নিউট্রনে কোন তড়িৎ নেই কিন্তু প্রত্যেক প্রোটনে পজেটিভ তড়িতের পরিমাণ একক। সেজন্যই নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রোটনের মোট সংখ্যা দ্বারা পরামানু মোট পজিটিভ তড়িতের একক সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।
কোন মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলতে ওই পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত পজিটিভ তড়িৎ এর মোট একক-সংখ্যা বোঝায়।
কোন মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসের যত সংখ্যক প্রোটন থাকে সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা পারমাণবিক সংখ্যা বলে। অর্থাৎ – মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা পারমাণবিক সংখ্যা (Z) = পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা। যেমন অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা 8 ; অর্থাৎ অক্সিজেন পরমানুতে একটি প্রোটন আছে।
যেহেতু, পরমাণু নিস্তড়িত তাই পরমাণুর মোট পজিটিভ চার্জ = মোট নেগেটিভ চার্জ অর্থাৎ পরমাণুর নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরের মোট ইলেকট্রন সংখ্যা পরস্পর সমান হবে।
প্রোটন সংখ্যা = নিউক্লিয়াসের বাইরে বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রনের মোট সংখ্যা।
অতএব, বলা যায় যে মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা পারমাণবিক সংখ্যা = নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা = নিউক্লিয়াসের বাইরে বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রনের মোট সংখ্যা
একটি উদাহরণসহ বুঝি_
অক্সিজেন পরমানুতে 8 টি ইলেকট্রন, 8 টি প্রোটন এবং 8 টি নিউট্রন আছে সুতরাং অক্সিজেনের পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা পারমাণবিক সংখ্যা 8। এদেরকে সাংকেতিক চিহ্ন লেখা হয় 8O
ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক
কোন মৌলের পরমাণুতে যদি P সংখ্যা প্রোটন থাকে এবং N সংখ্যক নিউট্রন থাকে তাহলে পরমাণুর ভর সংখ্যা M = P + N
অর্থাৎ ভর সংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা
আবার, প্রোটন সংখ্যা = পারমাণবিক সংখ্যা
অতএব, পারমাণবিক সংখ্যা = (ভর সংখ্যা) – (নিউট্রন সংখ্যা)
অর্থাৎ, পরমাণু ক্রমাঙ্ক P = M – N
পারমাণবিক সংখ্যা হল মৌলের মূলগত ধর্ম
পরমাণু ক্রমাঙ্ক মৌলের মূলকথা ধর্ম। মৌলের রাসায়নিক ধর্ম মৌলের পারমাণবিক সংখ্যার উপর নির্ভর করে। পরমাণু ক্রমাঙ্ক পরিবর্তিত হলে মৌলের মূল ধর্ম পরিবর্তিত হয়ে যায়, তখন ওই পরমাণু নতুন ধর্ম বিশিষ্ট অন্য একটি মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয়। এক একটি মৌলের এক একটি নির্দিষ্ট পারমাণবিক সংখ্যা আছে। দুটি ভিন্ন মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক কখনোই এক হয় না।
মৌলের পারমাণবিক সংখ্যাকে, মৌলের চিহ্ন লিখে তার বাম পাশের নিচের দিকে পারমাণবিক সংখ্যাটিকে লিখে প্রকাশ করা হয়। যেমন অক্সিজেনে আটটি প্রোটন আছে। অতএব পরমাণু ক্রমাঙ্ক 8। অক্সিজেনকে 8O লিখে প্রকাশ করা হয়। অনুরূপের নাইট্রোজেন, সোডিয়াম, ইউরেনিয়ামের প্রোটন সংখ্যা তথা পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে 7,11 এবং 92। এদের যথাক্রমে 7N, 11N, 92U লিখে প্রকাশ করা হয়। আধুনিক পর্যায় সারণিতে মৌল গুলিকে এদের পারমাণবিক সংখ্যার উর্ধ্বক্রম অনুসারে সাজানো হয়েছে।
পরমাণুর ভর সংখ্যা
পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন এবং নিউট্রন অতিক্ষুদ্র স্থানে ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে।
পরমাণুর ভর সংখ্যা কাকে বলে
কোন মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ওই পরমাণুর ভর সংখ্যা বলে।
পরমাণুর ভর সংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা
ইলেকট্রনের ভর নগণ্য, তাই কোন পরমাণুর সমস্ত বার নিউক্লিয়াসের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকে।
যেমন সোডিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে 11টি প্রোটন এবং 12টি নিউট্রন আছে। সোডিয়ামের ভর সংখ্যা = 11+12 = 23, যেহেতু পরমাণুর মধ্যে প্রোটন এবং নিউট্রন সংখ্যা ভগ্নাংশ হতে পারেনা, এইজন্য ভরসংখ্যা কখনো ভগ্নাংশ হয়না। একটি প্রোটনের ভরকে একক ধরা হয়, আবার একটি নিউট্রনের ভর একটি প্রোটনের ভরের প্রায় সমান। সেই জন্য নিউক্লিয়াসের মধ্যস্থ নিউট্রন ও প্রোটনের মোট সংখ্যাকে ওই পরমাণুর ভর সংখ্যা বলে।
ভর সংখ্যাকে মৌলের চিহ্নের ডানপাশে উপরে লিখে প্রকাশ করা হয়। যেমন অক্সিজেন, ক্লোরিন, সোডিয়াম এবং ইউরেনিয়ামের ভর সংখ্যা যথাক্রমে 16, 35, 23 এবং 238। এই মৌল গুলির ভর সংখ্যাকে যথাক্রমে O16, Cl35, Na28 এবং U238 দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
