জৈব যৌগ সম্বন্ধে বিশেষভাবে বুঝতে এবং বোধগম্য হওয়ার জন্য প্রথমেই আমাদের জৈব যৌগের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি জানা প্রয়োজন। কার্বন পরমাণুর কতকগুলি বিশেষ ধর্মের জন্য জৈব যৌগের ধর্মে কতগুলি বৈশিষ্ট্য আছে। কতগুলি জৈব যৌগ এসেছে উদ্ভিদ থেকে যেমন রজন চিনি জাতীয় পদার্থ শ্বেতসার ইত্যাদি। আবার কতগুলি এসেছে প্রাণীর দেহ থেকে যেমন প্রোটিন, চর্বি, হরমোন ইত্যাদি যেমন পেনিসিলিন, ভিনিগার, অ্যালকোহল ইত্যাদি। এই আলোচনা পর্বে আমরা জৈব যৌগের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানব। জৈব যৌগের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি জানার আগে একটি বিশেষ বিষয় বলার প্রয়োজন প্রাচীনকালে মনে করা হতো জৈব যৌগ আলাদা এক প্রাণশক্তির কারণে তৈরি হয় কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ জৈব যৌগ পরীক্ষাগারে তৈরি করা সম্ভব।
১. সব জৈব যৌগে কার্বন পরমাণুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কার্বন ব্যতীত মাত্র কয়েকটি ধাতব পরমাণু দ্বারাও জৈব যৌগের সৃষ্টি হয় যেমন হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন সালফার ফসফরাস। কার্বন ছাড়া অন্যান্য মৌল দ্বারা সৃষ্টি হওয়া জৈব যৌগ সংখ্যা অনেক কম।
২. জৈব যৌগে দেখা যায় একই রকম মৌল একই ওজন অনুপাতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন জৈব যৌগ তৈরি করে। যেমন ইথাইল অ্যালকোহল ও ডাই মিথাইল ইথার এই দুটি যৌগের সংকেত C2H6O। অর্থাৎ একই রকম কয়েকটি মৌলিক পদার্থ একই অনুপাতে যুক্ত হয়ে আলাদা আলাদা জৈব গঠন করতে পারে এই ঘটনাকে সমবায়বতা বলে। এই সমবায়তা জৈব যৌগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৩. বেশিরভাগ জৈব যৌগ গুলির জলে অদ্রাব্য কিন্তু এলকোহোল, বেনজিন প্রভৃতি জৈব দ্রাবকের এরা দ্রাব্য।
৪. জৈব যৌগ গুলি সমযোজী পদার্থ।
জৈব যৌগের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। জৈব যৌগের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি সম্বন্ধে আরও কিছু পয়েন্ট নিচে আলোচনা করা হলো।
৫. বেশিরভাগ জৈব যৌগ গুলি উদ্বায়ী পদার্থ হয়ে থাকে; কারন এদের তাপীয় সুস্থতা কম হয় এবং যার কারণে এদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ও অনেক কম।
৬. বেশিরভাগ জৈব যৌগগুলি তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ। কারণ কার্বন পরমাণু কখনো একা আয়নিত হয় না তাই বেশিরভাগ জৈব যৌগের দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
৭. জৈব যৌগ গুলির রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে ঘটে। কারণ কার্বনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান 2.5,কার্বন ঋনাত্মক আয়ন বা ধনাত্মক আয়ন হিসেবে সুস্থিত হতে পারেনা। তাই কার্বন পরমাণু সমযোজী যৌগ সৃষ্টির প্রবণতা দেখায় এবং কার্বনের সুস্থিত যোগ্যতা 4।
৮. জৈব যৌগগুলিকে সহজেই কতকগুলি সমগোত্রীয় শ্রেণী বা কার্যকরী মূলক হিসাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। একই শ্রেণীভূক্ত বিভিন্ন জৈব যৌগ গুলির ধর্মের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায় ।
৯. প্রায় সমস্ত জৈব যৌগে কার্বন ও হাইড্রোজেন বর্তমান থাকায় বেশিরভাগ জৈব যৌগগুলি দাহ্য পদার্থ হিসেবে প্রকাশ পায়।
১০. জৈব যৌগে অনেকগুলো কার্বন পরমাণু পরস্পর সমযোজী একবন্ধন, দ্বিবন্ধন বা ত্রিবন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়ে সুস্থিত কার্বন শৃংখল গঠন করে। এইভাবে একের অধিক কার্বন পরমাণু এক সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রবণতাকে ক্যাটিনেশন ধর্ম বলে। এই ক্যাটিনেশন এর কারণেই কার্বন যৌগের সংখ্যা এত বেশি হয়।