লাইসোজোম এবং লাইসোজোমের কাজ ও গঠন সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা—-
লাইসোজোম
লাইসোজোম এর সংজ্ঞা লাইসোজোম কি
একক পর্দাবৃত পাচক উৎসেচক যুক্ত অতি সূক্ষ্ম থলিবৎ কোষীয় উপাংশ (অঙ্গাণু) যা কোষীয় বস্তুর পাচনে এবং বীজাণু ধ্বংসে অংশগ্রহণ করে তাদের লাইসোজোম বলে।
লাইসোজোমের আবিষ্কার ও নামকরণ
দি ডুভে প্রথম প্রাণী কোষে এদের পর্যবেক্ষণ করেন এবং নামকরণ করেন। নভিকফ প্রথম এদের ইলেকট্রন আণুবীক্ষণিক গঠন বর্ণনা করেন। মাটিল প্রথম নিউরোস্পোরা ছত্রাক কোশে এদের সন্ধান পান।
নিজ কোষীয় বস্তুর ধ্বংস করে বলে লাইসোজোমকে আত্মঘাতী থলি বলা হয়।
লাইসোজোম এর উৎপত্তি
লাইসোজোম এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা বা গলগী বডি থেকে তৈরি হয় বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন।
লাইসোজোম এর বিস্তৃতি
সাধারণত উদ্ভিদ কোষে লাইসোজোম দেখা যায় না। তবে পেঁয়াজের বীজ কোষে ভুট্টা ও তামাকের চারা কোষের লাইসোজোম থাকে।তবে প্রাণীদের যকৃৎ কোষ, বৃক্ক কোষ, স্নায়ু কোষ, আন্ত্রিক আবরণী কোষ, ম্যাক্রোফাজ কোশ, অস্থি, জরায়ু, মূত্রথলি, মনোসাইট, লিম্ফোসাইটে, লাইসোজোম বেশি থাকে। বিভিন্ন কোষের লাইসোজোম এর সংখ্যা বিভিন্ন হয় এবং আয়তন ও বিভিন্ন হয়। ক্ষয় শীল কোষে এদের বেশি দেখা যায়।
লাইসোজোম এর আকৃতি
এরা সাধারণত গোলাকার হয় এবং দেশে 0.2 um থেকে 0.8 um হয়
লাইসোজোমের সংখ্যা
লাইসোজোম বিভিন্ন কোষে বিভিন্ন সংখ্যায় বর্তমান থাকে।
লাইসোজোমের গঠন
লাইসোজোেমের গঠন দেখতে সাধারণত একক আবরণী পরিবেষ্টিত গোলাকৃতি গহব্বরের মত। এদের আবরণী অন্যান্য একক আবরণীর মতোই ত্রিস্তর যুক্ত এবং প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে তৈরি হয়। লাইসোজোমের ভিতরে নানা আকৃতির প্রোটিন বটিকা (55-80Å) এবং প্রায় পঞ্চাশ রকমের আর্দ্র বিশ্লেষক উৎসেচক থাকে।
লাইসোজোম এর প্রকারভেদ
লাইসোজোম দুই প্রকার যথা প্রাথমিক লাইসোজোম এবং গৌণ লাইসোজোম।
প্রাথমিক লাইসোজোম
যে লাইসোজোম সৃষ্টির পরে আগ্রাসনে অংশ নেয়নি তাদের প্রাথমিক লাইসোজোম বলে। তরুণ লাইসোজোমকে প্রাথমিক লাইসোজোম বলে। এরা কোন প্রকার পরিপাক কাজে অংশগ্রহণ করে না।
ডাইসন এর মতে প্রাথমিক লাইসোজোম, গলগী বডি এবং এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা একসঙ্গে একটি ক্ষরণ তন্ত্র তৈরি করে একে GERL(GOLGI ENDOPLASMIC RETICULUM LYSOSOME) তন্ত্র বলে।
গৌণ লাইসোজোম
