আলো বা আলোক| আলোর উৎস, প্রকার ও বৈশিষ্ট্য|আলোকীয় মাধ্যম ও প্রকার

1
1155

আলো বা আলোক কি

সূচীপত্র দেখতে ক্লিক করুন show

শব্দ তাপ বিদ্যুৎ প্রভৃতি শক্তির মত আলো এক ধরনের শক্তি, যা আমাদের চোখে দর্শনের অনুভূতি জাগায়। আলোকশূন্য স্থানে কোন বস্তু থাকলে আমরা ঐ বস্তুকে দেখতে পাই না। আলোর অভাবকে অন্ধকার বলে। একটি বস্তুর নিজস্ব আলো থাকতে পারে বা অন্য কোন উৎস থেকে এসে বস্তুতে আলো বাধাপ্রাপ্ত হয় আমাদের চোখে এসে পড়ে তখন বস্তুটিকে আমরা দেখতে পাই। কাজেই আলোক একটি কারণ যার জন্য দর্শনের অনুভূতি জন্মায়। আলোকের সাজে আমরা বিভিন্ন বস্তুকে দেখতে পেলেও আলোক নিজে কিন্তু অদৃশ্য। একটি অন্ধকার ঘরে জানলার ছোট একটি ছিদ্র দিয়ে সূর্যরশ্মি ঘরের মধ্যে পড়লে আলোক পথে ভাসমান ধূলিকণাগুলো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু ওই ঘরে যদি ধূলিকণা মুক্ত হয় তবে আমরা কিছুই দেখতে পাই না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আলোক বিভিন্ন বস্তুকে দৃশ্যমান করে তোলে ঠিকই কিন্তু নিজে অদৃশ্য থেকে যায়।

আলোক একরকম শক্তি

আলোক একরকম শক্তি; এই শক্তি, শক্তির নিত্যতা সূত্র মেনে চলে এবং এর সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। আলোকে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় এবং অন্য শক্তি থেকে আলো পাওয়া যায় । যেমন —

১. একটি লোহার টুকরো দিয়ে একটি পাথরকে আঘাত করলে আলোকেরই স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়। কাচি, ছুরি প্রভৃতিকে শান দেওয়ার চাকায় চেপে ধরলে অজস্র আলোক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এখানে যান্ত্রিক শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
২. কাঠ কয়লা বিভিন্ন রকমের তেল প্রভৃতিকে বায়ুতে পোড়ালে ওইসব পদার্থে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি তাপ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৩. বৈদ্যুতিক বাতিতে সরু তারের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহিত হলে বাতি জ্বলে ওঠে এবং আলো বিকিরণ করে। ফলে তড়িৎ শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

৪. আবার দেখা যায় খুব পাতলা প্লাটিনামের পাতের চাকার উপর তীব্র আলো ফেললে চাকাটি ঘুরতে থাকে এখানে আলোক শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৫. ফটোইলেকট্রিক কোষে আলো পড়লে বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই পরিবর্তনে আলোক শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আলোক একরকম শক্তি

আলোর উৎস বা প্রভব (source of light)

যে বস্তু আলো বিকিরণ করে তাকে আলোক প্রভব বা আলোক উৎস বলে। সূর্য ও নক্ষত্রগুলো আলোর স্বাভাবিক উৎস। মোমবাতি, কাঠ, কয়লা বৈদ্যুতিক বাতি প্রভৃতি হল আলোর কৃত্রিম উৎস।

আলোর উৎসের প্রকারভেদ

আলোর উৎস দু’রকম। যথা
১. স্বপ্রভ বা স্বয়ংপ্রভ উৎস এবং
২. অপ্রভ বা নিষ্প্রভ উৎস।

১. স্বপ্রভ বা স্বয়ংপ্রভ উৎস

যেসব বস্তু নিজেই আলো বিকিরণ করে তাদের স্বপ্রভ বস্তু বলে।
পৃথিবীতে আলোর প্রধান উৎস সূর্য। এছাড়াও নক্ষত্র , জ্বলন্ত বাতি প্রভৃতি স্বপ্রভ বস্তু।

