বস্তুর সমাকৃতিবিশিষ্ট অসদ প্রতিবিম্ব A1B1 দেখা যাবে। এছাড়া দর্পণ থেকে বস্তু-দূরত্ব এবং প্রতিবিম্ব-দূরত্ব পরস্পর সমান হবে।
দর্পণ সমতল না অসমতল তা কিভাবে বোঝা যায়
অসমতল দর্পণে কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব আঁকাবাঁকা দেখায় কেন
একটি দর্পণের সামনে দর্পণের সমান্তরালে কোন পেন্সিলকে ধরলে যদি পেন্সিলের প্রতিবিম্ব সোজা দেখায় তবে বুঝতে হবে যে, দর্পণ সমতল। কারণ দর্পণ অসমতল হলে পেন্সিলের প্রতিবিম্ব আঁকাবাঁকা হবে। এক্ষেত্রে পেন্সিলের বিভিন্ন অংশ অসমতল দর্পণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে থাকায় পেন্সিলের বিভিন্ন অংশের প্রতিবিম্ব বিভিন্ন দূরত্বে গঠিত হয়। ফলে, অসমতল দর্পণে পেন্সিলের প্রতিবিম্ব আঁকাবাঁকা দেখায়।
সমতল দর্পণের প্রতিবিম্বের সরণ
১. কোন বস্তুকে যদি সমতল দর্পণের দিকে আনা হয় তাহলে প্রতিবিম্বটি একই দূরত্বে দর্পণের দিকে এগিয়ে আসবে। বস্তুটিকে দর্পণ থেকে দূরে সরিয়ে নিলে প্রতিবিম্বটিও একই দূরত্বে দর্পণ থেকে দূরে সরে যাবে।
ধরা যাক, MM’ দর্পণের সামনে 6 মিটার দূরে P বস্তু রাখা আছে। তাহলে, P বস্তুর প্রতিবিম্ব P’ বস্তুর বিপরীত দিকে দর্পণ থেকে ৬ মিটার দূরে গঠিত হবে। কারণ প্রতিবিম্ব-দূরত্ব সর্বদাই বস্তু-দূরত্বের সমান। এখন, P বস্তুকে দর্পণের দিকে 3 মিটার এগিয়ে Q তে রাখা হলো।
এই অবস্থায় বস্তু-দূরত্ব = (6-3) মিটার = 3 মিটার।
সুতরাং, প্রতিবিম্ব-দূরত্ব = 3 মিটার
অর্থাৎ, প্রতিবিম্বের সরণ = (6-3) মিটার = 3 মিটার।
অর্থাৎ, প্রতিবিম্ব দর্পণের দিকে সমান দূরত্ব এগিয়ে এসেছে।
একইভাবে, P বস্তুকে দর্শন থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলে দেখা যাবে— প্রতিবিম্বটিও দর্পণ থেকে একই দূরত্ব পিছনে সরে গেছে।
২. কোন দর্পণ কে যদি কোন বস্তুর দিকে আনা হয় কিংবা বস্তু থেকে দূরে সরানো হয় তবে বস্তুর প্রতিবিম্ব দ্বিগুণ দূরত্বে সরে যাবে।
ধরা যাক, MM’সমতল দর্পণের সামনে P বস্তুটি দর্পণ থেকে 10 মিটার দূরে আছে। অতএব, P বস্তুর প্রতিবিম্ব P’ দর্পণের পেছনে 10 মিটার দূরে গঠিত হবে। সুতরাং, এই অবস্থায় বস্তু এবং প্রতিবিম্বের মধ্যে দূরত্ব = (10+10=20) মিটার।
এখন, যদি দর্পণটিকে P বস্তুর দিকে 2 মিটার এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে বস্তু-দূরত্ব = (10-2=8) মিটার। সুতরাং, প্রতিবিম্ব-দূরত্ব 8 মিটার হবে। অতএব, বস্তু এবং প্রতিবিম্বের মধ্যে দূরত্ব = (8+8=16) মিটার।
অতএব, প্রতিবিম্বের সরণ = (20-16=4) মিটার
অর্থাৎ, প্রতিবিম্ব দর্পণের সাপেক্ষে দ্বিগুণ দূরত্বে এগিয়ে এসেছে। একইভাবে, দর্পণ থেকে বস্তুকে থেকে দূরে সরানো হলে, প্রতিবিম্বের পেছনদিকে স্মরণ দর্পণের সাপেক্ষে দ্বিগুণ হবে।
সমতল দর্পণে প্রতিবিম্বের পার্শ্বীয় পরিবর্তন