যে লাইসোজোম বস্তুর আগ্রাসনের মাধ্যমে তৈরি হয় তাকে গৌণ লাইসোজোম বলে।অর্থাৎ যেসব লাইসোজোম পরিপাকে অংশগ্রহণ করেছে তাদের গৌণ লাইসোজোম বলে।
হেটেরোফাজি ও অটোফাজি
হেটারোফ্যাগোজোমের সংজ্ঞা
এন্ডোসাইটোসিস পদ্ধতিতে বহিঃকোষীয় বস্তু দিয়ে তৈরি ফ্যাগোজোমের সঙ্গে একাধিক লাইসোজোম মিলিত হয়ে যে পর্দাবৃত গহবর গঠিত হয় তাকে হেটারোফ্যাগোজোম বলে।
হেটেরোফাজির সংজ্ঞা
হেটারোফ্যাগোজোমে লাইসোজোমীয় উৎসেচক দিয়ে বহিঃকোষীয় বস্তু পরিপাকের পদ্ধতিকে হেটেরফাজি বলে।
অটোফ্যাগোজোম
জীবিত কোষের বিভিন্ন সাইটোপ্লাজমীয় উপাংশের (মাইটোকনড্রিয়া এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা) ভগ্নাংশের সঙ্গে প্রাথমিক লাইসোজোম মিলিত হয়ে যে লাইসোজোম তৈরি হয় তাকে অটোফ্যাগোজোম বা সাইটোলাইসোজোম বলে।
অটোফাজির সংজ্ঞা
লাইসোজোমীয় উৎসেচক যে পদ্ধতিতে অটোফ্যাগোজমীয় উপাংশশগুলিকে ধ্বংস করে তাকে অটোফাজি বলে।
টেলোলাইসোজোম এর সংজ্ঞা
গৌণ লাইসোজোম শেষে অবশিষ্ট অংশ কেটে লাইসোজোম বলে।
লাইসোজোমের কাজ
লাইসোজোমের কাজ নিম্নে বর্ণিত হলো
- লাইসোজোম পরিপাকে অংশগ্রহণ করে।
- পরিস্ফুটন কালে কোষীয় উপাংশ ধ্বংস করা।
- কোষের বিভিন্ন অংশের ধ্বংস; একে অটোলাইসিস বলে।
- মৃত কোষ বা পুরোনো লোহিত কণিকা কোষের ধ্বংস করা।
- সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করা।
- তঞ্চিত রক্ত ধ্বংস করা।
- ক্যারোটিন তৈরি করা।
- ভ্রূণ বৃদ্ধির সময় খাদ্য সরবরাহ করা।
অটোফাজি ও অটোলাইসিস এর পার্থক্য
বৈশিষ্ঠ্য | অটোফাজি | অটোলাইসিস |
বস্তুর প্রকৃতি | খাদ্য বা কোষীয় অঙ্গাণু । | কোষের ধ্বংসাবশেষ বা সম্পূর্ণ কোশ। |
উৎসেচক | উৎসেচক নিঃসৃত হয় না। | উৎসেচক নিঃসৃত হয়। |
পাচন প্রকৃতি | পাচন গহব্বরে ঘটে। | পাচন বাইরে ঘটে। |
সময় | ক্ষুধার্ত অবস্থায় বা সংক্রমণ কালে ঘটে। | বার্ধক্যে বা মৃত্যুর পরে ঘটে। |
সুবিধা | দেহের ক্ষতি হয়। | দেহের উপকার হয়। |
লাইসোজোম কে আত্মঘাতী থলি বলে কেন
“লাইসো” কথার অর্থ হজমকারী; “সোমা” শব্দের অর্থ পদার্থ। হাইড্রোলাইটিক এনজাইমের ধারক বাহক হিসাবে কোষের সাইটোপ্লাজম লাইসোজোমের অবস্থান। কোষের মধ্যে খাদ্য ঘাটতি পড়লে লাইসোজোমের পর্দা ফেটে যায় এবং এর মধ্যে থেকে ইঞ্জাইম বের হতে শুরু করে। জার করণে অন্য কোষীয় অঙ্গানু গুলি ধ্বংস হতে শুরু করে। একে অটোফ্যাগি বলে।এইভাবে চলতে চলতে একটা সময় পুরো কোশটি নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণেই লাইসোজোমকে আত্মঘাতী কোষ অঙ্গাণু বা থলি বলে।
ইমেজ সোর্স ঃ researchgate free3d istockphoto