জীব ও জড় কাকে বলে
যার মধ্যে জীবন আছে তাকে জীব বলে আর যার মধ্যে জীবন নেই তাকে জড় বলে। এখন প্রশ্ন আসে-
জীবন কি বা জীবনের সংজ্ঞা কি? —জীবনকে এককথায় প্রকাশ করা আজও সম্ভব হয়নি। জীবন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণের সমষ্টি। উত্তেজিতা, প্রােটোপ্লাজমীয় সংগঠন, চলন বা গমন, বিপাক, বৃদ্ধি, জনন, ছন্দোবদ্ধতা, পরিব্যক্তি, বিবর্তন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলি জীবনের বা জীবের প্রধান বৈশষ্ট্য, যা জড়ের দেহে পরিলক্ষিত হয় না। তাই এক কথায় বৃদ্ধি, জনন, পরিব্যক্তি, বিবর্তন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোষীয় কোন জাটিল জৈব-যৌগকে জীবন বলা যেতে পারে।
জীব ও জড়ের মধ্যে সম্পর্ক
পরিবেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদানের মধ্যে জীব ও জড় দুটি প্রধান উপাদান। আলো-বাতাস উষ্ণতা মাটি এবং জল পরিবেশের প্রধান জড় উপাদান এবং নানারকম জীবাণু মানুষ বিভিন্ন প্রাণী পরিবেশের জৈব উপাদান। জীব ও জড় পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।
জীব ও জড়ের মধ্যে শ্বাসকার্যের সম্পর্ক
উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে জল এবং জলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন মিনারেলস আর বায়ু থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং সূর্যালোকের সহায়তায় শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করে, যা গ্রহণ করে প্রাণীকুল জীবন ধারণ করে। খাদ্য উৎপাদনের সময় উদ্ভিদ জগত অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে এবং সেই অক্সিজেন গ্যাস প্রাণীকুল শ্বসনের সময় গ্রহণ করে। আবার শাসনের সময় প্রাণীরা যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বর্জন করে উদ্ভিদরা সেই কার্বণ-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে খাদ্য প্রস্তুত করে। বায়ুমগুলের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।
জীব ও জড়ের মধ্যে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক
পরিবেশের অন্তর্গত জীবকুলের মধ্যেও এক সুনির্দিষ্ট খাদ্য-খাদক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। প্রাথমিক খাদকেরা সরাসরি সবুজ উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে; গৌণ খাদকেরা প্রাথমিক খাদকদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে; আবার প্রগৌণ খাদক বা সর্বোচ্চ খাদকেরা গৌণ খাদকদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। খাদ্যের জন্য প্রাণীরা যেমন উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি খাদ্য উৎপাদনের জন্য উদ্ভিদেরাও কিছুটা প্রাণীদের ওপর নির্ভরশীল, কারণ : প্রাণিদেহ থেকে নির্গত রেচন ও বর্জ্য পদার্থ এবং মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ জীবাণু কর্তৃক বিভাজনের ফলে অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট সালফেট, ফসফেট ইত্যাদিতে পরিণত হয়। এইসব পদার্থ গ্রহণ করেই উদ্ভিদ রা তাদের পুষ্টি সম্পন্ন করে।
জীব ও জড়ের মধ্যে অন্তিম পর্যায়ের সম্পর্ক
আবার অন্তিম পর্যায়ে দেখা যায় প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যুর পর জীবাণুরা তাদের দেহকে বিয়োজিত করে দেহস্ত মৌলিক উপাদানগুলি পরিবেশ ফিরিয়ে দেয় এই ভাবে পরিবেশের উপাদানগুলির ভারসাম্য বজায় থাকে।
এ পৃথিবীর সমস্ত শক্তির মূল উৎস হল সূর্য। সবুজ উদ্ভীদেরা খাদ্য সংশ্লেষের (সালােকসংশ্লেষের) সময় সূর্য থেকে প্রাপ্ত সৌরশক্তি শোষণ করে খাদ্যর মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ করে । প্রাণীরা খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ঐ শক্তি দেহের মধ্যে গ্রহণ করে এবং শ্বসনের মাধ্যমে স্থৈতিক শক্তিকে গতীয় শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পন্ন করে। এইভাবে পরিবেশের অন্তর্গত জড় ও জীব এবং উদ্ভীদ ও প্রাণী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে তাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে।
জীব ও জড়ের মধ্যে পার্থক্য
জীব ও জড়ের মধ্যে পার্থক্য অনেক কিন্তু যে প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির সাহায্যে জীব ও জড় মধ্যে পার্থক্য করা যায়, তা এখানে উল্লেখ করা হল
জীব | জড় |
জীবের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে। | জড়ের কোন নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকেনা। |
জীবদেহ প্রােটোপ্লাজম (নিউক্লিয়াস, প্লাজমা পর্দা, সেন্ট্রোজোম, রাইবোজোম ইত্যাদি) সমন্বিত এক বা একাধিক কোষ দ্বারা গঠিত। | জড়বস্তু কোষ দ্বারা গঠিত নয় এবং এদের দেহে প্রোটোপ্লাজমেরও অস্তিত্ব নেই। |
জীবেরা ইচ্ছেমত দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়চাড়া করতে পারে এবং স্থান পরিবর্তনে সক্ষম। | জড়ের স্বেচ্ছায় চলনশক্তি নেই এবং এরা স্থান পরিবর্তনে অক্ষম। |
জীবদেহে পুষ্টি, স্বসন, রেচন ইত্যাদি নানান বিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। | জড়ের দেহে কোন বিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। |
জীবদেহে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। | জড়-দেহে কোন বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয় না। |
জীবেরা বহিঃ-উত্তেজনায় সাড়া দেয়, অর্থাৎ জীবের চেতনা আছে। | জড় উত্তেজনায় সাড়া দেয় না অর্থাৎ জড়ের চেতনা নেই। |
জীব বংশবিস্তারে সক্ষম। | জড় বংশবিস্তারে অক্ষম। |
জীবদের সমন্ত শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াগুলি একটি নির্দিষ্ট ছন্দে বা নিয়মে ধারাবাহিকভাবে ঘটে, অর্থাৎ ছন্দোবদ্ধতা জীবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য | জড়ের ছন্দোবদ্ধতা নেই। |
জীবদেহে পরিব্যক্তি, অভিব্যক্তি এবং অভিযােজন পরিলক্ষিত হয়। | জড়ের পরিব্যক্তি, অভিব্যক্তি এবং অভিযােজন পরিলক্ষিত হয় না। |
জীবের জন্ম-মৃত্যু ও বার্ধক্য দেখা যায়। | জড়ের জন্ম-মৃত্যু ও বার্ধক্য দেখা যায় না। |
জীব ও জড়ের বৈশিষ্ট্য
জীব ও জড়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো
জীব ও জড়ের মধ্যে অসংখ্য প্রভেদ থাকলেও তাদের মধ্যে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় যেমন
১. জীব ও জড় ও ভাই এই নির্দিষ্ট স্থান অধিকার করে অবস্থান করে।
২. জীব ও জড় উভয়ের ভর ও ওজন আছে।
৩. জীব ও জড় উভয় এর আকার ও আয়তন আছে তবে জড়ের আকার-আয়তন নির্দিষ্ট নয়।
কিছু নিম্নশ্রেণির জীব দেহে, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ইউগ্লিনা, ভলভক্স ইত্যাদির দেহে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
That was a great post. Thanks.