লেন্স হলো নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকারের দুটি তল দ্বারা সীমাবদ্ধ এমনই একটি স্বচ্ছ মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি প্রতিসৃত হলে, প্রতিসরণের পর আলোর গতিপথ পরিবর্তন হয়। লেন্সের তল দুটির একটি গোলীয় এবং একটি সমতল অথবা দুটি তলই গোলীয় হতে পারে।
লেন্স কাকে বলে (সংজ্ঞা)
যদি কোন সমসত্ব, স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যম, দুটি গোলীয় তল কিংবা একটি সমতল একটি গোলীয় তলের দ্বারা ঘেরা থাকে, তবে সেই মাধ্যমকে লেন্স বলে।
লেন্স কত প্রকার
লেন্স দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা
ক) উত্তল লেন্স বা অভিসারী লেন্স এবং
খ) অবতল লেন্স বা অপসারী লেন্স।
ক) উত্তল লেন্স কি বা কাকে বলে (সংজ্ঞা)
১) যে লেন্সে সমন্তরাল রশ্মি আপতিত হয় লেন্সের মধ্যে প্রতিসৃত হওয়ার পর লেন্স থেকে নির্গত হওয়ার সময় অভিসারী হয়ে নির্গত হয়, সেই লেন্সকে উত্তল লেন্স বলে।
সমন্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ এই লেন্সের উপর আপতিত হয়ে প্রতিসৃত হওয়ার পর লেন্স থেকে নির্গত হওয়ার সময় অভিসারী হয়ে নির্গত হয় বলে, এই লেন্সকে অভিসারী লেন্স বলে।
উত্তল লেন্সকে অভিসারী লেন্স এর মাঝখানটা মোটা হয় এবং কিনারা (প্রান্তদ্বয়) শরু হয়।
২) যে লেন্সের মধ্যভাগ মোটা এবং প্রান্তের দিক ক্রমশ শুরু হয় তাকে উত্তল লেন্স বলে।
ক) উত্তল লেন্স কত প্রকার এবং কি কি
উত্তল লেন্স তিন রকমের হতে পারে যথা
১. উভোত্তল লেন্স
২. সমোত্তল লেন্স এবং
৩. অবতলোত্তল লেন্স
১. অবতল লেন্স কাকে বলে (সংজ্ঞা)
যে লেন্সের উভয় তলই উত্তল (অর্থাৎ মধ্যভাগ মোটা এবং দুই প্রান্ত শরু) তাকে উভোত্তল লেন্স বলে। ক্যামেরা, দূরবীক্ষণ, অণুবীক্ষণ প্রভৃতি যন্ত্রে উভোত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়।
২. সমোত্তল লেন্স কাকে বলে (সংজ্ঞা)
যে লেন্সের একটি দল সমতল এবং অপরটি উত্তল তাকে সমোত্তল লেন্স বলে। এই লেন্সকে দূরবীক্ষণ , অণুবীক্ষণ প্রভৃতি যন্ত্রের অভিনেত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
৩. অবতলোত্তল উত্তল লেন্স কাকে বলে (সংজ্ঞা)
যে লেন্সের একটি তল অবতল এবং অপরটি উত্তল, তাকে অবতলোত্তল লেন্স বলে। এই লেন্সকে চশমার কাচ হিসেবে ব্যবহার করায় হয়।
খ) অবতল লেন্স অপসারী লেন্স কাকে বলে (সংজ্ঞা)
যে লেন্সের মধ্যভাগ সরু এবং প্রান্ত দিক ক্রমশ মোটা হতে থাকে, তাকে অবতল লেন্স বলে।
লেন্সটি অবতল হলে সমান্তরাল রশ্মিগুলো ওই লেন্স থেকে প্রতিসৃত হয়ে অপসারী বা কেন্দ্রবহির্মুখী রশ্মিরূপে নির্গত হয়। তাই অবতল লেন্সকে অপসারী লেন্স বলে। অবতল লেন্স থেকে প্রতিসৃত রশ্মিগুচ্ছের রশ্মি গুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে।
অবতল লেন্স কত প্রকার এবং কি কি
উত্তল লেন্সের মতো অবতল লেন্স কেউ আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি
১. উভোবতল লেন্স
২. সমাবতল লেন্স এবং
৩. উত্তলাবতল লেন্স
যে অবতল লেন্সের উভয় তলই অবতল তাকে উভোবতল লেন্স বলা হয়। অবতল লেন্সের একটি তল অবতল এবং অপর একটি সমতল হলে সেটিকে সমাবতল লেন্স বলে। এছাড়া একটি অবতল তল এবং একটি উত্তল তলযুক্ত অবতল লেন্সকে উত্তলাবতল লেন্স বলে।
লেন্স সম্পর্কিত কয়েকটি সংজ্ঞা
লেন্স সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে কয়েকটি শব্দ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার। তাই লেন্স সংক্রান্ত কয়েকটি সংজ্ঞাকে আমরা এখানে প্রকাশ করব।
