গলনাঙ্ক
গলন কি বা কাকে বলে
কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরকে গলন বলে । পদার্থ যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় গলে তরল পদার্থে পরিণত হয়, সেই উষ্ণতাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে।
গলনাঙ্কের সংজ্ঞা
প্রমাণ চাপে (76 সেমি. পারদ স্তম্বের চাপ) কোন কঠিন পদার্থ যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় গলে তরল পদার্থে পরিণত হয়, সেই উষ্ণতাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে।
কঠিন পদার্থের সবটুকু তরলে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত ঐ উষ্ণতা স্থির থাকে। বিশুদ্ধ কেলাসিত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক আছে। বরফের গলনাঙ্ক 0°C বলতে এই বোঝায় যে প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ বরফে তাপ প্রয়োগ করলে 0°C উষ্ণতায় বরফ কঠিন অবস্থা থেকে তরলে পরিণত হবে। বিভিন্ন পদার্থের গলনাঙ্ক বিভিন্ন। যেমন ন্যাপথলিনের গলনাঙ্ক 80°C,লোহার 1539°C।
কোন বস্তুর গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্কের মধ্যে সম্পর্ক:
১) যেসব বস্তু কঠিন অবস্থায় কেলাসাকার- একই চাপে ওদের গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক একই হয়। যেমন জল কঠিন অবস্থায় (বরফ) কেলাসিত। প্রমান চাপে 0°C উষ্ণতায় বরফ গলে তরল অবস্থায় আসে। আবার প্রমাণ চাপে 0°C উষ্ণতায় জল তরল অবস্থা থেকে কঠিন বরফে পরিণত হয়।
২) কতকগুলি অনিয়তাকার পদার্থ, যেমন- চর্বি, পিচ, কাছ,মোম প্রভৃতি কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় গলে না। এরা একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় না গলে উষ্ণতার দুটি সীমারেখার মধ্যে গলে তরলে পরিণত হয়। এইসব পদার্থের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তরল অবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে কঠিনে পরিণত হতে যে সময় লাগে সেই সময়, পদার্থটির কঠিন অবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে তরলে পরিণত হতে যে সময় লাগে সেই সময়ের সীমারেখার সমান হয় না। সুতরাং এইসব পদার্থের গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক এক নয়।
অ-কেলাসিত পদার্থের কোন নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক নেই। মোম, কাচ, মাখন, পিচ, চর্বি প্রভৃতি পদার্থ গুলি অনিয়তাকার। এদের কোন নির্দিষ্ট গলনাংক বা হিমাঙ্ক নেই। তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থ গুলি প্রথমে একটি সান্দ্র অবস্থায় আসে। এই অবস্থা টি হল পদার্থের না- কঠিন না- তরল অবস্থা। পদার্থ গুলির এই আচরণের জন্য ওদের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ককে নির্দিষ্ট উষ্ণতা দ্বারা চিহ্নিত করা যায় না। যেমন, মাখন 28 ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে 37 ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার মধ্যে এবং 20 ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে 23 ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার মধ্যে জমে কঠিনে পরিণত হয়।
৩) ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO), ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড(MgO),নিকেল অক্সাইড(NiO) প্রভৃতি কতকগুলি অক্সাইড কোন উষ্ণতাতেই গলে না।
৪) অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, আয়োডিন, কর্পূর প্রভৃতি পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়।
গলনাঙ্ক নির্ণয়:
একটি টেস্ট-টিউবে কিছু পরিমাণ ন্যাপথালিন নিয়ে টেস্ট-টিউবের মুখটি কর্ক দিয়ে বন্ধ করা হল। কর্কের মধ্য দিয়ে একটি থার্মোমিটার ন্যাপথলিনের মধ্যে প্রবেশ করানো হল। থার্মোমিটার সহ টেস্ট-টিউবটি একটি জলপূর্ণ বিকারে বার্নার দিয়ে বীকারটিকে উত্তপ্ত করা হল আর সঙ্গে সঙ্গে বিকারের জলকে আলোড়ক দিয়ে ক্রমাগত নাড়া হল। কিছুক্ষণ পরে সমস্ত ন্যাপথ্যালিন গলে যাবে। এইবার বার্নারটি সরিয়ে তরলটিকে ঠান্ডা করা হল এবং প্রতি আধ মিনিট অন্তর ওর উষ্ণতা লক্ষ্য করা হল। দেখা যাবে, উষ্ণতা কমতে কমতে একসময় তরল ন্যাপথ্যালিন কঠিন অবস্থায় আসবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত তরল ন্যাপথালিন কঠিনে পরিণত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত উষ্ণতার পরিবর্তন হবে না। তরল থেকে কঠিন হওয়ার সময়, উষ্ণতা বেশ কিছুক্ষণ স্থির থাকবে। সম্পূর্ণ তরলটি কঠিনে পরিণত হবার পর উষ্ণতা আবার কমতে থাকবে।
গলন ও কঠিনীভবনে আয়তনের পরিবর্তন:
কোন তরল পদার্থ কঠিনে পরিণত হলে ওর আয়তন কিছু কমে যায়, আবার কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়- এটাই সাধারণ নিয়ম, কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। বরফ, বিসমাথ, ঢালাই লোহা, অ্যান্টিমনি, পিতল ইত্যাদি পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলে আয়তন কমে যায় এবং তরল থেকে কঠিন হয়ে আয়তন বেড়ে যায়। 0°C উষ্ণতায় 100°c.c জল যখন 0°C উষ্ণতায় জমে বরফ হয় এখন ওর আয়তন বেড়ে 109c.c হয়ে যায়।
জল বরফে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়- এই ঘটনার অনেক সুবিধা এবং অসুবিধা আছে।
সুবিধা: শীতের দেশে প্রচণ্ড ঠান্ডায় নদী বা সমুদ্রের জল জমে বরফে পরিণত হয়। জলের চেয়ে বরফের আয়তন বেড়ে যাওয়ার ফলে ওর ঘনত্ব কমে যায় ফলে বরফ জলের উপর ভেসে ওঠে নিচে আর নামে না।
এদিকে নিচের অংশে জলের উষ্ণতা কমতে কমতে 4 ডিগ্রি সেলসিয়াসে এলে ঐ জলের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়, ফলে ওই জল আর উপরে উঠে বরফে পরিণত হতে পারে না। এর ফলে বরফাবৃত নদী বা সমুদ্রের নিচের অংশের জল তরল অবস্থায় থাকে। তাই শীতের দেশে বরফাবৃত সমুদ্র বা নদীর মধ্যে জলচর প্রাণীরা বেঁচে থাকে।
অসুবিধা: এই ঘটনার জন্য শীতের দেশে অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য জলের পাইপের জল জমে বরফে পরিণত হয়। জল, বরফে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়। এর ফলে পাইপে প্রচণ্ড চাপ পড়ে এবং পাইপ ফেটে যায়। শীতকালে মোটরগাড়ির রেডিয়েটারের জল জমে বরফ হয়ে যায়। বরফের আয়তন বেড়ে যাওয়ার ফলে রেডিয়েটার ফেটে যায়।
জল ছাড়া অন্যান্য পদার্থ যেমন- লোহা বা পিতল তরল থেকে কঠিনে পরিণত হওয়ার সময় ওদের আয়তন বাড়ে। এর ফলে ঐগুলি ঢালাই করার কাজে অনেক সুবিধা হয় গলিত লোহা বা পিতল দিয়ে ঢালাই করার সময় ছাঁচের মধ্যে গলিত ধাতুগুলিকে ঢেলে দেওয়া হয়। গলিত লোহা বা পিতল যখন জমে কঠিন হয় তখন আয়তনে বেড়ে ছাঁচটিকে সম্পূর্ণভাবে ভর্তি করে ফেলে, ফলে ঢালাইয়ে ধারগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়।
গলনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাব:
কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাব আছে । চাপের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গলনাঙ্কেরও পরিবর্তন হয়।
১) যেসব পদার্থ কঠিন থেকে তরল হওয়ার সময় আয়তনে বাড়ে, যেমন- তামা, সোনা, রুপা প্রভৃতি, সেইসব পদার্থের ক্ষেত্রে চাপ বাড়ালে গলনাঙ্কও বেড়ে যায়,অর্থাৎ পদার্থগুলি আগের চেয়ে বেশি উষ্ণতায় গলে। এর সহজ কারণ হল এই যে, চাপ বাড়ালে পদার্থগুলির আয়তন বৃদ্ধিতে বাধা পায়, ফলে গলনাঙ্ক বাড়ে।