কোন সমতল দর্পণের সামনে বসে যদি ডান হাত দিয়ে লেখা যায়, তবে দর্পণের প্রতিবিম্ব দেখা যাবে যেন বাম হাত দিয়ে লেখা হচ্ছে। এইভাবে দর্পণে কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হলে সেই প্রতিবিম্বে বস্তুটির ডান দিককে বাম দিক এবং বাম দিককে ডান দিক বলে মনে হবে। ঘটনাকে পাশেও পরিবর্তন বলে। প্রতিবিম্বের আকার এবং বস্তুর আকার কিন্তু একই থাকে। পরিবর্তন হয় শুধু পাশাপাশি। এই পরিবর্তনকে পার্শ্বীয় পরিবর্তন বলে।
সমতল দর্পণে পার্শ্বীয় পরিবর্তন কাকে বলে
সমতল দর্পণে গঠিত কোন বস্তুর প্রতিবিম্বটি বস্তুর অবস্থানের সাপেক্ষে পাশাপাশি উল্টে যায়, একে প্রতিবিম্বের পার্শ্বীয় পরিবর্তন বলে। দর্পণে প্রতিবিম্ব-দূরত্ব বস্তু-দূরত্বের সমান হয় বলে প্রতিবিম্বের আকার ও বস্তুর আকার একই থাকে।
দর্পণে পার্শ্বীয় পরিবর্তনের ব্যাখ্যা
এইরকম পার্শ্বীয় পরিবর্তনের কারণ হলো এই যে, দর্পণ থেকে বস্তুর প্রতিটি বিন্দুতে লম্ব দূরত্ব, দর্পণ থেকে ওই প্রতিটি বিন্দুর প্রতিবিম্বের লম্ব দূরত্ব সমান হবে। এর ফলে শরীরের ডান দিকের বিন্দুগুলির প্রতিবিম্ব, শরীরের ডান দিকের বিন্দুগুলোর দিকে অর্থাৎ ডানদিকে থাকবে।
অনুরূপভাবে, বামদিকের প্রতিবিম্বের বিন্দুগুলি বাম দিকে থাকবে। কিন্তু দর্পণের দিকে ঘুরে থাকায় শরীরের ডান দিকের অংশগুলির প্রতিবিম্ব সমগ্র প্রতিবিম্বের বামদিকে এবং বাম দিকের অংশে প্রতিবিম্ব ডানদিকে দেখায়।
একটি কাগজে RS লিখে দর্পণের সামনে ধরা হলো। এখন দর্পণের মধ্যে প্রতিবিম্বটি দেখলে, প্রতিবিম্বের অক্ষরগুলিকে উল্টো বলে মনে হবে। কাগজে R বামদিকে এবং S ডান দিকে আছে, কিন্তু প্রতিবিম্বে Sকে বামদিকে এবং Rকে ডানদিকে দেখাবে।
সমতল দর্পণে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য
সমতল দর্পন দ্বারা গঠিত প্রতিবিম্বের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সমতল দর্পণে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য গুলি নিচে আলোচনা করা হলো।
১. প্রতিবিম্বটি অসদ প্রতিবিম্ব হবে অর্থাৎ এটি পর্দায় ফেলা যাবে না।
২. বস্তু এবং তার প্রতিবিম্ব সমশীর্ষ হবে। প্রতিবিম্বটি বস্তুর অবস্থানের সাপেক্ষে উল্টো হবে।
৩. প্রতিবিম্বের আকার, বস্তুর আকারের সমান হবে।
৪. দর্পণ থেকে বস্তুর দূরত্ব এবং দর্পণ থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্ব পরস্পর সমান।
৫. বস্তুর প্রতিসম না হলে প্রতিবিম্বের পার্শ্বীয় পরিবর্তন ঘটবে।
৬. বস্তু বিন্দু এবং তার প্রতিবিম্ব একই লম্বরেখা অবস্থান করবে।
এই ছিল সমতল দর্পন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য।
প্রতিবিম্ব সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
দর্পণ সমতল না অসমতল তা কিভাবে বোঝা যায়? অসমতল দর্পণে কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব আঁকাবাঁকা দেখায় কেন?
