যোজ্যতা বা যোজনী কাকে বলে
যোজ্যতা বা যোজনী এবং আণবিক সংকেত কিভাবে তৈরি করা হয় তা জানতে হলে বিভিন্ন পরমাণু রাসায়নিক আসক্তির বিষয় জানা দরকার। প্রত্যেক পরামানু তার নির্দিষ্ট আসক্তির উপর নির্ভর করে অন্য পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনু গঠন করে।
যোজ্যতার সংজ্ঞা
একটি মৌলের পরমাণুর অন্য কোন মৌলের পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে মৌলের যোজ্যতা বা যোজনী বলে। সাধারনত কোন মৌলের একটি পরমাণুর যতগুলো হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয় অথবা কোন যৌগ থেকে যতগুলো হাইড্রোজেন পরমাণুকে অপসারিত করে সেই সংখ্যা দিয়ে ওই মৌলের যোজ্যতা প্রকাশ করা হয়।
যেমন ১) একটি নাইট্রোজেন পরমাণুর তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি এমোনিয়া যৌগের অনু গঠন করে। অর্থাৎ NH3 যৌগে নাইট্রোজেনের যোজনী = 3।
২) জিঙ্ক বা দস্তা হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয় না কিন্তু H2SO4 এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় অ্যাসিড থেকে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুতে অপসারিত করে। Zn+H2SO4 = ZnSO4 +H2, সুতরাং Zn এর যোজ্যতা = 2।
হাইড্রোজেনের যোজনী 1 ধরা হয়। এখন একটি Cl পরামানু একটি H পরমাণু সঙ্গে যুক্ত হয়ে HCl গঠন করে।; অতএব ক্লোরিনের যোজ্যতা = 1; একটি অক্সিজেন পরমাণুর দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে H2O এর একটি অনু উৎপন্ন করে। তাই অক্সিজেনের যোজ্যতা 2। একটি N পরামানু ৩ টি H পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে NH3 অনু গঠন করে, সুতরাং, নাইট্রোজেনের যোজ্যতা 3। একটি কার্বন পরমাণু চারটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে CH4 উৎপন্ন করে তাই, কার্বনের যোজনী = 4
হাইড্রোজেন কিন্তু সব মৌলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌগ উৎপন্ন করতে পারেনা। কিন্তু ক্লোরিন প্রায় সমস্ত মৌলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তাই বলা যায়…
কোন মৌলের একটি পরমাণুর যে কয়টি Cl পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে সেই সংখ্যাই হলো ওই পরমাণুর যোজ্যতার পরিমাপ। এখন যেহেতু একটি Cl পরমাণু একটি H পরমাণু সঙ্গে যুক্ত হয়ে HCl গঠন করে, অতএব Cl এর যোজ্যতা ও 1। Cl এর যোজ্যতা এক ধরেই অন্যান্য মৌলের যোজ্যতা স্থির করা যায়। অর্থাৎ যে কয়টিCl পরামানু কোন মৌলের একটি পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়, সেই সংখ্যায় হলো ওই মৌলের যোজ্যতা। যেমন একটি Mg পরমাণুর দুটি Cl পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে MgCl উৎপন্ন করে। আবার একটি N পরমাণু 3 টি Cl পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে NCl3 উৎপন্ন করে। সুতরাং Mg এবং N এর যোজ্যতা যথাক্রমে 2 এবং 3।
একটি অক্সিজেন পরমাণুর যোজ্যতা 2 একটি অক্সিজেন পরমাণু একটি Zn পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ZnO উৎপন্ন করে সুতরাং Zn এর যোজ্যতা 2।
যোজ্যতা সবসময় পূর্ণসংখ্যার হয়, যোজ্যতা কখনো ভগ্নাংশ হয়না। নিষ্ক্রিয় গ্যাস গুলির অন্য মৌলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা নেই তাই এরা শূন্যযোজী। কয়েকটি মৌলের যোজ্যতা …
যৌগ | যুক্ত H পরমানুর সংখ্যা | যোজ্যতা |
HCl | 1 | 1 |
H2O | 2 | 2 |
NH3 | 3 | 3 |
CH4 | 4 | 4 |
নোট: হাইড্রোজেন কিন্তু সব মৌলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌগ উৎপন্ন করতে পারেনা। কিন্তু ক্লোরাইড প্রায় সমস্ত মৌলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। আবার হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়ের যোজ্যতা 1।
