আলোকরশ্মির কৌণিক চ্যুতি কাকে বলে
আলো যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে। আলো যখন তীর্যকভাবে লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন আলোকরশ্মির নিচের অংশটি বিভেদ তল থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যটি সংকুচিত হয়। ফলে আলোর গতিপথের পরিবর্তন ঘটে এবং আপাতন কোনে অঙ্কিত লম্ব থেকে দূরে সরে যায়। এইরকম অবস্থায় আপতিত রশ্মি কোনের চ্যুতি ঘটে। আবার যখন ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন আলোক রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে যায়। ফলে সেখানেও আপতিত রশ্মি গতিপথের পরিবর্তন হয়, এই গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ওই আলোক রশ্মি তার গতিপথ থেকে যত ডিগ্রী কোন পরিবর্তন করে, সেই কোনকে ওই আলোকরশ্মির কৌণিক চ্যুতি বলে। একে আলোকরশ্মির চ্যুতিও বলে। প্রতিফলনের ক্ষেত্রেও আলোকরশ্মি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দিক পরিবর্তন করে এবং তার ফলে অভিলম্বের সঙ্গে আপতিত রশ্মি কোনের দিক পরিবর্তন হয়। এই দিক পরিবর্তনকে আমরা আলোকরশ্মির চ্যুতি বলি।
প্রতিফলনে আলোকরশ্মির কৌণিক চ্যুতি
আলোক রশ্মি কোনো প্রতিফলকে প্রতিফলিত হলে ওই রশ্মির দিক বা অভিমুখের পরিবর্তন ঘটে। প্রতিফলনের পর আলোক রশ্মি আপতিত রশ্মির অভিমুখের সঙ্গে যে কোন উৎপন্ন করে তাকে ওই রশ্মির চ্যুতি কোণ বলে।
উদাহরণ দিয়ে বুঝি
ধরা যাক, PQ রশ্মি MM দর্পণের Q বিন্দুতে আপতিত হয়ে QR পথে দর্পণ থেকে প্রতিফলিত হলো। MM দর্পণের উপর Q বিন্দুতে QN লম্ব টানা হলো। এখানে ∠PQN =আপতন কোণ i।
∠RQN = প্রতিফলন কোণ r ।
অতএব, ∠PQN = ∠RQN = i
প্রতিফলক MM না থাকলে PQ আলোকরশ্মিটি PQS পথে চলে nandrolone decanoate buy in uk online যেত। প্রতিফলনের জন্য PQ রশ্মিটি ঘুরে QR পথে চলে গেছে। অর্থাৎ, PQ রশ্মিটির চ্যুতি ঘটেছে। এখানে RQS, PQ রশ্মিটির চ্যুতি কোণ প্রকাশ করে।
এখন, ∠RQS = 180°- ∠PQR
কিন্তু ∠PQR = ∠PQN + ∠RQN = i+i = 2i
অতএব, ∠RQS 180°- 2i
সমতল দর্পণে একটি আলোকরশ্মি আপতন কোণ কত হলে ওই রশ্মি কৌণিক চ্যুতি কোণ 90° হবে?
ধরা যাক, আলোক রশ্মির আপতন কোণ = i
অতএব প্রতিফলন কোণ = i. এখানে রশ্মির চ্যুতি কোণ = 90°।
এখন, রশ্মির চ্যুতিকোণ = 180° – 2i
অথবা, 90°=180°- 2i
বা, 2i = 90°
অতএব, i = 45°
অতএব আলোকরশ্মির আপতন কোণ = 45° হবে।
প্রতিসরণে আলোকরশ্মির কৌণিক চ্যুতি কোণের পরিমাপ
এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় আলোকরশ্মির গতিপথের কৌণিক চ্যুতি ঘটে। যেমন বায়ু মাধ্যম থেকে কাচ মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় AB রশ্মি প্রতিসরিত হয়ে BC গতিপথে চলে গিয়েছে। এখানে PQ তলের আপাতন বিন্দু B তে NBN1 অভিলম্ব। এখানে যদি কাঁচ মাধ্যমটি না থাকতো তবে, AB রশ্মিটির দিক পরিবর্তন না করে সরাসরি ABD পথে চলে যেত। সুতরাং প্রতিসরণের ফলে আপতিত রশ্মি AB র চ্যুতির পরিমাণ ∠DBC।
অর্থাৎ, এক্ষেত্রে চ্যুতি কোণ = ∠DBC = ∠N1BD – ∠CBN1
কিন্তু পরস্পর বিপ্রতীপ কোণ হওয়ার ফলে ∠N1BD = ∠ABN
অতএব, চ্যুতি কোণ = ∠DBC = ∠ABN – ∠CBN1 = i-r
সরল পেরিস্কোপ যন্ত্র
সরল পেরিস্কোপের নীতি
পরস্পর সমান্তরাল দুটি দর্পণের ওপর আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগিয়ে সরল পেরিস্কোপ তৈরি করা হয়।
সরল পেরিস্কোপের ব্যবহার
১. সরাসরি কোন বস্তুকে দেখার পথে বাধা থাকলে, সরল পেরিস্কোপ ব্যবহার করে ওই বস্তুটিকে দেখা যায়।
২. খেলার মাঠে প্রচণ্ড ভিড়ের বাইরে দাঁড়িয়ে দূর থেকে খেলা দেখতে সরল পেরিস্কোপ ব্যবহার করা হয়।
৩. যুদ্ধের সময় পরীখার ভেতর থেকে বিপক্ষ সৈন্যদের অবস্থান ও গতিবিধি লক্ষ্য করতে পেরিস্কোপ ব্যবহার করা হয়।
৪. জলের উপরে শত্রুপক্ষের অবস্থান নির্ণয় করতে এবং সমুদ্রের উপরের সব বস্তুকে লক্ষ্য করার জন্য সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজে উন্নত ধরনের পেরিস্কোপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সরল পেরিস্কোপের গঠন
সরল পেরিস্কোপ হলো কাঠ বা ধাতুর তৈরি একটি লম্বা নল বা বাক্স; যার উপরে ও নিচে পরস্পর বিপরীত দিকে দুটি মুখ খোলা থাকে। আলোর প্রতিফলন রোধ করতে লম্বা নলটির ভিতরের দিকে কালো রং করা থাকে। লম্বা নলের দুইদিকের খোলামুখ দুটির প্রতি প্রান্তে একটি করে মোট দুটি সমতল দর্পণ অক্ষের সঙ্গে 45° কোণ করে পরস্পরের সমান্তরালভাবে আটকানো থাকে। দর্পণ দুটি পরস্পরের মুখোমুখি ভাবে অবস্থান করে।
পেরিস্কোপের কার্যপ্রণালী
দূরের কোনো বস্তু থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ উপরের খোলা মুখ দিয়ে প্রথম দর্পণে আপতিত হয়ে প্রতিফলিত হলে ওই প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছ 45°কোনে দ্বিতীয় দর্পণে আপতিত হয়। পরে দ্বিতীয় দর্পণ থেকে পুনরায় প্রতিফলিত হয়ে সমন্তরাল রশ্মিগুলো নিচের খোলা মুখ দিয়ে দর্শকের চোখে পৌঁছায়। হলে দর্শক দ্বিতীয় দর্পণে দূরের বস্তুটির প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। বস্তু থেকে আগত রশ্মিগুলি প্রথম ও দ্বিতীয় দর্পণে পরপর প্রতিফলিত হওয়ায় বস্তুর প্রতিবিম্বের কোন পার্শ্বীয় পরিবর্তন হয় না।