১. প্রধান অক্ষ কাকে বলে ( সংজ্ঞা)
উত্তল লেন্সের দুটি গোলীয় তলের বক্রতা কেন্দ্রের সংযোগ সরলরেখাকে প্রধান অক্ষ বলে। অর্থাৎ উত্তল লেন্সের দুই পিঠের বক্রতাকেন্দ্র দুটিকে যোগ করে যে সরলরেখা পাওয়া যায় তাইই হল উত্তল লেন্সের প্রধান অক্ষ।
উত্তল লেন্সের উভয় তলই গোলীয় হলে প্রত্যেকটি তলই নির্দিষ্ট কোন গোলকের অংশ হবে। ওই গোলক দুটির কেন্দ্র C1 C2 কে লেন্সটির বক্রতা কেন্দ্র বলে।
আলোক কেন্দ্র কি (সংজ্ঞা)
আলোক কেন্দ্র হল লেন্সের মধ্যে প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট বিন্দু, যার মধ্য দিয়ে কোন রশ্মি অতিক্রম করে প্রতিসরণের পর লেন্সের অপর পৃষ্ঠ থেকে নির্গত হওয়ার সময় আপতিত রশ্মির সমান্তরালভাবে নির্গত হয়। এইরকম অবস্থায় লেন্সের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ওই আলোকরশ্মিটি লেন্সের প্রধান অক্ষকে যে বিন্দুতে ছেদ করে সেই নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে লেন্সের আলোক কেন্দ্র বলে।
আলোক কেন্দ্র লেন্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু যা থেকে লেন্সের বস্তুর দূরত্ব এবং প্রতিবিম্বের দূরত্ব পরিমাপ করা যায়।
মনে করি, লেন্সের এক তলে PQ রশ্মি আপতিত হয়ে লেন্সের মধ্যে QR পথের প্রতিসৃত হয়েছে। এই রশ্মি লেন্সের অপর তল থেকে RS পথে নির্গত হয়েছে। এই নির্গত রশ্মি RS, আপতিত রশ্মি PQ এর সমান্তরাল। এখন লেন্সের মধ্যে প্রতিশ্রুত রশ্মি QR প্রধান অক্ষ AB কে O বিন্দুতে ছেদ করেছে, O বিন্দু হল লেন্সের আলোক কেন্দ্র। এক্ষেত্রে নির্গত রশ্মির দিক বিচ্যুতি হয় না। কিন্তু পার্শ্ব-সরণ হয়।
ফোকাস
প্রধান অক্ষের সমান্তরাল আলোকরশ্মি গুচ্ছ উত্তল লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত হওয়ার পর প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর মধ্যদিয়ে যায়। প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত এই বিন্দুকে উত্তল লেন্সের প্রধান ফোকাস বা ফোকাস বা ফোকাস বিন্দু বলে।
চিত্রে উত্তল লেন্সের আলোক কেন্দ্র O এবং F ফোকাস বিন্দু বা ফোকাস। এই ফোকাস বিন্দু থেকে উত্তল লেন্সের দ্বিতীয় মুখ্য প্রকাশ বলা হয়। লেন্সের অক্ষের উপর এমন একটি বিন্দু F1 পাওয়া যাবে যে, সেই বিন্দু থেকে অপসারী আলোকরশ্মি গুচ্ছ লেন্স থেকে প্রতিসৃত হয়ে প্রধান অক্ষের সমান্তরালে গমন করবে। ওই বিন্দুকে লেন্সের প্রধান মুখ্য ফোকাস বলে। ছবিতে উত্তল লেন্সের প্রধান অক্ষ F1।
*উত্তল লেন্সের দুটি ফোকাস আছে। ওই ফোকাস দুটি আলোক কেন্দ্রের বিপরীত দিকে এবং আলোক কেন্দ্র থেকে সমান দূরে থাকে।
ফোকাস দূরত্ব
উত্তল লেন্সের আলোক কেন্দ্র থেকে মুখ্য ফোকাসের দূরত্বকে ওই লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বলে। এই দূরত্বকে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ছবিতে দেখানো উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব হলো OF, যাকে f অক্ষর দিয়ে বোঝানো হয়।
ফোকাস তল
কোন উত্তল লেন্সের মুখ্য ফোকাসের ভিতর দিয়ে লেন্সের প্রধান অক্ষের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত তলকে লেন্সের ফোকাস তল বলা হয়।
উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব নির্ণয়
১. সাদা কাগজ বা দেয়ালের উপর উত্তল লেন্সের সাহায্যে দূরের কোনো বস্তুর প্রতিবিম্ব উৎপন্ন করে লেন্সের ফোকাস দূরত্ব নির্ণয়
