কার্বন ডাই অক্সাইড | ধর্ম, ব্যবহার, সনাক্তকরণ | প্রস্তুতি

2
3118

এই আলোচনা থেকে আমরা কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বন ডাই অক্সাইডের ধর্ম, কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যবহার, সনাক্তকরণ এবং প্রস্তুতি সম্বন্ধে জানবো

কার্বন ডাই অক্সাইডের ধর্ম

  • কার্বন ডাই অক্সাইড কে আমরা মূলত দুটি বিশেষ ধর্মের ভাগ করতে পারি যথা
  • ১. কার্বন ডাই অক্সাইড এর ভৌত ধর্ম
  • ২. কার্বন ডাই অক্সাইড এর রাসায়নিক ধর্ম

১. কার্বন ডাই অক্সাইডের ভৌত ধর্ম:

  • ক) কার্বন-ডাই-অক্সাইড বর্ণহীন, গন্ধহীন, সামান্য অম্ল স্বাদযুক্ত গ্যাস।
  • খ) এই গ্যাস বাতাসের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ ভারী।
  • গ) CO2 জলে দ্রাব্য– তাপ প্রয়োগে দ্রাব্যতা বাড়ে।

২. কার্বন ডাই অক্সাইডের রাসায়নিক ধর্ম:

  • ক) দহন শীলতা:
    কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিজের দাহ্য নয় এবং দহনে সাহায্যও করে না।
    খ) অ্যাসিড ধর্ম:
  • কার্বন ডাই অক্সাইড একটি আম্লিক অক্সাইড। তাই কার্বন-ডাই-অক্সাইড জলে দ্রবীভূত হয়ে এসিড উৎপন্ন করে। এবং ক্ষার বা ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
    • জলের সঙ্গে বিক্রিয়া:
    জলীয় দ্রবণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বনিক এসিড উৎপন্ন করে। সেই জন্য CO2 এর জলীয় দ্রবণ নীল লিটমাসকে লাল করে। CO2+H2O=H2CO3
    ক্ষারক বা ক্ষারের সঙ্গে:
    CO2 একটি আম্লিক অক্সাইড, সেই জন্য ক্ষার বা ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বনেট লবণ উৎপন্ন করে। সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করালে সোডিয়াম কার্বনেট লবণ উৎপন্ন হয়। 2NaOH+CO2=NaCO3+H2O
    • চুন জলের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করালে প্রথমে অদ্রাব্য ক্যালসিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন হয় ফলে স্বচ্ছ চুনজল ঘোলা হয়ে যায়। Ca(OH)2+CO2=Na2CO3+H2O
  • অক্সিজেনের ব্যবহার ও ধর্ম
    অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড অতিক্রম করালে, অদ্রাব্য ক্যালসিয়াম কার্বনেট, দ্রাব্য ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয়। সেই জন্য ঘোলা চুনজল আবার স্বচ্ছ হয়ে যায়। CaCO3+H2O+CO2=Ca(HCO3)2
    ঘ) জারণ ক্ষমতা:
    •লোহিত তপ্ত কার্বন,আয়রন বা জিংক এর উপর দিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড চালনা করলে,ওই গুলি জারিত হয় এবং CO2 নিজে বিজারিত হয় কার্বন-মনোক্সাইডে পরিণত হয়। C+CO2=2CO , Zn+CO2=ZnO+CO
    • জ্বলন্ত ম্যাগনেসিয়ামকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পূর্ণ গ্যাসজারের মধ্যে প্রবেশ করালে CO2 বিজারিত হয়ে কার্বন উৎপন্ন করে।
    এই বিক্রিয়া প্রমাণ করে যে, কার্বন-ডাই-অক্সাইডে কার্বন আছে। 2Mg+CO2=2MgO+C
    •কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপরকে জারিত করে নিজে বিজারিত হয় বলে এর বিজারণ ক্ষমতা নেই।
    ঙ) শুষ্ক বরফ:
    কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস 0 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এবং 40 বায়ুমণ্ডল চাপে তরলে পরিণত হয়। তরল CO2 কে বাষ্পীভূত করলে আরো ঠান্ডা হয়ে কঠিন CO2 উৎপন্ন হয়। কঠিন CO2 কেই শুষ্ক বরফ বলে।
    চ) গাছের পাতার ক্লোরোফিল,জল এবং CO2 সূর্যের কিরণে পরস্পর বিক্রিয়া করে গাছের খাবার কার্বোহাইড্রেট উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষ বলে।