২. নিষ্প্রভ বস্তু

যেসব বস্তুর নিজের আলো নেই এবং তারা স্বপ্রভ বস্তুর আলোয় দৃশ্যমান হয় তাদের নিষ্প্রভ বস্তু বলে অপ্রভ বস্তু বলে।
পৃথিবীতে অধিকাংশ বস্তুই নিষ্প্রভ বস্তু। যেমন কাঠ, মাটি, গাছপালা আমাদের চারিপাশে দৃশ্যমান বিভিন্ন অন্যান্য বস্তু নিস্প্রভ বস্তু। স্বপ্রভ বস্তুর আলো যখনই নিষ্প্রভ বস্তুগুলো থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে, তখনই আমরা ওই নিষ্প্রভ বস্তুকে দেখতে পাই।

• নিষ্প্রভ বা স্বপ্রভ হাওয়া ঐ বস্তুর অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
যেমন সাধারণ উষ্ণতায় একখন্ড লোহা নিষ্প্রভ বস্তু। কিন্তু তাপ দিয়ে লোহাখন্ডটিকে শ্বেততপ্ত করলে অডিতেদ আলো বিকিরণকারী স্বপ্রহ বস্তু তে পরিণত হয়।

• চাঁদকে নিষ্প্রভ বস্তু বলা হয় কেন
চাঁদ একটি নিষ্প্রভ বস্তু। কারণ চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সূর্যের আলো চাঁদের উপর পড়লে চাঁদ সেই আলো চারিদিকে বিকিরণ করে। গ্রহ উপগ্রহ প্রভৃতি জ্যোতিষ্ক যাদের নিজের আলো নেই, তারা প্রত্যেকেই নিষ্প্রভ বস্তু।

আলোর বিন্দু উৎস বা বিন্দু প্রভব

আলোর উৎসকে যদি জ্যামিতিক বিন্দু হিসাবে ধরা হয়, তবে তাকে আলোর বিন্দু উৎস বলে। স্বপ্রভ বস্তুর প্রত্যেক বিন্দু থেকেই চারিদিকে আলোয় বিকীর্ণ হয়। কিন্তু আলোচনার সুবিধার জন্য আলোক বিজ্ঞানের কোন কোন ক্ষেত্রে আলোর উৎসকে একটি জ্যামিতিক বিন্দু হিসেবে কল্পনা করা হয়ে থাকে, যাকে আলোর বিন্দু উৎস বা বিন্দু প্রভব বলে। বাস্তব ক্ষেত্রে বিন্দু উৎসের কোন অস্তিত্ব নেই। বহু দূরে থাকার জন্য সূর্য ও নক্ষত্রগুলোকে আলোর বিন্দু উৎস হিসেবে ধরা হয়।

আলোর বিস্তৃত উৎস বা বিস্তৃত প্রভব

যেকোনো আকারের আলোক উৎস অসংখ্য বিন্দুর সমন্বয়ে গঠিত বলে ধরা হয়। নির্দিষ্ট আকারযুক্ত আলোক উৎসকে বিস্তৃত উৎস বলে। দূরত্ব খুব বেশি বলে বিশাল নক্ষত্রগুলো বিন্দুর মত, কিন্তু ছোট মোমবাতির শিখাটি হলো বিস্তৃত উৎস।
তাপ ছাড়া অন্যান্য কারণেও বস্তু থেকে আলো বিকিরণ হতে পারে। যেমন
১. নিয়ন ও ফ্লুরোসেন্ট বাতির নলের ভিতরের গ্যাসের মধ্যে তড়িৎ চালনা করলে, ওই গ্যাস ঘরের উষ্ণতায় স্বপ্রভ হয়ে ওঠে।
২. জোনাকি পোকার দেহের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে আলোর সৃষ্টি হয়। এটিও একটি স্বপ্রভ আলোর উৎস।

আলোর মাধ্যম বা আলোকীয় মাধ্যম (optical medium)

বহু দূরে একটি বাতি জ্বলে সেই আলো আমাদের চোখে প্রবেশ করে বলেই বাতিটিকে আমরা দেখতে পাই। এখানে বাতাস আলোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। আমার বহু দূরে অবস্থিত সূর্য বা নক্ষত্রের আলো মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে এসে আমাদের চোখে পড়ে। তাই আমরা তাদের দেখতে পাই। এখানে আলোর মাধ্যম হলো মহাশূন্য।