সমান্তরাল আলোকরশ্মি উত্তল লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত হওয়ার পর রশ্মি গুলি তলে মিলিত হয়। 60 মিটার বা তার বেশি দূরের কোনো বস্তু থেকে আগত রশ্মিগুলিকে মোটামুটি সমান্তরাল বলে ধরা হয়। সুতরাং দূরের কোনো বস্তু থেকে আগত রশ্মিগুলোকে লেন্সে প্রতিসৃত হয়ে লেন্সের অপরপাশে কাগজের পর্দা এবার দেওয়ালে প্রতিবিম্ব গঠন করে। পর্দার যেখানে প্রতিবিম্ব গঠিত হয় সেটি হল ফোকাস তল। তাই এক্ষেত্রে পর্দা থেকে লেন্সের দূরত্বই হবে মোটামুটি ওই লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য।
পদ্ধতি
একটি ঘরের সব জানালা বন্ধ করে অন্ধকার করা হলো। একটি মাত্র জানালা খোলা রাখা হল যেন ওর ভেতর দিয়ে দূরের বস্তু দেখা যায়। ঘরের জানালার কিছু দূরেই একটি নারকেল গাছ আছে। একটি পরিষ্কার উত্তল লেন্সকে হোল্ডার দিয়ে আটকে দেওয়ালে আটকানো পর্দার সমান্তরালে রেখে, পর্দার কাছ থেকে ধীরে ধীরে খোলা জানালার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। একসময় দেখা গেল দূরের ওই নারকেল গাছের একটি স্পষ্ট রঙিন প্রতিবিম্ব পর্দার গায়ে ফুটে উঠেছে। প্রতিবিম্বটি কিন্তু উল্টানো হবে। এখন লেন্স থেকে পর্দার দূরত্বটি মিটার-স্কেল দিয়ে মাপলেই উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব পাওয়া যাবে।
২. সূর্য রশ্মির সাহায্যে উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব নির্ণয়
সূর্য রশ্মির দিকে সোজাসুজিভাবে কোন উত্তল লেন্সকে ধরলে সূর্য থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মির উৎস থেকে প্রতিসৃত হয়ে লেন্সের ফোকাস বিন্দুতে সূর্যের একটি উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব গঠন করবে।
এই অবস্থায় একটি কাগজকে লেন্সের ফোকাস তল বরাবর ধরলে কাগজের উপর সূর্যের উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব পাওয়া যাবে। তখন মিটার স্কেলের সাহায্যে লেন্স থেকে কাগজ খন্ডের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়।
মনে করি ঐ দূরত্ত্ব x সেন্টিমিটার এবং পরীক্ষাধীন লেন্সটির বেধ d সেন্টিমিটার। তাহলে উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব = (x+d/2) সেন্টিমিটার।
আতস কাঁচ কাকে বলে
কোন উত্তর লেন্সকে সূর্যরশ্মি বরাবর ধরে যদি লেন্সের ফোকাস তলে কোন কাগজখন্ড বা সহজদাহ্য কোন বস্তু (যেমন কিছুটা তুলো) কে রাখা হয় তবে দেখা যাবে যে, কিছু সময় পরে কাগজ খন্ড বা ঐ বস্তুটিতে আগুন জ্বলতে শুরু করবে। এভাবে ব্যবহৃত উত্তল লেন্সকে আতসী কাঁচ বা আতশ কাঁচ বলে।
ব্যাখ্যা
সূর্য থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ উত্তল লেন্স থেকে প্রতিসৃত হয়ে ফোকাস তলে মিলিত হয়। আলোক রশ্মি গুলি ফোকাস তলের যে বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয় সেই বিন্দুটি হলো লেন্সের ফোকাস বিন্দু। ফোকাস বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত আলোকরশ্মি উত্তাপের সৃষ্টি করে। ফলে ওখানে রাখা কাগজ বা দাহ্য বস্তুতে আগুন ধরে যায়। বর্তমানে সৌরচুল্লিতে এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে সূর্যের তাপ শক্তিকে রান্না, ঘর বা জল গরম করা প্রভৃতি নানান কল্যাণকর কাজে লাগানো হচ্ছে।
Great description about Lance. Your website is very useful for me. I think it’s a educational website and all information is right on this website. Bes of luck for your.
Thankyou Sir. If the article really impress you please recommend other to help them.