‘আইসোটোপ’ কথার অর্থ হল ‘যারা সমস্থান অধিকার করে’। বিজ্ঞানী ডাল্টন তার পরামানুবাদে বলেছেন একটি মৌলের পরমাণুগুলির ধর্ম ও ভর একই থাকে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে জানা যাচ্ছে যে একই মৌলের বিভিন্ন ভরবিশিষ্ট পরামানু থাকা সম্ভব। অর্থাৎ একই পারমাণবিক সংখ্যার ভিন্ন ভিন্ন ভরবিশিষ্ট পরমাণু দেখা যায়। মৌলের এইরকম পরমাণুগুলির নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা একই থাকে কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা বিভিন্ন হওয়ার জন্য ওদের ভর বিভিন্ন হয়। এদেরকে আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে। এবং এই ঘটনাকে সমস্থানিকতা বলা হয়।
আইসোটোপ বা সমস্থানিক কাকে বলে বা কি
একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু, যাদের পারমাণবিক সংখ্যা একই ( অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা একই) কিন্তু নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন সংখ্যক নিউট্রন থাকার জন্য পারমাণবিক ভর (অর্থাৎ ভরসংখ্যা) বিভিন্ন হয়, তাদের আইসোটোপ বলে। অর্থাৎ একই পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট বিভিন্ন ভরযুক্ত ভিন্ন ভিন্ন পরমাণুকে আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে।
আইসোটোপ বা সমস্থানিক এর সংজ্ঞা 2
একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু, যাদের পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা একই, কিন্তু নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন সংখ্যক নিউট্রন থাকার জন্য যাদের ভরসংখ্যা বিভিন্ন হয় তাদের আইসোটোপ বলে।
অর্থাৎ একই পারমাণবিক সংখ্যা যুক্ত, কিন্তু বিভিন্ন ভর সংখ্যা বিশিষ্ট পরমানুগুলোকে পরস্পরের সমস্থানিক বলা হয়।
মৌলের রাসায়নিক ধর্ম মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যতগুলো প্রোটন থাকে, তার উপর নির্ভর করে। এখন নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা স্থির রেখে নিউটনের সংখ্যা বাড়লে বা কমানো হলে পরমাণুর ভর বাড়বে বা কমবে। ফলে বিভিন্ন ভর বিশিষ্ট একই পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট, অর্থাৎ একই রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট পরমানু সৃষ্টি হবে। যে মৌল একইরকম পরমাণু দ্বারা গঠিত, তার রাসায়নিক ধর্মের কোনো পরিবর্তন হবে না। একই মৌলের বিভিন্ন হর বিশিষ্ট পরমাণু গুলিকে পরস্পরের সমস্থানিক বলা হয়। পারমাণবিক সংখ্যা একই বলে পর্যায় সারণিতে এরা একে স্থান লাভ করে। এই জন্যই এদের আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলা হয়। দুটি সমস্থানিক পরমাণুর মধ্যে ভরের পার্থক্য এত কম যে, তা সাধারন পরীক্ষার মাধ্যমে ওদের পার্থক্য ধরা যায় না।
বিজ্ঞানী অ্যাস্টন mass spectrograph যন্ত্রে একই মৌলের মধ্যে অবস্থিত ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু গুলির পার্থক্য দেখান।
আইসোটোপ বা সমস্থানিকের বৈশিষ্ট্য
- আইসোটোপ বা সমস্থানিক এর বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হল
- ১. একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা সমান হয়।
- ২. একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা সমান হলেও নিউট্রন সংখ্যা বিভিন্ন হয়।
- ৩. কোন একটি মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপগুলো রাসায়নিক ধর্ম, যোজ্যতা এবং ইলেকট্রনিক বিন্যাস একই রকম হয়।
- ৪. এক রাসায়নিক ধর্ম বিশিষ্ট হওয়ায়, কোন একটি মৌলের বিভিন্ন সমস্থানিকগুলোকে পর্যায় সারণিতে একই স্থানে রাখা হয়।
- ৫. কোন একটি নির্দিষ্ট মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের পরমাণু গুলির পারমানবিক ভর বিভিন্ন হওয়ায় তাদের ঘনত্ব, গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক প্রভৃতি ভৌত ধর্ম এক হয় না।
- ৬. আইসোটোপ পরমাণুগুলোর মধ্যে ভারের পার্থক্য এত কম যে সাধারণ পরীক্ষায় এদের পার্থক্য ধরা যায় না।
- অত্যন্ত সুন্দর এবং সহজ ভাষায় আইসোটোপ এর বৈশিষ্ট্য লেখার চেষ্টা করেছি আশা করি বোঝা গেছে। আগেই সম্বন্ধে আপনার মতামত কমেন্ট সেকশনে জানান।
আইসোটোপের ব্যবহার
- আইসোটোপ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কাজে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিচে আইসোটোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
- ১. কোবাল্টের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
