এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গঠন কাজ ও পার্থক্য
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গঠন কাজ সংজ্ঞা, আবিষ্কার, নামকরণ, উৎপত্তি, বিস্তৃতি, সংখ্যা, এবং কত প্রকারের হয় তা নিয়ে বর্ণনামূলক ভাবে আলোচিত হলো…
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কি
কোষের সাইটোপ্লাজমের এন্ডোপ্লাজম অংশের মধ্যে জালক আকারে বিস্তৃত একক পর্দা বিশিষ্ট অসম আকৃতির কোষীয় অঙ্গাণুকে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (endoplasmic reticulum =ER ) এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বলে।
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার আবিষ্কার
গ্রানিয়ার ১৮৯৭ সালে প্রথম কোষে ER দেখেন। ১৯৪৫ সালে বিজ্ঞানী পোর্টার, ক্লড, এবং ফুলাম একত্রে সর্বপ্রথমে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার গঠন বর্ণনা করেন।
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার নামকরণ
পোর্টার ও কলম্যান এদের নামকরণ করেন 952 সালে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা ER।
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার উৎপত্তি
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের উৎপত্তি সম্বন্ধে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা না গেলেও কোষ আবরণী এবং নিউক্লিয় আবরণীর সঙ্গে এদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কোষ আবরণী এবং নিউক্লিয় আবরণী থেকে এদের উৎপত্তির নির্দেশ করে।
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার বিস্তৃতি
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা প্রাণী কোষে এবং উন্নত জীব কোষে থাকে। ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক ও নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদ কোষে থাকে না। এদের সংক্ষেপে বলা হয় ER।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের আকৃতি
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার আকৃতি এদের আয়তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। লম্বা এবং অনিয়ত বিন্যাসযুক্ত। ER ২৫ থেকে ১০০ মাইক্রোমিটার ব্যাসযুক্ত হয়। আবার গোলাকার এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের ব্যাস ২৭ থেকে ৫০০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সংখ্যা
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সংখ্যা কোষের আয়তন অনুযায়ী বিভিন্ন হয়। কোষের আয়তন বড়ো হলে এদের সংখ্যা বেশি হয় আয়তন ছোট হলে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার সংখ্যা কম হয়।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গঠন
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গঠন নিচে বর্ণনা করা হল—-
সাইটোপ্লাজমীয় ধাত্র সাধারণত অসংখ্য সূক্ষ্ম নালিকার মত অনিয়মিত কক্ষে বিভক্ত থাকে। এই নালিকাগুলি একক আবরণী বিশিষ্ট। সাইটোপ্লাজমীয় ধাত্রের ভিতরে একক আবরণী যুক্ত নালিকাগুলি নিজেদের মধ্যে নানাভাবে সংযোগ স্থাপন করে যে জালিকার সৃষ্টি করে তাকে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা বা ER বলে। সাইটোপ্লাজমের এন্ডোপ্লাজমিক অংশে অবস্থান করে বলে এদের ER বলা হয়।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের পর্দা প্লাজমা আবরণীর মত ত্রিস্তরযুক্ত একক আবরণী দিয়ে তৈরি। পর্দার ভেতরে যে গহবর তৈরি হয় তা সংবহনে সাহায্য করে। নিউক্লিয় আবরণী থেকে কোষ আবরণী পর্যন্ত ER বিস্তৃত থাকে। এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার পর্দায় যখন রাইবোজোম থানা লেগে থাকে তখন তাদের দানাদার বা অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা বা রাফ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা RER বলে। প্রোটিন সংশ্লেষকারী কোষ যেমন অগ্নাশায় কোষে, শ্লেষ্মা কোষ, অন্তঃক্ষরা কোষে এই প্রকার জালিকা থাকে। পর্দায় রাইবোজোম না থাকলে তাকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা বা স্মুথ সারফেস এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা SER বলে। এরা স্নেহ সংশ্লেষকারি কোষে থাকে যেমন এড্রিনাল গ্রন্থির বহিঃস্তর কোশে, এডিপোসাইট কোশে SER থাকে।
এছাড়াও এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গঠন তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কত প্রকার
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা –
১ সিস্টার্নি লম্বা আর চ্যাপ্টা। এরা ৩৫ থেকে ৫৩ মাইক্রোমিটার চওড়া।
২. ভেসিকল গোলাকার হয়ে থাকে। এরা ২৭ থেকে ৫০০ মাইক্রোমিটার ব্যাস যুক্ত হয়ে থাকে এবং
