পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাঙালির শুভ নববর্ষ ( Bengali Happy New Year )। পহেলা বৈশাখ ( Pohela Boishakh ) অর্থাৎ একটি নতুন বছরের প্রথম দিন। পুরনো দিনগুলির সমস্ত বিষাদময় স্মৃতিকে ত্যাগ করে নতুনভাবে সুখ ও শান্তিময় জীবন অতিবাহিত করার জন্য পহেলা বৈশাখে ( Pohela Boishakh ) আমাদের উন্মাদনার শেষ থাকে না। এই দিনটি বাঙালির অন্যান্য সকল উৎসবের মধ্যে অন্যতম । নতুন বছরের এই দিনটিকে অত্যন্ত শুভ বলে বাঙালি সমাজ মনে করে। আসুন আমরা শুভ বাংলা নববর্ষের ( Bengali Happy New Year ) উপহার পহেলা বৈশাখ ( Pohela Boishakh ) সম্বন্ধে কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে জানার চেষ্টা করি।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ব্যপ্তি
আমরা বাঙালি। বর্তমান বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসমের বিস্তীর্ণ অংশে বাঙ্গালীদের একচেটিয়া বসবাস। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে রোজগারের তাগিদে বা অন্য কোন বিশেষ কারণে বাঙালীরা বসবাস করেন। কিন্তু সর্বত্রই বাঙ্গালীদের মধ্যে বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে একই রকম আবেগ অনুভূতি ও উন্মাদনা কাজ করে।
এছাড়াও উড়িষ্যা, পাঞ্জা্ তামিলনাড়ু, মনিপুর ভারতবর্ষ নেপাল তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চান্দ্র-সৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বাঙালীর নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়। এই উৎসবটি পালন করার জন্য অধুনা বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ বা দিনের শুরু হয় রাত 12.00 pm র পর থেকে কিন্তু ভারতীয় পরম্পরা ও পঞ্জিকা অনুসারে নববর্ষের সূচনা হয় নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে অর্থাৎ সকাল 6.00 am থেকে। কেননা হিন্দু শাস্ত্র মতে ভোরবেলা বা প্রভাত সবথেকে ভালো সময় বলে মনে করা হয়।
pohela boishakh image 2021 ( পহেলা বৈশাখ 2021) এ সবাইকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানাতে আমরা বিভিন্ন রকম ছবি বা উইসেস, কোট এগুলো সার্চ করে থাকি। তাই এখানে কয়েকটি পহেলা বৈশাখ 2021 এর সম্পূর্ন ফ্রীতে ডাউনলোড করার ছবি দেওয়া হল–
শুভ নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস
ভারতীয় ভূখণ্ড অত্যন্ত প্র্যাকটিক্যালভাবে ঋতু নির্ভরশীল পঞ্জিকা তৈরি করেছে। যার নাম সূর্যসিদ্ধান্ত (একটি সংস্কৃত গ্রন্থ অর্থাৎ দিনপঞ্জীর গাণিতিক বিশ্লেষণ)। এই সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থের প্রথম মাসের নাম বৈশাখ মাস। ভারতীয় ভূখণ্ড তথা হিন্দু সংস্কৃতির বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান শুভ লগ্ন, শুভক্ষণের মাধ্যমেই ঠিক করা হয়।
ঠিক কোন সময় থেকে বাংলা নববর্ষের সূচনা হয় তা নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন 57 খ্রিস্টাব্দে সম্রাট বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে প্রচলিত হয় পহেলা বৈশাখ । অন্য একটি মতে 593 সালে শশাঙ্কের শাসন কালে এই পহেলা বৈশাখের সূচনা হয় তার দিনপঞ্জি অনুসারে। আবার কিছু ঐতিহাসিকদের মতে এটাও জানা যায় যে, সম্রাট আকবরের শাসন ব্যবস্থায় তারা হিজরী সাল অনুসারে কৃষকদের কাছ থেকে