কার্বন
কার্বনের সংকেত C
কার্বনের যোজ্যতা বা যোজনী 4
কার্বনের পারমাণবিক গুরুত্ব 12
কার্বন একটি অদ্ভুত মৌল – বিভিন্ন রূপে পৃথিবীতে অবস্থান করে। একে কখনো মূল্যবান হীরক রূপে ধনীর ঘরে আবার কখনো কালো কয়লারূপে রান্নাঘরে জ্বালানি রূপে দেখা যায়। মুক্ত অবস্থায় এবং অন্যান্য মৌলের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় প্রকৃতির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বন আছে।
ক) মুক্ত অবস্থায় কার্বন
মুক্ত অবস্থায় কার্বনকে হীরক এবং গ্রাফাইট রূপে স্ফটিকাকারে এবং কয়লারূপে অনিয়তাকারে পাওয়া যায়।
খ) অন্যান্য মৌলের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায়
- ১. প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের অপরিহার্য উপাদান হলো কার্বন।
- ২. কার্বনকে হাইড্রোজেনের সঙ্গে হাইড্রোকার্বনরূপে পেট্রোলিয়াম, মার্স গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতির মধ্যে পাওয়া যায়।
- ৩. অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন এর সঙ্গে কার্বনকে কার্বোহাইড্রেট রূপে চিনি, গ্লুকোজ, স্টার্চ প্রভৃতির মধ্যে পাওয়া যায়।
- ৪. অক্সিজেন, হাইড্রোজেন এবং নাইট্রোজেনের সঙ্গে প্রোটিন এবং
- ৫. কার্বনের যৌগ রূপে ডলোমাইট MgCO3, CACO3 লাইমস্টোন প্রভৃতির মধ্যে পাওয়া যায়।
- ৬. বায়ুর একটি উপাদান হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড
- ৭. তেল ও চর্বি জাতীয় পদার্থের কার্বন পাওয়া যায়।
সলিনয়েড | তড়িৎ চুম্বক : ব্যবহার ও মেরু নির্ণয় | চুম্বকের পার্থক্য
কার্বনের বহুরূপতা
অনেক সময় দেখা যায়, একই মৌলিক পদার্থ ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট হয়।কোন কোন মৌলিক পদার্থ নিজের মূল রাসায়নিক ধর্ম অক্ষুন্ন রেখে বিভিন্নরূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। একই মৌলের বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হওয়ার এই বিশেষ ধর্মকে বহুরূপতা বলে। মৌলিক পদার্থের বিভিন্ন রূপকে রূপভেদ বলে।এই সব মৌলের বিভিন্ন রূপের মধ্যে ভৌত ধর্মের পার্থক্য বেশি দেখা যায়। এদের রাসায়নিক ধর্মেও সামান্য পার্থক্য দেখা যায়।
বহুরূপতার কারণ
ক) মৌলের কেলাসন পদ্ধতির পার্থক্য।
খ) মৌলের অণুর মধ্যে পরমাণুর সংখ্যার তারতম্য হলেও বহুরূপতা দেখা যায়। যেমন অক্সিজেন O2 এবং ওজন O3।
গ) অণুর মধ্যে পরমাণু গুলির অবস্থানের তারতম্যের জন্য বহুরূপতা দেখা যায়। কার্বন ও গন্ধকের বহুরূপতা এই কারণে হয়ে থাকে।
ঘ) বিভিন্ন রূপভেদের অভ্যন্তরীণ শক্তির তারতম্যের জন্য অনেক সময় বহুরূপতা দেখা যায়। যেমন রম্বিক সালফারে তাপ প্রয়োগ করলে মনোক্লিনিক সালফারে পরিণত হয়। কাজেই মনোক্লিনিক সালফারে অভ্যন্তরীণ শক্তি বেশি থাকে। কার্বন সালফার ফসফরাস অক্সিজেন এবং আরও অনেক মৌলের বহুরূপতা দেখা যায়। অক্সিজেনের একটি বহু রূপ হল ওজোন গ্যাস।
কার্বনের রূপভেদ
কার্বন প্রাকৃতিক ভাবে দুই প্রকারের হয়
ক) কেলাসাকার
খ) অনিয়তাকার
ক) কেলাসাকার কার্বনের রূপভেদ
ক. হীরক এবং
খ. গ্রাফাইট
খ) অনিয়তাকার কার্বনের রূপভেদ
১. অঙ্গার বা চারকোল, উৎস অনুসারে দুই রকমের অঙ্গার আছে যথা
• প্রাণীজ অঙ্গার এবং
•উদ্ভিদজ অঙ্গার
• প্রাণীজ অঙ্গার দুই প্রকারের
∆ অস্থি কয়লা এবং
∆ রক্ত কয়লা
•উদ্ভিদজ অঙ্গার দু’প্রকারের
∆ কাঠ কয়লা এবং
∆ শর্করা কয়লা
২. ঝুল বা ভুসাকালি
৩. কোক
৪. গ্যাস কার্বন
৫. উজ্জীবিত কয়লা
লবণ এবং প্রশমন : লবনের শ্রেণীবিভাগ
ক) হীরক
দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া এবং ভারতের গোলকুণ্ডাতে ফেরত পাওয়া যায়। হীরক দুই রকম অবস্থায় পাওয়া যায়- একরকম হলো উজ্জ্বল, স্বচ্ছ কেলাসিত, প্রতিসারঙ্ক বেশি, তাই আলো পড়লে জ্বলজ্বল করে। অন্যরকম হলো কাল অসচ্ছ- এর নাম কার্বনেডো। আপেক্ষিক গুরুত্ব 3.5।
হীরকের ব্যবহার
