লবণ
লবণের সংজ্ঞা
এসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন পরমাণু,ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎ গ্রস্ত মূলক দ্বারা অথবা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন করে তাকে লবণ বলে।
HCl+NaOH=NaCl+H2O
লবণ,তড়িৎ বিয়োজিত অবস্থায় হাইড্রোজেন আয়ন ছাড়া অন্য ক্যাটায়ন এবং হাইড্রোক্সিল ছাড়া অন্য অ্যানায়ন উৎপন্ন করে।
HCl=H++Cl–
NaOH= Na++ OH–
HCl+NaOH=H2O+Na++Cl–
এখানে H+আয়ন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে NaCl লবণ উৎপন্ন করে এবংNaCl তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে H+এবং Cl– আয়ন উৎপন্ন করে।
লবনের শ্রেণীবিভাগ
- ক) সমিত বা নরমাল লবণ
- কোন অ্যাসিডের অণুতে প্রতিস্থাপনীয় সমস্ত হাইড্রোজেন পরমাণু, ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে লবণ উৎপন্ন করে তাকে নরমাল লবণ বা সমিত লবণ বলে।হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন সোডিয়াম ক্লোরাইড সালফিউরিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন সোডিয়াম সালফেট নর্মাল লবণের উদাহরণ।
- খ) ক্ষারকীয় লবণ
- কোন ক্ষারকের সমস্ত হাইড্রোক্সিল মূলক এসিড দ্বারা সম্পূর্ণ প্রশমিত না হয় আংশিক প্রশমিত হওয়ার ফলে যে লবণ উৎপাদন হয় তাকে ক্ষারকীয় লবণ বলে
- Pb(OH)2+HNO=Pb(OH)NO3-+H2O
- ক্ষারীয় লেড কার্বনেট Pb(OH)2, 2PbCO3 ক্ষারীয় কপার কার্বনেটCuCO3,CuOH2 প্রভৃতি ক্ষারীয় লবণের উদাহরন।
- গ) এসিড লবণ
- এসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু, ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে লবণ উৎপন্ন করে তাকে এসিড লবণ বলা হয়।
- H2OSO4+NaOH=NaHSO4+H2Oহাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে সোডিয়াম বাই সালফেট লবনের উৎপন্ন করেছে। NaHSO4 একটি এসিড লবণ।
- সোডিয়াম বাই কার্বনেট NaHCO3, ডাই সোডিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেটNa2HPO4 প্রভৃতি লবণগুলি এসিড লবণ।
- ঘ) দ্বিধাতব লবণ
- অনেক সময় দুটি লবণ নির্দিষ্ট আণবিক অনুপাতে যুক্ত হয়ে নতুন লবন সৃষ্টি করে।কঠিন অবস্থায় এই লবণ স্থায়ী কিন্তু জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে উপাদান লবণ আয়ন উৎপন্ন করে। অ্যালাম K2SO4,AL(SO4)3, 24H2O ক্রম অ্যালাম K2SO4,Cr2(SO4)3, 24H2O এই জাতীয় লবণের উদাহরণ।
অ্যাসিড ক্ষার ও ক্ষারক: ধর্ম ও সনাক্তকরণ
প্রশমন
প্রশমনের সংজ্ঞা
এসিড বা ক্ষারের মধ্যে বিক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ধর্ম সম্পূর্ণরূপে লোপ পেয়ে লবণ ও জল উৎপন্ন হয়। এসিড ও ক্ষারের মধ্যে এইরকম বিক্রিয়াকে প্রশমন ক্রিয়া বলে।
তুল্য পরিমাণ এসিডের সঙ্গে তুল্য পরিমাণ ক্ষারের বিক্রিয়ায় লবণ ও জল উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন দ্রবণে এসিড বা ক্ষারের ধর্ম প্রকাশ পায় না। এইরকম বিক্রিয়াকে প্রশমন বলে।