১. এখন 17Cl35 দ্বারা বোঝা যায় যে ক্লোরিন পরমাণুতে 17 টি প্রোটন 17 টি ইলেকট্রন এবং (35-17) = 18 টি নিউট্রন আছে। ক্লোরিনের পরমাণু ক্রমাঙ্ক = 17।
২. 92U238 দাঁড়া বোঝায় যে ইউরোনিয়াম পরমাণুতে 92টি প্রোটন, 92 টি ইলেকট্রন এবং (238-92) = 146 নিউট্রন বর্তমান। ইউরেনিয়াম এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক = 92 এবং ভর সংখ্যা = 238।
৩. 29Cu63 দ্বারা বোঝায় যে কপারের পরমাণুতে 29 টি প্রোটন 29 টি ইলেকট্রন এবং (63-29) = 34টি নিউট্রন আছে। কপার এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক =29 এবং ভর সংখ্যা=63।
৪. zAm এই চিহ্ন দ্বারা এই বোধহয় যে A পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে Z সংখ্যক প্রোটন এবং নিউক্লিয়াসের বাইরে Z সংখ্যক ইলেকট্রন আছে। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের সংখ্যা = (m-Z) এবং পরমাণু ক্রমাঙ্ক = Z আর ভরসংখ্যা = m
পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক এবং ভর সংখ্যা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর
ভর সংখ্যা কাকে বলে
কোন মৌলের পরমাণুতে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টিকে ওই পরমাণুর ভর সংখ্যা বলে।
ভর সংখ্যা সর্বদাই একটি পূর্ণ সংখ্যা হয় কেন
যেহেতু পরমাণুর প্রোটন ও নিউট্রন অবিভাজ্য, তাই প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যা কখনোই ভগ্নাংশ হতে পারেনা। আর সেই কারণেই পরমাণুর ভর সংখ্যা সর্বদাই পূর্ণ সংখ্যা হবে।
একটি উদাহরণসহ বুঝি
ক্লোরিনের পরমাণুতে 17 টি প্রোটন ও 18 টি নিউট্রন আছে_অর্থাৎ সোডিয়াম পরমাণুর ভর সংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা = (17+18) = 35
ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক কি
আমরা জানি পরমাণুর ভর সংখ্যা = (প্রোটন সংখ্যা+নিউট্রন সংখ্যা)
আবার, পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা = পরমাণুর পরমাণু ক্রমাঙ্ক
সুতরাং, পরমাণুর ভর সংখ্যা = পরমাণু ক্রমাঙ্ক + নিউট্রন সংখ্যা।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কোন মৌলের পরমাণুর ভর সংখ্যা = A , পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা পারমাণবিক সংখ্যা = Z এবং নিউট্রন সংখ্যা = N
তাহলে পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা = পরমাণু ক্রমাঙ্ক = Z
এখন, ভর সংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা
অর্থাৎ, A = Z+N
অতএব ভর সংখ্যার সংজ্ঞা থেকে বলা যায় যে, পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা = ভর সংখ্যা – প্রোটন সংখ্যা এবং প্রোটন সংখ্যা = (ভর সংখ্যা – নিউট্রন সংখ্যা)
সুতরাং, পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা পারমাণবিক সংখ্যা =ভর সংখ্যা – নিউট্রন সংখ্যা।
পারমাণবিক সংখ্যাকে মৌলের মূলগত ধর্ম বলা হয় কেন
পারমাণবিক সংখ্যা মৌলের স্বকীয় ধর্ম প্রকাশ করে। কারণ, যে কোন মৌলের মূল রাসায়নিক ধর্ম মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যার উপর নির্ভরশীল। মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক পরিবর্তিত হলে মৌলের ধর্মও পরিবর্তিত হয়, ফলে ওই পরমাণু নতুন ধর্ম বিশিষ্ট অপর কোন মৌলের পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। প্রত্যেক মৌলের একটি নির্দিষ্ট পারমাণবিক সংখ্যা আছে এবং কোন দুটি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা কখনোই সমান হয় না। অর্থাৎ নির্দিষ্ট মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকায় মৌলের রাসায়নিক ধর্মও নির্দিষ্ট থাকে। অতএব পরমাণু ক্রমাঙ্ক হলো মৌলের মূলগত ধর্ম।
পারমাণবিক সংখ্যা এবং পারমাণবিক গুরুত্বের মধ্যে পারমাণবিক সংখ্যাকে কোন মৌলের মূল ধর্ম বলা হয় কেন
কোন মৌলের পারমাণবিক সংখ্যার উপর ওই মৌলের মূল রাসায়নিক ধর্ম নির্ভর করে। মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক পরিবর্তিত হলে মৌলটির মৌলের রাসায়নিক ধর্ম পরিবর্তিত হয়ে যায়, হলে মৌলটি নতুন ধর্ম বিশিষ্ট অপর কোন মৌলিক পদার্থ রূপান্তরিত হয়। প্রত্যেক মৌলিক পদার্থের একটি নির্দিষ্ট পরমাণু ক্রমাঙ্ক রয়েছে এবং কোন দুটি ভিন্ন মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক সংখ্যা কখনো সমান হয় না। যেমন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা সমান নয় বলেই H2 এবং O2 দুটি আলাদা ধর্ম বিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ।
কিন্তু পারমাণবিক গুরুত্ব একই মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রেও আলাদা হতে পারে। যেমন হাইড্রোজেনের তিন রকম পরমাণু আছে তাদের পারমাণবিক গুরুত্ব হল যথাক্রমে 1,2 এবং 3 । এছাড়া পারমাণবিক গুরুত্বের উপর মৌলের মূল রাসায়নিক ধর্ম নির্ভর করে না। এইজন্য পারমাণবিক সংখ্যা এবং পারমাণবিক গুরুত্বের মধ্যে পারমাণবিক সংখ্যা কেই মৌলের মূল ধর্ম বলা হয়।