উজ্জ্বল দ্যুতির জন্য রত্ন রূপে ব্যবহার করা হয়। হীরক দিয়ে কাচ কাটা হয়। পাথর ছিদ্র করা এবং পালিশ করার কাজে কার্বনেডো লাগে।
খ) গ্রাফাইট
শ্রীলংকা, সাইবেরিয়া, আমেরিকা এবং ইটালিতে পাওয়া যায়। গ্রাফাইট ধূসর বর্ণের কেলাসিত পদার্থ ও চকচকে। স্পর্শে নরম ও পচ্ছিল। তড়িৎ পরিবহন করে। আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.25।
ব্যবহার
পেন্সিলের শীষ, উচ্চ তাপ সহ মুচি, ব্যাটারির তড়িৎ দ্বার, বৈদ্যুতিক চুল্লির তড়িৎদ্বার, ইলেক্ট্রোটাইপ, লুব্রিকেটিং তেল, লোহার দ্রব্য ও বারুদ পালিশ করতে এবং পারমাণবিক চুল্লিতে গ্রাফাইট ব্যবহার করা হয়।
- ১. অঙ্গার বা চারকোল
- অনিয়তাকার কালো রংয়ের কঠিন পদার্থ। এর মধ্যে অনেক ছিদ্র আছে। তাপ ও তড়িৎ এর সুপরিবাহী।
- ∆ কাঠের গুঁড়োকে বাতাসের অবর্তমানে লোহার বকযন্ত্রে উত্তপ্ত করে অন্তর্ধূম পাতন করলে বাকযন্ত্রে অবশেষরূপে কাঠ কয়লা পাওয়া যায়।
- ব্যবহার
- জ্বালানি রূপে, বিজারক রূপে ও বারুদ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
- ∆ শর্করা কয়লা
- চিনি জাতীয় পদার্থের দ্রবণের সঙ্গে গারো সালফিউরিক এসিড যোগ করলে, গারো সালফিউরিক এসিডের চীনির অনুর থেকে জলীয় অংশ শোষণ করে নেয়। হলে পড়ে থাকে বিশুদ্ধ কার্বন।এইভাবে যে কয়লা পাওয়া যায় তাকে পাতিত জলের ধুলে এবং তারপরে শুষ্ক করলে বিশুদ্ধ কার্বন পাওয়া যায়।
- নোট পেতে টেলিগ্রাম জয়েন করুন
- ব্যবহার
- পরীক্ষাগারে বিশুদ্ধ কার্বন রূপে শর্করা কয়লা ব্যবহৃত হয়।
- ∆ জীবজন্তুর হারকে চর্বিমুক্ত করার পর গুঁড়ো করে অন্তর্ধূম পাতন করলে অবশেষরূপে প্রাণিজ কয়লা পাওয়া যায়।
- ব্যবহার
- চিনি শোধন, আইভরি ব্ল্যাক নামে কালো রং প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয়।
- ২. ভুসাকালি
- তেলকে বা প্রাকৃতিক গ্যাসকে কম বাতাসে দহন করলে ভুসাকালি পাওয়া যায়। রান্না ঘরের ঝুল বা চোখের কাজলও ভুসা কালি।
- ব্যবহার
- ছাপার কালি, জুতোর কালে ও কালো রং প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
- ৩. কোক
- লোহার বকযন্ত্রে কয়লা রেখে অন্তর্ধূমপাতন করলে অবশেষে রুপে কোক পাওয়া যায়। পাতিত দ্রব্য রূপে কোল গ্যাস, অ্যামোনিয়া দ্রব, আলকাতরা গ্যাস কার্বন প্রভৃতি পাওয়া যায়।
- ব্যবহার
- জ্বালানি রূপে, ধাতুবিদ্যায় বিজারক রূপে, প্রডিউসার গ্যাস, ওয়াটার গ্যাস প্রস্তুতিতে, কৃত্রিম পেট্রোল প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয়।
- ৪. গ্যাস কার্বন
- লোহার বকযন্ত্রে কয়লার অন্তর্ধূম পাতনের সময় বকযন্ত্রের গায়ে কাল গুড়োর আকারে যে আস্তরণ পাওয়া যায় তাকেই গ্যাস কার্বন বলে।
- ব্যবহার
- আর্ক আলো, ব্যাটারির তড়িৎদ্বার, ডায়নামো এবং মোটরের ব্রাশ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
- ৫. উজ্জীবিত কয়লা
- নারকেলের খোলকে অন্তর্ধূম পাতন করলে এই কয়লা পাওয়া যায়। এই কার্বনের গ্যাস শোষণ করার ক্ষমতা আছে।
- ব্যবহার
- গ্যাস মুখোশ প্রস্তুতিতে, পেটের অসুখে অষুধ রূপে ব্যবহৃত হয়।
অ্যাসিড ক্ষার ও ক্ষারক: ধর্ম ও সনাক্তকরণ
কার্বনের বিভিন্ন রূপ ভেদগুলি দেখতে বিভিন্ন হলেও তারা প্রত্যেকেই আসলে কার্বন ছাড়া অন্য কিছু নয় তার প্রমাণ
কার্বনের বিভিন্ন রূপভেদ গুলির প্রত্যেকটি সমপরিমাণ নিয়ে বিশুদ্ধ এবং শুষ্ক অক্সিজেনের মধ্যে পৃথকভাবে দহন করানো হলো। এর ফলে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বর্ণহীন গন্ধহীন গ্যাস নির্গত হয়, যা স্বচ্ছ চুন জলকে ঘোলা করে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রতিটি রূপভেদের দহনে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। আরও দেখা গেল, প্রতিটি রূপভেদ এর দহনে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ একই হয়।এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে কার্বনের রূপভেদ গুলির প্রত্যেকে কার্বন ছাড়া অন্য কিছু নয়।