অভিকর্ষ
সংজ্ঞা ঃ ভু-পৃষ্ঠের ওপরে থাকা বা পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা কোন বস্তুকে পৃথিবী নিজের দিকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর এই আকর্ষণ বলকে অভিকর্ষ।
একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক – ধরি আমি একটি বলকে উপরে ছুঁড়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর বলের ঊর্ধ্বমুখী গতি কমে ধীরে ধীরে আবার সে পৃথিবীতে এসে পড়ে। কারণ পৃথিবী ওই বলটিকে তার নিজস্ব বল দিয়ে আকর্ষণ করে। তাই বলটি আবার পৃথিবীতে এসে আছড়ে পড়ে। বলটির উপর পৃথিবী যে বল প্রয়োগ করে সেই বলকেই অভিকর্ষ বল।
এই অভিকর্ষ বলের ধারণা দেন বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন। তিনি একদিন তার বাগানে আপেল গাছের একটু দূরে বসে ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন একটি আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়ে গেল। তার মনে প্রশ্ন উদয় হল আপেলটি উপরে না গিয়ে পৃথিবীতে কেন এসে পরল। তিনি গবেষণার মধ্য দিয়ে আবিষ্কার করলেন আপেলটি নিচে পড়ার একমাত্র কারণ হল অভিকর্ষ বল।
অভিকর্ষজ ত্বরণ
সংজ্ঞা ঃ পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের ক্রিয়ায় যখন কোন বস্তু উপর থেকে বিনা বাধায় পৃথিবীর দিকে পড়ে তখন বস্তুটির পতনের বেগ একটি নির্দিষ্ট হারে বেড়ে যায় অর্থাৎ একটি ত্বরণের সৃষ্টি হয়। এই ত্বরণ কে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে।
অভিকর্ষজ ত্বরণ g এর মানঃ
- g অক্ষর দিয়ে অভিকর্ষজ ত্বরণ কে প্রকাশ করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে g এর মান ভিন্ন ভিন্ন হয়। ভূপৃষ্ঠের গড় মান নিচে দেওয়া হল-
- সিজিএস পদ্ধতিতে জি এর মান 981 সেন্টিমিটার / সেকেন্ড ²
- এ পি এস পদ্ধতিতে জি এর মান 32 ফুট / সেকেন্ড ²।
অভিকর্ষ বলের পরিমাণের সঙ্গে অভিকর্ষজ ত্বরণের সম্পর্ক
বস্তুর ভরের সঙ্গে স্থানীয় অভিকর্ষজ ত্বরণ গুণ করলে অভিকর্ষ বলের পরিমাণ পাওয়া যায়। ধরা যাক কোনো বস্তুর ভর m এবং স্থানীয় অভিকর্ষজ ত্বরণ g হলে অভিকর্ষজ বল m×g ।
মহাকর্ষ ও নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র
সংজ্ঞাঃ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যেকোনো দুটি ভারযুক্ত বস্তু পরস্পরকে নিজেদের দিকে এদের সংযোগ সরলরেখা বরাবর আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান তাদের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
যদি আমরা এই বলকে F দ্বারা প্রকাশ করে থাকি তাহলে এটি দাঁড়ায় F∝ m₁×m₂/d² বা F= G × m₁×m₂/d²। এখানে G কে সার্বজনীন ধ্রুবক বলা হয়।
সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝা যায় কোন একটি বস্তুর ভর m1 এবং দ্বিতীয় বস্তুটির ভর m2। এখন মহাকর্ষ বল বস্তুর ভরের গুণফলের সমানুপাতিক অর্থাৎ বস্তুদুটির ভর বাড়লে মহাকর্ষ বল বাড়বে এবং বস্তুর ভর কমলে মহাকর্ষ বল কমবে। অর্থাৎ F∝m₁m₂ দ্বিতীয়ত বলা হয় যে বস্তুটির মধ্যেকার দূরত্বের সঙ্গে মহাকর্ষ বলের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎF∝1⁄d²। এখন ধরা যাক দুটি বস্তুর মধ্যে দূরত্ব 1মিটার হয় তাহলে F∝ 1⁄1² । আবার দূরত্ব যদি বাড়ানো হয় 2 মিটার সেক্ষেত্রে F∝1⁄d² বা F∝1⁄ 4 অর্থাৎ দেখা গেল ২ মিটার দূরত্ব বাড়লে মহাকর্ষ বল চারগুণ কমে যায়।
পরিমাপ ও একক সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ বলের মধ্যে পার্থক্য বা সম্পর্ক
- বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একটি বস্তু অন্য বস্তুকে আকর্ষণ করে এই আকর্ষণ কে মহাকর্ষ বল বলে অন্যদিকে পৃথিবী তার কাছাকাছি বা তার ভূপৃষ্ঠ থাকা সকল বস্তুকে আকর্ষণ করে এটিকে অভিকর্ষ বল বলে।
- বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মৌলিক চারটি বলার মধ্যে মহাকর্ষ একটি বল আর অভিকর্ষ বল মহাকর্ষ বল এর একটি অংশ।
মহাকর্ষ প্রাবল্য
সংজ্ঞাঃ মহাকর্ষ ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে কোন বস্তু রাখা হলে বস্তুটি দ্বিতীয় বস্তুটির দ্বারা যে আকর্ষণ বল অনুভব করে, তাকে ঐ ক্ষেত্রের ঐ বিন্দুর মহাকর্ষ তীব্রতা বা প্রাবল্য বলে।
মহাকর্ষীয় বিভব
সংজ্ঞাঃ যদি অসীম দূরত্ব থেকে কোন বস্তুকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে আনতে যে কাজ করতে হয় অর্থাৎ মহাকর্ষ বল দ্বারা সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে ঐ বিন্দুর মহাকর্ষীয় বিভব বলে।
F∝m₁×m₂⁄d².
thanks
পৃথিবী থেকে ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বলের সম্পর্ক কি? যুক্তি দাও।
এই প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যাবে?
Mohakorso ki?