সুতরাং অনুরূপ ভাবে বলা যায়,কোন মৌলের একটি পরমাণু যে কয়টি ক্লোরিন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে সেই সংখ্যায় হলো ওই পরমাণুর যোজ্যতার পরিমাণ।
পরিবর্তনশীল যোজ্যতা
পরিবর্তনশীল যোজনীর সংজ্ঞা
কতগুলি মৌলের একের বেশি যোজ্যতা দেখা যায়। কম যোজ্যতা দ্বারা গঠিত অনুকে আস্ এবং বেশি যদিও তার দ্বারা গঠিত অনুকে ইক্ বলে।
একই মৌলের এই ভিন্ন ভিন্ন যোজনীকে পরিবর্তনশীল যোজনী বলে।
কপার একযোজী হয় আবার দ্বিযোজীও হয়। যেমন CuCl কিউপ্রাস ক্লোরাইড যৌগে Cu একযোজী এবং CuCl2, কিউপ্রিক ক্লোরাইড যৌগে Cu দ্বিযোজী।
FeO, FeCl2, FeSO4 এইসব যোগ্য গুলিতে Feর যোজ্যতা = 2। এইগুলি আস্ যৌগ। আবার Fe2O3, FeCl3, Fe2(SO4)3 এইসব যৌগ গুলিতে Feর যোজনী =3। এগুলি ইক্ যৌগ।
নিচে কয়েকটি মৌলের একাধিক যোজনী দেখানো হলো………
মৌল | যোজ্যতা | |||||
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | |
কপার Cu | CuCl | CuCl2 | ||||
আয়রন Fe | FeCl2 | FeCl3 | ||||
লেড Pb | PbCl2 | |||||
নাইট্রোজেন N | N2O | NO | N2O2 | N2O4 | ||
ফসফরাস P | PCl3 | PCl5 | ||||
সালফার S | H2S | SO2 | SO3 |
যৌগমূলক কাকে বলে বা কি
যৌগমূলকের সঙ্গাঃ
একাধিক পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে বিশেষ ধরনের জোটবদ্ধ অবস্থায় থাকে ও সমগ্রভাবে একটি অখন্ড পরমাণু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এইরকম পরমাণু জোটকে যৌগমূলক বলে।
মূলক তড়িৎগ্রস্ত বা প্রসম দুরকমই হতে পারে। যে মূলক প্রসম তাকে মুক্ত মূলক বলে। যেমন মিথাইল মূলক ( -CH3), ইথাইল (-C2H5) ইত্যাদি। তড়িৎগ্রস্ত মূলক আবার পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত বা নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত হতে পারে।
যেমন অ্যামোনিয়াম মূলক(NH4+) পজিটিভ তড়িৎ গ্রস্ত। আবার সালফেট (SO-4) নাইট্রেট(NO3-) কার্বনেট(CO3) প্রভৃতি মূলকগুলি নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত।
একযোজী মুলক | দ্বিযোজী মুলক | ত্রিযোজী মুলক |
নাইট্রেট, নাইট্রাইট, হাইড্রোক্সিল, অ্যামোনিয়াম, ক্লোরেট, ক্লোরাইড, ব্রোমাইড, আয়োডাইড, পারম্যাঙ্গানেট, অ্যালুমিনেট, বাই সালফেট, | সালফাইড, সালফাইট, সালফেট, কার্বনেট, জিন্কেট, | ফসফেট, ফাসফাইড, নাইট্রাইড |
প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় যে একমাত্র (NH4) মূলক ছাড়া অন্যান্য মূলকগুলি যৌগ গঠনের সময় অধাতুর মতো ব্যবহার করে।
আণবিক সংকেত লেখার নিয়ম
মৌল এবং মূলকের যোজনী জানা থাকলে যৌগের সংকেত খুব সহজে প্রকাশ করা যায়।
যেমন ধরা যাক, একটি মৌল M এর সঙ্গে অন্য একটি মৌল বা মূলক N যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করেছে। M এবং N মৌলের বা মূলকের যোজনী যথাক্রমে x ও y। তাহলে M এবং N এর দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে MyNx। অর্থাৎ M মৌলের যোজনী যত, সেই সংখ্যাটিকে N এর ডান দিকে নিচের দিকে এবং N এর যোজ্যতা যত সেই সংখ্যাটি কে M এর ডান দিকে নিচে লিখে যৌগের সংকেত প্রকাশ করা হয়।
যেমন ধরেই অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এর সংকেত লিখতে হবে……..
- প্রথমে অ্যালুমিনিয়াম ও অক্সিজেনের চিহ্ন পর পর লেখা হলো।
- প্রত্যেকটির যোজনী চিহ্নের ডানদিকে লেখা হলো।
- এইবার অ্যালুমিনিয়াম এবং অক্সিজেন চিহ্ন দুটি পাশাপাশি লিখে অক্সিজেনের যোজ্যতা অ্যালুমিনিয়ামের ডানপাশে এবং অ্যালুমিনিয়ামের যোিজনিকে অক্সিজেন এর ডানপাশে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এর সংকেত পাওয়া যাবে = Al2O3