৩. টিউবিউল অনিয়মিত বিন্যাস যুক্ত এবং ৫০ থেকে ১০০ মাইক্রোমিটার ব্যাস যুক্ত হয়।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের কাজ
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের কাজ নিচে বর্ণনা করা হল—-
১. ER সাইটোপ্লাজমের কাঠামো গঠন করে এবং যান্ত্রিক কাজে সাহায্য করে।
২. শারীরবৃত্তীয় কাজে বিস্তৃত পর্দা যোগায়।
৩. ER, কোষকে অনেক অসম্পূর্ণ কক্ষে ভাগ করে ফলে নানা প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে আলাদা রাখে।
৪. এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা কোষের ভিতরে উৎসেচকগুলির সমবন্টনে সাহায্য করে।
৫. এরা বিপাকীয় কাজে তৈরি বস্তুগুলোকে সক্রিয় ও আলাদা রাখতে সাহায্য করে।
৬. ER কোষীয় স্পন্দনকে পেশী ও স্নায়ুর মতো বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করে।
৭. এরা কোষগহ্বর ও অন্যান্য অঙ্গাণু গঠনে সাহায্য করে।
উপরোক্ত বিষয়গুলির মাধ্যমে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের কাজ সম্পন্ন হয়।
মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের পার্থক্য
মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের পার্থক্য নিচে বর্ণনা করা হল—-
বৈশিষ্ট্য | মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম | অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম |
উৎপত্তি | অমসৃণ থেকে রাইবোজোম ত্যাগ করে তৈরি হয়। | পর্দার সঙ্গে রাইবোজোম যুক্ত হয়ে তৈরি হয়। |
উপাদান | অনুনালিকা দিয়েই প্রধানত তৈরি হয়। | সিস্টার্ন দিয়েই প্রধানত তৈরি হয়। |
বিস্তার | স্নেহ বিভাগ হয় এমন কোষে থাকে, আদিপোসাইটস কোষ, শুক্রাশয়ের লেদিগ কোষ,স এড্রিনাল গ্রন্থির বহিঃস্তর কোষ পেশি কোষ, অক্ষিপটের রঞ্জক কোষ। | প্রোটিন বিপাক হয় এমন কোষে থাকে,অগ্নাশয় কোষ, শ্লেষ্মা কোষ, প্লাজমা কোষ, স্নায়ু কোষের কোষ দেহ। |
অবস্থান | কোষ পর্দার সংলগ্ন থাকে। | নিউক্লিয়াস সংলগ্ন থাকে। |
কাজ | স্নেহ সংশ্লেষ, গ্লাইকোজেনের ভাঙ্গন, যকৃতকে টক্সিনমুক্ত করা। | প্রোটিন সংশ্লেষ, গ্লাইকোপ্রোটিন তৈরি করা। |
এই ছিল মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের পার্থক্য।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ও গলগবডির পার্থক্য
এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ও গলগবডির পার্থক্য নিম্নরূপ—
বৈশিষ্ট্য | এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম | গলগবডি |
অবস্থান | সাইটোপ্লাজমের এন্ডোপ্লাজমিক অংশে থাকে। | সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি থাকে। |
গঠন | এরা পরস্পর যুক্ত হয়ে একটি জালক এর সৃষ্টি করে। | এরা স্তরীভূত অবস্থায় ঘন সন্নিবিষ্ট থাকে। |
রঞ্জিত হওয়া | অস্মিয়াম টেট্রাক্সাইড দিয়ে রঞ্জিত হয়না। | অস্মিয়াম টেট্রাক্সাইড দিয়ে রঞ্জিত হয়। |
গাত্র প্রকৃতি | গাত্র মসৃণ বা দানাযুক্ত হয়। | গাত্র সব সময়ই মসৃণ হয়। |
প্রকার | তিন প্রকারের হয়—সিস্টার্নি ভেসাইক্যাল ও টিউবিউল। | তিন প্রকারের হয়—-সিস্টার্নি মাইক্রো ভেসিকল এবং ভ্যাকুওল। |
কাজ | সাইটোপ্লাজমের কাঠামো গঠন করে এবং বিভিন্ন বিপাকীয় বস্তুর সমবন্টন করে। | বিভিন্ন রেচন বস্তু সঞ্চয় অঙ্গাণু হিসেবে কাজ করে। |
উপরিউক্ত পয়েন্টগুলিই মূল এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ও গলগবডির পার্থক্য
বারবার জিজ্ঞাসা করা কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
সারকোপ্লাসমিক রেটিকুলাম কি
পেশি কোষের মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কে সারকোপ্লাসমিক রেটিকুলাম বা সারকোপ্লাসমিক জালিকা বলে।
মায়েলয়েড বডি কি
অক্ষিপটের রঞ্জক কোষের ভেতর মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে গহবর ও অনুনালিকা গুলি খুবই ঘন ভাবে যুক্ত থাকে এদের মায়েলয়েড বডি বলে।
অ্যানুলেট ল্যামেলি বা ছিদ্রাল পট্ট কি
অমেরুদন্ডী প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মাতৃকোষে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম পর্দা ছিদ্রাল হয় এদের অ্যানুলেট ল্যামেলি বলে।
অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা কি বা কাকে বলে
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার পর্দায় যখন রাইবোজোম দানা লেগে থাকে তখন তাদের দানাদার বা অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বা রাফ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা RER বলে।
মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা কি বা কাকে বলে
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার পর্দায় রাইবোজোম না থাকলে তাকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা বা স্মুথ সারফেস এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা SER বলে।