একটি দর্পণের সামনে দর্পণের সমান্তরালে কোন পেন্সিলকে ধরলে যদি পেন্সিলের প্রতিবিম্ব সোজা দেখায় তবে বুঝতে হবে যে, দর্পণ সমতল। কারণ দর্পণ অসমতল হলে পেন্সিলের প্রতিবিম্ব আঁকাবাঁকা হবে। এক্ষেত্রে পেন্সিলের বিভিন্ন অংশ অসমতল দর্পণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে থাকায় পেন্সিলের বিভিন্ন অংশের প্রতিবিম্ব বিভিন্ন দূরত্বে গঠিত হয়। ফলে, অসমতল দর্পণে পেন্সিলের প্রতিবিম্ব আঁকাবাঁকা দেখায়।
আয়নার সামনে কোন বস্তুকে রেখে একটু তীর্যকভাবে আয়নায় বস্তুর প্রতিবিম্ব দেখলে বস্তুটির একাধিক প্রতিবিম্ব দেখা যায় কেন
কারণ পুরো কাঁচের আয়নায় একইসঙ্গে আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ ঘটে, তাই এইরকম প্রতিবিম্বের সৃষ্টি হয়।
ব্যাখ্যা
ছবিতে পুরু কাঁচের একটি আয়নার সামনে একটি শিখাযুক্ত মোমবাতি P রাখা আছে। PA রশি আয়নার AG তলের A বিন্দুতে আপতিত হওয়ার পর রশ্মির কিছু অংশ A থেকে প্রতিফলিত হয়ে Q1 অবস্থানে P বাতির অস্পষ্ট অসদ প্রতিবিম্ব গঠন করে। ওই আলোকরশ্মির বেশি অংশ AC রশ্মি হিসাবে আয়নার কাঁচের মধ্যে প্রতিসৃত হয়ে আয়নার পিছনে পারদ প্রলেপের উপর C বিন্দুতে আপতিত হয়। পরে AC রশ্মির C বিন্দু থেকে CD রশ্মি হিসাবে সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হয়ে আয়নায় AG তলের D বিন্দুতে আপতিত হয়। CD আলোকরশ্মির বেশি অংশ D থেকে প্রতিসৃত হয়ে বায়ু মাধ্যমে প্রবেশ করে ফলে, Q2 অবস্থানে P বাতির দ্বিতীয় প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। এই প্রতিবিম্বটি অন্যান্য প্রতিবিম্বের তুলনায় বেশি স্পষ্ট হয়।
D বিন্দু থেকে রশ্মির কিছু অংশ DF রশ্মি রূপে পারদ তলে আপতিত হয় এবং ওই রশ্মির কিছু অংশ GK রশ্মি রূপে বায়ুতে প্রতিসৃত হয়। ফলে, GK রশ্মি P বাতির তৃতীয় প্রতিবিম্ব Q3 অবস্থানে গঠন করে। এই পদ্ধতিতে বারবার প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের ফলে অন্যান্য প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু আলোর তীব্রতা ক্রমশ কমে আসায় দ্বিতীয় প্রতিবিম্ব পরবর্তী অসদ প্রতিবিম্বগুলো ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাবে।
প্রতিসম বস্তুর পার্শ্বীয় পরিবর্তন হয় না কেন
প্রতিসম বস্তুর ডান দিক এবং বাঁ দিকের মধ্যে কোন পার্থক্য না থাকায় এই সব বস্তুর প্রতিবিম্বের পার্শ্ব পরিবর্তন দেখা যায় না। আসলে পরিবর্তন হলেও প্রতিসম হওয়ায় তাদের পার্শ্বীয় পরিবর্তন আমাদের নজরে ধরা পড়ে না।
১. A, H, M, O, T, I এই অক্ষরগুলি প্রতিসম, সেই জন্য এদের প্রতিবিম্বে পার্শ্বীয় পরিবর্তন হবে না।
২. B, C, D, F, P R এই অক্ষরগুলি প্রতিসম নয়। তাই এদের পার্শ্বীয় পরিবর্তন হয়।
সমতল দর্পণে পার্শ্বীয় পরিবর্তন কাকে বলে
সমতল দর্পণে গঠিত কোন বস্তুর প্রতিবিম্বটি বস্তুর অবস্থানের সাপেক্ষে পাশাপাশি উল্টে যায়, একে প্রতিবিম্বের প্রার্থীও পরিবর্তন বলে। দর্পণে প্রতিবিম্ব দূরত্ব বস্তুর দূরত্বের সমান হয় বলে প্রতিবিম্বের আকার ও বস্তুর আকার একই থাকে।
thanks bro i was Learn your this advice