২) যেসব পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হওয়ার সময় আয়তনে কমে যায়, যেমন-বরফ, বিষমাথ, ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি, সেইসব পদার্থের ক্ষেত্রে চাপ বাড়ালে গলনাঙ্ক কমে যায়,অর্থাৎ পদার্থগুলি আগের চেয়ে কম উষ্ণতায় গলে। এর সহজ কারণ হলো এই যে, চাপ বাড়ালে পদার্থগুলির আয়তন কমে, যা ওদের গলনে সাহায্য করে, তাই ওদের গলনাঙ্ক কমে যায়। দেখা গেছে, এক বায়ুমন্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে বরফের গলনাঙ্ক 0.0073 ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যায়।
পরীক্ষা: দুই টুকরা সমতল পৃষ্ঠ বরফ নিয়ে হাত দিয়ে সজোরে চেপে ছেড়ে দিলে দেখা যাবে টুকরা দুটি একসঙ্গে জুড়ে গেছে।
চাপ প্রয়োগের ফলে সমতল পৃষ্ঠ দুটিতে বরফের গলনাঙ্ক কমে যায়, ফলে ঐ জায়গায় বরফ গলে জল হয়ে যায়। চাপ উঠিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঐ পৃষ্ঠ দুটির গলনাঙ্ক আবার বেড়ে 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, ফলে ঐ গলিত জল আবার বরফে পরিণত হয়ে পৃষ্ঠ দুটিকে জোড়া লাগিয়ে দেয়।
পুনঃশিলীভবন:
চাপ প্রয়োগের ফলে বরফের গলে যাওয়া এবং চাপ উঠিয়ে নিলে পর আবার ওর কঠিন অবস্থায় ফিরে আসার ঘটনাকে পুনঃশিলীভবন বলে।
বটমলির পরীক্ষা: একটি বরফের টুকরোকে দুটি স্ট্যান্ডের সাহায্যে ঝুলানো অবস্থায় রাখা হল। বরফ টুকরাটি মাঝ বরাবর একটি সরু তামার তার পরানো হল। বরফের নিচের দিকে তামার তার টির শেষ দুই প্রান্ত থেকে একটি ভার ঝুলিয়ে দেওয়া হল।কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে ভারের চাপে তারটি বরফ টুকরাটিকে কেটে নিচে নামতে থাকবে। শেষে দেখা যাবে বরফ কেটে তারটি নিচে পড়ে গেল, অথচ বরফ টুকরাটি দু’ভাগে বিভক্ত না হয়ে অখন্ড রইল।
ব্যাখ্যা: সরু তামার তারটি বরফের যে অংশে থাকে, সেই অংশে প্রচণ্ড চাপ দেয়, ফলে তারের নিচে বরফের গলনাঙ্ক কমে যায় এবং ঐ জায়গায় বরফ গলে জল হয়ে যায়।বরফের গলনের জন্য যে লীন তাপের দরকার সেই তাপ তামার তার এবং বায়ু সরবরাহ করে। তাই চারপাশের বায়ুর উষ্ণতা 0 ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকলে কিন্তু এই ঘটনা ঘটবে না। ভারের জন্য তারটি নিচে চলে আসে এবং ঐ গলিত জল তারের উপরে উঠে আসে এবং চাপমুক্ত হয় তখন ওর গলনাঙ্ক আবার 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, ফলে ওই জল জমে আবার বরফ হয়ে যায়।
চাপমুক্ত হয়ে এই জল আবার বরফে পরিণত হওয়ার সময় লীনতাপ ত্যাগ করে। এই লীন তাপ পরিবাহী তারটির মাধ্যমে নিচের বরফে চলে আসে এবং তারটির নিচে থাকা বরফের গলনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ সরবরাহ করে নিচের বরফকে গলায়। সুতরাং ব্যবহৃত তারটি তাপের সুপরিবাহী হওয়া দরকার।
তামার তারের বদলে পরীক্ষাটি সুতা দিয়ে করলে, যেহেতু সুতা তাপের কুপরিবাহী তাই উপরের অংশের জল দ্বারা ত্যক্ত লীন তাপকে নিচের বরফে পরিবাহিত করতে পারবে না, সুতরাং সুতার নিচের বরফ, গলনের জন্য লীন তাপ পাবে না, ফলে সুতার নিচের বরফ গলবে না, ফলে সুতাটি বরফ কাটতে পারবে না।
এই পরীক্ষাটির সাফল্যের জন্য নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
১)তারটিকে তাপের সুপরিবাহী হতে হবে। সুতা, নাইলন সুতা খুব সরু হলেও যেহেতু ওরা তাপের সুপরিবাহী নয়, তাই ওদের ব্যবহার করে এই পরীক্ষা করা যায় না।
২) তারটিকে খুব সরু হতে হবে। তারটি যত শুরু হবে চাপ তত বাড়বে।
তাই তার সরু না হলে চাপ যথেষ্ট হবে না, ফলে পরীক্ষাটি সফল হবে না।
৩) চারপাশের বাতাসের উষ্ণতা যেন শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়। তা না হলে বরফের গলনের জন্য যে লীন তাপ দরকার সেই প্রয়োজনীয় তাপ পাওয়া যাবে না।
শীতের দেশে বরফঢাকা পথে চাকা বিহীন স্লেজগাড়ী তীব্রবেগে বরফের উপর দিয়ে পিছলে চলে কি করে?