কর আদায় করতেন। যা ভারতীয় ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে কোনোভাবেই মিল খেত না। এবং কৃষকদের অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হতো কারণ এই সময়ে তাদের ফসল ঘরে উটতো না। এমত অবস্থায় সাভাসদদের অনুরোধে সপ্তম শতকের রাজা শশাঙ্কের তৈরি দিনপঞ্জি হিসাবে কর আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। যা অত্যন্ত ঋতুভিত্তিক প্র্যাকটিক্যাল একটি দিনপঞ্জি ছিল। এবং কৃষকদেরও কর পরিশোধের সুবিধা হত।
যাইহোক, বর্তমানে বাংলাদেশে 14 ই এপ্রিল দিনটিকে পহেলা বৈশাখ হিসাবে পালন করা হয় এবং ভারতবর্ষে 15 ই এপ্রিল দিনটিকে নববর্ষের পহেলা বৈশাখ হিসেবে উদযাপন করা হয়।
উৎসব হিসাবে পহেলা বৈশাখ
বাঙালির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের মেঘ বার বার ঘনিয়েছে। ঝড়ঝঞ্ঝা প্লাবন তার অস্তিত্বকে কখনও বিপন্ন করেছে আবার কখনো দুর্ভিক্ষ-মহামারী মেতেছে বীভৎস মারণযজ্ঞে, কখনও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ে তাকে ছিন্নমূল লতার মত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে স্থান থেকে স্থানান্তরে। তবুও তার আনন্দস্রোতে ভাটা পড়েনি। বাঙালি নানা রঙের সাজিয়েছে উৎসবের ডালি। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমীর মাঝে নতুন বার্তা নিয়ে আসে উৎসবের কলধ্বনি। তারি মাঝে বাঙালিরা স্বভাবে ও মেজাজে ফুর্তিবাজ, সঙ্গপ্রিয় ও মিশুক মনোভাব নিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে। অভাব ও দারিদ্র্য থাকা সত্বেও তারা দুর্নিবার প্রাণশক্তির অধিকারী। নানারকম সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তারা বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন করে লড়াই শুরু করে। বাঙালির জীবনে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান যদি দুর্গা পুজো হয়, তবে সবচেয়ে বড় ও সার্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠান হল ‘বাংলা নববর্ষ’বা ‘পহেলা বৈশাখ’ উৎযাপন।
বাংলা নববর্ষে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে আপামর বাঙালি পহেলা বৈশাখে আনন্দে মেতে ওঠেন। বিগত পহেলা বৈশাখ 1427 বঙ্গাব্দে সারা পৃথিবী অত্যন্ত ভয়ঙ্কর মারণ রোগ করোনার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে। দুনিয়া জুড়ে লকডাউনের কারণে উৎসবকে নিজের মনে চাপা রেখে গৃহবন্দী বাংলা নববর্ষ পালন করতে হয়েছে। যদিও আমরা এখনো সেই করোনা মহামারীকে জয় করতে পারিনি তবুও পহেলা বৈশাখ 1428 বঙ্গাব্দের বাংলা নববর্ষ অত্যন্ত সুন্দর হবে, নতুন আশা নিয়ে স্বপ্ন নিয়ে উদযাপন করতে ভীষণ আগ্রহী এবং আপ্লুত। 14 ই এপ্রিল এবং 15 ই এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ তথা সামাজিক উৎসবকে ঘিরে রয়েছে বহু জনের শুভকামনা, শুভ বাসনা, বহুজনের ভালোবাসা। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী নববর্ষের প্রথম দিনেই আমরা একে অপরকে আপন করে নেওয়ার সুযোগ পাই, একে অপরের সাথে সম্পৃতির মেলবন্ধন স্থাপন করি। বাংলা নববর্ষ আমাদের কাছে উৎসবের সমান, এই উৎসবের আনন্দে আমরা সকলেই সামিল হই এবং অনাবিল মানসিক শান্তি ও তৃপ্তি অনুভব করি।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের রীতি
পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ শুভ নববর্ষ উদযাপনের যে রেওয়াজ-রীতি আছে তা অত্যন্ত দৃষ্টি আকর্ষণীয়।
বাংলা নববর্ষে পোশাক-পরিচ্ছদ
পহেলা বৈশাখে অনেকের নতুন নতুন পোশাক পরেন- বাড়ির বয়স্ক মানুষদেরকে নতুন নতুন ধুতি, পাজামা, পাঞ্জাবি পড়তে দেখা যায়, ছোটরা নতুন জামা প্যান্ট পরে, মহিলারা নতুন শাড়ি পরে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন।
বাংলা নববর্ষে খাওয়া-দাওয়া
অনেকেই এই দিন বাড়ীতে নিরামিষ খাবারের ব্যবস্থা করেন। কেউ মিষ্টি, মিঠা্ সন্দেশ এবং আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন খাবারের যে প্রচলন আছে সেগুলি বাড়িতে আয়োজন করেন।
কেউ আবার মাছ-মাংস বিভিন্ন আমিষ খাবারের ব্যবস্থা করেন। বিভিন্ন জায়গায় পাড়ায় পাড়ায় ছোট টলি বা ছোট কষ্ঠে মিলে বনভোজনের আয়োজন করেন। বাড়িতে পিঠা পুলি এবং আঞ্চলিক খাবার তৈরীর রেওয়াজ আছে।
বাংলা নববর্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান
সকালে উঠে হিন্দু বাড়িতে গ্রামের হরিনামের দল হরিনাম সংকীর্তন করতে বের হন পহেলা বৈশাখে। সকালে উঠে উঠোনে রঙ্গলি বানিয়ে বিভিন্ন রঙের সমাহারে নকশা তৈরি করা হয়। উঠোনে গোবর দিয়ে মালিন্য পরিষ্কার করা হয়। বাড়িঘর বিভিন্ন রোগ ফুল বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে বৈশাখী মেলা শুরু হয়, সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-গরীব প্রত্যেকের আনাগোনা থাকে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসবে শামিল হওয়ার প্রয়াস দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বাংলা নববর্ষে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন নাচ-গান নাটক-আবৃত্তির অংকন যাত্রা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। পহেলা বৈশাখ থেকে হিন্দু বাড়িতে সবাই সকালে উঠেই তুলসী মন্দিরের জল দেয় এবং এই পর্ব চলে সম্পূর্ণ বৈশাখ মাস জুড়ে।
সবার প্রতি শ্রদ্ধা
সকালে উঠে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কয়েকটি বহু প্রচলিত শব্দ হলো ‘শুভ নববর্ষ’, “নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল”, “নববর্ষের শুভ কামনা” ইত্যাদি। সকালে উঠে ছোটরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বা নমস্কার করে শ্রদ্ধা জানায়। এইভাবে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানান বাঙালি তথা উপমহাদেশীয় পরম্পরা।
শুভ নববর্ষ ১৪২৮ ও এর ব্যতিক্রম হবে না। আমরা প্রত্যেকে চাই বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে পহেলা বৈশাখ 2021 এই বিশেষ দিনটিতে তাদের কাছ থেকে আমরা আশীর্বাদ নেব।
বাংলা নববর্ষে ব্যবসার উদ্বোধন
একটি পুরনো বছর শেষ হয়ে নতুন বছরে পা পড়ে। বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্মের আগমন। ঋতু বৈচিত্রের মধ্যে দিয়ে বাঙালির ঘরে নতুন ফসল নতুন রোজগারের দিশা খুঁজতে পহেলা বৈশাখে অনেকে নতুন ব্যবসা উদ্বোধন করেন। পুরনো বছরের সমস্ত লাভ-লোকসান, ভালো-মন্দ, সবকিছু মাথায় রেখেও নতুনভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নতুন খাতা করা হয়। এই নতুন খাতা উদ্বোধনের জন্য ক্রেতাদেরকে ডেকে মিষ্টিমুখ করিয়ে ব্যবসার প্রতি আহ্বান জানিয়ে হালখাতা করা হয়। যারা বড় এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী