অ্যামোনিয়া বা এমোনিয়া | ধর্ম, ব্যবহার | পরীক্ষাগারে প্রস্তুতি

0
1712

এমোনিয়া বা অ্যামোনিয়া

অ্যামোনিয়ার সংকেত ( অ্যামোনিয়া – NH3 )NH3
অ্যামোনিয়ার আণবিক গুরুত্ব17
অ্যামোনিয়া

অ্যামোনিয়ার ধর্ম

  • অ্যামোনিয়া এর ধর্মকে আমরা মূলত
  • 1.ভৌত ধর্ম এবং
  • 2.রাসায়নিক ধর্ম এই দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি

অ্যামোনিয়ার ভৌত ধর্ম:

  • ক) অ্যামোনিয়া বর্ণহীন তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত গ্যাস।
  • খ) চাপ প্রয়োগে এই গ্যাসকে সহজে তরলে পরিণত করা যায়।
  • গ) NH3 বাতাসের চেয়ে হালকা।
  • ঘ) এমোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য। সাধারণ উষ্ণতায় ও চাপে 1 আয়তন জলে 1299 আয়তন অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্রবীভূত হয়।
  • ঙ) 0.88 আপেক্ষিক গুরুত্ব বিশিষ্ট অ্যামোনিয়া সম্পৃক্ত দ্রবণকে 35% লাইকার অ্যামোনিয়া বলে। লাইকার অ্যামোনিয়া বোতল খোলার সময় ঠাণ্ডা করে খুলতে হয়, তা না হলে বিস্ফোরণ ঘটে দুর্ঘটনা হতে পারে।

হাইড্রোজেন ও হাইড্রোজেনের ধর্ম

অ্যামোনিয়ার রাসায়নিক ধর্ম:

  • ক) ক্ষার ধর্ম: অ্যামোনিয়া জলে দ্রবীভূত হয়ে মৃদু ক্ষার উৎপন্ন করে। জলীয় দ্রবণকে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড বলে। NH3 + H2O = NH4OH
  • খ) অক্সিজেনের সঙ্গে:
  • অক্সিজেন গ্যাসের আবহাওয়ায় এমোনিয়া হলুদ বর্ণের শিক্ষাসহ জ্বলতে থাকে এবং অ্যামোনিয়া জারিত হয়ে নাইট্রোজেন উৎপন্ন করে। 4NH3 + 3O2 = 6H2O + 2N2
    ** 700 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় উত্তপ্ত প্লাটিনাম তারজালির উপর দিয়ে অ্যামোনিয়া এবং অক্সিজেনের মিশ্রণকে দ্রুত চালনা করলে অ্যামোনিয়া জারিত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে। 4NH3 + 5O2 = 6H2O + 4NO
  • গ) অ্যামোনিয়ার বিজারণ ক্ষমতা:
  • উত্তপ্ত কপার অক্সাইডের উপর দিয়ে অ্যামোনিয়া চালনা করলে অ্যামোনিয়া কপার অক্সাইডকে বিজারিত করে লাল বর্ণের ধাতব কপার উৎপন্ন করে। এই বিক্রিয়া প্রমাণ করে অ্যামোনিয়ার মধ্যে নাইট্রোজেন আছে। 3CuO + 2NH3 = N2 + 3Cu + 3H2O
  • ঘ) ক্লোরিনের সঙ্গে বিক্রিয়া:
  • অ্যামোনিয়ার সঙ্গে ক্লোরিনের বিক্রিয়া অ্যামোনিয়া Cl2 দ্বারা জারিত হয়ে নাইট্রোজেন উৎপন্ন করে এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড উৎপন্ন করে।
    ঙ) ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া:
    4০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় উত্তপ্ত সোডিয়াম বা পটাশিয়াম ধাতুর উপর দিয়ে অ্যামোনিয়া চালনা করলে অ্যামাইড লবণ উৎপন্ন হয় এবং হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়।
    চ) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া:
    যেহেতু NH3 ক্ষারধর্মী, তাই অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম লবণ উৎপন্ন করে। NH3 + HCl = NH4Cl
    ছ) ধাতব লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া:
    কোন কোন ধাতব লবণের সঙ্গে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড যোগ করলে ধাতব হাইড্রোক্সাইড অধঃক্ষিপ্ত হয়। যেমন, ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণ এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় বাদামী বর্ণের ফেরিক হাইড্রক্সাইড অধঃক্ষিপ্ত হয়।FeCl3 + 3NH4OH = Fe(OH)3 + 3NH4Cl
    জ) কপার লবণের দ্রবণে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড যোগ করলে প্রথমে বেসিক কপার লবণের নীলাভ সাদা অধঃক্ষেপ পড়ে, পরে অতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার ওই অধঃক্ষেপ দ্রবীভূত হয়ে গাঢ় নীল বর্ণের কিউপ্রা অ্যামোনিয়াম লবণ উৎপন্ন করে। 2CuSO4 + 2NH4OH = CuSO4, Cu(OH)2 + (NH4)2SO4
    CuSO4, Cu(OH)2 + (NH4)2SO4 + 6NH4OH = 2[Cu(NH3)4]SO4 + 8H2O

