কার্য, বলের পক্ষে ও বিরুদ্ধে কার্য, কার্যহীন বল, পরিমাপ ও একক

0
958

কার্য

সূচীপত্র দেখতে ক্লিক করুন show

একটি ইট মাটি থেকে তুলে পাচিলের উপরে রাখা হলো। পাশাপাশি একটি ঘরের দেওয়ালকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করা হলো, কিন্তু গলদঘর্ম হওয়া সত্বেও ঘরের দেওয়ালকে সরানো গেল না। বিজ্ঞানের ভাষায় প্রথমটিতে কার্য করা হয়েছে বলে ধরা যায়; কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কোন কার্য সাধন হয়নি বলে ধরা হয়।

বাইরে থেকে কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলো এবং বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হলো ওই বল প্রয়োগের কারণে, তাহলে বলা হবে বলটি কাজ করেছে। কিন্তু বল প্রয়োগ করা সত্ত্বেও যদি বস্তুর অবস্থার কোনো পরিবর্তন না ঘটে অর্থাৎ সরণ না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কোন কাজ করা হলো না বলে ধরা হয়। প্রথম ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করে ইটটির সরণ ঘটানো হয়েছিল তাই এক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে গলদঘর্ম হওয়া সত্ত্বেও দেয়ালটির সরণ ঘটানো সম্ভব হয়নি তাই এক্ষেত্রে কার্য করা হলো না।

কার্য কাকে বলে | কার্যের সংজ্ঞা

কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগের ফলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ হয় তাহলে প্রযুক্ত বল কার্য করেছে বলা হয়।

বল একটি বস্তুর উপর দুই ভাবে কাজ করে

১. বলের পক্ষে কার্য করা বা বল দ্বারা কার্য করা
২. বলের বিরুদ্ধে কার্য করা

১. বলের দ্বারা কার্য বা বলের পক্ষে কার্য :

কোন বস্তুর উপর বল প্রযুক্ত হলে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ যদি প্রযুক্ত বলের দিকে হয় তাহলে বলা হয় যে প্রযুক্ত বল দ্বারা কার্য করা হয়েছে।

উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক–একটি বস্তুর মেঝের উপরে আছে। বস্তুটিকে ধাক্কা দিলে দেখা যাবে যে দিকে ধাক্কা দেওয়া হলো সেই দিকে বস্তুটি সরে গেল। অর্থাৎ বস্তুর যেখানে বল প্রযুক্ত হলো সেই প্রয়োগ বিন্দু সরণ হল প্রযুক্ত বলের দিকে।এক্ষেত্রে বলা হয় যে বল কাজ করেছে বা বলের পক্ষে কার্য করা হয়েছে বা বলের দ্বারা কার্য করা হয়েছে।

আরো একটি উদাহরণ দিয়ে দেখা যাক–একটি পাথর মুক্তভাবে উপর থেকে নিচে পড়তে থাকলে পাথরটির সরণ অভিকর্ষ বলের দিকে হয়। তাই এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বল দ্বারা পাথরের উপর কার্য করা হয়।

২. বলের বিরুদ্ধে কার্য করা:

কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ যদি প্রযুক্ত বলের বিপরীত দিকে হয় তাহলে বলা হয় যে প্রযুক্ত বলের বিরুদ্ধে কাজ করা হয়েছে।

উদাহরণ দিয়ে বুঝি–বইকে টেবিলের উপর থেকে উপরে উঠালে বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ অভিকর্ষ বলের বিপরীত দিকে হয়। এখানে বইটির উপর অভিকর্ষজ বল কাজ করে। অর্থাৎ বইটিকে অভিকর্ষজ বল পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টানছে। এই অবস্থায় বইটিকে উপরে তুললে অভিকর্ষজ বলের বিপরীত দিকে প্রয়োগ বিন্দু সরণ হয়। এখানে বলা যায় যে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কার্য করা হয়।

আর একটি উদাহরণের সহিত বোঝা যাক–একটি চেয়ারকে মেঝের উপর দিয়ে ঠেলে নিয়ে গেলে মেঝের ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কার্য করা হয়।
কোন ব্যক্তি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকলে ওই ব্যক্তি অভিকর্ষজ বলের বিরুদ্ধে কার্য করে।

এই কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে যখনই কোনো বল কার্যকরে তখন ওই বল অন্য কোন বলের বিরুদ্ধে কার্য করে। যেমন একটি টেবিলের ওপর বল প্রয়োগ করা হলো। টেবিলটি মেঝের উপর দিয়ে কিছুটা দূরে সরে গেল। এক্ষেত্রে টেবিলের উপর প্রযুক্ত বল মেঝের ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কার্য করল।

