প্লাজমা পর্দা : গঠন ও কাজ | কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দার পার্থক্য
প্লাজমা পর্দা বা কোষ পর্দা
এই আলোচনা পর্বে আমরা প্লাজমা পর্দা, প্লাজমা পর্দার গঠন ও কাজ এবং কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দার পার্থক্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানব।
কোষ পর্দা কি বা প্লাজমা পর্দা কাকে বলে
কোষ পর্দার সংজ্ঞা
যে সূক্ষ্ম আণুবীক্ষণিক স্থিতিস্থাপক সাজিব পর্দা কোষের সাইটোপ্লাজম কে ঘিরে থাকে তাকে কোষ পর্দা, প্লাজমা পর্দা বা কোষ আবরণী বলে।
কোষ পর্দার আবিষ্কার ও নামকরণ
নাগেলি ও ক্র্যামার কোষ পর্দার আবিষ্কার ও নামকরণ করেন। প্লোই কোষ পর্দার বদলে প্লাজমা পর্দা নাম দেন।
প্লাজমা পর্দার উৎপত্তি
সাইটোপ্লাজমে বাইরের অংশ পরিবর্তিত এবং রূপান্তরিত হয়ে প্লাজমা পর্দা তৈরি হয়। অন্যমতে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা থেকে কোষ পর্দা তৈরি হয়।
প্লাজমা পর্দার গঠন (পরাগঠন)
ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের পর্যবেক্ষণে প্লাজমা পর্দা বা কোষ পর্দার গঠন বর্ণনা করা হল—
প্লাজমা পর্দা প্রায় 75Å পুরু হয়। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে এই পর্দা ত্রিস্তরিক দেখায়। এই তিনটি স্তর নিম্নরূপ
১. পর্দার বাইরের স্তরটি খুব ঘন। প্রায় ২০Å পুরু। এটি প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
২. ভিতরের স্তরটি ২০Å পুরু এবং খুব ঘন। এটিও প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
৩. মাঝের স্তরটি হালকা বর্ণের। এর পুরুত্ব ৩৫Å। এই স্তরটি বাইরের এবং ভিতরের প্রোটিন স্তরের মধ্যে অবস্থান করে।
ড্যানিয়েল এবং ড্যাবসনের নকশা অনুযায়ী কোষ পর্দার গঠন
ড্যানিয়েল এবং ড্যাবসন বলেন প্লাজমা পর্দা একটি দ্বিস্তরীয় ফসফোলিপিড স্তর আছে। এই স্তরের বাইরে এবং ভিতরে প্রোটিন নির্মিত স্তর থাকে। এই নকশাকে স্যান্ডউইচ নকশা বলা হয়।
রবার্টসনের একক ইউনিট পর্দা নকশা অনুযায়ী প্লাজমা পর্দার গঠন
এই নকশার মাধ্যমে রবার্টসন ১৯৫৯ সালে বলেন যে প্লাজমা পর্দা ত্রিস্তরিক হবে। তিনটি স্তরের মধ্যে বাইরের স্তরের দুটি প্রোটিন নির্মিত এবং এদের প্রত্যেকের ২০-২৫Å পুরু। এরা জলাকর্ষী। এই স্তর দুটির মাঝে থাকে ৩০-৩৫Å পুরু লিপিড নির্মিত স্তর। এই স্তরটি জল বিরাগী। যদিও সব প্লাজমা পর্দাই ফসফোলিপিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি কিন্তু সব পর্দায় এরা সমান পরিমাণে থাকে না। এবং পর্দার লিপিড ও প্রোটিন এর রাসায়নিক সংগঠনও এক হয় না।
বিজ্ঞানী কর্ণের মতে প্লাজমা পর্দার গঠন
বিজ্ঞানী করনের মতে প্লাজমা প্রোটিন লিপিড যুক্ত বটিকার একটি স্তর।
কোষ আবরণী তরলায়িত মিশ্র নকশা বা ফ্লুইড মোজাইক অনুযায়ী কোষ পর্দার গঠন
মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাসি ও ওরথিনটন এবং জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃথাই ও এডিডিন প্রভৃতি বিজ্ঞানের গবেষণা প্লাজমা পর্দার তরলায়িত গতিশীল গঠনকে সমর্থন করেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সিঙ্গার ও নিকলসন সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্লাজমা পর্দার একটি অতিমাত্রিক নকশা উপস্থাপন করেন। এইমতে প্লাজমা পর্দা একটি দ্বিমাত্রিক তরলায়িত দ্বিস্তরী লিপিড প্রোটিন কনা সন্নিবেশিত থাকে।