তারা পহেলা বৈশাখে তাদের সমস্ত দ্রব্য মজুদ করার জন্য বিনিয়োগ করেন। কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার লাইন করে, সেখানে সবাই দেবীকে পূজা নিবেদন করে হালখাতা আরম্ভ করা রেওয়াজ আছে। এছাড়াও দকানে দকানে লক্ষ্মী ও গনেশ ঠাকুরের পুজ করে সবাইকে ডেকে খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ী ছাড়াও পরিবারের মঙ্গল কামনা করে দেবী মায়ের আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মন্দিরে ভিড় লক্ষ করা যায়।
বাংলা নববর্ষে নববর্ষের প্রচার
চৈত্র শেষে বৈশাখের আগমনে প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে বাংলা তথা ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রত্যেকটি বেতার অনুষ্ঠান যেমন রেডিও, টেলিভিশন প্রত্যেকটি মাধ্যমের পহেলা বৈশাখের আগমনকে খুশির সাথে আহ্বান করার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রচার করা হয় এবং আনন্দে মেতে ওঠা হয়। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে পহেলা বৈশাখকে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বিভিন্ন ব্লগ প্রভৃতির মাধ্যমে প্রচার করে উদযাপন করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পহেলা বৈশাখের ছবি, ভিডিও, বিভিন্ন আর্টিকেল প্রভৃতি ভীষণভাবে শেয়ার করা হয়।
প্রকৃতির নিয়মে দিন আসে দিন যায়। সূর্য ওঠে অস্ত যায় চন্দ্র ওঠে আবার সেও দিনের আলোর প্রভাবে হারিয়ে যায়। এরই মাঝে আসে কিছু বিশেষ দিন। এই বিশেষ দিন গুলোর মধ্যে বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখে স্মৃতিকে , সুন্দর মুহূর্তকে, ঢেলে সাজানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টা আমাদের মধ্যে সাদা বর্তমান। পহেলা বৈশাখ 1428 বা Pohela Boishakh 2021ও তার ব্যতিক্রম নয়। পহেলা বৈশাখ 1428 বা Pohela Boishakh 2021এ তাই আমরা কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বন্ধু-বান্ধব, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্য প্রিয়জনদের কাছে সেন্ড করে মনের ভাবাবেগকে প্রকাশ করতে চাই। নিচে শুভ নববর্ষ 1428 বা 2021 এর কিছু ফ্রী ইমেজ শেয়ার করলাম
পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন নাম
- কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ উদযাপন করেন তার মধ্যে অন্যতম নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ। এই নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখকে ভারতবর্ষ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। এখানে একটি কথা বলতে হয় বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসব পালনের রেওয়াজ রীতিনীতির মধ্যে কিছু তফাৎ লক্ষ্য করা যায়।
- অঞ্চল বিশেষ নববর্ষের বিভিন্ন নাম
- ওড়িশায় এই উৎসবকে বলা হয় বিষুব সংক্রান্তি,
- পশ্চিমবাংলায় আমরা একে পয়লা বৈশাখ নামে জানি,
- বাংলাদেশ এই পহেলা বৈশাখ-নববর্ষ বলে আখ্যায়িত করা হয়,
- তামিলনাড়ুতে একে বলা হয় পুঠান্ডু,
- কেরালায় একে বলা হয় বিশু,
- আবার আসামে এই উৎসবকে রঙালী বিহু বলে আখ্যায়িত করা হয়।
- এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই অনুষ্ঠানকে আরো বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়
