বয়েলের সূত্র | গ্যাসের আয়তন ও চাপের সম্পর্ক

0
756

উষ্ণতা স্থির রেখে কোন গ্যাসের চাপের পরিবর্তন করলে গ্যাসের আয়তন যে নিয়মে পরিবর্তিত হয়, বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল সেই নিয়মটি সূত্রের আকারে প্রকাশ করেন। আমরা একে বয়েলের সূত্র বলে জানি। গ্যাসের আয়তন ও চাপের সম্পর্ক ভালোভাবে বুঝতে বয়েলের সূত্র সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।

বয়েলের সূত্র Boyle’s law

নির্দিষ্ট উষ্ণতায়, কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন, গ্যাসের উপর প্রযুক্ত চাপের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক পরিবর্তিত হয়।
বয়েলের সূত্রের ধ্রুবক হল দুটি।
ক) উষ্ণতা এবং
খ) গ্যাসের ভর।

বয়েলের সূত্রের ব্যাখ্যা

উষ্ণতা স্থির রেখে যদি নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের উপর চাপ বাড়ানো হয় তবে ওর আয়তন কমে, চাপ কমলে আয়তন বেড়ে যায়। ধরা যাক 25 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় 76 সেন্টিমিটার চাপে একটি নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন 40 ঘন সেন্টিমিটার। এখন উষ্ণতা একই রেখে ( 25 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়) চাপ যদি দ্বিগুণ করা হয় (76×2 সেন্টিমিটার পারদ স্তম্বের চাপ) তাহলে দেখা যাবে আয়তন বিপরীত অনুপাতে কমে গিয়ে (40/2) 20 ঘন সেন্টিমিটার হবে। আবার চাপ যদি চার গুণ বাড়ানো হয় তাহলে ওই গ্যাসের আয়তন হবে 10 ঘন সেন্টিমিটার।
উল্টোভাবে যদি চাপ অর্ধেক করা হয় (76/2) তাহলে ওই গ্যাসের আয়তন বিপরীত অনুপাতে বেড়ে গিয়ে (40×2) 80 ঘন সেন্টিমিটার হবে। অর্থাৎ দেখা গেল যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন ওই গ্যাসের চাপের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়।

ধরি, t°C উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ = P এবং গ্যাসের আয়তন = V
তাহলে বয়েলের সূত্র অনুযায়ী V∞1/P যখন উষ্ণতা স্থির,
বা, V=K/P ( K ধ্রুবক)
বা, PV=K ধ্রুবক
অর্থাৎ, গ্যাসের চাপ × আয়তন = ধ্রুবক
স্থির উষ্ণতায়, কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের উপর চাপ P পরপর পরিবর্তিত হয়ে নতুন চাপ যথাক্রমে P1 P2 P3 ইত্যাদি এবং আয়তন V পরিবর্তিত হয়ে নতুন আয়তন যথাক্রমে V1 V2 V3 ইত্যাদি হলে,
P1V1 = P2V2 = P3V3 = K (ধ্রুবক ) হবে।
অর্থাৎ, নির্দিষ্ট উষ্ণতায় এবং নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ P এবং আয়তন V এর গুণফল সবসময় ধ্রুবক হবে।

বয়েলের সূত্রের পরীক্ষা

বয়েলের সূত্রের সত্যতা যে যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করা হয় তার চিত্র এবং বর্ণনা নিচে দেওয়া হল
এই যন্ত্র দুটি কাচনল A এবং B থাকে। উভয় নলের উপরের অংশ চওড়া এবং নিচের অংশ সরু। A নলটির উপরের দিকটা বায়ু নিরুদ্ধ স্টপকক দ্বারা বন্ধ করা থাকে। B নলের উপরের অংশটি খোলা। A নলটির গায়ে ঘন সেন্টিমিটার দাগ কাটা থাকে। এই দাগ থেকে A নলের মধ্যস্থ বায়ুর অথবা গ্যাসের আয়তন জানা যায়। একটি লম্বা রবার নলের সাহায্যে এবং B নল দুটির সরু অংশ যুক্ত থাকে। A এবং B নল দুটিতে একটি কাঠের পাটাতনের উপর খাড়াভাবে দাঁড় করানো দুটি স্ট্যান্ডের সঙ্গে পৃথকভাবে আটকানো থাকে। B নলটিকে প্রয়োজনের মত উপরে বা নিচে ওঠানো বা নামানো যায়। কাচণল দুটির কিছু অংশ এবং রবার ণলটির সবটা বিশুদ্ধ পারদ দ্বারা পূর্ণ করা থাকে। A নলে পারদের উপরে কিছু পরিমাণ শুষ্ক বাতাস রাখা থাকে। নল দুটির মাঝে উভয় নলের পারদপৃষ্ঠের উচ্চতার পার্থক্য মাপার জন্য একটি স্কেল S খাড়াভাবে আটকানো থাকে।