কার্বন ডাই অক্সাইডের সনাক্তকরণ

স্বচ্ছ চুন জলের উপর দিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস চালনা করলে প্রথমে ঘোলা হয়ে যায়। পরে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড চালনা করলে আবার স্বচ্ছ হয়ে যায়। কিন্তু আম্লিক KMnO4 দ্রবণের মধ্যে দিয়ে চালনা করলে বেগুনি বর্ণ বর্ণহীন হয় না।

কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যবহার

  • কার্বন ডাই অক্সাইড উষ্ণায়নের সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকারেও ব্যবহৃত হয়। যেমন
  • ক) উদ্ভিদজগতের বৃদ্ধি ও স্থিতি কার্বন ডাই অক্সাইডের উপর নির্ভর করে
  • খ) মাছ, মাংস, সবজি প্রভৃতি অনেকদিন ধরে সতেজ রাখার জন্য হিমায়ক রূপে ব্যবহার করা হয়।
  • গ) বাতান্বিত জল প্রস্তুতিতে এবং আগুন নেভানোর কাজে এই গ্যাসের প্রয়োজন হয়।
  • ঘ) খাবার সোডা, কাপড় কাচার সোডা, ইউরিয়া প্রভৃতি প্রস্তুতিতে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহৃত হয়।
  • এগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড এর ব্যবহার হিসেবে বলা যায়।

অ্যামোনিয়ার ব্যবহার ও ধর্ম

পরীক্ষাগারে কার্বন ডাই অক্সাইডএর প্রস্তুতি

  • প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য:
  • ১ মার্বেল বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট
  • ২. লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড
  • পরীক্ষাগারে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস তৈরির নীতি:
  • সাধারণ তাপমাত্রায় মার্বেল অর্থাৎ ক্যালসিয়াম কার্বনেট এর সঙ্গে লঘু সালফিউরিক এসিডে মিশিয়ে পরীক্ষাগারে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করা হয়। CaCO3+2HCl=CaCl2+H2O+CO2
  • পরীক্ষাগারে CO2 তৈরির পদ্ধতি:
  • ক) দীর্ঘ নল ফানেল এবং নির্গম নল যুক্ত একটি উলফ বোতলের মধ্যে কিছু মার্বেলের টুকরো নিয়ে জল ঢেলে ডুবিয়ে রাখা হলো।
  • খ) দীর্ঘ নাল ফানেলের শেষপ্রান্তটি যেন জলের মধ্যে ডুবে থাকে।
  • গ) নির্গম নল এর শেষ প্রান্তটি একটি খাড়াভাবে রাখা শুষ্ক গ্যাস জারের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে।
  • ঘ) এইবার দীর্ঘ নল ফানেলের মধ্যে দিয়ে 1:1 লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড ঢালা হলো। অ্যাসিড মার্বেলের সংস্পর্শে এলে বুদবুদ আকারে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতে শুরু করে। এই গ্যাস নির্গমন অল দিয়ে বেরিয়ে আসে।
  • CO2 সংগ্রহ:
    কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বাতাসের চেয়ে দেড় গুণ ভারী, তাই বাতাস এর উর্দ্ধ অপসারণ দ্বারা গ্যাস জারের মধ্যে জমা হয়।
  • CO2 এর বিশুদ্ধিকরন:
    এইভাবে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের মধ্যে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বাষ্প এবং জলীয় বাষ্প মেশানো থাকে।
    ক) সোডিয়াম বাই কার্বনেট দ্রবণের মধ্যে দিয়ে চালনা করে গ্যাসটিকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মুক্ত করা হয়।
    খ) গাঢ় সালফিউরিক এসিডের মধ্যে দিয়ে চালনা করে জলীয়বাষ্প মুক্ত করে শুষ্ক পারদ এর ওপর সংগ্রহ করা হয়।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here