আলোর মাধ্যমের সংজ্ঞা

মে স্বচ্ছ মাধ্যমের ভেতর দিয়ে আলোক চলাচল করতে পারে তাকে আলোকীয় মাধ্যম বা আলোর মাধ্যম বলে।
আলোর বিস্তারের জন্য বাস্তব মাধ্যমের প্রয়োজন নাও হতে পারে। ভূপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের উপরে যে মহাশূন্য রয়েছে তার ভিতর দিয়ে সূর্য ও নক্ষত্রের আলো অবাধ গতিতে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়।

আলোর সমসত্ব মাধ্যম

যে স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোর সবদিকে সমানভাবে চলতে পারে, সেই মাধ্যমকে সমসত্ব মাধ্যম বলে। যেমন কাচ বাতাস জল ইত্যাদি হল সমসত্ব মাধ্যম।

আলোর অসমসত্ত্ব মাধ্যম

কোন মাধ্যমের বিভিন্ন অংশে যদি আলোর গতি বিভিন্ন হয় বা যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোর সব দিকে সমান বেগে চলতে পারে না, তাকে অসমসত্ত্ব মাধ্যম বলে।
একটি অসমসত্ব মাধ্যমকে একাধিক সমসত্ত্ব মাধ্যমে ভাগ করা যেতে পারে। বায়ুমণ্ডল সামগ্রিকভাবে একটি অসমসত্ত্ব মাধ্যম। কারণ বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরের ঘনত্ব উপরের স্তরের বায়ুর ঘনত্ব তুলনায় বেশি।

আলোক মাধ্যমের প্রকারভেদ

আলোর মাধ্যমকে আমরা তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি
১. স্বচ্ছ মাধ্যম
২. ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম এবং
৩. অস্বচ্ছ মাধ্যম।

১. আলোর স্বচ্ছ মাধ্যম

যেসব মাধ্যমের ভেতর দিয়ে আলো সহজে চলাচল করতে পারে তাদের স্বচ্ছ মাধ্যম বলে।
যেমন শূন্যস্থান কাঁচ বিশুদ্ধ জল বায়ু প্রভৃতি আলোকের স্বচ্ছ মাধ্যম। এইসব মাধ্যমে আলো সামান্য পরিমাণে শোষিত হয়।

২. আলোর ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম

যেসব মাধ্যমের ভিতর দিয়ে আলো আংশিকভাবে যেতে পারে তাদের ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম বলে।
তৈলাক্ত কাগজ, ঘষা কাচ, রঙিন কাঁচ প্রভৃতি এই ধরনের মাধ্যম।

৩. আলোর অস্বচ্ছ মাধ্যম

যে মাধ্যমের ভিতর দিয়ে আলো একেবারেই যেতে পারে না তাকে অসচ্ছ মাধ্যম বলে।
যেমন ধাতু কাঠ পাথর কয়লা মাটি প্রভৃতি।

আলোকের ঋজুরেখ গতি (rectilinear propagation of light)

সমসত্ব ও স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি সরলরেখায় চলে, একে ঋজুরেখ গতি বলে।
আলোকের সামনে কোন অস্বচ্ছ বস্তু থাকলে ওকে ভেদ করে আলোকরশ্মি যেতে পারে না। বস্তুটির পেছনে কোন পর্দা রাখলে ওই পর্দার উপর বস্তুটির ছায়া পড়বে। আলোক ঋজু পথে চলে বলে এমন হয়।
নিচের পরীক্ষাটি দ্বারা আলোর সরল রেখায় গমনের প্রমাণ সহজেই করা যায়।

কার্ডবোর্ড ও মোমবাতির পরীক্ষা

তিনটি কার্ডবোর্ড নিয়ে প্রত্যেকটির মাঝখানে তিনটে ছিদ্র করা হলো। কার্ডবোর্ড তিনটিকে তিনটি স্ট্যান্ডের উপরে এমন ভাবে রাখা হল যেন ছিদ্র তিনটি এক সরলরেখায় থাকে। ওদের এক পাশে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হলো। এখন অন্যপাশে চোখ রেখে দেখলে, কার্ডবোর্ডের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে মোমবাতির সেখানে দেখা যাবে। কিন্তু যে কোনো একটি বোর্ডকে সামান্য একটু সরালে শিখাটিকে আর দেখা যাবে না। আলোক সরলরেখায় চলে বলে এমন হয়।