যেমন HCl এর সঙ্গে NaOH এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ ও জল উৎপন্ন হয়।
HCl+NaOH=NaCl+H2O
- অ্যাসিডের দ্রবণে H+ আয়ন থাকে এবং দ্রবণে এসিডের ধর্ম এই H+ আয়নের জন্য। আবার ক্ষার দ্রবণে OH– আয়ন থাকে দ্রবণের ক্ষারীয় ধর্ম OH– আয়নের জন্য। জলের মধ্যে এসিডের ধর্ম ও নাই আবার ক্ষারের ধর্ম নেই।
সুতরাং, জলীয় দ্রবণের তুল্যাঙ্ক পরিমাণে এসিড ও ক্ষার মেশালে এসিডের H+ আয়ন ও ক্ষারের OH– আয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তড়িৎ নিরপেক্ষ জলের অণু উৎপন্ন করে। দ্রবণে অতিরিক্ত H+ আয়ন অথবা অতিরিক্ত OH– থাকে না। ফলে দ্রবণে এসিড বা ক্ষার এর কোন কোন প্রকাশ পায় না। এই দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল, নীল লিটমাসকে লাল করে না। এসিডের অ্যানায়ন এবং ক্যাটায়ন এর কোন পরিবর্তন হয়না। - HCl=H++Cl–
NaOH= Na++ OH–
HCl+NaOH=H2O+Na++Cl–
ল্যাবরেটরীতে এসিড ও ক্ষারের প্রশমন বিক্রিয়া ঘটানো হয় টাইট্রেশন পদ্ধতিতে।
জারণ, বিজারণ – জারক ও বিজারক পদার্থ
বিলীয়মান রং
এমোনিয়া জলে দ্রবীভূত হয়ে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন করে। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড একটি মৃদু ক্ষার। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সঙ্গে সামান্য ফেনোফথ্যালিন নির্দেশক যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ লালচে বেগুনি হয়ে যায়। সাদা কাপড়ে এই রং দিলে কাপড়টি লালচে বেগুনি হয়ে যায়। যেহেতু এমোনিয়া একটি গ্যাস,তাই বাতাসের সংস্পর্শে এলে ওই দ্রবণ থেকে অ্যামোনিয়া বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়।এমোনিয়া না থাকায় দ্রবণের ক্ষার ধর্ম আর থাকেনা প্রসম হয়ে যায়। প্রশম দ্রবণে ফেনোফথ্যালিন এর কোন বর্ণ নেই, তাই ওই লালচে বেগুনি রং অদৃশ্য হয়ে যায়। কাপর্টি আবার আগের মত সাদা হয়ে যায়। ফেনোফথ্যালিন যুক্ত অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর দ্রবণকে তাই বিলীয়মান রং বলে।
নির্দেশক এবং প্রশমন বিক্রিয়ায় নির্দেশক এর প্রয়োজনীয়তা
কতকগুলি জৈব যৌগ আছে যাদের বর্ণ এসিডে একরকম এবং ক্ষারে অন্যরকম হয়। এই জৈব যৌগ গুলিকে নির্দেশক বলে।টাইট্রেশন এর সময় অ্যাসিড এবং ক্ষারের মধ্যে বিক্রিয়ায়এই নির্দেশক গুলি নিজেদের বর্ণ পরিবর্তন করে বিক্রিয়ায় প্রশমন ক্ষন নির্দেশ করে। লিটমাস দ্রবণ, মিথাইল অরেঞ্জ, ফেনোফথ্যালিন প্রভৃতি এই জাতীয় জৈব যৌগ। এরা নির্দেশক। দ্রবণের নির্দেশক এর বর্ণ দেখে দ্রবণটি আম্লিক না ক্ষারীয় বা প্রশমন তা জানা যায়।
তুল্য পরিমাণ অ্যাসিড কাকে বলে
এসিডের যত ভাগ ওজনের একভাগ ওজনের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন থাকে তাকে তুল্য পরিমাণ এসিড বলে।
তুল্য পরিমাণ ক্ষার কাকে বলে
ক্ষারের যতভাগ ওজন এক তুল্য পরিমাণ অ্যাসিডকে প্রশমিত করে, তাকে তুল্য পরিমাণ ক্ষার বলে।
⅞