অ্যামোনিয়ার ব্যবহার

  • বিবিধ ক্ষেত্রে অ্যামোনিয়ার ব্যবহার হয় যেমন
  • ক) সার প্রস্তুতিতে এমোনিয়া প্রচুর ব্যবহৃত হয়। অ্যামোনিয়াম সালফেট, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, অ্যামোনিয়াম ফসফেট, ইউরিয়া প্রভৃতি মূল্যবান সারগুলি অ্যামোনিয়া থেকে তৈরি
  • খ) সলভে পদ্ধতিতে, সোডিয়াম কার্বনেট প্রস্তুতিতে এবং ওসওয়াল্ড পদ্ধতিতে নাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্তুতিতে nh3 ব্যবহার করা হয়।
  • গ) পরীক্ষাগারে বিকারক রূপে, ওষুধ প্রস্তুতিতে এবং স্মেলিং সল্ট প্রস্তুতিতে এমোনিয়া ব্যবহৃত হয়।
  • ঘ) বরফ কারখানায় বরফ প্রস্তুতিতে এবং কৃত্রিম রেয়ন, প্লাস্টিক, রবার ইত্যাদি প্রস্তুতিতে এমোনিয়া ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যামোনিয়ার ব্যবহার আরো বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে।

অক্সিজেন | অক্সিজেনের ধর্ম ও ব্যবহার

অ্যামোনিয়ার সনাক্তকরণ

  • ক) অ্যামোনিয়ার বিশেষ ধরনের ঝাঁঝালো গন্ধ দ্বারা গ্যাসটিকের শনাক্ত করা যায়।
  • খ) লাল লিটমাসকে এমোনিয়া নীল করে দেয়।
  • গ) গারো হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সঙ্গে NH4Cl এর সাদা ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।
  • ঘ) নেসলার লবণ সামান্য অ্যামোনিয়ার সংস্পর্শে এলে তামাটে হয়ে যায়।

পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতি

  • অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি নীতি:
    অ্যামোনিয়াম লবণের সঙ্গে তীব্র ক্ষার ও ক্ষারক জাতীয় পদার্থ যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্যালসিয়াম অক্সাইড মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
    যেমন NH4Cl এর সঙ্গে এনেওয়েজ মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে NH3 উৎপন্ন হয়। NH4Cl + NaOH = NaCl + NH3 + H2O
    প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য:
    ১. অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড
    ২. এবং কলিচুন।
    পরীক্ষাগারে সাধারণত অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ও কলি চুনের মিশ্রন উত্তপ্ত করে এমোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করা হয়।
    2NH4Cl + Ca(OH)2 = 2NH3 + CaCl2 + 2H2O
    পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরির পদ্ধতি:
    ১. এক ভাগ ওজনের অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড এর সঙ্গে তিনভাগ ওজনের কলিচুন ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটি কে একটি গোল ফ্লাক্সি নেওয়া হলো
  • ২. ফ্লাক্সের মুখে একটি কর্কের মধ্যে দিয়ে একটি নির্গম নল লাগানো হলো।নির্গম নল এর অন্য প্রান্তটি একটি চুনস্তম্ভের সঙ্গে যোগ করা হলো।
    ৩. চুনস্তম্ভের উপর থেকে নির্গত নির্গম নল এর উপর একটি শুষ্ক গ্যাসজার উপুড় করে বসিয়ে গ্যাসজারটিকে ক্লাম্পের সাহায্যে একটি স্ট্যান্ড এর সঙ্গে আটকানো হল।
    ৪. গোলতল ফ্লাস্ককে ক্ল্যাম্পের সাহায্যে স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকে তারজালির ওপর বসানো হলো।
    ৫. এইবার ফ্লাক্সটিকে বার্নার দিয়ে উত্তপ্ত করলে এমোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়। এবং উৎপন্ন গ্যাস নির্গমনল দিয়ে বের হয়ে চুন স্তম্ভের মধ্যে প্রবেশ করে। চুনের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করার সময় অ্যামোনিয়ার মধ্যস্থ জলীয়বাষ্প চুন দ্বারা শোষিত হয়।

অ্যামোনিয়ার সংগ্রহ:

চুন স্তম্ভ থেকে নির্গত শুষ্ক এমোনিয়া বাতাসের নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাস জমা হয় কারণ NH3 গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here