প্লাস্টিড (প্লাস্টিড কাকে বলে)
এই আলোচনাতে আমরা প্লাস্টিড কাকে বলে – প্লাস্টিড এর গঠন ও কাজ – প্লাস্টিডের চিহ্নিত চিত্র সম্বন্ধে বিস্তারিত জানবো–
প্লাস্টিড কাকে বলে (সংজ্ঞা) বা প্লাস্টিড কি
উদ্ভিদ কোষে অবস্থিত দুটি পর্দা পরিবেষ্টিত এবং বিশেষ বিপাকীয় কাজে লিপ্ত ( রঞ্জক যুক্ত বা রঞ্জক বিহীন) অঙ্গাণুকে প্লাস্টিড বলে।
প্লাস্টিডের আবিষ্কার ও নামকরণ
বিজ্ঞানী স্কিম্পার উদ্ভিদ কোষে সবুজ কণিকার নামকরণ করেন ক্লোরোপ্লাস্ট। মেয়ার এদের অটোপ্লাস্ট নাম দেন এবং অন্য বর্ণের প্লাস্টিডগুলোকে ট্রফোপ্লাস্ট নাম দেন। বিজ্ঞানী মেয়েন উদ্ভিদ কোষে এদের অবস্থান এবং প্রকৃতি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানান।
প্লাস্টিডের প্রাপ্তিস্থান বা উৎপত্তি
ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, নীলাভ সবুজ শৈবাল প্রভৃতি উদ্ভিদ ছাড়া অন্য সব ধরনের উদ্ভিদের কোষে প্লাস্টিড থাকে। বিভিন্ন উদ্ভিদে এদের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন কোষে এরা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যায় থাকে। শৈবাল কোষে সাধারণত একটি এবং অন্যান্য উদ্ভিদ কোষে একাধিক প্লাস্টিড থাকে। প্লাস্টিড জালিকাকার, সর্পিলাকার, রাশিযুক্ত, চাকতির মত, লাটিমের মত প্রভৃতি আকৃতির হয়।
প্লাস্টিডের শ্রেণীবিভাগ বা প্লাস্টিড কত প্রকার
বর্ণের তারতম্য অনুসারে প্লাস্টিডের শ্রেণীবিভাগ মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা লিউকোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্ট এবং ক্লোরোপ্লাস্ট।
[wpda_org_chart tree_id=6 theme_id=51]১। লিউকোপ্লাস্ট
লিউকোপ্লাস্টের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
রঞ্জকবিহীন বর্ণহীন প্লাস্টিড যা উদ্ভিদের বিভিন্ন বিপাকে অংশ নেয় তাদের লিউকোপ্লাস্ট বলে। এরা বর্ণহীন প্লাস্টিড। দেখতে দন্ডাকার বা গোলাকার। ভ্রুণকোশ এবং যেসব কোষে কোন প্রকার সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না সেইসব কোষে লিউকোপ্লাস্ট থাকে। এরা বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গের তরল খাদ্যকে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চিত খাদ্য বস্তুতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে—শ্বেতসার, তেল, প্রোটিন। এরা প্রোপ্লাস্টিড থেকে তৈরি হয়।এরা আলোকের উপস্থিতিতে ক্রোমোপ্লাস্ট ও ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। এই জাতীয় প্লাস্টিডে ল্যামেলিয় অংশ স্তরীভূত অবস্থায় থাকে না।
২। ক্রোমোপ্লাস্ট
ক্রোমোপ্লাস্টের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
অসবুজ রঙিন প্লাস্টিড যারা উদ্ভিদের নানা ধরনের কাজে সাহায্য করে তাদের ক্রোমোপ্লাস্ট বলে। এরা হলদে ও কমলা রঙের প্লাস্টিড। এতে কমলা রঙের ক্যারোটিন এবং হলুদ রংয়ের জ্যান্থোফিল রঞ্জক থাকে। এরা গোলাকার লম্বা তারকাকার প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়। এরা প্রোপ্লাস্টিড থেকে তৈরি হয়। এরা ফুল ফল মূল প্রভৃতি বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গে থেকে অঙ্গকে রঞ্জিত করে কিন্তু সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয় না।
৩। ক্লোরোপ্লাস্ট
ক্লোরোপ্লাস্টের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
সবুজ রঞ্জক যুক্ত প্লাস্টিড যারা সালোকসংশ্লেষে সরাসরি অংশ নেয় তাদের ক্লোরোপ্লাস্ট বলে।
ক্লোরোপ্লাস্টের সবুজ রঞ্জক ক্লোরোফিল এবং কমলা রঞ্জক ক্যারোটিন থাকে।সব ধরনের প্লাস্টিক এর মধ্যে ক্লোরোপ্লাস্ট সম্বন্ধে বেশি করে জানা সম্ভব হয়েছে।
ক্লোরোপ্লাস্টের উৎপত্তি
ভাজক কলা কোষ এর আদি প্লাস্টিড বা প্রোপ্লাস্টিড জাতীয় বর্ণহীন থলির মতো অঙ্গাণু থেকে এরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে রূপান্তরিত হয়ে ক্লোরোপ্লাস্টে পরিণত হয়।কোষ বিভাজনের সময় ক্লোরোপ্লাস্ট গুলো সমান দুই অংশে বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষের মধ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্লোরোপ্লাস্টের বিস্তার
কোষে একটি ক্লোরোপ্লাস্ট থাকলে তা কোন নির্দিষ্ট স্থানে থাকে। কষে অনেকগুলো ক্লোরোপ্লাস্ট থাকলে তা সাইটোপ্লাজমে সমান ভাবে ছড়ানো থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্টের আকৃতি
এরা দেখতে চ্যাপ্টা, ডিম্বাকার, গোলাকার, ফিতার মতো, কাপের মতো প্রভৃতি আকৃতির হয়ে থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যা