(1) এখন A নলটিকে উপরে উঠিয়ে বা নামিয়ে এমন অবস্থায় আনা হয় যেন উভয় নলে পারদতল একই উচ্চতায় থাকে। এই অবস্থায় A নলের মধ্যস্থ বায়ু স্তম্ভের উচ্চতা পাঠ নেওয়া হলো। উভয় ণলে পারদতল একই উচ্চতায় থাকায় A নলের মধ্যস্থ বাতাসের চাপ = বায়ুমন্ডলের চাপ হবে। ব্যারোমিটার যন্ত্র থেকে বায়ুমন্ডলের চাপ পাওয়া গেল -ধরি, বায়ুমন্ডলের চাপ = P মি.মি., A নলে আবদ্ধ বায়ুর স্তম্ভের দৈর্ঘ্য = L। এখন A নলের প্রস্থচ্ছেদ সব জায়গায় সমান=x হলে, এই অবস্থায় A নলের বাতাসের আয়তন=L ×x=V ধরি।

(2) B নলটিকে উপরের দিকে উঠালে A নলের পারদতলের চেয়ে B নলের পারদতলের উচ্চতা বেশি হবে। এই অবস্থায় A নলের মধ্যে বাতাসে যে চাপ পড়ে তা বায়ুমণ্ডলীয় চাপের চেয়ে বেশি হয়। তাই দেখা যায় A নলে বাতাসের আয়তন কমে গেছে। ধরি এই অবস্থায় A নলে বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য = L1, সুতরাং বাতাসের আয়তন=L1 X=V1 ধরি। স্কেল থেকে উভয়নর পার্থক্য মেপে দেখা গেল = h1 মিলিমিটার হয়। তাহলে A নলের বাতাসের মোট চাপ = (P+h1) = P1 মিলিমিটার ধরি

3) B নলটিকে এখন নিচের দিকে নামালে B নলের পারদ তলের উচ্চতা A নলের পারদ তলের উচ্চতার চেয়ে কম হবে। এই অবস্থায় A নলের বাতাসের চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের চেয়ে কম হবে। তাই দেখা যাবে এই অবস্থায় A নলের বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। ধরি, এখন A জলে বায়ুর স্তম্ভের দৈর্ঘ্য = L2 ; সুতরাং বাতাসের আয়তন = L2x = V2 ধরি। উভয় নলের পারদ স্তম্ভের উচ্চতার পার্থক্য h2 মিলিমিটার হলে A নলের বাতাসের চাপ = (P-h2) = P মিলিমিটার ধরি।

এখন দেখা যাবে, P×Lx = P1×L1x =P2×L2x =ধ্রুবক হবে
অর্থাৎ, P×V = P1×V1 = P2×V2 = K হয়। (Kধ্রুবক)
অর্থাৎ, V∞ 1/P যখন উষ্ণতা স্থির। বয়েলের সূত্র তাই বলে।
A নলে বাতাসের বদলে CO2, O2, H2, N2 যে কোন মৌলিক বা যৌগিক গ্যাস রেখে অনুরূপ পরীক্ষা করলে একই ফল পাওয়া যাবে।

গ্যাসের চাপ ও ঘনত্বের সম্পর্ক

বয়েলের সূত্র প্রয়োগ করে স্থির উষ্ণতায় গ্যাসের চাপ ও ঘনত্বের সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়।
ধরি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ P1 হলে আয়তন V1 হয় এবং চাপ P2 হলে আয়তন V2 হয়।
বয়েলের সূত্র অনুযায়ী P1V1 =P2V2 = K (ধ্রুবক) ………(I)
এখন ধরি, গ্যাসের ভর = M এবং P1 চাপে গ্যাসের ঘনত্ব D1 এবং P2 চাপে গ্যাসের ঘনত্ব D2
আমরা জানি, গ্যাসের আয়তন = ভর/ঘনত্ব
অতএব, V1 = M/D1 এবং V2=M/D2
V1 এবং V2 এর মান (I) নম্বর সমীকরণে বসিয়ে,
P1V1 = P2V2 = K (ধ্রুবক)
বা, P1M/D1 = P2M/D2 = K (ধ্রুবক)
বা, P1/D1 = P2/D2 = K (ধ্রুবক)
অর্থাৎ, P/D = K
বা, P= KD
বা, P∞D
অর্থাৎ, নির্দিষ্ট উষ্ণতায়, গ্যাসের ঘনত্ব, চাপের সমানুপাতিক।

বয়েলের সূত্র সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের আয়তন ও ঘনত্বের মধ্যে সম্পর্ক কি

স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন ওই গ্যাসের ঘনত্বের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক হয়। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের উপর চাপ বাড়িয়ে গ্যাসের আয়তন কমালে গ্যাসের ঘনত্ব নির্দিষ্ট অনুপাতে বাড়বে এবং চাপ কমিয়ে গ্যাসের আয়তন বাড়ালে গ্যাসের ঘনত্ব একই অনুপাতে কমবে।

স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ ও ঘনত্বের মধ্যে সম্পর্ক কি

স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের চাপ ওই গ্যাসের ঘনত্ব সমানুপাতিক। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ বাড়ালে গ্যাসের আয়তন কমে যাওয়ায় গ্যাসের ঘনত্ব নির্দিষ্ট অনুপাতে বাড়বে এবং চাপ কমলে গ্যাসের আয়তন বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের ঘনত্ব একই অনুপাতে কমবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here