- ২. আয়োডিনের আইসোটোপ আবিষ্কার হওয়ার পরে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থাইরয়েড গ্রন্থি সংক্রান্ত রোগ এবং গলার ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- ৩. বর্তমানে কৃষি, চিকিৎসা, পৃথিবীর বয়স সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক তথ্য জানতে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
আইসোবার কি বা কাকে বলে
যেসব পরমাণুর ভর সংখ্যা পরস্পর সমান কিন্তু পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা সমান নয় তাদের আইসোবার বলে। যেমন 6C14, 7N14; 7N16, 8O16
আইসোটোন কি বা কাকে বলে
যেসব পরমাণুর কেন্দ্রে নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু প্রোটন সংখ্যা আলাদা তাদের আইসোটোন বলে। যেমন হেলিয়াম এবং ডয়টেরিয়াম পরমাণুতে একটি করে নিউট্রন আছে। কিন্তু হেলিয়াম এবং হাইড্রোজেনের পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যা যথাক্রমে 2 এবং 1। অর্থাৎ হিলিয়াম ডয়টেরিয়াম পরস্পর আইসোটোন।
কয়েকটি আইসোটোপের উদাহরণ
ক্লোরিনের আইসোটোপ
ক্লোরিনের দুটি আইসোটোপ আছে। সাধারণ ক্লোরিনের মধ্যে 35 এবং 37 ভর বিশিষ্ট দুই রকম পরমাণু আছে। ক্লোরিনের পারমাণবিক সংখ্যা 17, সুতরাং এই দুই আইসোটোপের নিউক্লিয়াসে 17 প্রোটন আছে। কিন্তু 35 হারভেস্ট পরমাণুর কেন্দ্রে 18 টি নিউট্রন আছে এবং 37 ভর বিশিষ্ট পরমাণু কেন্দ্রে 20 টি নিউট্রন আছে।
ইউরেনিয়ামের আইসোটোপ
ইউরেনিয়ামের তিনটে আইসোটোপ আছে। এদের প্রত্যেকের পরমাণু ক্রমাঙ্ক 92, অর্থাৎ প্রত্যেকের মধ্যে 92 টি প্রোটন আছে। কক্ষপথে 92 টি ইলেকট্রন থাকে।
প্রথমটির নিউট্রন সংখ্যা 143
দ্বিতীয় টির নিউট্রন সংখ্যা 146
তৃতীয় টির নিউট্রন সংখ্যা 147
বর্তমানে অনেক মৌলের আইসোটোপ আবিষ্কার করা হয়েছে। যেমন নাইট্রোজেনের দুটি আইসোটোপ সালফারের তিনটি সমস্থানিক। আইসোটোপ গুলির ভরের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে ওদের পৃথক করার চেষ্টা করা হয়। কোন রাসায়নিক উপায়ে ওদের পৃথক করা সম্ভব নয়। কারণ সমস্থানিক পরমাণু গুলির রাসায়নিক ধর্ম একই। ভরের পার্থক্য খুব সামান্য হওয়ার জন্য ভৌত উপায় ওদের সম্পূর্ণ পৃথক করা সম্ভব হয় না। তবে ডয়টেরিয়ামকে সাধারণ হাইড্রোজেন থেকে পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। কারণ ডয়টেরিয়ামের ভর সাধারণ হাইড্রোজেনের ভরের প্রায় দ্বিগুণ।
আইসোটোপ সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
সমস্থানিক বা আইসোটোপের রাসায়নিক ধর্ম অভিন্ন হয় কেন
কোন নির্দিষ্ট মৌলের রাসায়নিক ধর্ম ওই মৌলের নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা অর্থাৎ পারমাণবিক সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরের বিভিন্ন কক্ষে অবস্থিত ইলেকট্রন সংখ্যা ও ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে। এখন যেহেতু একটি নির্দিষ্ট মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরের বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রন বিন্যাস একই থাকে, তাই আইসোটোপ বা সমস্থানিক গুলোর রাসায়নিক ধর্ম অভিন্ন হয়।
সমস্থানিক বা আইসোটোপের পরমাণুগুলোর মধ্যে কি কি সাদৃশ্য দেখা যায়
•••একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের পরমাণুর সাদৃশ্য
১. আইসোটোপ গুলো হল একই মৌলের পরমাণু।
২. আইসোটোপের পরমাণু গুলির পারমানবিক সংখ্যা অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা একই থাকে।
৩. আইসোটোপের পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বাইরের বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা ও ইলেকট্রন বিন্যাস একই রকম থাকে।
৪. একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের রাসায়নিক ধর্ম একই রকমের হয়।
৫. বিভিন্ন আইসোটোপ গুলির যোজ্যতা একই হয়।
৬. একই রাসায়নিক ধর্ম বিশিষ্ট হওয়ায় পর্যায় সারণিতে কোন মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপকে একই স্থানে রাখা হয়।
সমস্থানিক বা আইসোটোপের পরমাণুগুলোর মধ্যে কি কি বৈসাদৃশ্য দেখা যায়
••• একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের পরমাণুর বৈসাদৃশ্য
একই মৌলের পরমাণু হলেও
১. বিভিন্ন আইসোটোপের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা আলাদা হয়।
২. আইসোটোপ গুলোর পরমাণুর ভর সংখ্যা আলাদা হয়।
৩. একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের ব্যবহার বিভিন্ন হওয়ার জন্য তাদের ঘনত্ব, স্ফুটনাঙ্ক, গলনাঙ্ক প্রভৃতি ভৌত ধর্ম এক হয় না।
এই পোষ্টটি খুব সুন্দর হয়েছে এটি পড়ে আমার খুব ভাল লাগল একই পড়ার পর আইসোটোপ সম্বন্ধে আমার যত প্রশ্ন ছিল সব উত্তর পেয়ে গেলাম
আইসোটোন এর ভৌত ধর্ম আলাদা হয় কেন?