গলগি বডি | গলগি বস্তুর গঠন ও কাজ | ডিকটিওজোম

0
1925

গলগি বডি | গলগি বডি কাকে বলে


গলগি বডির সংজ্ঞা বা গলগিবডি কি

ইউক্যারিওটিক কোষের সাইটোপ্লাজমে, নিউক্লিয়াসের পাশে অবস্থিত নলাকার কিংবা চ্যাপ্টা থলির মত এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গহবরের ন্যায় একক পর্দা ঘেরা, ক্ষরণকার্যে নিয়োজিত যেসকল অঙ্গানু থরে থরে সজ্জিত থাকে তাকে বলা হয় গলগীবডি বা গলগি বস্তু।

গলগি বডির আবিষ্কার

প্রাণী কোষে এই অঙ্গানুর সম্বন্ধে বলেন জর্জ, প্লাটনার এবং হেরমান। ইতালীয় বিজ্ঞানী ক্যামিলো গলগি ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্যাঁচার স্নায়ু কোষের অসমিয়াম অক্সাইড নামক রঞ্জক প্রয়োগ করে এই অঙ্গানুর বিশেষ বর্ণনা দেন। তার নামানুসারে এই কোষ অঙ্গাণু নাম হয়েছে গলগি বস্তু বা গলগী কমপ্লেক্স।

গলগীবডির উৎপত্তি

গলগীবডি বা গলগিবস্তুর উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ আছে। তবে এদের সঙ্গে এন্ডোপ্লাজমিয় রেটিকুলামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা থেকে এদের উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

গলগী বস্তুর বিস্তৃতি

গলগিবস্তু প্রোক্যারিওটিক কোষে পাওয়া যায় না। ইউক্যারিওটিক কোষের মধ্যে উদ্ভিদ এবং অমেরুদন্ডী প্রাণীকোষে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। উদ্ভিদবিদরা এদের নাম দিয়েছেন ডিকটিওজোম। অন্যান্য কোশে এরা নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি অবস্থান করে।

গলগিবডির আকৃতি

আকৃতিগত ভাবে এরা লম্বা চ্যাপ্টা থলির মত। এদের আয়তন তিন রকমের হয় ৬০- ৭০ Å ব্যাস যুক্ত চ্যাপ্টা থলি, অতিক্ষুদ্র গোলাকার ৩০-৪০Å ব্যাস যুক্ত ভেসিকল, এবং ৬০-২০০Å ব্যাস যুক্ত বড় গহবর।

গলগি বস্তুর সংখ্যা

কোষে এদের সংখ্যা প্রচুর হয়। ক্ষরণ কোশে এদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।

গলগিবস্তুর গঠন

এরা সাধারণত দেখতে পর্দাবৃত নালীকা বা গহবরের মতো। গলগিবস্তুর গঠনকে মুলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়—

গলগি বডির বা গলগি বস্তুর গঠন
গলগি বডির বা গলগি বস্তুর গঠন

১ ল্যামিলি বা সিস্টার্নি বা চ্যাপ্টা থলি

এগুলো একক আবরণী দিয়ে বেষ্টিত, লম্বা, চ্যাপ্টা ও সরু নালিকা। এরা পরপর (৩-২০ সংখ্যায়) সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। এদের আবরনীতে কোন রাইবোজোম দানা দেখা যায় না। এদের সহজেই অস্মিয়াম টেট্রাক্সাইড দিয়ে রঞ্জিত করা যায়। আবরণী ৬০-৭০Å চওড়া হয় এবং আবরণী মধ্যকার নালিকা ৬০-৯০Å চওড়া হয়। ল্যামিলির প্রতিটি থলির মধ্যে ব্যবধান ২০০-৩০০Åথাকে। এরা এক সঙ্গে অনেকটা বাঁকানো অবস্থায় থাকে। এদের উত্তর দিক ER এর দিকে থাকে, একে সৃষ্টির তল বলে। ল্যামিলির অবতল দিকটি ER এর বিপরীতে থাকে, একে পরিণত তল বলে। পরিণত তল থেকে ভিসিকল এবং ভ্যাকুওল গুলি তৈরি হয়। এদের ভিতর ক্ষরিত দ্রব্য থাকে।


