জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য

0
1005

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আবিষ্কার করেছে অনু-পরমানু, মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ, জৈব ও অজৈব যৌগ প্রভৃতি। মৌলিক পদার্থের পরমাণুর মিলে তৈরি হয় যৌগিক পদার্থ। যৌগিক পদার্থ জৈব যৌগ হতে পারে আবার অজৈব যৌগ হতে পারে। একই মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য আছে বিস্তর। যেমন একটি কার্বন পরমাণু ও দুটি অক্সিজেন পরমাণুর মিলে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে; কার্বন-ডাই-অক্সাইড একটি অজৈব যৌগ। আবার একটি কার্বন পরমাণু ও চারটা হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে মিথেন তৈরি করেন। এই মিথেন আবার জৈব যৌগ। তাই এই সমস্যার সমাধানের জন্য জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই জানা প্রয়োজন। জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্যের কারণে রসায়নশাস্ত্রে জৈব রসায়ন এবং অজৈব রসায়নকে আলাদাভাবে ভাগ করা হয়েছে।

জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য
জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য

আজকের এই অধ্যায়ে আমরা জৈব ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য সম্বন্ধে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব; যাতে করে আমাদের মনে আর কোনো সংশয় না থাকে।

জৈব যৌগঅজৈব যৌগ
কার্বন পরমাণুর ক্যাটিনেশন ধর্মের জন্য অনেক জৈব যৌগের অনুর গঠন জটিল হয়। যেমন চর্বি, তেল, শ্বেতসার প্রভৃতি জটিল ও উচ্চ আণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট্য যৌগ। এদের অনুতে বহু পরমানু থাকে। যেমন স্টার্চের আনবিক সংকেত C1200H2000O1000S.B.O এবং Si র সামান্য ক্যাটিনেশন ধর্ম ছাড়া অন্যান্য অজৈব যৌগের মধ্যে ক্যাটিনেশন ধর্ম দেখা যায় না । তাই অজৈব অনুর গঠন জৈব যৌগের তুলনায় সরল হয়। অজৈব অনুতে বেশি সংখ্যক পরমানু থাকে না।
প্রত্যেকটি জৈব যৌগের অণুতে কার্বন আছে। কার্বনের সাথে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জৈব যৌগ গঠন করে। এছাড়াও নাইট্রোজেন হ্যালোজেন, সালফার ফসফরাস ও কয়েকটি মাত্র ধাতু আছে যারা জৈব যৌগ গঠন করে। কয়েকটি মৌল মিলে জৈব যৌগ তৈরি করে তা সত্বেও জৈব যৌগে সংখ্যা প্রায় দশ লক্ষেরও বেশি।অজৈব যৌগ গুলিতে কার্বন থাকতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অজৈব যৌগ সবরকম মৌল দিয়ে গঠিত হতে পারে।যদিও অজৈব যৌগের গঠনে প্রায় শতাধিক মৌল অংশগ্রহণ করে তবুও অজৈব যৌগের সংখ্যা 75 হাজার মাত্র। যা জৈব যৌগের তুলনায় অনেক কম।
জৈব যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ও অপেক্ষাকৃত কম হয়।অজৈব যৌগ গুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কও জৈব যৌগের তুলনায় বেশি হয়।