এক ঝলকে পহেলা বৈশাখ
নববর্ষের পূর্ণ বাসরে বসন্তের শেষ ও গ্রীস্মের সূচনা অবাধ তার ব্যক্তি। তাই এই সময় প্রখর রৌদ্র ও তাপমাত্রার অনেক বেশি থাকে। পুকুর, পুষ্করিণীতে জলের পরিমাণ কম হয়ে যায়। মানুষ প্রচন্ড গরমে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। প্রকৃতি দেবী হঠাৎ করে অশান্ত হয়ে তাণ্ডবলীলা শুরু করে দেয়। শুরু হয় কালবৈশাখী; ঝড় বৃষ্টিতে সবকিছু বেসামাল করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয় এবং সবুজে সবুজে চারিদিকে পৃথিবীতে মেলা বসে।
নববর্ষে আমাদের উদ্দেশ্য থাকে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের অন্যান্যদের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা। এর অন্য দিক আছে , নিজে আনন্দ পাওয়া এবং সে আনন্দ সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়া, নববর্ষের প্রথম দিনটি হয়ে ওঠে আমাদের সকলের মধ্যে পারস্পারিক মিলনের প্রীতি বিনিময়ের এবং ভাবের আদান প্রদানের পবিত্র মুহূর্ত। নববর্ষের এই পবিত্র দিনে আমরা সকলে জাতিগত অর্থগত ও সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ ভুলে যাই। পরস্পরের মধ্যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য স্থাপনের মাধ্যমে রচিত হয় এক অপূর্ব সখ্য-সূত্র। চির অভ্যস্থ গতানুগতিক একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায় মানুষ; তাই বৈচিত্রের আস্বাদন, চায় আপন গণ্ডিবদ্ধ জীবনকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে উন্মুক্ত করতে।
বাংলা নববর্ষে বাঙালিরা সমস্ত সংকীর্ণ চিন্তাভাবনার ভেদাভেদ পঙ্কিলতা এবং আবিলতা ভুলে গিয়ে আনন্দযজ্ঞে শামিল হয়। এই সময় বাঙালির সমস্ত অলসতা কাপুরুষতার ভীরুতা ও তা পরিত্যাগ করে নতুন করে শপথ নেয় এগিয়ে যাওয়ার, প্রতিজ্ঞা করে ভালো কিছু করার, শপথ নেয় শুধু আমি না সবার কল্যাণ কামনার্থ। বিগত বছরে যা কিছু খারাপ তা ভুলে গিয়ে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নব উদ্যমে ও সাহসী পদক্ষেপের এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশ একদা নববর্ষের মাধ্যমে বাঙালির যে সামাজিক প্রাণ ও আদর্শ সুন্দরভাবে পরিস্ফুট হত, বর্তমানে তা অনেকটা অন্তর্হিত। আজকের দিনে সেকালের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, প্রীতি, আনন্দের বড় অভাব লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে বাঙালিরা বিশেষ করে শিক্ষিত মানুষের একটা বড় অংশ বাংলা নববর্ষকে ভুলে যেতে বসেছেন। পরিবর্তে ইংরেজি নববর্ষকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে উদযাপন করছেন। তবুও আজ সিংহভাগ বাঙালির কাছে বাংলা নববর্ষ যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। নববর্ষের উৎসবর্ষের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে সংহত করি। ক্ষুদ্র স্বার্থকে দূর করে বৃহৎ সমমিলনের মধ্যে দিয়ে একে অপরের মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হই। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে বাংলা নববর্ষকে নতুন করে মূল্যায়ন ও প্রাসঙ্গিক করে তোলার শপথ গ্রহণ করি 2021 সালের নতুন নববর্ষকে যা পা দিতে চলেছে 1428 বঙ্গাব্দে।
Comment করে আমাদের জানান পহেলা বৈশাখ সম্বন্ধে লেখা আর্টিকেলটি কামন লাগলো।