পরমাণু এবং আয়ন
কোন মৌলের পরমাণু বিশেষ অবস্থায় তার সর্ববহিঃস্থ কক্ষপথ থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন বর্জন করতে পারে অথবা সর্ববহিস্থ কক্ষপথে এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই পরমাণুর তড়িৎ গ্রস্ত হয়। এই তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণু কি আয়ন বলে। পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের ফলে নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় গ্যাস এর ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। ফলে আয়ন সুস্থিত হয়।
আয়ন কাকে বলে
যখন কোন পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ পথ থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন বর্ধিত হয় কিংবা সর্ব বাইরের কক্ষে এক বা একাধিক ইলেকট্রন গৃহীত হয় তখনই পরমাণু তড়িৎ গ্রস্ত কণায় পরিণত হন সৃষ্টি করে।
আয়নের সংজ্ঞা এবং প্রকারভেদ
পজেটিভ আর নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণুকে আয়ন বলে।
আয়ন দুই প্রকারের হয় যথা
১. ক্যাটায়ন বা পজেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত আয়ন এবং
২. অ্যানায়ন বা নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত আয়ন
ক্যাটায়ন কাকে বলে বা কি
পজিটিভ তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণুকে ক্যাটায়ন বলে।
যখন কোন পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে পর থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে তখন পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যা নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা থেকে কম হয়। ফলে পরমাণুতে পজেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ পরমাণুতে ক্যাটায়ন এ পরিণত হয়। যেমন Na-e=Na+(সোডিয়াম আয়ন), Ca-2e=Ca+2 ক্যালসিয়াম আয়ন ইত্যাদি।
অ্যানায়ন কাকে বলে বা কি
নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত পরমাণুকে অ্যানায়ন বলে। কোন পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষপথে এক বা একাধিক ইলেকট্রন যুক্ত হলে নিউক্লিয়াসের বাইরের কক্ষপথ গুলির মোট ইলেকট্রন সংখ্যা পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা থেকে বেশি হয়। ফলে পরমাণুতে নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত কণায় পরিণত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ অ্যানায়ন উৎপন্ন হয়। যেমন Cl+e=Cl-e (ক্লোরাইড আয়ন),O+2e=O-2 ( অক্সাইড আয়ন), N+3e=N-3 ( নাইট্রাইড আয়ন) ইত্যাদি।
পজিটিভ নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত মূলক গুলিও আয়ন। যেমন পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত আয়ন অ্যামোনিয়াম নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত আয়ন হাইড্রোক্সিল নাইট্রেট সালফেট ইত্যাদি।
পরমাণু ও আয়নের ধর্ম সম্পূর্ণ আলাদা
১. পরমাণুর মধ্যে যতগুলো প্রোটন কতগুলো ইলেকট্রন বর্তমান থাকায় পরমাণু নিস্তড়িত হয়।
আয়নের মধ্যে প্রোটন ও ইলেকট্রন এর সংখ্যার পার্থক্য থাকবেই। তাই আয়নে প্রোটনের সংখ্যা বেশি হলে পজেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত এবং ইলেকট্রনের সংখ্যা বেশি হলে নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত হয়।
২. পরমাণুর চেয়ে আয়ন বেশি সুস্থিত।
৩. জলীয় দ্রবণে আয়ন স্বাধীনভাবে থাকতে পারে কিন্তু জলীয় দ্রবণে পরমাণু স্বাধীনভাবে থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্য
মৌলের মূল উপাদান ইলেকট্রন প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারাই একটি পরমাণু তৈরি হয়। কিন্তু একটি ইলেকট্রনের যুক্ত হওয়া বা বর্ধিত হওয়া আয়ন পরমাণুর রাসায়নিক ধর্মের কিছু পরিবর্তন ঘটায়। অর্থাৎ পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্য তৈরী হয়। নিচে পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো।
পরমাণু | আয়ন |
পরমাণুর তড়িৎ নিরপেক্ষ কণা। | আয়ন ধনাত্মক বা ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত কণা। |
পরমাণুতে প্রোটন এবং ইলেকট্রন সংখ্যা সমান থাকে। | আয়নে প্রোটন এবং ইলেকট্রন সংখ্যা সমান থাকে না। ক্যাটায়নের ক্ষেত্রে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা পরমাণু কেন্দ্রের প্রোটন সংখ্যার অপেক্ষা কম হয়। এবং অ্যানায়নের ক্ষেত্রে মোট ইলেকট্রনের সংখ্যা পরমাণুকেন্দ্র এর প্রোটন সংখ্যা অপেক্ষা বেশি হয়। |
আয়নের চেয়ে পরমাণু কম সুস্থিত। | পরমাণুর চেয়ে আয়ন বেশি সুস্থিত। কারণ আয়ন নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। যেমন সোডিয়াম আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়নের অনুরূপ। |
জলীয় দ্রবণে পরমাণু স্বাধীনভাবে থাকতে পারে আবার নাও পারে। | জলীয় দ্রবণে আয়ন স্বাধীনভাবে থাকতে পারে। |
সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরিন, অক্সিজেন প্রভৃতি মৌলের পরমাণুকে যথাক্রমে Na, Ca, Cl, O, চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। | সোডিয়াম ক্যালসিয়াম ক্লোরিন অক্সিজেন প্রভৃতি মৌলের আয়নকে বোঝাতে যথাক্রমে Na+, Ca+, Cl-,O-2 চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। |
পরমাণু ও আয়ন সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
পরমাণু ও আয়নের মধ্যে কোনটি বেশি সুস্থিত
পরমাণু নিস্তড়িত এবং সব জায়গায় স্বাধীনভাবে থাকতে পারেনা। কিন্তু আয়ন স্বাধীনভাবে থাকতে পারে এবং অনেক বেশি সুস্থিত।
image source chemicool