দড়ি টানাটানিতে যে দল জয়লাভ করে সেই দল কার্য করে কারণ জয়ী দল যেদিকে বল প্রয়োগ করে পরাজিত দলের সরণ অর্থাৎ শক্তিশালী দলের দ্বারা প্রযুক্ত বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ সেদিকে হয়। এক্ষেত্রে পরাজিত দলের বলের বিরুদ্ধে জয়ী দল দ্বারা প্রযুক্ত বল কার্য করে।

কার্যহীন বল কাকে বলে
কার্যহীন বলের সংজ্ঞা:

ধরি কোন ব্যক্তি একটি সুটকেস মাটি থেকে কিছুটা উপরে উঠালো। ভূমি থেকে সুটকেসটিকে উপরে ওঠাতে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কার্য করা হলো। এখন লোকটি যদি সুটকেসটি ধরে অনুভূমিক তলে হাঁটতে শুরু করে, তাহলে সুটকেসের উপর প্রযুক্ত হওয়ায় সুটকেসের সরণ হবে; অথচ এ ক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কোনো কার্য করা হবে না। কারণ এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের অভিমুখ এবং সুটকেস সরণের অভিমুখ পরস্পর লম্বভাবে অবস্থিত।

প্রযুক্ত বলের অভিমুখ এবং স্বর্ণের অভিমুখ পরস্পরের সঙ্গে লম্বভাবে থাকলে কৃত কার্যের পরিমাণ শুন্য হয়। একে বলা হয় কার্যহীন বল।

কার্যের পরিমাপ

একটি বল বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয় কতখানি কার্য করেছে তা বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণের গুণফল দ্বারা পরিমাপ করা হয়।

একটি বস্তুর A বিন্দুতে P বল প্রয়োগ করা হলো। ফলে বস্তুটি A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে সরে গেল। অর্থাৎ A বিন্দু সরণ = AB = S হল। এখন কৃত কার্য W = P×S হবে।

অর্থাৎ কার্য = প্রযুক্ত বল × বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
মনে রাখা প্রয়োজন কার্য একটি স্কেলার রাশি। বল এবং সরণ উভয় ভেক্টর রাশি হলেও তাদের গুণফল স্কেলার রাশি হয়। কারণ কার্যের কোন দিক বা অভিমুখ হয় না।

বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ না হলে কার্য করা হয় না।

১) একজন লোক নদীর ঘাটে নেমে স্রোতের বিপরীত দিকে সাঁতার কাটতে শুরু করলো। যে হাত-পা ছোঁড়ে অনেক চেষ্টা করেও ঘাট থেকে স্রোতের বিরুদ্ধে এগিয়ে যেতে পারল না। এক্ষেত্রে দেখা যাক নদীর ঘাটের সাপেক্ষে লোকটির কাজ কতখানি হলো।
লোকটির দ্বারা কৃতকার্য = বল × সরণ = সরণ × 0

যেহেতু এক্ষেত্রে ঘাটের সাপেক্ষে সরণ = 0 অতএব কৃতকার্য = 0।

তবে মনে রাখার বিষয় এটা যে,নদীর স্রোতের সঙ্গে লোকটির আপেক্ষিক সরণ হচ্ছে তাই স্রোতের সাপেক্ষে ওই লোকটি কার্য করে।

২) কোনো বৃত্তাকার পথে আবর্তন করছে এমন একটি বস্তুর উপর যে অভিকেন্দ্র বল কাজ করে, বস্তুটির সরণের সঙ্গে সেই বল প্রযুক্ত হয় বলে কোন কাজ হয় না। আঙ্গুলের মাথায় সুতো বেঁধে একটি ঢিলকে ঘোরালে আঙ্গুলের চারিদিক ঘিরে আবর্তনে ঢিলের সরণ = 0। তাই এক্ষেত্রে কৃতকার্য = বল × সরণ = বল × ০ = ০ অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোনো কাজ করা হয় না।

৩) টেবিলের উপর থেকে একটি কলম তুলে উপরে রাখা হলো। এতে কার্য করা হলো কারণ কলমটির সরন ঘটেছে। কলমটি ওই স্থান থেকে ফিরিয়ে আবার টেবিলের উপরে আনা হলো। এক্ষেত্রেও কলমের সরণ ঘটেছে তাই কিছুটা কাজ হয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় মোটকার্য হবে শূন্য। কারণ কলমটিকে ওঠাতে নামাতে সরণ = 0।

**যে বল কোন বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয়ে কার্য = ০ হয় সেই বলকে কার্যহীন বল বলে।

কার্যের একক

কোন কিছর পরিমাপ সঠিকভাবে অনুমান করতে হলে তার একটি একক বিশেষ ভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। নিচের লিংকে ক্লিক করে পরিমাপ এবং একক সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা নিতে পারেন…

কার্যের পরম একক

কার্যের পরম একক সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হল—

১) সিজিএস পদ্ধতিতে কার্যের একক:

কোন বস্তুর উপর এক ডাইন বল প্রয়োগ করলে বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ বলের অভিমুখে ১ সেন্টিমিটার হলে যে কাজ হয় তাকে এক আর্গ বলে।
অর্থাৎ এক আর্গ = ১ ডাইন × ১ সেন্টিমিটার। সুতরাং সিজিএস পদ্ধতিতে কার্যের একক হল আর্গ।

এম কে এস পদ্ধতিতে কার্যের একক:

আর্গ ছোট একক। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আরেকটি বড় একক এম কে এস পদ্ধতিতে প্রচলিত আছে। তাকে জুল বলে।

কোন বস্তুর উপর এক নিউটন (10⁵ ডাইন) বল প্রয়োগ করলে, বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরন বলের অভিমুখ এক মিটার হলে যে কাজ হয় তাকে এক জুল বলে।
1 জুল সমান 1 নিউটন × 1 মিটার = 10⁵ ডাইন × 100 সেন্টিমিটার = 10⁷ আর্গ। 1 জুল = 10⁷ আর্গ

এফ পি এস পদ্ধতিতে কার্যের একক:

কোন বস্তুর উপর এক পাউন্ডাল বল প্রয়োগ করলে বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ বলের অভিমুখে ১ ফুট হলে যে কাজ হয় তাকে 1 ফুট পাউন্ডাল বলে।
1 ফুট পাউন্ডাল = 1 পাউন্ডাল × 1 ফুট

ফুড পাউন্ডাল এবং আর্ক এর মধ্যে সম্পর্ক:

1 ফুট পাউন্ডাল = 1 পাউন্ডাল × 1 ফুট = 13825 ডাইন × 30.48 সেমি = 4.2 × 10⁵ আর্গ

এগুলি হল কার্যের পরম একক

অভিকর্ষীয় একক

পৃথিবীর যে বল দ্বারা প্রত্যেকটি বস্তুকে তার কেন্দ্রের দিকে টানে তাকে অভিকর্ষজ বল বলে। অভিকর্ষ এবং মহাকর্ষ সম্বন্ধে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

সিজিএস পদ্ধতিতে কার্যের অভিকর্ষ একক

1 গ্রাম ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে 1 সেন্টিমিটার উপরে ওঠাতে যে কাজ করা হয় তাকে 1 গ্রাম সেন্টিমিটার বলে।
1 গ্রাম সেন্টিমিটার = 981 আর্গ ।

এপিএস পদ্ধতিতে কার্যের অভিকর্ষ একক:

এক পাউন্ড ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে এক ফুট উপরে ওঠাতে যে কাজ করা হয় তাকে এক ফুট পাউন্ডাল বলে।

1 ফুট পাউন্ড = 32 ফুট পাউন্ডাল।

এম কে এস পদ্ধতি কার্যের অভিকর্ষ একক:

1 কিলোগ্রাম ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে এক মিটার উপরে তুলতে যে কাজ করা হয় তাকে কিলোগ্রাম মিটার বলে।

কার্য কি রাশি

কার্য দুটি রাশির গুণফল। যথা বল এবং সরণ। বল ও সরণ দুটি রাশিই ভেক্টর রাশি। এদের গুণফলে তৈরি হলেও কিন্তু কার্য একটি স্কেলার রাশি কারণ কার্যের কোন দিক বা অভিমুখ হয় না এর শুধুমাত্র মান আছে।

কার্যহীন বল কাকে বলে

বল প্রয়োগ করা সত্বেও কোন বস্তুর যদি সরণ না ঘটে। অর্থাৎ সরণ শূন্য হয়। তাহলে বল প্রয়োগ করা সত্বেও সেটি কার্যহীন বল হিসাবে ধরা হয়।

কার্যকর বল কাকে বলে

বল প্রয়োগ করার পর কোন বস্তর যদি কিছুটা অবস্থান্তর হয় অর্থাৎ ঐ বস্তুর সরণ ঘটে তাহলে প্রয়োগকৃত বলটিকে কার্যকর বল বলে।

কার্যের মাত্রা কি

কার্যের মাত্রা
কার্য = বল × সরণ
অর্থাৎ, W=F×X
=m×f×x
=[M]× [LT-²]×[L]
=[ML²T-²]

বলের বিরুদ্ধে কার্য কাকে বলে এবং উদাহরণ

কোন বস্তুতে বল প্রয়োগ করার পর বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ যদি প্রযুক্ত বলের বিপরীত দিকে হয় তাহলে ওই ওই অবস্থাতে বলের বিরুদ্ধে কার্য হয়েছে বলে ধরা হবে।
বলের বিরুদ্ধে কার্যের উদাহরণ
একটি পাথরকে ঢেলে নিয়ে গেলে দেখা যায় পাথরের সরণের বিপরীতে ঘর্ষণ বল কাজ করছে। পাথরটির সরণ ঘটায় কার্য সম্পাদিত হলো। কিন্তু ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কার্য করা হলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here