প্রকৃতিতে ম্যাগনেসিয়ামকে মুক্ত অবস্থায় না পাওয়া গেলেও ম্যাগনেসিয়ামের প্রচুর যৌগ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। সামুদ্রিক জলে প্রায় 0.3 শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম লবণ আছে।
ম্যাগনেসিয়াম এর উৎস
ম্যাগনেসিয়াম বিভিন্ন খনিজের মধ্যে পাওয়া যায়। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান খনিজ হলো–কার্নালাইট, ম্যাগনেসাইট, ডলোমাইট, কাইসেরাইট, সামুদ্রিক জল প্রভৃতি।
ভারতের মাদ্রাজ ও মহীশুরে ম্যাগনেসাইট পাওয়া যায়। অনেক প্রস্রবনের জলে ম্যাগনেসিয়ামের লবণ পাওয়া যায়।
ম্যাগনেসিয়াম প্রস্তুতি
কার্নালাইট ও ম্যাগনেসাইট হল ম্যাগনেসিয়াম এর প্রধান আকরিক। তাই কার্নালাইট ও ম্যাগনেসাইট আকরিক থেকে ম্যাগনেসিয়াম নিষ্কাশন করা হয়। বর্তমানে সমুদ্রের পানি থেকেও ম্যাগনেসিয়ামকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
ম্যাগনেসিয়ামের প্রধান খনিজ বা আকরিক
যৌগ | খনিজ পদার্থের নাম |
সালফেট | কাইসেরাইট MgSO4, H2O |
মিশ্র লবণ | কেইনাইট KCl, MgSO4, 3H2O |
ক্লোরাইড | কার্নালাইট MgCl2, KCl, 6H2O |
কার্বনেট | ম্যাগনেসাইট MgCO3 ডলোমাইট MgCO3, CaCO3 |
সিলিকেট | এডবেস্টস CaMg3(SiO3)4 |
ম্যাগনেসিয়ামের ধর্ম
ম্যাগনেসিয়ামের ধর্ম বিষয়ে সহজে জানার জন্য আমরা ম্যাগনেসিয়ামের ধর্মকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করব।
১. ম্যাগনেসিয়ামের ভৌত ধর্ম
২. ম্যাগনেসিয়ামের রাসায়নিক ধর্ম
প্রথমে আমরা ভৌত ধর্ম এবং পরে রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো।
ম্যাগনেসিয়ামের ভৌত ধর্ম
১. ম্যাগনেসিয়াম উজ্জ্বল সাদা, এটিই রুপার মত চকচকে ধাতু।
২. এটি হালকা ধাতু, ম্যাগনেসিয়ামের আপেক্ষিক গুরুত্ব 1.74।
৩. অ্যালুমিনিয়ামের মতো ম্যাগনেসিয়ামও নরম এবং প্রসার্যমান। সেই কারণে সহজে পাতলা পাতে বা সরু তারে পরিণত করা সম্ভব।
৪. ম্যাগনেসিয়াম এর গলনাঙ্ক 651°C সেন্টিগ্রেড এবং স্ফুটনাঙ্ক 100°C।
ম্যাগনেসিয়ামের রাসায়নিক ধর্ম
১. বাতাসের সঙ্গে ম্যাগনেশিয়ামের ক্রিয়া
ক) Mg শুষ্ক বাতাসের সঙ্গে কোনো রকম বিক্রিয়া করে না।
খ) জলীয় বাষ্পযুক্ত আর্দ্র বায়ুতে রাখা ম্যাগনেসিয়ামের উপর ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইডের (MgO) পাতলা আস্তরণ পড়ে।
গ) বাতাসের মধ্যে রেখে ম্যাগনেসিয়ামকে দহন করলে উজ্জ্বল সাদা শিখায় জ্বলতে থাকে। বায়ুতে দহনের ফলে ম্যাগনেসিয়াম বায়ুর অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যথাক্রমে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড এবং ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রাইট উৎপন্ন করে।
2Mg+O2=2MgO
3Mg+N2=Mg3N2
ঘ) বিশুদ্ধ অক্সিজেনের মধ্যে দহন করলে সাদা ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এটি একটি ক্ষারীয় অক্সাইড।
২. জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ক্রিয়া
জলীয় বাষ্পের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামকে উত্তপ্ত করলে ম্যাগনেসিয়াম উজ্জ্বল শিখায় জ্বলতে থাকে এবং ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
Mg+2H2O=MgO+H2
৩. জলের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়া