এর কারণ হলো গাড়িতে চাকার বদলে চওড়া পাত লাগানো থাকে। গাড়ির ভারে ঐ পাতের নিচে থাকা বরফের গলনাঙ্ক কমে যায় ফলে ঐ বরফ গলে জলে পরিণত হয়, তখন ঐ পাত সহজে বরফের উপর দিয়ে পিছলে যেতে পারে।
বরফঢাকা রাস্তায় মোটরগাড়ি চললে তার টায়ারের ফাঁকে বরফ জমে থাকতে দেখা যায় কেন?
এর কারণ চাকার চাপে নিচের বরফের গলনাঙ্ক কমে গিয়ে ওই বরফ জলে পরিণত হয়। ঐ জল টায়ারের ফাঁকে আটকে যায়- তারপর চাকা উপরে উঠে গেলে ঐ জল চাপমুক্ত হয়, ফলে ওই লেগে থাকা জলের গলনাঙ্ক বেড়ে যায়, তাই ঐ জল আবার জমে বরফে পরিণত হয়ে টায়ারের ফাঁকে আটকে থাকে।
গলনাঙ্কের উপর অপদ্রব্যের প্রভাব:
অনেক সময় দেখা যায় কোন কঠিন পদার্থের সঙ্গে অন্য কোন পদার্থ মেশানো থাকলে পদার্থটির গলনাঙ্ক স্বাভাবিক গলনাঙ্কের অনেক নিচে নেমে যায়। ফলে পদার্থটির কিছুটা গলে যায় এবং এই গলনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ মিশ্রণ থেকে সংগ্রহ করে, ফলে মিশ্রণের উষ্ণতা কমতে থাকে। যেমন, খাঁটি সোনার গলনাঙ্ক বেশি। খাটি সোনার সঙ্গে খাদ মেশালে সোনার গলনাঙ্ক কমে যায়। বরফের সঙ্গে সাধারণ লবণ মেশালে বরফের গলনাঙ্ক 0 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়।
হিমমিশ্র ঃ যেসব মিশ্রণ দিয়ে খুব নিম্ন উষ্ণতার সৃষ্টি করা যায়, সেই মিশ্রণকে হিম মিশ্র বলে। তিন ভাগ বরফ গুঁড়ার সঙ্গে একভাগ ওজনের সাধারণ লবণ মেশালে যে মিশ্রণ উৎপন্ন হয় তার দ্বারা প্রায়- 20 ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতার সৃষ্টি করা যায়।
হিমমিশ্রের ব্যবহার: হিমমিশ্রকে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।
১) মাছ-মাংস দূর দেশে চালান দেওয়ার সময় হিম মিশ্র (বরফ+ লবণ) দ্বারা ঢেকে রাখা হয়। এর ফলে মাছ-মাংস পচে যায় না।
২) আইসক্রিম কুলপি বরফ ইত্যাদি তৈরি করার কাজে হিমমিশ্র ব্যবহার করা হয়।
৩) এছাড়া রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন পরীক্ষায় হিমমিশ্রের ব্যবহার আছে।
দ্রবণের হিমাঙ্কের উপর অপদ্রব্যের প্রভাব:
কোন কঠিন পদার্থ, কোন তরলে দ্রবীভূত হলে, দ্রবনটির হিমাঙ্ক ঐ তরলটির হিমাঙ্কের চেয়ে আরো কমে যায়। যেমন, প্রমাণ চাপে জলের হিমাঙ্ক= 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস, জলে লবণ দ্রবীভূত করে যে দ্রবণ পাওয়া যায় তার হিমাঙ্ক -2 ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতের দেশে মোটর গাড়ির রেডিয়েটারের জল শীতকালে জমে গিয়ে বরফে পরিণত হয় রেডিয়েটার ফাটিয়ে দিতে পারে। এটা বন্ধ করার জন্য জলের সঙ্গে গ্লিসারল বা গ্লাইকল মিশিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে মিশ্রণের হিমাঙ্ক কমে যায়, তাই 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতাতেও জল জমে বরফ হতে পারে না।
