স্থিতি ও গতি
আমাদের চারপাশে যে সব বস্তু রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি অচল বা স্থির এবং আর কয়েকটি হল সচল বা গতিশীল। যেমন ঘরবাড়ি, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত প্রভৃতি হলো স্থির বস্তু। অর্থাৎ এই সব বস্তুর সর্বদা এক অবস্থানে থাকে এবং সময়ের সঙ্গে এদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। পক্ষান্তরে চলন্ত গাড়ি, নদীর স্রোত, উড়ন্ত পাখি প্রভৃতি বস্তুর অবস্থান সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে তাই এরা প্রত্যেকেই গতিশীল বস্তু।
অর্থাৎ বলা যেতে পারে,
অচল বস্তু
যে পদার্থের অবস্থান সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় না সেই পদার্থকে অচল বস্তু বা স্থির বস্তু বলে।
সচল বস্তু
যে পদার্থের অবস্থান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় সেই পদার্থকে সচল বস্তু বা গতিশীল বস্তু বলে।
স্থিতি ও গতি আপেক্ষিক
স্থিতি
অচল বস্তুর অচল থাকার যে প্রবণতা তাকেই স্থিতি বলে।
গতি
গতিশীল বস্তুর গতি ধরে রাখার যে প্রবণতা তাকে গতি বলে।
স্থিতি ও গতি আপেক্ষিক মাত্র। উদাহরনের সহিত একটু জানা যাক —
পৃথিবীতে যত বস্তু আছে যাদেরকে আমরা স্থির দেখি, পৃথিবীর বাইরের কোন স্থির অবস্থান থেকে যদি দেখা সম্ভব হতো তাহলে দেখা যেত যে পৃথিবীর উপরে অবস্থিত কোন বস্তুর অচল নয়। পৃথিবী ও পৃথিবীর সংলগ্ন সমস্ত বস্তু প্রচন্ড বেগে পৃথিবীর সঙ্গে ঘুরছে।
আমার পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর বাইরের কোনো বস্তু আমরা দেখতে পাই তারা সচল।
চলন্ত রেলগাড়ির কামরার ভেতরের কোন যাত্রীর কাছে কামরার বিভিন্ন আসবাবপত্র এবং ওই কামরায় বসে থাকা অন্যান্য যাত্রীদেরকে স্থির বলে মনে হয়। কিন্তু কামরার বাইরের কোনো দর্শকের কাছে এরা গতিশীল। আবার একই দিকে সমবেগে চলতে থাকা দুটি গাড়ির আরোহীরা পরস্পরের কাছে স্থির রয়েছে বলে মনে হবে। অতএব বলা যায় যে, বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থা হল একটি আপেক্ষিক বিষয়, যা শুধুমাত্র পর্যবেক্ষকের অবস্থার উপর নির্ভর করে।
গতি কয় প্রকার (গতির প্রকারভেদ)
গতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে; কিন্তু সব গতি দু’রকম সরল গতির সমন্বয়ে গঠিত। অর্থাৎ বলা যেতে পারে গতি দু’প্রকারের
১. চলন গতি এবং
২. আবর্ত গতি বা ঘূর্ণন গতি
এখন আমরা এই দুই কোটি সম্বন্ধে আলোচনা করব।
১. চলন গতি
ক) যদি গতিশীল বস্তুর প্রত্যেকটি কনা সরলরেখায় একই দূরত্ব অতিক্রম করে স্থান পরিবর্তন করে, তাহলে সেই বস্তুর গতিকে চলন গতি বলে।
খ) কোন বস্তুর সরলরেখা বরাবর চলতে থাকলে তার গতিকে চলন গতি বলে।
যেমন ধরা যাক উঁচু কোনো ছাদের উপর থেকে একটি পাথর খন্ডকে ফেলে দিলে পাথরটি সরলরেখা বরাবর ভূপৃষ্ঠে এসে আছড়ে পড়ে। অর্থাৎ অভিকর্ষ বলের টানে ভূপৃষ্ঠে পতনশীল পাথরখণ্ডটির গতি হল চলন গতি। কারণ এখানে গতিশীল পাথরটির প্রত্যেকটি কনার সরলরেখা বরাবর একই দূরত্ব অতিক্রম করে অবস্থান পরিবর্তন করে। কয়েকটি চলন গতির উদাহরণ হল – সরণ, দ্রুতি, বেগ, ত্বরণ, মন্দন ইত্যাদি
২. ঘূর্ণন গতি বা আবর্ত গতি
যদি কোন গতিশীল বস্তুর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অক্ষের চারদিকে বৃত্তাকার পথে ঘোরে তবে বস্তুটির গতিকে আবর্ত গতি বলে।
যেমন ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখার গতি হল আবর্তন গতি ঘূর্ণন গতির উদাহরণ।
মিশ্র গতি বা জটিল গতি
এছাড়াও আরও এক প্রকার গতি আমাদের চারপাশে দেখে থাকি। যেমন চলন্ত রেলগাড়ির চাকার গতি। এক্ষেত্রে চলন গতি ও আবর্ত গতি দুটি একই সঙ্গে ক্রিয়া করে। একে মিশ্র গতি বা জটিল গতি বলে।
প্রশ্নোত্তর
জটিল গতি কি বা কাকে বলে
চলন গতি এবং আবর্ত গতি — এই দুটি গতি একসঙ্গে মিলে জটিল গতির সৃষ্টি করে। যেমন ঠেলাগাড়ি যখন চলে তখন ঠেলা গাড়ির ঘুরতে থাকা থাকা দুটি ঘূর্ণন গতির সৃষ্টি করে। আবার ঠেলাগাড়িটি এগিয়ে যাওয়ার ফলে এর প্রত্যেকটি কনার অবস্থার পরিবর্তন সমদূরত্বের হয়। অর্থাৎ চলন গতি সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি জটিল গতি কী চলন এবং ঘূর্ণন গতির মিশ্রণ হিসেবে কল্পনা করা যায়।
ধন্যবাদ, খুব সুন্দর পোষ্ট।