“গ্লুকোজ” শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “গ্লুকাস” থেকে। গ্রিক শব্দ গ্লুকাস অর্থ হলো মিষ্টি বা সুইট। গ্লুকোজ একটি মিষ্টি স্বাদ যুক্ত কঠিন কেলাসিত পদার্থ। গ্লুকোজ একটি কার্বোহাইড্রেট শ্রেণীর অ্যালিফেটিক জৈব যৌগ। গ্লুকোজের একটি অণুতে একটি কার্বনিল মূলক এবং পাঁচটি হাইড্রোক্সিল মূলক থাকে। ফুলের মধু, মিষ্টি ফলের রস বা মৌমাছির মৌচাকের মধুতে গ্লুকোজ থাকে। পাকা আঙুরের রসে প্রায় কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ গ্লুকোজ থাকে।
গ্লুকোজ এর উৎস
গ্লুকোজের উৎস নিম্নরূপ
১. পাকা ফলের রসে, মধুতে এবং পাকা আঙুরের রসে গ্লুকোজ থাকে। আঙুরের রসে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ পাওয়া যায় বলে একে দ্রাক্ষা শর্করা বলে। আঙুরের রসে প্রাইস 25 থেকে 30 পার্সেন্ট গ্লুকোজ থাকে।
২. ইক্ষু শর্করা বা সুক্রোজের আর্দ্র বিশ্লেষণ গ্লুকোজ পাওয়া যায়।
C12H22O11+H2O→C6H12O6(গ্লুকোজ)+C6H12O6(ফ্রুক্টোজ)
৩. আলু, ভুট্টা চাল, গম প্রভৃতি শ্বেতসার বা স্টার্চ জাতীয় পদার্থকে লঘু সালফিউরিক এসিড দ্বারা সম্পূর্ণরূপে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে গ্লুকোজকে তৈরি করা হয়।
গ্লুকোজের ধর্ম
প্রকৃতিতে পাওয়া সমস্ত যৌগের মত গ্লুকোজের কিছু বিশেষ ধর্ম আছে। নিচে সেই সব গ্লুকোজের ধর্ম আলোচনা করা হলো
১. গ্লুকোজ একটি বর্ণহীন, মিষ্টি গন্ধযুক্ত এবং কেলাসাকার কঠিন পদার্থ।
২. এটি একটি কার্বোহাইড্রেট শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ।
৩. গ্লুকোজ জলে দ্রাব্য।
৪. গ্লুকোজের গলনাঙ্ক 146°C।
৫. এটি স্বাদে মিষ্টি।
গ্লুকোজের ব্যবহার
আমরা বিভিন্নভাবে দৈনন্দিন জীবনে গ্লুকোজের ব্যবহার করে থাকি। নিচে গ্লুকোজের ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো
১. গ্লুকোজ মূলত রোগীর পথ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২. লজেন্স, টফি, আচার, মিষ্টি, জেলি প্রভৃতি প্রস্তুতিতে এবং সংরক্ষণে গ্লুকোজের ব্যবহার আছে।
৩. ক্যালসিয়াম গ্লুকোনেট, ভিটামিন-সি প্রভৃতি প্রস্তুতিতে এর ব্যবহার হয়।
৪. আয়নায় রূপোর প্রলেপ দিতে গ্লুকোজকে ব্যবহার করা হয়।
৫. পরীক্ষাগারে বিজারক রূপে গ্লুকোজ ব্যবহৃত হয়।
ইউরিয়া
অজৈব যৌগ থেকে উৎপন্ন প্রথম জৈব যৌগ ইউরিয়া। 1773 সালে বিজ্ঞানী রুলে স্তন্যপায়ী প্রাণীর মূত্রে ইউরিয়ার উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। পরে 1828 সালে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভোহ্লার সর্বপ্রথম অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেটকে উত্তপ্ত করে ইউরিয়া প্রস্তুত করেন। পরীক্ষাগারে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগ প্রস্তুতির এটাই হলো প্রথম নমুনা।
ইউরিয়ার উৎস
ইউরিয়ার উৎস নিয়ে আলোচনা করলাম
১. মানবদেহের এবং প্রাণীদেহের প্রোটিন বিশ্লিষ্ট হয়ে ইউরিয়া উৎপন্ন হয় এবং প্রাণীর মূত্রে এই যৌগটি পাওয়া যায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে প্রোটিন বিশ্লিষ্ট হয়েছে পদার্থ রূপে ইউরিয়া তৈরি হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মূত্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ত্রিশ গ্রাম ইউরিয়া নির্গত হয়।
২. অ্যামোনিয়া থেকে ইউরিয়া উৎপাদন করা যায়। 100-200 বায়ুমন্ডলীয় চাপে নির্জল তরল অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মিশ্রণকে 200°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে প্রথমে অ্যামোনিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন হয়, পরে উৎপন্ন অ্যামোনিয়াম কার্বনেট ইউরিয়া ও জলে বিয়োজিত হয়।
2NH3+CO2=NH2COONH4
NH2COONH4=CO(NH2)2+H2O
ইউরিয়ার ধর্ম
প্রথম আবিষ্কৃত অজৈব থেকে জৈব যৌগ হিসাবে ইউরিয়ার ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমাদের অনেক বেশি। তাই ইউরিয়ার ধর্ম সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো
১. ইউরিয়া একটি অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন।
২. এটি জলে দ্রাব্য।
৩. ইউরিয়ার স্ফুটনাংক 132°
৪. ইউরিয়া সাদা, কেলাসাকার কঠিন পদার্থ।
৫. ইউরিয়ার একটি অণুতে দুইটি অ্যামিনো মূলক এবং একটি কার্বলিক মূলক থাকে।
৬. স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মূত্রের একটি উপাদান হলো ইউরিয়া।
ইউরিয়ার ব্যবহার
ইউরিয়ার বহুধা ব্যবহার আছে। ইউরিয়ার ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো
১. নাইট্রোজেন ঘটিত সার হিসাবে জমিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
২. ইউরিয়া ফরমালডিহাইড, রেজিন এবং প্লাস্টিক উৎপাদনে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
৩. বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতিতে বিশেষ করে কালাজ্বরের ওষুধ “ইউরিয়া স্টিবামিন”এবং ঘুমের ওষুধ “বারবিটিউরেট” প্রস্তুত করতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
৪. নাইট্রাস অ্যাসিড দূর করতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
৫. নাইট্রো সেলুলোজ ও সেলোফেন এবং রেয়নের শিল্প প্রস্তুতিতে ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়।
আমি প্রতিদিন আপনার আর্টিকেল পড়ি। আপনার আর্টিকেল অনেক ভালো। আমি বাংলাদেশে নবম শ্রেণীতে পড়ি। করোনার জন্য পড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তাই আপনার কাছে আমার অনুরোধ, অপনি যদি ক্লাস নবম দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি অধ্যায়ের উপরে আর্টিকেল বানান , তাহলে অনেক উপকার হবে।