কোষ প্রাচীর | গঠন এবং কাজ

0
1612

কোষ প্রাচীর


কোষ প্রাচীর ও কোষ প্রাকারের গঠন এবং কাজ সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হল—

একটি শক্ত পুরু সুরক্ষা প্রাকার যা উন্নত উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়, ছত্রাক এবং শৈবালের কোষের প্লাজমা পর্দার বাইরে অবস্থান করে। প্রাণী কোষের কোষ প্রাকার থাকে না।

ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর

সকল ব্যাকটেরিয়ার কোশই একটি শক্ত এবং মজবুত কোষ প্রাকার দিয়ে আবৃত থাকে। প্রাচীরটি ১০০-১৪০ মাইক্রো মিটার পুরু এবং এটি প্লাজমা পর্দার ঠিক বাইরে অবস্থিত। প্রাচীরটি থাকার ফলে ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট আকৃতি বজায় থাকে। এছাড়া এটি ব্যাকটেরিয়াকে বাহ্যিক আঘাত এবং রাসায়নিক ও অন্য জীবাণুর আক্রমণ থেকে প্রতিহত করে।

প্রকৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাকার পেপটাইডো গ্লাইক্যান নামক অ্যামাইনো এসিড যুক্ত বহু শর্করা বা পলিস্যাকারাইড, কিছু লিপিড,‌ ফসফরাস এবং মিউরামিক এসিড দ্বারা গঠিত।

গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া কোশ প্রাকারে শতকরা কুড়ি ভাগ পর্যন্ত লিপিড থাকে। অপরদিকে গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া কোষের আকারে নামমাত্র লিপিড থাকে। গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাকারে লাইপো পলিস্যাকারাইড নির্মিত অতিরিক্ত একটি স্তর থাকে।

ইউক্যারিওটিক কোষের কোষ প্রাচীর

প্রাণী কোষ ভিন্ন অন্য সকল ইউক্যারিওটিক কোষের বাইরে কোষ প্রাকার থাকে।

কোষ প্রাচীর কাকে বলে। এর সংজ্ঞা

উদ্ভিদ কোষের কোষ পর্দার বাইরে সেলুলোজ নির্মিত জড়, স্থিতিস্থাপক অথচ ভেদ্য যে আবরণ থাকে তাকে কোষ প্রাচীর বা কোষ প্রাকার বলা হয়।

কোষ প্রাচীরের গঠন

উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরের গঠন মূলত তিনটি স্তরে বিভক্ত। স্তরটি হল


১. মধ্যপর্দা বা ল্যামেলা
২. মোক্ষ বা প্রাথমিক কোষপ্রাচীর
৩. গৌণ কোষ প্রাচীর

১. মধ্য পর্দা বা ল্যামেলা

দুটি কোষের প্রাথমিক কোষ প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে যে কোষপ্রাচীর স্তর থাকে তাকে মধ্যচ্ছদা পর্দা বা মধ্যপর্দা বলে।
মধ্যপর্দা কলয়েড জাতীয় স্থিতিস্থাপক প্রোটিন ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট জৈব যৌগ দিয়ে তৈরি।

২. প্রাথমিক বা মুখ্য কোষপ্রাচীর

মধ্য পর্দার দুই পাশে অবস্থিত মূলত সেলুলোজ দ্বারা নির্মিত কোষপ্রাচীর স্তরকে বলে মুখ্য কোষ প্রাচীর ।
এই স্তরটি সেলুলোজ পেকটিন হেমিসেলুলোজ এবং লিগনিন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের কার্বোহাইড্রেট দিয়ে গঠিত।


৩. গৌণ কোষ প্রাচীর

মুখ্য প্রাচীর এর ভিতরের দিকে অবস্থিত প্রাচীর স্তরটিকে গৌণ কোষপ্রাচীর বলে।
এই স্তরটি অনেক পুরু শক্ত এবং ৫-১০ মাইক্রো মিটার চওড়া। গৌণ কোষ প্রাচীর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন, সুবেরিন, কিউটিন, মোম জাতীয় বস্তু, ট্যানিন প্রভৃতি আরও অনেক পদার্থ তৈরি।

কোষ প্রাকারের পরাগঠন

ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের পর্যবেক্ষণে একে দুটি প্রধান অংশ চিহ্নিত করা গেছে।


১. একটি অংশের নাম ধাত্র বা মেট্রিক্স
২. অন্য অংশটির নাম তন্তুময় বা ফাইব্রিল

ধাত্র বা মেট্রিক্স

এর প্রধান গঠন উপাদান হচ্ছে তন্তু। এই তথ্যগুলি যে ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে বলা হয় ধাত্র। ধাত্র পেকটিন, লিগনিন, ক্রাইটন, কিউটিন, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি জৈব যৌগ দ্বারা গঠিত।

তন্তুময় বা ফাইব্রিল

মুখ্য ও গৌণ কোষ প্রাকার তৈরি হওয়ার সময় সেলুলোজ দিয়ে তৈরি ০.০৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস যুক্ত স্থুল মাইক্রোফাইব্রিল সমান্তরাল ও লম্বভাবে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে অথবা অনিয়মে জমা হতে থাকে। দুটি স্থূল তন্তুর মাঝখানের জায়গা অন্যান্য বস্তু (পেকটিন, এক্সটেনসিন, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন, কিউটিন, ক্যালোজ, কাইটিন, মিউসিলেজ, ট্যানিন, সুবেরিন প্রভৃতি) দিয়ে ভরাট হয়। ফলে সম্পূর্ণ স্তরটি সমানভাবে পুরু হয়ে ওঠে। একটি মাইক্রোফাইব্রিল ২৫০Å ব্যাসযুক্ত সূক্ষ্ম তন্তু বা মাইক্রোফাইব্রিল নিয়ে তৈরি হয়। প্রতিটি মাইসেলিতে ১০০-১৭০ সেলুলোজ যুক্ত থাকে। একটি সেলুলোজ তন্তু আবার ১২০ টি বিটা-ডি-গ্লুকোজ দিয়ে তৈরি হয়।

কোষ প্রাচীরের গঠন সম্বন্ধে এটিই ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

কোষ প্রাচীরের কাজ

কোষ প্রাচীরের কাজ পয়েন্ট আকারে বর্ণনা করা হল।

  • ১। কোষের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গানুর রক্ষা করে।
  • ২। কোষগুলির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে।
  • ৩। কোষকে যান্ত্রিক শক্তি প্রদান করে।
  • ৪। আন্তঃকোষ রাসায়নিক পদার্থের বিনিময় সাধিত করে।
  • ৫। প্রভাষক ভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করে।
  • ৬। কোষের নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে।
  • ৭। পিনোসাইটোসিস এবং ফ্যাগোসাইটোসিস এর মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া সংঘটিত করে।
  • ৮। কোষের বহিরাবরণী থেকে বিভিন্ন আবরণী অঙ্গ সৃষ্টি হয়।

এভাবেই কোষ প্রাচীরের কাজ নির্ধারিত হয়

কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দার বা প্লাজমা পর্দার পার্থক্য

কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দার বা প্লাজমা পর্দার পার্থক্য পড়ার জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

এই ছিল কোষ প্রাচিরের গঠন ও কাজ সম্বন্ধে একটি ছোট আর্টিকেল।

image source : creative-biolabs

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here