ভিনিগার ও গ্লিসারল বা গ্লিসারিন – উৎস, ব্যবহার, ধর্ম, সংকেত

0
748

এই আলোচনা পর্বে আমরা গ্লিসারিন বা গ্লিসারল এবং ভিনিগার সম্বন্ধে আলোচনা করব।

ভিনিগার

ভিনিগার হলো অ্যাসিটিক এসিডের 4% থেকে 8% লঘু জলীয় দ্রবণ। বিজ্ঞানী কোলবে কার্বন, হাইড্রোজেনঅক্সিজেনের সাহায্যে পরীক্ষাগার সর্ব প্রথম অ্যাসিটিক অ্যাসিড 1845 সালে তৈরি করেন। অ্যাসিটিক অ্যাসিড কার্বক্সিলিক এসিডের শ্রেণীভূক্ত। একটি অ্যাসিটিক অ্যাসিড অণুতে একটি মিথাইল মূলকের সঙ্গে একটি কারবক্সিল মূলক যুক্ত হয়ে গঠিত হয়।

ভিনিগারের উৎস

১. অ্যাসিটিলিনের জারণ ক্রিয়ার দ্বারা এসিটিক এসিড প্রস্তুত করা হয়। একচুয়ালি ভিনিগার হলো অ্যাসিটিক এসিডের জলীয় দ্রবণ।
২. কাঠের অন্তর্ধূম পাতনে পাইরোলিগনাস এসিড পাওয়া যায়। পাইরোলিগনাস এসিড হল 8%-10% পার্সেন্ট অ্যাসিটিক অ্যাসিড, 2%-4% মিথাইল অ্যালকোহল এবং সামান্য এসিটোনের জলীয় দ্রবণ অর্থাৎ পাইরোলিগনাস এসিডে প্রায় 10% অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে।
৩. নিম্নমানের ইথাইল অ্যালকোহলকে এসিটোব্যাক্টর অ্যাসেটি বা ব্যাকটেরিয়াম অ্যাসেটি নামে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা দারিত করে ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়। ভিনিগার প্রস্তুতির এই পদ্ধতিকে কুইক ভিনিগার পদ্ধতি বলে। এভাবে প্রস্তুত ভিনিগারে কিছু টারটারিক এসিড, সাকসিনিক এসিড এবং সামান্য পরিমাণ ওইসব এসিডের এস্টার থাকে।
৪. পুরনো মদে(টক হয়ে যাওয়া মত), কতকগুলি ফলের(জায়ফলের তেল) রসের মধ্যে কয়েকটি উদ্ভিজ্জ তেল এবং কয়েকটি প্রাণীর মলে এসিটিক এসিড পাওয়া যায়।

ভিনেগারের ব্যবহার

নিচে ভিনিগারের বহুধা ব্যবহার আলোচনা করা হলো
১. নানা রকম খাবার, আচার ও চাটনি তৈরি করতে ভিনিগার ব্যবহার করা হয়।
২. রবার ঘন করতে ভিনিগার ব্যবহার করা হয়।
৩. মাছ মাংস সংরক্ষণের ভিনেগারের ব্যবহার আছে।
৪. পরীক্ষাগারে বিকারক রূপে ও দ্রাবক হিসাবে ভিনিগারের ব্যবহার হয়।
৫. অ্যাসিটেট লবণ, অ্যাসপিরিন, রেয়ন, সেলুলোজ অ্যাসিটেট জাতীয় প্লাস্টিক প্রভৃতি তৈরি করতে ব্যবহার হয়।
৬. হোয়াইট লেড নামে সাদা রং প্রস্তুত করতে ভিনেগারের ব্যবহার আছে।

ভিনিগার এর ধর্ম

নিচে ভিনিগারের ধর্ম পয়েন্ট আকারে দেওয়া হল
১. এটি তীব্র গন্ধযুক্ত বর্ণহীন তরল।
২. ভিনেগার অ্যাসিটিক এসিডের লঘু জলীয় দ্রবণ, ভিনিগারে সাধারণত 4 থেকে 8 পার্সেন্ট অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে।
৩. ভিনিগারের ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি জলে দ্রাব্য।

গ্লিসারল বা গ্লিসারিন

গ্লিসারল বা গ্লিসারিন হল অ্যালকোহলজাতীয় যৌগ। 1779 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী শীলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে লিখার্জের মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে গ্লিসারিন যৌগটি আবিষ্কার করেন। 1811 সালে বিজ্ঞানী শেভ্রেল এই যৌগটির নাম দেন গ্লিসারল। গ্লিসারিনের একটি অণুতে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু যুক্ত হয়ে একটি সরল অণু গঠন করে।

গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের উৎস

১. নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, শূকরের চর্বি প্রভৃতি উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বির মধ্যে একটি রাসায়নিক উপাদান হিসেবে গ্লিসারাইড বর্তমান থাকে। উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বিকে ক্ষার দ্রবণ দ্বারা আর্দ্র বিশ্লেষিত করলে গ্লিসারল বা গ্লিসারিন পাওয়া যায়।
২. বর্তমান সময়কালে প্রোপিলিন নামে একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন থেকে গ্লিসারল তৈরি করা হয়।

গ্লিসারলের বা গ্লিসারিনের ব্যবহার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গ্লিসারিনের ব্যবহার বিভিন্নভাবে আমরা করে থাকি। নিচে গ্লিসারিনের কয়েকটি বিশেষ ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
১. প্লাস্টিক শিল্পে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
২. নাইট্রোগ্লিসারিন, ডিনামাইট প্রভৃতি বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত করতে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৩. ধোঁয়াহীন বারুদ জুতার কালি ছাপার কালি তৈরি করতে গিলিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৪. সিগারেটের তামাক নরম ও আদ্র করতে, টাইপ মেশিনের ফিতা ও চামড়াকে নরম রাখতে গ্লিসারল ব্যবহার হয়।
৫. খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণে গ্লিসারল ব্যবহার করা হয়।
৬. গ্লিসারিন থেকে ফরমিক এসিড প্রস্তুত করা হয়।
৭. বস্ত্রশিল্পে এর ব্যবহার আছে।
৮. গ্লিসারিন থেকে নানারকম সাবান, প্রসাধন দ্রব্য এবং ওষুধ তৈরি করা হয়।
৯. শৈত্যপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটরের জলের সঙ্গে হিমায়করোধক হিসেবে গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
১০. অ্যালকোহল প্রস্তুতিতে গ্লিসারিনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

গ্লিসারোল বা গ্লিসারিনের ধর্ম

প্রত্যেক পদার্থের মধ্যে গ্লিসারিনের কিছু বিশেষ ধর্ম আছে। আমরা নিচে গ্লিসারিনের ধর্ম পয়েন্ট আকারে আলোচনা করব।
১. গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন মিষ্টি স্বাদযুক্ত বর্ণহীন গাঢ় তরল
২. গ্লিসারল হলো অ্যালকোহল সমগোত্রীয় শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ।
৩. গ্লিসারিন জলে দ্রাব্য
৪. গ্লিসারিনের স্ফুটনাঙ্ক 290°C
৫. শুদ্ধ গ্লিসারিন একটি জলাকর্ষী পদার্থ। অর্থাৎ বিশুদ্ধ গ্লিসারলের জলের প্রতি আকর্ষণ খুব বেশি।

গ্লিসারিন ও ভিনিগার সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

গ্লিসারিনের সংকেত কি

গ্লিসারিনের সংকেত হলো C3H5(OH)3

সাবানীভবন কি বা কাকে বলে এবং কিভাবে ঘটে ?

বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল, প্রাণিজ তেল ও চর্বিতে, ফ্যাটি এসিডের (যেমন পামিটিক, স্টিয়ারিক ও অলিক এসিড) সঙ্গে গ্লিসারাইড যৌগরূপে যুক্ত থাকে। তীব্র ক্ষার দ্রবণের (কস্টিক সোডা দ্রবণে) সাহায্যে তেল বা চর্বি আর্দ্র বিশ্লেষণ করে গ্লিসারল পাওয়া যায়। এই বিক্রিয়াকে সাবানীভবন বলা হয়।

গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের গঠন

গ্লিসারিনের একটি অনুর মধ্যে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু বর্তমান থাকে। নিচের চিত্রে গঠন দেওয়া হল। C3H5(OH)3গ্লিসারল বা গ্লিসারিন

ভিনিগারের সংকেত কি

ভিনেগারের সংকেত হলো CH3COOH

ভিনিগার এর গঠন

ভিনিগার হল অ্যাসিটিক এসিডের লঘু জলীয় দ্রবণ। একটি মিথাইল মূলকের সঙ্গে একটি কারবক্সিল মূলক যুক্ত হয়ে ভিনেগারের একটি অণু তৈরি করে। CH3COOHভিনিগার

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here