পৃথিবীর অনন্য সৃষ্টি হল জীব। যাদের জীবন আছে তাদের জীব বলা হয়। এই জীবের আবার প্রধান দুটি ভাগ আছে। উদ্ভিদ এবং প্রাণী এই দুটি ভাগে আমরা জীবকুলকে প্রধানত ভাগ করতে পারি। এই অধ্যায়ে আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য কি তা জানব।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য
উদ্ভিদ ও প্রানীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আমরা চাক্ষুষ করতে পারি কিন্তু বৈশিষ্ট্যগতভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
নিচে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে 14টি পার্থক্য আলোচনা করা হলো
উদ্ভিদ | প্রাণী |
উদ্ভিদ সাধারণত স্বেচ্ছায় স্থান পরিবর্তন করতে পারে না (ব্যতিক্রম : ক্ল্যামাইডােমানাস, ভলভক্স, ডায়াটম ইত্যাদি নিম্নশ্রণীর উদ্ভিদ)। | প্রাণীরা স্বেচ্ছায় স্থান পরিবর্তনে সক্ষম। (ব্যতিক্রম : স্পঞ্জ, প্রবাল প্রভৃতি প্রাণী ।) |
উদ্ভিদের আকার ও আয়তন নির্দিষ্ট নয়। | প্রাণীর আকার ও আয়তন নির্দিষ্ট। |
উদ্ভিদ-কোষের সজীব কোষ-আবরণীর বাইরে জড় পদার্থ দিয়ে গঠিত কোষ-প্রাচীর আছে। | প্রাণী-কোষের কোষ-প্রাচীর থাকে না। |
উদ্ভিদ-কোষে প্লাস্টিড থাকে। (ব্যতিক্রম : ছত্রাক)। | প্রাণী-কোষে প্লাস্টিড থাকে না (ব্যতিক্রম : ক্রাইস্যামিবা, ইউগ্নিনা)। |
উদ্ভিদ-কোষে সেন্ট্রোজোম (ব্যতিক্রম : ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শৈবাল, যমন : ক্ল্যামাইডামানাস) ও লাইসােজোম থাকে না। | প্রাণী-কোষে সেন্ট্রোজোম ও লাইসােজোম থাকে (স্নায়ু কোষে সেন্ট্রোজোম নিষ্ক্রিয়)। |
উদ্ভীদেরা কঠিন খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না, তরল খাদ্য গ্রহণ করে। | প্রাণীরা কঠিন ও তরল, উভয় প্রকার খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। |
বেশীর ভাগ উদ্ভিদের পুষ্টি পদ্ধতি স্বভাজী প্রকৃতির। | প্রাণীদের পুষ্টি পদ্ধতি পরভােজী প্রকৃতির (ব্যতিক্রম : ইউগ্লিনা।) |
উদ্ভিদেরা সালােকসংশ্লেষে সক্ষম। (ব্যতিক্রম : ছত্রাক, স্বর্ণলতা)। | প্রাণীরা সালােকসংশ্লেষে অক্ষম। (ব্যতিক্রম : ইউগ্লিনা, ক্রাইস্যামিবা।) |
উদ্ভিদ-দেহে কোন শ্বাসযন্ত্র পরিলক্ষিত হয় না। | প্রাণিদেহে, বিশেষ করে উন্নত প্রাণীদের দেহে সুনির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র পরিলক্ষিত হয়। |
উদ্ভিদদের রেচনতন্ত্র থাকে না। এরা রেচন পদার্থ উপজাত পদার্থরূপে কোষে সঞ্চিত রাখে। | প্রাণীদের সাধারণত সুনির্দিষ্ট রেচনতন্ত্র থাক। প্রাণীরা রেচন পদার্থ বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহের বাইরে নির্গত করে। |
উদ্ভীদদের স্নায়ুতন্ত্র নেই। | প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্র আছে। (ব্যতিক্রম : এককোষী প্রাণী)। |
উদ্ভীদের বৃদ্ধি অসম প্রকৃতির এবং প্রায় সারাজীবন ধরেই এদের বৃদ্ধি ঘটে। | প্রাণীদের বৃদ্ধি সুষম; মৃত্যুর বহু আগেই এদের বৃদ্ধি শেষ হয়ে যায়। |
উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন দেখা যায়। | প্রাণীদের অঙ্গজ জনন দেখা যায় না। |
উদ্ভীদের ভ্রুণ কিছুকাল পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকে। | প্রাণীদের ভ্রূণ কোন অবস্থাতেই সুপ্ত থাকে না। |
উদ্ভীদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা
জীবকুলের ভিন্ন দুটি শ্রেণি হওয়া সত্ত্বেও উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পারিক নির্ভরশীলতা অনেক বেশি; যেন একটি ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ। প্রাণীদের বেঁচে থাকতে হলে যেমন উদ্ভিদের প্রয়োজন তেমনি উদ্ভিদের বেঁচে থাকা এবং বংশবিস্তারের জন্য প্রাণীদের প্রয়োজন অত্যাবশ্যকীয়। এখানে কয়েকটি পয়েন্ট আকারে উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পারিক নির্ভরশীলতা বর্ণনা করা হলো
- পুষ্টির জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তৃণভােজী প্রাণীরা সরাসরি উদ্ভিদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং মাংসাশী প্রাণীরা তৃণভােজী প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। প্রাণীদের বর্জ্যবস্তু এবং মৃত দেহাবশেষ বিয়ােজিত হয়ে মাটিতে খনিজ লবণরূপে অবস্থান করে। উদ্ভিদরা ঐ খনিজ লবণকে সাররূপে গ্রহণ করে। পতঙ্গভুক উদ্ভিদেরা সরাসরি কীট-পতঙ্গ ভক্ষণ করে তাদের দেহে প্রাটিন জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটায়।
- পরিবেশে অক্সিজেন এবং CO2 গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। যেমন, সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য সংশ্লেষের সময় CO2 গ্রহণ করে এবং O2 বর্জন করে। প্রাণীরা শ্বাসকার্যের সময় O2 গ্রহণ করে এবং CO2 বর্জন করে।
- উদ্ভিদের পরাগযােগের জন্য কীট-পতঙ্গাদির অবদান অনস্বীকার্য। কীটপতঙ্গেরা ফুলের সুমিষ্ট রস পান করে জীবনধারণ করে।
- মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী উদ্ভীদের পাকা ফল খেয়ে বীজগুলি দুরে নিক্ষেপ করে। এই রকম স্বভাবের মাধ্যমে প্রাণীরা উদ্ভিদের বীজ বিস্তারে সহায়তা করে। কাগজ, তুলাে, রেয়ন, কাঠ, কয়লা, বাঁশ, গঁদ, রজন, রবার, পাটজাত দ্রব্য, বিভিন্ন রকম তেল ও ঔষধজাত দ্রব্য আমরা উদ্ভিদ থেকে পাই।
সুতরাং, আলােচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, অন্ন, বস্ত্র এবং আক্সিজেনের জন্য প্রাণীরা প্রধানত উদ্ভীদের ওপর নির্ভরশীল; আবার কার্বন ডাই-অক্সাইড, পরাগযােগ এবং কয়েক রকমের খনিজ লবণের উৎসের জন্য উদ্ভীদেরা প্রাণীদের ওপর নির্ভরশীল।
Thanks for the good article, I hope you continue to work as well.