ক) সাধারণ উষ্ণতায় ম্যাগনেসিয়ামের জলের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটে না।
খ) ম্যাগনেসিয়ামের গুড়ো বা পাউডার ফুটন্ত জলকে বিয়োজিত করে ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড লবণ এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
Mg+2H2O=Mg(OH)2+H2
৪. লঘু অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া
ক) লঘু বা গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
Mg+2HCl=MgCl2+H2
খ) খুব পাতলা নাইট্রিক অ্যাসিড বা অতিলঘু এসিডের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রেট এবং হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়।
Mg+2HNO3=Mg(NO3)2+H2
গ) শীতল এবং অল্প গাঢ় নাইট্রিক এসিডের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রেট ও নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
3Mg+8HNO3=3Mg(NO3)2+4H2O
ঘ) লঘু সালফিউরিক এসিডের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়।
Mg+H2SO4=MgSO4+H2
ঙ) উত্তপ্ত গাঢ় সালফিউরিক এসিডের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম-সালফেট, সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন হয়।
Mg+2H2SO4=MgSO4+SO2+2H2O
৫. ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া
ক্ষারের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের কোন বিক্রিয়া হয় না।
৬. বিজারণ ক্ষমতা
এটি একটি উত্তম বিজারক পদার্থ । জ্বলন্ত অবস্থায় ম্যাগনেসিয়াম, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পকে বিজারিত করে যথাক্রমে কার্বন এবং হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে।
ম্যাগনেসিয়ামের ব্যবহার
আমাদের প্রতিনিয়ত জীবনের ম্যাগনেসিয়ামের বহুল ব্যবহার বর্তমান।
১. ফটোগ্রাফিক ফ্ল্যাশ বাল্ব প্রস্তুতিতে, সাংকেতিক আলো উৎপাদনের ম্যাগনেসিয়ামের ব্যবহার দেখা যায়
২. বোরণ এবংসিলিকা নিষ্কাশনের ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহৃত হয়।
৩. পরীক্ষাগারে বিজারকরূপে, জৈব রসায়নে গ্রিগনার্ড বিকারকরূপে ব্যবহৃত হয়।
৪. বাজিও বোমা প্রস্তুতিতে ম্যাগনেসিয়ামের ব্যবহার হয়।
৫. বিভিন্ন হালকা সংকর ধাতু, যেমন ম্যাগনেলিয়াম, ডুরালুমিন, ইলেকট্রন প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
৬. বিমান ও মোটরগাড়ির কাঠামো,তুলা যন্ত্র এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
ম্যাগনেসিয়াম বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
ম্যাগনেসিয়াম ধাতুতে আগুন লাগলে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস দিয়ে নেভানো যায় না কেন
ম্যাগনেসিয়াম ধাতুতে আগুন লাগলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের সাহায্যে সেই আগুন নেভানো যায় না কারণজ্বলন্ত ম্যাগনেসিয়াম কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন উৎপন্ন করে।
ম্যাগনেসিয়ামের সংকেত বা প্রতীক বা চিহ্ন কি
ম্যাগনেসিয়ামের সংকেত বা প্রতীক বা চিহ্ন হল Mg
ম্যাগনেসিয়ামের পারমাণবিক গুরুত্ব কত
ম্যাগনেসিয়ামের পারমাণবিক গুরুত্ব 24
ম্যাগনেসিয়ামের যোজ্যতা কত
ম্যাগনেসিয়ামের যোজ্যতা 2