২ মাইক্রো ভেসিকেল

এরা অতি ক্ষুদ্র (৩০-৪০Å)গোলাকার অঙ্গাণু এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে থাকে।

৩ ভ্যাকুওল বা গহবর

এরা বড় গহবর বিশেষ এবং গলগী সিস্টার্নির কাছাকাছি থাকে। গলগি বডির কাছাকাছি সাইটোপ্লাজমীয় অংশে অন্য কোন অঙ্গানু থাকে না তাই এই অঞ্চলকে জন অফ এক্সক্লুশন বলে।

গলগিবডির কাজ

গলগি বডি বা গলগি বস্তু
গলগি বডি বা গলগি বস্তু

গলগি বডির বা গলগি বস্তুর কাজ এবং গুরুত্ব জীবের দেহে অপরিসীম। নিচে গলগি বস্তুর কাজ পয়েন্ট আকারে উল্লেখিত হল–

  • ১. খাদ্যদ্রব্যের সঞ্চয় ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
  • ২. নানা প্রকার সংশ্লেষিত বস্তুকে স্থানান্তরিত করতে সাহায্য করে।
  • ৩. উদ্বোধক বা হরমোন নিঃসরণে অংশগ্রহণ করে।
  • ৪. উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরের গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নেয়।।
  • ৫ বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে সহযোগিতা করে।
  • ৬. কিছু খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন তৈরিতে সাহায্য করে।
  • ৭. পরিণত শুক্রকীটের অ্যাক্রোজোম গঠনে সাহায্য করে।
  • ৮. লাইসোজোম গঠনে সাহায্য করে।
  • ৯. বহু শর্করা বা পলিস্যাকারাইড সংশ্লেষ ও ক্ষরণে অংশ নেয়।
  • ১০. ফসফোলিপিড শোষনে অংশ নেয়।
  • ১১. নিউরোসিক্রিসনে অংশ নেয়।

এইভাবে জীবের দেহে গলগি বডির কাজ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

কোষের ক্ষরণ কাজে গলগিবডির ভূমিকা

কোষের ক্ষরণ কাজে গলগিবডির ভূমিকা উল্লেখজনক। এন্ডোপ্লাজমিক জালিকায় তৈরি বিভিন্ন ক্ষরনবস্তু গলগীবডিতে ধীরে ধীরে এসে জমা হয়। পরে গলগীবডির পরিণতিস্থলের দিকে পর্দার স্ফীত অংশে এই বস্তু জমা হয়। এর ফলে ক্ষরণ বস্তুযুক্ত পর্দাবৃত থলি তৈরি হয়। এই থলি গলগীবডি থেকে আলাদা হয়ে কোষ পর্দার দিকে চলে আসে। ক্ষরণ বস্তুযুক্ত থলি কোষ পর্দার সঙ্গে মিলিত হলে বস্তু এক্সোসাইটোসিস পদ্ধতিতে কোষের বাইরে বেরিয়ে আসে।

বহির্বলয় জোন অফ এক্সক্লিউশন

গলগীবডিকে ঘিরে যে সাইটোপ্লাজমীয় অংশ থাকে তাতে অন্য কোন কোষীয় অঙ্গানু থাকে না। একেই জোন অফ এক্সক্লিউশন বলে।

ডিকটিওজোম

উদ্ভিদ কোষের গলগিবস্তুকে ডিকটিওজোম বলে। এরা দুই থেকে সাতটি চ্যাপ্টা চাকতির মত একক পর্দা যুক্ত সিস্টার্নি দিয়ে তৈরি হয়। সিস্টার্নি আলাদা থাকে, তবে একসঙ্গে কাজ করে। সিস্টার্নি এর বাইরের দিকটা অনেকগুলি নালির জালক দিয়ে তৈরি হয়। ক্ষরণ বস্তু সিস্টারনির বাইরের দিক থেকে তৈরি পর্দাবৃত থলির ভিতর জমা হয়। থলিগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষরণ ঘটে। ডিকটিওজোম কোষের ক্ষরণে অংশ নেয়, কোষপ্রাচীর তৈরিতে উপাদান সরবরাহ করে।

image source : pingo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here