স্পাইরোগাইরা, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি শৈবাল কোশপ্রতি একটি করে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। উন্নত উদ্ভিদের পাতার কোষে এদের সংখ্যা সাধারণত 30 থেকে 50 পর্যন্ত হয়।
ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন
উন্নত উদ্ভিদ কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট দুটি একক আবরণী দিয়ে আবৃত থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টের ভিতরকার সমসত্ব ছাত্রকে স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমা একটি কলয়েড জাতীয় দ্রবন।
ক) গ্রানার গঠন
পর্দাবৃত থলির স্তর গুলিকে গ্রানা বলে। প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রামের সংখ্যা 60 থেকে 80 টি হয়। প্রতিটি গ্রানায় পরপর সজ্জিত কতকগুলি চ্যাপ্টার থলি থাকে। থলি গুলি একক আবরণ পরিবেষ্টিত থাকে। এই থলিগুলিকে থাইলাকয়েড বলে।
খ) থাইলাকয়েড
থাইলাকয়েডের ভিতরের গহবরকে লকুলাস বলে।দুটি থলির একক আবরণী যুক্ত হয়ে একটি 100 থেকে 140Å স্থূল দ্বিএকক আবরণী তৈরি করে। একে গ্রানাপট্ট বা গ্রানাম ল্যামেলা বলে। চওড়া আবরণী স্তর লিপিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। ভিতরের আবরণী স্তরে গোলাকার দানা বা কোয়ান্টোজোম ছড়ানো থাকে। ক্লোরোফিল বা সবুজ রঞ্জক লিপিড ও প্রোটিন স্তরের কোয়ান্টাজোম দানার মধ্যে থাকে। এরা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া বাহির বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
গ) স্ট্রোমাপট্ট
একক আবরণী স্তর বা পট্ট কখনো কখনো গ্রানাম থেকে স্ট্রোমার ভিতরে নলাকার বিস্তৃত থাকে। এরা দুটি গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপনও করে থাকে। এদের স্ট্রোমাপট্ট বলে। স্ট্রোমাপট্ট, গ্রানাপট্টের চাইতে পাতলা হয় এবং উৎসেচক যুক্ত হয়। এতে কোনো ক্লোরোফিল রঞ্জক থাকে না।
ক্লোরোপ্লাস্টের রঞ্জক
ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণত দু’রকমের রঞ্জক থাকে—
১। ক্লোরোফিল এবং
২। ক্যারোটিনয়েড
নীলাভ সবুজ শৈবালের ক্লোরোফিল রঞ্জক একপ্রকার একক পর্দাবৃত থলির মধ্যে থাকে যাকে রঞ্জক-অঙ্গাণু বা ক্রোমাটোফোর বলে। এখানে কোন ক্লোরোপ্লাস্ট তৈরি হয় না।ক্লোরোফিল-এ রঞ্জক সবুজ ও লোহিত ব্যাকটেরিয়া ছাড়া সব ধরনের সালোকসংশ্লেষ কারী উদ্ভিদ অঙ্গে থাকে। ক্লোরোফিল বি উন্নত উদ্ভিদ এবং সবুজ শৈবাল কোষে থাকে। ক্লোরোফিল সি ডায়াটম ও বাদামী শৈবাল কোষে থাকে। ক্লোরোফিল ডি লোহিত শৈবাল কোষে থাকে। সাইকো বিলিন জাতীয় রঞ্জক ফাইকোএরিথ্রিন লোহিত শৈবাল ফাইকোসায়ানিন নীলাভ সবুজ শৈবাল থাকে।
ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক এর মধ্যে কমলা বর্ণের ক্যারোটিন ও হলুদ বর্ণের জ্যান্থোফিল প্রধান। এছাড়া গোলাপ টমেটো প্রভৃতির লাইকোপিন এবং লুটেওল আরও দু রকমের ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক।
পাইরিনয়েড
সবুজ শৈবালের ক্লোরোপ্লাস্টে এক ধরনের সঞ্চিত খাদ্য পাওয়া যায় এদের পাইরিনয়েড বলে। পাইরিনয়েড এর কেন্দ্রে প্রোটিন থাকে। প্রোটিনকে ঘিরে শ্বেতসারের আস্তরন থাকে।
চোক্ষু বিন্দু বা স্টিগমা
নিম্নশ্রেণির শৈবালে ক্লোরোপ্লাস্ট এর সঙ্গে একটি আলোক সুবেদী অংশ থাকে, এদের চক্ষুবিন্দু বলে। চাকতির মতো দেখতে এই অংশগুলির কেন্দ্রে আলোক সুবেদী রঞ্জক থাকে।
প্লাস্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজ
প্লাস্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজ নিম্নরূপ
- সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে প্লাপ্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ অন্যতম।
- উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সঞ্চয় করতে সাহায্য করে।
- ফুল, পাতা ও ফলকে আকর্ষণীয় রঙে রাঙা নিত্য করে এবং কীটপতঙ্গ কে আকৃষ্ট করে পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য করে।
- প্লাস্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজ হল উদ্ভিদকে বর্ণময় এবং আকর্ষনীয় করে তোলা।
- ফটোফসফোরাইলেশান ও ফটোরেস্পিরেশন এ সহায়তা করে।
image source: researchgate sciencekids
It was really helpful to me
Thanks!”☺️☺️
ধন্যবাদ, অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট।
ধন্যবাদ ভাই।অনেক ইনফরমেশন পাইলাম।
It’s very helpfully thanks