(ইউটেক্টিক উষ্ণতা: সাধারণ লবণের জলীয় দ্রবণকে ক্রমশ ঠান্ডা করতে থাকলে গ্রহের উষ্ণতা 0 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে জল জমে বরফ হতে আরম্ভ করে। দেখা যায় যে এইভাবে দ্রবন থেকে উৎপন্ন বরফের মধ্যে সাধারণ লবণ থাকে না।
এই বরফ পৃথক করে যে অবশেষ পড়ে থাকে তার মধ্যে লবণের ভাগ বেশি থাকে। এই অবশেষ দ্রবণটির উষ্ণতা – 23 ডিগ্রি সেলসিয়াসে এলে দেখা যায় যে লবণ এবং জল পৃথক না হয়ে একসঙ্গেই কঠিনে পরিণত হয়। এই উষ্ণতায় হলো ইউটেক্টিক উষ্ণতা।
যে উষ্ণতায় দ্রাব এবং দ্রাবক, দ্রবণের মধ্যে থাকা অবস্থায় একসঙ্গে কঠিনে পরিণত হয়, তাকে ঐ দ্রবণের ইউটেক্টিক উষ্ণতা বলে।)
এই বরফ পৃথক করে যে অবশেষ পড়ে থাকে তার মধ্যে লবণের ভাগ বেশি থাকে। এই অবশেষ দ্রবণটির উষ্ণতা – 23 ডিগ্রি সেলসিয়াসে এলে দেখা যায় যে লবণ এবং জল পৃথক না হয়ে একসঙ্গেই কঠিনে পরিণত হয়। এই উষ্ণতায় হলো ইউটেক্টিক উষ্ণতা।
যে উষ্ণতায় দ্রাব এবং দ্রাবক, দ্রবণের মধ্যে থাকা অবস্থায় একসঙ্গে কঠিনে পরিণত হয়, তাকে ঐ দ্রবণের ইউটেক্টিক উষ্ণতা বলে।)
হিমমিশ্র কি
যেসব মিশ্রণ দিয়ে খুব নিম্ন উষ্ণতার সৃষ্টি করা যায়, সেই মিশ্রণকে হিম মিশ্র বলে। তিন ভাগ বরফ গুঁড়ার সঙ্গে একভাগ ওজনের সাধারণ লবণ মেশালে যে মিশ্রণ উৎপন্ন হয় তার দ্বারা প্রায়- 20 ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতার সৃষ্টি করা যায়।
বরফঢাকা রাস্তায় মোটরগাড়ি চললে তার টায়ারের ফাঁকে বরফ জমে থাকতে দেখা যায় কেন?
এর কারণ চাকার চাপে নিচের বরফের গলনাঙ্ক কমে গিয়ে ওই বরফ জলে পরিণত হয়। ঐ জল টায়ারের ফাঁকে আটকে যায়- তারপর চাকা উপরে উঠে গেলে ঐ জল চাপমুক্ত হয়, ফলে ওই লেগে থাকা জলের গলনাঙ্ক বেড়ে যায়, তাই ঐ জল আবার জমে বরফে পরিণত হয়ে টায়ারের ফাঁকে আটকে থাকে।
শীতের দেশে বরফঢাকা পথে চাকা বিহীন স্লেজগাড়ী তীব্রবেগে বরফের উপর দিয়ে পিছলে চলে কি করে?
এর কারণ হলো গাড়িতে চাকার বদলে চওড়া পাত লাগানো থাকে। গাড়ির ভারে ঐ পাতের নিচে থাকা বরফের গলনাঙ্ক কমে যায় ফলে ঐ বরফ গলে জলে পরিণত হয়, তখন ঐ পাত সহজে বরফের উপর দিয়ে পিছলে যেতে পারে।
image source wikipedia