হাইড্রোজেন
হাইড্রোজেন এর চিহ্ন | H |
হাইড্রোজেনের সংকেত | H2 |
হাইড্রোজেনের যোজ্যতা | 1 |
হাইড্রোজেনের পারমাণবিক ওজন বা গুরুত্ব | 1 |
হাইড্রোজেনের আবিস্কার | হেনরি ক্যাভেন্ডিস ( ১৭৬৬ সালে ) |
হাইড্রোজেনের ধর্ম
- হাইড্রোজেন এর ধর্ম H2 এর ধর্মকে আমরা মূলত দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
১.হাইড্রোজেন এর ভৌত ধর্ম এবং - ২. হাইড্রোজেন এর রাসায়নিক ধর্ম
১. হাইড্রোজেনের ভৌত ধর্ম:
- ক) বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন, বর্ণহীন, স্বাদহীন, গন্ধহীন।
- খ) জলে প্রায় অদ্রাব্য গ্যাস।
- গ) হাইড্রোজেন সবচেয়ে হালকা মৌল।
- ঘ) বাতাস হাইড্রোজেন এর চেয়ে 14.4 গুণ ভারী।
২. হাইড্রোজেনের রাসায়নিক ধর্ম:
- ক) হাইড্রোজেন গ্যাস দাহ্য কিন্তু দহনে সাহায্য করে না। H2 গ্যাসপূর্ণ একটি গ্যাসজার উপুড় করে ধরে ওর মধ্যে একটি জ্বলন্ত পাটকাঠির ঢুকালে দেখা যাবে পাটকাঠির নিভে গেল এবং H2 গ্যাস নিজে জ্বলতে থাকলো।
- খ) অক্সিজেনের সঙ্গে:
- হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্যাসের মিশ্রণ এ অগ্নিসংযোগ করলে বিস্ফোরণ ঘটে এবং H2 গ্যাস নীলাভ শিখাসহ জ্বলে এবং জল উৎপন্ন করে। 2H2 + O2 = 2H2O
- গ) H2 গ্যাস একটি বিজারক পদার্থ, উত্তপ্ত ধাতব অক্সাইডকে বিজারিত করে ধাতু উৎপন্ন করে। কালো বর্ণের CuOকে উত্তপ্ত করে ওর উপর দিয়ে H2 গ্যাস চালনা করলে কালো CuO বিজারিত হয়ে লাল বর্ণের ধাতব কপার উৎপন্ন করে। CuO + H2=Cu + 2H2O
- ঘ) ধাতুর সঙ্গে:
- উত্তপ্ত সোডিয়াম,পটাশিয়াম বা ক্যালসিয়াম ধাতুর সঙ্গে হাইড্রোজেনযুক্ত হয়ে হাইড্রাইড যৌগ উৎপন্ন করে। 2Na +H2=2NaH
- ঙ ) নাইট্রোজেনের সঙ্গে:
- 500 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় 200 বায়ুমণ্ডল চাপে লোহাকে অনুঘটক রূপে ব্যবহার করলে H2 এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়। N2 + 3H2 = 2NH3
- চ) ক্লোরিনের সঙ্গে:
- হাইড্রোজেনের সঙ্গে ক্লোরিন গ্যাস মিশিয়ে আলোতে রাখলে হাইড্রোজেন-ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। H2 + Cl2 = 2HCl
- ছ) উত্তপ্ত সালফারের উপর দিয়ে H2 গ্যাস চালনা করলে পচা ডিমের গন্ধ বিশিষ্ট হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। H2 + S = H2S
- জ) অন্তর ধৃতি:
- কতগুলি ধাতু যথা আয়রন, প্যালাডিয়াম, প্লাটিনাম প্রভৃতি হাইড্রোজেন গ্যাসকে শোষণ করে। শোষিত H2 গ্যাস কঠিন ধাতুতে দ্রবীভূত হয়। ধাতুটিকে উত্তপ্ত করলে হাইড্রোজেন গ্যাস আবার নির্গত হয়। এই ঘটনাকে অন্তর ধৃতি বলে।
- ঝ) জায়মান হাইড্রোজেন:
- রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন ঘটিত কোন যৌগ থেকে সদ্যমুক্ত হাইড্রোজেনকে জায়মান হাইড্রোজেন বলে।
ক্ষমতা : ক্ষমতার একক – শক্তি ও ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য
হাইড্রোজেনের ব্যবহার
- H2 এর ব্যবহার বহুধা। নিচে H2 গ্যাসের ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো
- ক) H2 গ্যাস বিজারক হিসেবে পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয়।
- খ) ঝালাইয়ের কাজে অক্সি-হাইড্রোজেন শিখা 2000 সেন্টিগ্রেড উৎপন্ন করতে পারে এবং হাইড্রোজেন টর্চ রূপে 5000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে।
- গ) সবচেয়ে হালকা বলে H2 গ্যাস বেলুনে ব্যবহার করা হয়।
- ঘ) তেলকে হাইড্রোজেনীকরন দ্বারা চর্বিতে পরিণত করতে এবং অসম্পৃক্ত জৈব যৌগের সম্পৃক্ত যৌগে পরিণত করতে ব্যবহার করা হয়।
- ঙ) মিথাইল অ্যালকোহল, HCl এবং কৃত্রিম সার প্রস্তুতিতে H2 ব্যবহার করা হয়।
- এই ছিল প্রধানত H2 গ্যাসের ব্যবহার।
হাইড্রোজেনের সনাক্তকরণ
- কিভাবে H2 গ্যাস সনাক্ত করতে হয় তার নিম্নলিখিত আলোচনায় বোঝা যাবে।