উচ্চ উষ্ণতায় প্রায় সমস্ত জৈব যৌগের অনু ভেঙ্গে যায়। যৌগগুলি সাধারণত দাহ্য পদার্থ। এবং কম উষ্ণতায় গলে যায়।উচ্চ উষ্ণতায় প্রায় সমস্ত জৈব যৌগ স্থায়ী ও অজৈব যৌগগুলি বেশিরভাগ দাহ্য নয় এবং এদের গলনাঙ্ক উচ্চ হয়।
কার্বনের ক্যাটিনেশন ধর্ম কারণে জৈব যৌগতে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে লম্বা বা বৃত্তাকার সারিতে অতিদীর্ঘ কার্বন শৃংখল গঠনের মাধ্যমে বেশি আণবিক গুরুত্ববিশিষ্ট যৌগ উৎপন্ন করতে পারে। এইভাবে ১০০০ কার্বন পরামানু পরস্পর যুক্ত হয়ে একই যৌগে অবস্থান করতে পারে।অজৈব যৌগের অনুর গঠন করতে পারে না, অপেক্ষাকৃত সরল এবং এদের আণবিক গুরুত্ব জৈব যৌগের তুলনায় অনেক কম হয়। সিলিকন ও বোরনের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েকটি যৌগে এই গুন দেখা যায়।
বেশিরভাগ জৈব যৌগগুলি সমযোজী হওয়ায় এদের বিক্রিয়া ধীরে ধীরে হয়।অজৈব তড়িৎযোজী যৌগগুলি জলীয় দ্রবণে আয়ন উৎপন্ন করাই এদের বিক্রিয়া দ্রুত হয়।
জৈব যৌগ গুলির বেশিরভাগই সমযোজী পদার্থঅজৈব যৌগ গুলি অধিকাংশই তড়িৎযোজী পদার্থ
জৈব যৌগগুলি সাধারণত জলে অদ্রাব্য কিন্তু এলকোহোল, ইথার, বেনজিন প্রভৃতি জৈব যৌগ তরলে দ্রাব্য।অজৈব যৌগ সাধারণত জলে দ্রাব্য এবং জৈব তরলে অদ্রাব্য।
জৈব যৌগে অনুসংযোজন বিক্রিয়ার সাহায্যে বেশি আণবিক গুরুত্বযুক্ত যৌগ উৎপন্ন হয়। যেমন লোহিত তপ্ত লোহার নলের ভিতর দিয়ে অ্যাসিটিলিন গ্যাস পাঠালে তিন অনু অ্যাসিটিলিন যুক্ত হয়ে এক অনু বেনজিন উৎপন্ন করে।অজৈব যৌগের অনু সংযোজন বিক্রিয়া দেখা যায় না।
একটি জৈব যৌগের দুই বা ততোধিক অনু নিজেদের মধ্যে যুক্ত হয়ে আলাদা ধর্ম বিশিষ্ট অন্য যৌগের অনু গঠন করতে পারে।অজৈব যৌগের ক্ষেত্রে এই রকম ঘটতে দেখা যায় না।
জৈব যৌগের আণবিক সংকেত যুক্ত কিন্তু ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট একাধিক যৌগ পাওয়া যায়।জৈব যৌগের এই বৈশিষ্ট্যকে সমবয়বতা এবং যৌগগুলোকে সমবয়ব বলে। যেমন C2H6O দ্বারা ইথাইল অ্যালকোহল (C2H5OH), আবার ডাইমিথাইল ইথার (CH3OCH3) কেও প্রকাশ করা যায়। আবার C6H14 সংকেত দিয়ে পাঁচটি বিভিন্ন যৌগের সংকেত বোঝানো যায়।অজৈব যৌগের ক্ষেত্রে সমবায়বতা সাধারণত দেখা যায় না। অজৈব যৌগের একটি আণবিক সংকেত নির্দিষ্ট কোন যৌগকে প্রকাশ করে। যেমন H2O সংকেত এর মাধ্যমে জল ছাড়া অন্য কোন যজ্ঞ কে বোঝায় না।
জৈব যৌগ গুলি সাধারণত উদ্বায়ী পদার্থ।অজৈব যৌগ গুলি সাধারণত অনুদ্বায়ী পদার্থ।
বিভিন্ন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতি অনুযায়ী জৈব যৌগগুলিকে বিভিন্ন সমগোত্র শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড ইত্যাদি। একেকটি সমগোত্রীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন যৌগের রাসায়নিক ধর্ম একই।অজৈব যৌগের মধ্যে এইরকম কোন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতি দেখা যায় না। বিভিন্ন অজৈব যৌগের ধর্ম বিভিন্ন হয়।

এই ছিল প্রধান প্রধান জৈব ও অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য। আশাকরি জৈব এবং অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here