আলোক রশ্মি ও রশ্মিগুচ্ছ

সমসত্ব স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলো সরল রেখায় চলে। এই সত্যই হলো আলোক বিজ্ঞানের ভিত্তি। আলোক মাধ্যমে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যেতে যে সরলরেখা ধরে আলোক চলে, সেই পথকে আলোকরশ্মি বলে। এইজন্য আলোকরশ্মিকে তীর চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়। তির চিহ্নটি আলোকরশ্মির অভিমুখ বা দিক প্রকাশ করে।

আলোক রশ্মিগুচ্ছ

কয়েকটি আলোকরশ্মি একসঙ্গে থেকে যে গুচ্ছ গঠন করে তাকে আলোকরশ্মি গুচ্ছ বলে। একটি আলোকরশ্মি গুচ্ছকে অসংখ্য রশ্মির সমষ্টি হিসেবে কল্পনা করা যায়।

আলোর রশ্মি গুচ্ছের প্রকারভেদ

আলোর রশ্মি গুচ্ছের তিন রকমের হতে পারে। যথা
১. সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ
২. অভিসারী রশ্মি গুচ্ছ এবং
৩. অপসারী রশ্মি গুচ্ছ

১. সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ

আলোর রশ্মিগুচ্ছের প্রত্যেকটি আলোক রশ্মি পরস্পর সমান্তরাল হলে, সেই রশ্মি গুচ্ছকে সমান্তরাল রশ্মির উৎস বলে।
সূর্য ও তারকামন্ডলী থেকে পৃথিবী অনেক দূরে আছে। বহু দূরে অবস্থিত আলোক উৎস থেকে আগত রশ্মিগুলিকে সমান্তরাল রশ্মির উৎস বলে ধরা হয়।

২. অভিসারী রশ্মি গুচ্ছ

যদি কোন আলোক রশ্মি গুচ্ছের রশ্মি গুলি আলোর গতির দিকে কোন বিন্দুতে মিলিত হয় বা মিলিত হতে চায়, তবে ওই রশ্মি গুচ্ছকে অভিসারী রশ্মি গুচ্ছ বলে। উত্তল লেন্সের মাধ্যম চারিপাশের মাধ্যমের চেয়ে ঘনতর হলে, একগুচ্ছ সমান্তরাল রশ্মি ওই লেন্স থেকে প্রতিসৃত হওয়ার পর অভিসারী রশ্মি গুচ্ছে পরিণত হয়।

৩. অপসারী রশ্মি গুচ্ছ

যদি কোন আলোকরশ্মি গুচ্ছ এমন হয় যে আলোকের গতির দিকে ক্রমে পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকে, তবে ওই রশ্মি গুচ্ছকে অপসারী রশ্মি গুচ্ছের বলে। যেকোনো আলোক উৎস থেকে বিকীর্ণ আলোর রশ্মি গুলো অপসারী রশ্মিগুচ্ছ হয়।

আলোর ধর্ম, প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য

আলোর প্রধান ধর্ম, প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য গুলি নিচে পয়েন্ট আকারে আলোচনা করা হলো

১. আলো এক প্রকার শক্তি, শক্তির নিত্যতা সূত্র মেনে চলে এবং আমাদের চোখে দর্শনের অনুভূতি জাগায়।
২. বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলো নির্দিষ্ট বেগে চলে। যেমন শূন্যস্থানে আলোর গতিবেগ 1 লক্ষ 86 হাজার মাইল।
৩. আলো সমসত্ত্ব মাধ্যমে সরল পথে চলে।
৪. আলো এক ধরনের তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
৫. কোথাও কোথাও আলো তরঙ্গের নাই ব্যবহার করে আবার কোথাও কোথাও আলো কণার ন্যায় আচরণ করে।
৬. আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, অপবর্তন ,বিচ্ছুরণ, ব্যতিচার এবং সমবর্তন ঘটে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here