- ক) বাতাসে অক্সিজেনের মধ্যে H2 গ্যাস নীল শিখা জ্বলে জল উৎপন্ন করে। উৎপন্ন জল লাল নীল লিটমাসের বর্ণ পরিবর্তন করে না। কিন্তু সাদা কপার সালফেটের সংস্পর্শে নীল হয়।
- খ) প্যালাডিয়াম নিকেল প্রভৃতি ধাতু দ্বারা H2 গ্যাস হয়।
- গ) H2 গ্যাসপূর্ণ গ্যাসজারে একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি প্রবেশ করালে পাটকাঠির নিভে যাবে কিন্তু জারের মধ্যস্থ H2 গ্যাস নিল শিখায় জ্বলতে থাকবে।
- এভাবেই আমরা প্রধানত H2 গ্যাসের শনাক্ত করতে পারি।
তাপগ্রাহিতা এবং জলসমের মধ্যে পার্থক্য
পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুতি
H2 গ্যাস প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য:
১. লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড
২. জিংকের ছিবড়া
হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরির নীতি:
সাধারণ তাপমাত্রায় জিংকের ছিবড়ার সঙ্গে লঘু সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়া দ্বারা পরীক্ষাগারে H2 গ্যাস প্রস্তুত করা হয়। বিক্রিয়ার ফলে জিংক সালফেট এবং H2 গ্যাস উৎপন্ন হয়।
Zn + H2SO4= H2SO4+ H2
- পরীক্ষাগারে H2 তৈরির পদ্ধতি
- ১. একটি উলফ বোতলে কিছু জিংকের ছিবরা নিয়ে একমুখে একটি দীর্ঘনল ফানেল এবং অন্য মুখে একটি নির্গমনল কর্কের মধ্যে দিয়ে লাগানো হলো। দীর্ঘনল ফানেলের শেষপ্রান্ত যেন বোতলের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছায়।
- ২. দীর্ঘনল ফানেলের মধ্যে দিয়ে উল্ফ বোতলের মধ্যে কিছু পরিমাণ জল ঢালা হল, যেন দীর্ঘনল ফানেলের শেষপ্রান্তটি জলে ডুবে থাকে।
- ৩. এইবার বোতলটি বায়ু নিরুদ্ধ হয়েছে কিনা জানার জন্য নির্গমনলের শেষ প্রান্তে মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়া হল। এর ফলে কিছুটা জল দীর্ঘনল ফানেল বেয়ে উপরে উঠে যাবে। এখন নির্গমনলের শেষপ্রান্তটি বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে বন্ধ করা হলো। দীর্ঘনলের মধ্যে জলস্তম্ভটি যদি স্থির অবস্থায় থাকে তাহলে বোঝা যাবে যে, বোতলটি বায়ু নিরুদ্ধ হয়েছে।
- ঘ) এইবার দীর্ঘনল ফানেলের মধ্যে দিয়ে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড ঢালা হল।এর ফলে জিংক এর সঙ্গে লঘু সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়ায় H2 গ্যাস নির্গত হতে শুরু করে।
- ঙ) প্রথমে কিছু গ্যাস বের হয়ে গেলে বোতলের মধ্যস্থিত বাতাস বের হয়ে যায়। এখন নির্গম নল এর শেষ প্রান্তকে একটি জলপূর্ণ গ্যাসদ্রোনীর মধ্যে ডোবানো হল।
- চ) একটি জলপূর্ণ গ্যাস নির্গমনলের শেষ প্রান্তের উপর উপুর করে দেওয়া হলো।
- হাইড্রোজেন গ্যাস সংগ্রহ
- এর ফলে উল্ফ বোতলে উৎপন্ন H2 গ্যাস নির্গমনের মধ্যে দিয়ে এসে বুদবুদের আকারে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে জমা হয়।
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র ও উদাহরণ – ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া বল
জায়মান হাইড্রোজেন কি বা কাকে বলে
রাসায়ানিক বিক্রিয়ার ফলে H2 ঘটিত কোন যৌগ থেকে সদ্য মুক্ত হাইড্রোজেনকে জায়মান হাইড্রোজেন বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যখন কোন পদার্থ থেকে H2 উতপন্ন হয়, তখন ওই হাইড্রোজেনের সদ্যজাত অবস্থা , অর্থাৎ ওই H2 অনুতে পরিনত হওয়ার আগের অবস্থাকে জায়মান অবস্থা বলে। এই অবস্থা সল্পকাল স্থায়ী। জিঙ্কের সাথে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় যে সদ্দ্যজাত H2 উৎপন্ন হয়, তা প্রথমে পারমানবিক অবস্থায় থাকে। জায়মান হাইড্রোজেন সাধারন হাইড্রোজেনের থেকে অনেক শক্তিশালী ও সক্রিয় কারন এই অবস্থায় H2 পারমানবিক অবস্থায় থাকে।