দ্রাব্যতা ও দ্রাব্যতার উপর উষ্ণতার প্রভাব

2
870

দ্রাব্যতা

এই অধ্যায়ে আমরা দ্রাব্যতা কি, দ্রাব্যতার সূত্র এবং দ্রাব্যতার উপর উষ্ণতার প্রভাব এই বিষয়ে আলোচনা করব। তার আগে আমরা দ্রাব্যতা কাকে বলে তার সংজ্ঞা জানব

দ্রাব্যতার সংজ্ঞা:

কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায়, 100 গ্রাম দ্রাবক, সর্বোচ্চ যত গ্রাম দ্রাব দ্রবীভূত করতে পারে, সেই গ্রাম সংখ্যাকে, ওই উষ্ণতায় ঐ পদার্থটির দ্রাব্যতা বলে।
অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় 100 গ্রাম দ্রাবককে সম্পৃক্ত করতে যত গ্রাম দ্রাব প্রয়োজন হয়, পদার্থটির দ্রাব্যতা সেই উষ্ণতায় কত গ্রাম সংখ্যা।
90 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় সাধারণ লবণের দ্রাব্যতা 39— এর দ্বারা বোঝায় যে, 90 গ্রাম সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় 100 গ্রাম জলে 39 গ্রাম সাধারণ লবণ দ্রবীভূত করলে দ্রবণটি সম্পৃক্ত হয়।
ধরি t°C উষ্ণতায় N গ্রাম দ্রবণে M গ্রাম দ্রাব সম্পৃক্ত অবস্থায় দ্রবীভূত আছে।
দ্রবণ = দ্রাবক + দ্রাব, অর্থাৎ N = দ্রাবক + M
অতএব, দ্রাবক = (N-M) গ্রাম
সুতরাং বলা যায় যে,t°C উষ্ণতায়
(N-M) গ্রাম দ্রাবক এর মধ্যে M গ্রাম দ্রাবক সম্পৃক্ত অবস্থায় দ্রবীভূত আছে।
অতএব 100 গ্রাম দ্রাবকের মধ্যে (M×100)/(N-M) গ্রাম দ্রাব সম্পৃক্ত অবস্থায় দ্রবীভূত আছে।
অতএব ,t°C উষ্ণতায় পদার্থের দ্রাব্যতা = 100M/(N-M)
সুতরাং নির্দিষ্ট উষ্ণতায় পদার্থের দ্রাব্যতা = ( সম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রাবের ভর×100)/(ওই দ্রবণে দ্রাবকের ভর)
দ্রাব্যতার কোন একক নেই। দুটি ভরের অনুপাত বলে এটি একটি সংখ্যা মাত্র।

কঠিন পদার্থের দ্রাব্যতা চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে

  • কঠিন পদার্থের দ্রাব্যতা নিম্ন লিখিত চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে
  • দ্রাবের প্রকৃতি
  • দ্রাবকের প্রভৃতি
  • দ্রবণের উষ্ণতা
  • দ্রাবক এর পরিমাণ।

একই উষ্ণতায় KNO3 এবং NaCl এর দ্রাব্যতা বিভিন্ন। আবার জলের বদলে NH4OH, H2O2 ইথার ইত্যাদি ব্যবহার করলে নির্দিষ্ট পদার্থের দ্রাব্যতার নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ভিন্ন হয়।

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ও অতিপৃক্ত দ্রবণ | সম্পর্ক ও সনাক্তকরণ

পদার্থের দ্রাব্যতার উপর উষ্ণতার প্রভাব

কঠিন পদার্থের দ্রাব্যতা দ্রবণের উষ্ণতার উপর নির্ভর করে। উষ্ণতার সঙ্গে পদার্থের দ্রাব্যতা এত বেশি নির্ভরশীল যে কোন পদার্থের দ্রাব্যতা উল্লেখের সঙ্গে দ্রবণের উষ্ণতা উল্লেখ করতেই হয়।
পদার্থের দ্রাব্যতা স্থির নয়।

  • উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রাব্যতা বাড়ে
    পরীক্ষা : ঘরের উষ্ণতায় একটি টেস্ট টিউবের মধ্যে KNO3 সম্পৃক্ত দ্রবণ প্রস্তুত করা হলো। এই অবস্থায় ওই দ্রবণে আরো কিছু KNO3 যোগ করে ভালো করে নাড়া হলো। দেখা গেল, ওই বাড়তি KNO3 ওই দ্রবণে আর দ্রবীভূত হচ্ছে না।এখন টেষ্ট টুকটুকে দ্রবণ সমেত বার্নারে উত্তপ্ত করা হলো– কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল যে,বাড়তি KNO3 যা অদ্রবীভূত ছিল তা ওই দ্রবণে দ্রবীভূত হয় স্বচ্ছ দ্রবণ উৎপন্ন করেছে। এই পরীক্ষার দ্বারা বোঝা যায় যে,বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পদার্থের দ্রাব্যতা বাড়ে।
    40 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় জলে পটাসিয়াম নাইট্রেটের দ্রাব্যতা 65, আবার 50 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় জলে পটাসিয়াম নাইট্রেট এর দ্রাব্যতা 85। উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে পটাশিয়াম নাইট্রেট এর দ্রাব্যতা এইভাবে দ্রুত হারে বাড়তে থাকে।
  • উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রাব্যতা খুব কম হারে বাড়ে
    যেমন উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পটাশিয়াম নাইট্রেট এবং খাদ্য লবণের দ্রাব্যতার পরিবর্তন কেমন হয় নিচে দেখানো হলো।
  • উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে কতকগুলি পদার্থের দ্রাব্যতা কমে যায়
    যেমন ক্যালসিয়াম সালফেট, কলিচুনের দ্রাব্যতা, দ্রবণের উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়।
    32 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় উপরে সোডিয়াম সালফেট গ্লবার লবণের (NaSO4, 10H2O দ্রাব্যতা কমে যায়। এর কারণ হলো ওই উষ্ণতার উপরে ব্লাবার লবণের মধ্যস্থিত 9 অনু কেলাস জল হারিয়ে Na2SO4, H2O তে পরিণত হয়। এই পদার্থটির দ্রাব্যতা কম হওয়ায় ওই উষ্ণতার উপরে গেলে পদার্থটির কিছু অংশ দ্রবন থেকে পৃথক হয়ে পড়ে।

দ্রবণ | দ্রবণের বৈশিষ্ট্য ও প্রকার | দ্রাব ও দ্রাবক

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here