কোষ পর্দার তরল মিশ্রণ কাকে অনেকটা সমুদ্রের ভাসমান হিমশৈলের মতো মনে হয়। লিপিড বা স্নেহ সমুদ্রের মতো সবসময়ই পরিবর্তিত হয়। প্রোটিন দের হিমশৈলের মত ভাবা হয়।
স্নেহ বস্তু
দুটি স্নেহ স্তরের অনুগুলি নিজেদের স্তরে সবসময়ই জায়গা পরিবর্তন করে।
প্রোটিন
প্লাজমা পর্দার প্রোটিন তিন রকমের হয়। বহিঃপ্রোটিন পর্দার বাইরে এবং ভিতরে আলতোভাবে যুক্ত থাকে। অন্তঃপ্রোটিন লিপিড স্তরের মধ্যে প্রোথিত থাকে। বহিঃপ্রোটিন গ্রাহকের কাজ করে। অন্তঃপ্রোটিন বাহকের কাজ করে।
জল অঙ্গার
পর্দার বাইরেও প্রোটিনের সঙ্গে গ্লাইকোলিপিড এবং গ্লাইকোপ্রোটিন যুক্ত থাকে। এরা কোষ পর্দা কে অনাক্রমৃতায় সাহায্য করে।
প্লাজমা আবরণীর প্রোটিন অংশই সংবহন, কোশান্তর সংযোগ, শক্তি সরবরাহ প্রভৃতি কাজ করে। প্লাজমা পর্দার এই তরলায়িত সংগঠনই তার প্রগতিশীলতা ও জৈবনিক কাজ গুলি ব্যাখ্যা করতে সমর্থ।
কোষ পর্দার কাজ বা প্লাজমা পর্দার কাজ
প্লাজমা পর্দার কাজ বা প্লাজমা পর্দার কাজ নিচে পয়েন্ট আকারে দেওয়া হল—
- ১. কোষ মধ্যস্থ বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে।
- ২. কোশান্তর সংযোগ রক্ষা করে।
- ৩. রাসায়নিক পদার্থের দ্রুত সঞ্চালন করে।
- ৪. এরা প্রভেদক ভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করে।
- ৫. পর্দা সংলগ্ন রাইবোজোম এর সাহায্যে প্রোটিন সংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে।
- ৬. পিনোসাইটোসিস ও ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করে।
- ৭. কোষীয় বিভিন্ন আবরণী অঙ্গ-এর থেকে তৈরি হয়।
প্লাজমা পর্দার কাজ বা প্লাজমা পর্দার কাজ এইভাবেই সম্পন্ন হয়।
কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দার মধ্যে পার্থক্য
কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দার মধ্যে পার্থক্য নিচে পয়েন্ট আকারে দেওয়া হল—–
বৈশিষ্ট্য | কোষ প্রাচীর | কোষ পর্দা |
অবস্থান | শুধু উদ্ভিদ কোষে থাকে। | উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় কোষে থাকে। |
প্রকৃতি | দৃঢ়, ঋজু ও জড় বস্তু। | পাতলা, স্থিতিস্থাপক এবং সজীব |
ভেদ্যতা | ভেদ্য। | অর্ধভেদ্য (প্রভেদক ভেদ্য)। |
রাসায়নিক প্রকৃতি | পেকটিন ও সেলুলোজ দিয়ে তৈরি। | প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে তৈরি। |
স্তর | ত্রিস্তরী মধ্যপর্দা, প্রাথমিক ও গৌণ স্তর থাকে। | ত্রিস্তরী প্রোটিন লিপিড ও প্রোটিন স্তর থাকে। |
কাজ | কোষের কাঠামো গঠন করে। | কোষের কাঠামো গঠন করে না। |
অলংকরণ | অলংকরণ দেখা যায়। | অলংকরণ তৈরি হয় না। |
অঙ্গাণু গঠন | কোষীয় পর্দাবৃত অঙ্গাণু গঠনে সাহায্য করে না। | কোষীয় পর্দাবৃত অঙ্গাণু গঠনে অংশগ্রহণ করে। |
খাদ্য গ্রহণ | পিনোসাইটোসিস ওভার সাইটোসিস পদ্ধতিতে ঘটে না। | খাদ্য গ্রহণ পিনোসাইটোসিস ও ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে ঘটে। |
এইভাবেই কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দার মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
image source : biologydictionary
I wish since